পরিবহন ভূগোল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ঢাকায় দৃষ্ট স্থানিক মিথস্ক্রিয়া।

পরিবহন ভূগোল হলো ভূগোলের এমন একটি শাখা যা পৃথিবী পৃষ্ঠে মানুষ, পণ্য এবং তথ্যের চলাচল এবং সংযোগ সম্পর্কিত বিষয়াবলী নিয়ে কাজ করে। এটি বিভিন্ন অঞ্চলে বা তার মধ্যেস্থ জনসাধারণের মালামাল ও তথ্য পরিবহন বা চলাচলের পাশাপাশি রাস্তা, রেল, বিমানচালনা এবং নৌকা এবং মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক, পরিবেশ এবং শহুরে এলাকায় পরিবহনের বিভিন্ন ধরন নিয়েও গবেষণা করে থাকে।[১] সেই আদিকাল থেকেই মানুষ পরিবহন পথ ও মাধ্যমকে গুরুত্ব দিতো তাদের জীবন ও জীবিকার খাতিরে যা এই আধুনিক যুগেও সমান গুরুত্ব বহন করে চলছে।

লক্ষ্য এবং ক্ষেত্র[সম্পাদনা]

পরিবহন ভূগোল অবস্থান, বাহন, ধরন, কর্মকাণ্ড এবং প্রকরণের উপর নির্ভর করে পৃথিবী পৃষ্ঠের পরিবহন স্থানগুলি শনাক্ত করে, বর্ণনা করে এবং ব্যাখ্যা করে। এটি আরও অনুসন্ধান করে ভূমির ব্যবহারের উপর পরিবহনের প্রভাব, 'আচ্ছাদনের ধরন' হিসাবে পরিচিত পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক উপাদানগুলির বিস্তরণ এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের মতো অন্যান্য স্থানিক প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে। তদুপরি, এটি পরিবহন, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনায় অবদান রাখে।

বিনিময় বিষয়ক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ জন্য পরিবহন হলো একটি মৌলিক উপাদান। সেজন্য পরিবহন ভূগোল এবং অর্থনৈতিক ভূগোল পরস্পর সম্পর্কিত। সর্বচেয়ে প্রাথমিক স্তরে, মানুষের চলাচল ছিলো হাটাচলার মাধ্যমে এবং এভাবে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে; তবে পরিবহন ভূগোল সাধারণত আরও জটিল আঞ্চলিক বা পরিবহন ব্যবস্থার বৈশ্বিক ব্যবস্থা সম্পর্কিত অধ্যয়ন করে যেখানে একাধিক আন্তঃসংযুক্ত ধরন, যেমন পাবলিক পরিবহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, সাইকেল, মালবাহী রেলপথ, ইন্টারনেট, বিমান এবং আরও অনেক কিছু যুক্ত। এই জাতীয় পদ্ধতিগুলি শহুরে এলাকায় ক্রমবর্ধমান চরিত্রের হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে, পরিবহন ভূগোল এবং নগর ভূগোল একে অন্যের সাথে আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নগরগুলির গড়ন তাদের বিনিময় এবং মিথস্ক্রিয়তার ধরনের মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে তৈরি করা হয়।[২] উনবিংশ শতাব্দীর পর থেকে ক্রমবর্ধমানভাবে পরিবহনকে শহর, দেশ বা সংস্থাগুলি বিভিন্ন স্থান এবং প্রেক্ষাপটে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করার মাধ্যম হিসাবে দেখা হয়।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ নিজের নিরাপত্তা ও খাদ্যের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে গমন করতো। ফলে তাদের ছিলো নিজেস্ব পথ এবং সেসময় কেবল নিজেদের পায়ে হেটেই তারা গমনাগমন করতো। পরর্বতীতে চাকা আবিস্কারের পর তাদের গমন পথের প্রয়োজনে গড়ে উঠে রাস্তা এবং এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে দ্রতগতিতে চলাচলের যান হিসাবে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের; যা পরবর্তীতে নৌ ও আকাশপথেও ছড়িয়ে পড়ে।[৪] শিল্পযুগের প্রথমেই স্টীম ইঞ্জিনের আবিষ্কার মানুষের অন্যনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি চলাচলকেও করে তোলে সুগম ও আরামপ্রদ। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ও ডিজিটাল ডিভাইস এই পরিবহন ব্যবস্থাকে করেছে আরো সুচারু ও তুলনামূলক নিরাপদ ও দ্রুত।

