পাঞ্চ কার্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পাঞ্চ কার্ড বা পাঞ্চড কার্ড বা আইবিএম কার্ড বা হোলেরিথ কার্ড (Hollerith card) হলো একপ্রকারের শক্ত কাগজের তৈরি কার্ড, যা এর উপরকার ছিদ্রের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির ভিত্তিতে ডিজিটাল তথ্য প্রকাশ করে। পাঞ্চ কার্ডগুলোর ব্যাপক ব্যবহার হতো ঊনবিংশ শতাব্দির পোশাক শিল্পে। ঊনবিংশ শতাব্দির শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় ফেয়ারগ্রাউন্ড ওরগান-এ এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ক্ষেত্রে। বিংশ শতাব্দিতে এগুলোর ব্যবহার হয় ইউনিট রেকর্ড যন্ত্রে ইনপুট হিসেবে ব্যবহারের জন্য, প্রক্রিয়াকরণের জন্য এবং তথ্য সংরক্ষণের জন্য। শুরুর দিকের ডিজিটাল কম্পিউটারগুলো এর ব্যবহার করত প্রোগ্রাম এবং তথ্য ইনপুট দেবার জন্য। কিছু কিছু ভোট-দেয়ার-যন্ত্রেও পাঞ্চকার্ড ব্যবহৃত হয়।

একটি ৮০ কলামের পাঞ্চ কার্ড যেগুলো ২০শতকের দিকে ব্যপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। কার্ডের আকার ছিল ৭-৩/৮ ইঞ্চি বাই ৩-১/৪ ইঞ্চি (১৮৭.৩২৫ বাই ৮২.৫৫ এমএম). এই উদাহরণটি দেখায় ১৯৬৪ সালের EBCDIC এর অক্ষর বিন্যাসসমূহ, যেগুলো প্রথমদিককার এনকোডিং এ বিশেষ অক্ষর যোগ করেছিল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

জ্যাকার্ড লুমে Jacquard loom পাঞ্চ কার্ডের ব্যবহার
একটি বড় ড্যান্স অরগানের dance organ পাঞ্চ কার্ড

পাঞ্চকার্ড প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল ১৭২৫ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি কোনো এক সময়ে- ব্যাসিল বৌশন (Basile Bouchon) এবং জীন-ব্যাপটিস্টে ফ্যালকন (Jean-Baptiste Falcon) প্রথম ব্যবহার করেন কাগজের বেশ মোটাসোটা কার্ড দিয়ে, পরবর্তিতে ফ্রান্সে পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ১৮০১ খ্রিষ্টাব্দে জোসেফ মারি জ্যাকার্ড (Joseph Marie Jacquard) তার জ্যাকার্ড লুমে (Jacquard loom) এই পদ্ধতির যথেষ্ট উন্নয়ন ঘটান। সেমেন কোর্সাকভ (Semen Korsakov) ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করেছেন তথ্যভিত্তিক কাজে: তথ্য সংরক্ষণ এবং খোঁজার কাজে। তিনি তার এই নতুন পদ্ধতি আর যন্ত্র প্রথম উপস্থাপন করেন ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে। এবং তিনি এর প্যাটেন্ট না করে এর উন্মুক্ত ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন।[১]

সেমেন কোর্সাকভের পাঞ্চকার্ড

চার্লস ব্যাবেজ প্রস্তাব রাখেন 'সংখ্যা কার্ড' (Number Cards) ব্যবহারের, যেখানে বিভিন্ন জায়গায় ছিদ্র করে নির্দেশ প্রদান করার ব্যবস্থা থাকে।[২] হারম্যান হোলেরিথ আবিষ্কার করেন ডেটার সংরক্ষণ ও ব্যবহার যেটা মেশিন দ্বারা পড়া যাবে। পূর্বের মেশিনগুলো যদিও এর ব্যবহার করত তবে তা হত শুধু নির্দেশ প্রদানের জন্য ডেটা সংরক্ষণের জন্য নয়[৩]। তিনি আমেরিকা আদমশুমারির জন্য পাঞ্চ কার্ডের প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এরপর ১৮৯৬ সালে তিনি টেবুলেশন মেশিন কোম্পানি করেন যা পরে আইবিএম নামে পরিচিতি লাভ করে। আইবিএম তাদের তৈরী ইউনিট রেকর্ড মেশিন দ্বারা এই পাঞ্চ কার্ডগুলোর উৎপাদন, পর্যায়ক্রমিক করা হত। ১৯৫০ সালের আগে যেসকল ইলেক্ট্রনিক কম্পিউটার তৈরী করা হত তাতে পাঞ্চ কার্ডের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হত। ১৯৫০ সালের দিকে আইবিএম এর তৈরী আইবিএম কার্ড এবং আইবিএম ইউনিট রেকর্ড মেশিনগুলো সরকারী[৪] ও শিল্পকারখানাগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ১৯০০ থেকে ১৯৫০ সাল নাগাদ পর্যন্ত পাঞ্চ কার্ডগুলো ছিল ডেটা এন্ট্রি, ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক মাধ্যম। যদিও ১৯৬০ সালের দিকে চৌম্বকীয় টেপ এর ব্যবহারের কারণে পাঞ্চ কার্ডের ব্যবহার কমে যাচ্ছিল তবুও ১৯৭০ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি জনপ্রিয় ছিল।

নামকরণ[সম্পাদনা]

পাঞ্চ কার্ড বা পাঞ্চড কার্ড বা পাঞ্চকার্ড সাধারনভাবে ব্যবহৃত হত আইবিএম কার্ড বা হোলেরিথ কার্ড (হারম্যান হোলেরিথ এর নাম অনুসারে)এর মত। আইবিএম প্রথমে ব্যবহার করে "আইবিএম কার্ড[৫]" পরে উল্ল্যেখ করে তাদের কাগজপত্রে "পাঞ্চ কার্ড[৬]" হিসেবে। পরবর্তীতে শুধু "কার্ড" হিসেবে।

কার্ডের গঠন[সম্পাদনা]

আইবিএমের নয় এমন ৫০৮১ মানের কার্ড . কোনাগুলো বাঁকানো বা কাটা.

