পরজানিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরজানিয়া
পরিচালকরাহুল ঢোলাকিয়া
প্রযোজকরাহুল ঢোলাকিয়া
Kamal Patel
রচয়িতাডেভিড এন ডনিহু
রাহুল ঢোলাকিয়া
শ্রেষ্ঠাংশেনাসিরুদ্দিন শাহ্
সারিকা
করিন নিমেক
রাজ জুৎসি
পরজান দস্তুর
সুরকারজাকির হুসেইন
তৌফিক কুরেশি
চিত্রগ্রাহকরবার্ট ডি ইরাস
সম্পাদকআরিফ শেখ
পরিবেশকপিভিআর পিকচার্স
মুক্তি
  • ২৬ নভেম্বর ২০০৫ (2005-11-26) (film festival)
  • ২৬ জানুয়ারি ২০০৭ (2007-01-26) (theatrical)
স্থিতিকাল১২২ মিনিট
দেশমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভারত
ভাষাইংরাজী
গুজরাটি
হিন্দি
নির্মাণব্যয়US$৭০০,০০০[১]

পরজানিয়া (অনুবাদ: পৃথিবীতে স্বর্গ এবং নরক[২]) ২০০৭ সালের একটি ভারতীয় নাট্য চলচ্চিত্র যা সহ-রচনা এবং পরিচালনা করেছিলেন রাহুল ঢোলাকিয়া; ডেভিড এন ডনিহু ছিলেন অন্য সহ-লেখক। ছবিতে নাসিরুদ্দিন শাহ্ এবং সারিকা প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, এবং করিন নিমেকরাজ জুৎসি সহযোগী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবির নির্মাণ মূল্য ছিল ইউএস$৭০০,০০০। ছবিটির শুটিং হয়েছিল আহমেদাবাদ এবং হায়দ্রাবাদে

ছবিটি দশ বছরের পারসি বালক আজহার মোদীর (ছবির চরিত্রের নাম পরজান পিঠাওয়ালা) সত্য ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত। ২০০২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যার পরে সে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। এই গণহত্যায় ৬৯ জন নিহত হয়েছিল। এটি ২০০২ সালের গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাগুলির অন্যতম একটি ছিল।[৩] পিঠাওয়ালা পরিবারের, তাদের নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে গমনপথের পদচিহ্ন অনুসরণ করে এই চলচ্চিত্রটি।

২০০৫ সালের ২৬শে নভেম্বর ছবিটির উদ্বোধন হয়েছিল গোয়ার ৩৬তম ভারত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে, ২০০৭ সালের ২৬শে জানুয়ারী এটি দেশব্যাপী মুক্তি পায়।[৪]

ঘটনা[সম্পাদনা]

একজন আমেরিকান নাগরিক, অ্যালান (করিন নিমেক), আহমেদাবাদ পৌঁছেছে কিছু উত্তর খুঁজতে, মনের শান্তি খুঁজে পেতে এবং বিশ্ব ও তার নিজের সমস্যাসঙ্কুল জীবনকে বুঝতে। সে ভারতকে তার বিদ্যালয় এবং গান্ধী কে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধের বিষয় হিসাবে বেছে নেয়। এখানেই তার দেখা হয় পিঠাওয়ালা পরিবারের সাথে — সাইরাস (নাসিরুদ্দিন শাহ্), তার স্ত্রী শেরনাজ (সারিকা), ছেলে পরজান (পরজান দস্তুর) এবং কন্যা দিলশাদ (পার্ল বারসিওয়ালা)। পিঠাওয়ালারা পারসি, তাই তারা জরাথুস্ট্রবাদ অনুসরণ করে। তাদের কাছে এবং গান্ধীবাদী শিক্ষার মাধ্যমে অ্যালান মানসিক প্রশান্তি পেতে শুরু করে।