পরিবহন মাধ্যম[সম্পাদনা]

পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন
১৫০০ —
১৫৫০ —
১৬০০ —
১৬৫০ —
১৭০০ —
১৭৫০ —
১৮০০ —
১৮৫০ —
১৯০০ —
১৯৫০ —
২০০০ —
Horse and carriage, sailing ships
Erie Canal
Steam locomotives
Automobiles
Passenger aircraft
average speed of 10mph
Canal construction leads way to increase in transportation, esp. in New York State
Trains avg 75mph
Autos become main mode of transportation

পরিবহন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মাধ্যমের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক ধরনগুলি হলো আকাশ পরিবহন, সড়ক পরিবহন, জল পরিবহন এবং রেল পরিবহন। প্রতিটি ধরনে নিজস্ব প্রকৃতি রয়েছে যাতে 'চলাচলের গতিবেগ'র সাথে যুক্ত এবং এতে প্রভাবে বিস্তার করে থাকে ঘর্ষণ, উত্‌সের স্থান এবং গন্তব্য। জাহাজ সাধারণত প্রচুর পরিমাণ পণ্য পরিবহন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সামুদ্রিক পরিবহন সুলভ ব্যয়ে বিশ্বজুড়ে অধিক পন্য বহন করতে সক্ষম। যেসব মানুষ ভ্রমণের সময়কে ন্যূনতম করতে এবং আরামপ্রদ এবং সুবিধাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন তাদের জন্য সড়ক এবং আকাশপথই পরিবহনের সর্বাধিক সাধারণ পদ্ধতি। জলপথ থেকে দূরেবর্তী অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রায়শই রেলপথ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেলপথগুলি মানুষের যাতায়াতের জন্যেও ব্যবহৃত হয়।

বেইজিং'এ সড়ক পথে ট্রাফিক জ্যামের চিত্র।

সড়কপথ[সম্পাদনা]

সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় নির্মিত রাস্তা দিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করে থাকে; যাতে লরি, গাড়ি ইত্যাদির মাধ্যমে লোক ও পণ্যকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গাড়ি বা পরিবহনের উদ্দেশ্য দ্বারা সড়ক পরিবহনকে আরও অসংখ্য ভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে।

সমুদ্রপথ[সম্পাদনা]

পণ্য ও মানুষ পরিবহনের মাধ্যমগুলোর মধ্যে পরিবহনের ধীরতম ধরন হচ্ছে জল পরিবহন ব্যবস্থা। বিশ্বজুড়ে কৌশলগত স্থানগুলো সামুদ্রিক পরিবহনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। যদিও সড়ক ও রেল পরিবহনের তুলনায় পরিবহনের ধীরতম রূপ সমুদ্রপথ, কিন্তু এটি সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল মাধ্যম এবং ফলশ্রুতিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।

রেলপথ[সম্পাদনা]

রেল পরিবহন হলো পরিবহনের এমন একটি রূপ যাতে রেলগাড়ীর মাধ্যমে কার্গো, পণ্য এবং যাত্রীদের একস্থান হতে অন্যত্র পরিবহন করা হয়। সময়ের সাথে সাথে রেলপথে পরিবহন অন্যতম নিরাপদতম উপায় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rodrigue, Jean-Paul (2017). The Geography of Transport Systems. New York: Routledge, 440 pages. ISBN 978-1138669574.
  2. Braudel, F. 1949 / 1995 The Mediterranean and the Mediterranean World in the Age of Phillip II. Berkeley: University of California Press
  3. Graham, S., Marvin, S. 2001. Splintering Urbanism: Networked Infrastructures, Technological Mobilities and the Urban Condition: Networked Infrastructures, Technological Mobilites and the Urban Condition. London: Routledge.
  4. পরিবহন ভূগোল[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Train travel is incredibly safe"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-২৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:মানব ভূগোল