প্রথম দিককার পাঞ্চ কার্ডগুলো ছিল ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে তৈরী করা অথ্যাৎ এর সাধারণ কোন আকার ছিল না। যেখানে ব্যবহার করা হবে তার উপর ভিত্তি করে এর ডিজাইন বা নকশা করা হত। ১৯২৮ সালের দিকে যখন সাধারণ ব্যবহার এর জন্য এটি জনপ্রিয় হয় তখন চতুর্ভুজ, গোলাকার, ডিম্বাকৃতির প্রভৃতি আকারের দেখা যেত এগুলোকে বলত চ্যাড বা চিপ, এগুলোতে শব্দ ও বড় বড় সংখ্যার সমন্বয় থাকত এগুলো কার্ডের ফিল্ড নামক অংশে সংরক্ষণ করা থাকত। একসঙ্গে অনেকগুলো কার্ডকে বলা হত ডেক কার্ড শনাক্ত করার সুবিধার্থে কার্ড গুলোর কোনা কাটা থাকত। কার্ডগুলো এমন ভাবে ছাপা হত যাতে কলাম এবং সারির অবস্থান সহজে বের করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেত কার্ডের গায়ে চিহ্ন, নাম, ফিল্ড, লোগো, লাইন প্রভৃতি দেয়া থাকত। এরকম একটি জনপ্রিয় কার্ড হল আইবিএম ৫০৮১।

হোলেরিথ পাঞ্চ কার্ডের গঠন[সম্পাদনা]

হোলেরিথের (Hollerith) পাঞ্চ কি-বোর্ড, ১৮৯০'র আদমশুমারিতে ব্যবহৃত।[৭]

হারম্যান হোলেরিথ (Herman Hollerith) কে পেটেন্ট[৮] পুরুষ্কৃত করা হয় ১৮৮৯ মেকানিক্যাল টেবুলেটিং মেশিন (mechanical tabulating machines)এর জন্য। এই পেটেন্টগুলো কাগজের টেপ এবং যে কার্ডগুলো ডেটা সংরক্ষণ করতে পারত উভয়কে বুঝাত। প্রকৃতভাবে হোলেরিথ উৎসাহিত হয়েছিলেন রেল রোড টিকিট[৯] দ্বারা যেগুলোতে যাত্রী সর্ম্পকে একটা সাধারন তথ্য এনকোড (encode) করা থাকত।

আইবিএম ৮০ কলাম পাঞ্চ কার্ডের গঠন[সম্পাদনা]

ফোরট্রান Fortran প্রোগ্রামের একটি কার্ড: Z(1) = Y + W(1)
"একজন ভাল অপারেটর ১৫০০ কার্ড তৈরী করতে পারে দৈনিক।" Operators compiling hydrographic data for navigation charts on punch cards, New Orleans, 1938.

এই কার্ডের গঠন, ডিজাইন করা হয়েছিল ১৯২৮ সালে[১০] যাতে ছিল চতুভূজাকৃতির গর্ত, ৮০ কলামের যাতে ১২টি পাঞ্চ করার জায়গা আছে।

আইবিএম ৫১ কলাম পাঞ্চ কার্ড[সম্পাদনা]

এই কার্ড ৮০ কলামের কার্ড থেকে কমিয়ে করা হয়েছিল। এগুলো খুচরা দোকান এবং ইনভেন্টরি এ্যাপ্লিকেশন এ ব্যবহৃত হত।

তথ্যসূত্রসমূহ[সম্পাদনা]

  1. Semen Korsakov's inventions ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০০৯ তারিখে, Cybernetics Dept. of MEPhI (রুশ)
  2. Babbage, Charles (26 Dec. 1837)। On the Mathematical Powers of the Calculating Engine  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. Columbia University Computing History - Herman Hollerith
  4. Lubar, Steven (১৯৯৩)। InfoCulture: The Smithsonian Book of Information Age Inventions। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 302আইএসবিএন 0-395-57042-5 
  5. "An important function in IBM Accounting is the automatic preparation of IBM cards." IBM 519 Principles of Operation, Form 22-3292-5, 1946
  6. "The IBM 1402 Card Read-Punch provides the system with simultaneous punched-card input and output. This unit has two card feeds." Reference Manual 1401 Data Processing System, Form A24-1403-4, 1961
  7. Truesdell, Leon E. (১৯৬৫)। The Development of Punch Card Tabulation in the Bureau of the Census: 1890-1940। US GPO। 
  8. মার্কিন পেটেন্ট ৩,৯৫,৭৮১ , মার্কিন পেটেন্ট ৩,৯৫,৭৮২ , মার্কিন পেটেন্ট ৩,৯৫,৭৮৩ 
  9. "History.rochester.edu"। ১৪ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১১ 
  10. IBM Archive: 1928.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:FOLDOC

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Fierheller, George A. (২০০৬)। Do not fold, spindle or mutilate: the "hole" story of punched cards (পিডিএফ)। Stewart Pub.। আইএসবিএন 1-894183-86-X। ২১ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩০, ২০১১  An accessible book of recollections (sometimes with errors), with photographs and descriptions of many unit record machines.
  • Murray, Francis J. (১৯৬১)। Mathematical Machines Volume 1: Digital Computers। Columbia University Press।  Includes a description of Samas punched cards and illustration of an Underwood Samas punched card.