এই চলচ্চিত্রটি রূপা মোদীর সত্য ঘটনার ভিত্তিতে নির্মিত, রূপার পুত্র ২০০২ গুজরাত দাঙ্গার পরে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল।[৫] দশ বছর বয়সী পরজান এই দাঙ্গার সময় অদৃশ্য হয়ে যায়। সেইসময় তাদের আশেপাশের বাড়িগুলিতে আক্রমণ করা হচ্ছিল। সাইরাস, শেরনাজ এবং দিলশাদ এই হত্যাযজ্ঞ থেকে পালিয়ে বাঁচতে সক্ষম হয়েছিল। দাঙ্গার পরে, নিজের মানসিক সুস্থতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে সাইরাস তার হারিয়ে যাওয়া শিশুটির অনুসন্ধান করতে আসে। পিঠাওয়ালাদের তাদের অনুসন্ধানে সহায়তা করার সময়, অ্যালান দাঙ্গার পেছনের কারণ উন্মোচনের উদ্দেশ্যে ঘটনাটির কিছুটা বোঝার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় সরকারী আধিকারিকের ব্যাখ্যা ছিল যে এটি কোন ষড়যন্ত্রের অংশ নয়। জনগণ এই নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, একটি মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের কাছে, বিভিন্ন সাক্ষী এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে পুলিশের উদাসীনতার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়। ছবিটি শেষ হয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকারদের প্রতি ছবিটি উৎসর্গ করে।

চরিত্র চিত্রণ[সম্পাদনা]

এই ছবিতে শেরনাজ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সরিকা ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন।

প্রযোজনা[সম্পাদনা]

২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে, লস অ্যাঞ্জেলেস - ভিত্তিক পরিচালক রাহুল ঢোলাকিয়া একটি ব্যক্তিগত দুঃখদায়ক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। দাঙ্গা তাঁর বন্ধুর পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল এবং এই ঘটনা তাঁর উপর একটি অমোচনীয় চিহ্ন ফেলেছিল। এটি তাঁকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল কারণ ঘটনাগুলি তাঁর নিজের রাজ্যে ঘটেছিল। তিনি নৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই দায়বদ্ধ বোধ করেছিলেন, এবং একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন।[৬] ইউএস$৭০০,০০০ বাজেটের বেশিরভাগই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর দুই ভারতীয় বন্ধুর কাছ থেকে এসেছিল।[৭] ঢোলাকিয়া এই চলচ্চিত্রটি ইংরাজীতে তৈরি করা ঠিক করেছিলেন কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা একটি বৈশ্বিক বিষয়। তদুপরি, তাঁর ছবির সংবেদনশীল প্রকৃতির জন্য, সেটি ভারতে মুক্তি পাবে কিনা তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না।[৮]

অভিনেতাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ঢোলাকিয়া বলেছিলেন যে তাঁরা মানুষের চেহারার দিকে নজর দিচ্ছেন না। তিনি বলেছিলেন:

আমরা চাই নি আকর্ষণীয় চেহারার মানুষ বাস্তববাদী চরিত্রে অভিনয় করুক। আমরা কোনও রূপটান ইত্যাদি ছাড়াই ছবিটির শুটিং করেছি। আমরা চেয়েছিলাম যাতে চরিত্রগুলি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। সুতরাং অভিনেতা চয়ন একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল, এবং আমি এমনকি প্রধান চরিত্র সম্পর্কে কথা বলছি না। চলচ্চিত্রের প্রতিটি অভিনেতার অডিশন নেওয়া হয়েছিল এবং এর মধ্যে একটি বাক্য বলা বা কিছুই না বলা অভিনেতারাও ছিলেন।[৯]

প্রবীণ অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ্ ছবিটির প্রথম এবং সুস্পষ্ট পছন্দ ছিলেন। তবে শাহ্ ছবিটি করতে রাজি হবেন কিনা এবং তিনি তাঁর পারিশ্রমিক দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ঢোলাকিয়া খুব শঙ্কিত ছিলেন। তাঁর দ্বিতীয় চিন্তার কারণ চলচ্চিত্রটি খুব স্বল্প বাজেটের ছবি হিসাবে শুরু হয়েছিল। ঢোলাকিয়া তাঁকে চিত্রনাট্যটি বর্ণনা করার পরে, শাহ্ বলেছিলেন, "আমি নীতিগতভাবে সম্মত হই, যদি আমরা এটিকে সংবেদনশীল এবং বাস্তবসম্মতভাবে তৈরি করি।"[৯] শাহ্ ভেবেছিলেন যে ছবির গল্পটি বলা দরকার, এবং তিনি অনুভব করেছিলেন যে তাঁকে এতে অংশ নিতে হবে। অভিনেতাদের সাথে যোগ দিতে রাজি হওয়ার পরে, শাহ্ তাঁর চরিত্রের জন্য সক্রিয়ভাবে গবেষণা করেননি। নিজে পিতা হওয়ার কারণে, তিনি অনুভব করেছিলেন, যে পরিবারের পুত্র দাঙ্গায় হারিয়ে গেছে সেই পরিবারের সাথে সহানুভূতিশীল হওয়া তাঁর পক্ষে কঠিন নয়।[৮] ১৮ বছরের দীর্ঘ বিরতির পরে, সারিকা এই ছবিটি দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে ফিরতে চেয়েছিলেন। যেহেতু ছবিটি একটি আসল এবং সংবেদনশীল সমস্যা নিয়ে কাজ করেছে, তিনি অনুভব করেছিলেন যে পরজানিয়া শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্রের চেয়ে অনেক বেশি কিছু।[১০] দীর্ঘ দিন পরে ক্যামেরার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, শুটিং চলাকালীন সারিকা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিলেন।[১১]

এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শাহ্, সারিকা এবং ঢোলাকিয়া চিত্রনাট্যটির পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তাঁদের পর্দা এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার কারণে, শাহ্ এবং সারিকা বেশ কয়েকবার চিত্রনাট্য পরিবর্তন ও সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।[৯]

ছবিটি গুজরাতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে হবার কারণে, ছবিটিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেখানে মুক্তি দেওয়া হয়নি, প্রেক্ষাগৃহের মালিকরা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ভয়ে এটি দেখাতে অস্বীকৃতি জানায়।[১২][১৩][১৪] একটি নাগরিক অধিকার সংস্থা, আনহাদের উদ্যোগের পরে, ছবিটি এপ্রিল ২০০৭ এর পরে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় প্রদর্শিত হয়েছিল।[১৫]

সারিকার অভিনয় দক্ষতা, যা বিশেষত ছবিটির শেষ দৃশ্যে প্রদর্শিত হয়েছিল যেখানে তিনি মানবাধিকার কমিশনের সামনে তাঁর মানসিক আঘাতটি বর্ণনা করেছেন, সেটি উল্লেখযোগ্য। তিনি একই সাথে বিদ্যমান আবেগগতভাবে ক্লান্ত, পাশাপাশি, দুঃখী মায়ের শক্ত প্রকৃতির চিত্র তুলে ধরেছিলেন, তিনি তাঁর দুর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন এক মায়ের সহ্য করা জীবন পরিবর্তন করে দেওয়া মানসিক আঘাত। তাঁর অভিনয় ছিল স্বাভাবিক এবং বিশ্বাসযোগ্য।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Chu, Henry (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "Film about massacre banned in India state"The Los Angeles TimesSan Francisco Chronicle। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  2. "Heaven & Hell On Earth - Overview"Allmovie। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Apex court SIT submits report on Gulbarg Society massacre"The Hindustan Times। ১৪ মে ২০১০। ৬ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০ 
  4. Kamath, Sudhish (৩ ডিসেম্বর ২০০৫)। "Turnout spells success for IFFI"The Hindu। ৫ মার্চ ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  5. "Modi's blog evokes anger among victims"The Hindu। ২০১৩-১২-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৯ 
  6. Sen, Raja (৩০ আগস্ট ২০০৬)। "Parzania director: 2006's National award winner?"Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  7. Sengupta, Somini (২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "In India, Showing Sectarian Pain to Eyes That Are Closed"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  8. Banerjee, Poulomi (২৪ জানুয়ারি ২০০৭)। "Being Cyrus and Shernaz"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  9. Sen, Raja (৩১ আগস্ট ২০০৬)। "Will Parzania reach theatres?"Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  10. Mathur, Barkha (৯ আগস্ট ২০০৭)। "'I've matured over the years'"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  11. Nair, Suresh (২২ জুলাই ২০০৪)। "18 saal baad..."Times News NetworkThe Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  12. "Flicker of hope for Parzania in Gujarat"Times News NetworkThe Times of India। ২৮ জানুয়ারি ২০০৭। ২২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  13. "Parzania director's offer to Gujarat exhibitors"The Hindu। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৭। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  14. Sharma, Radha (৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "Gujarat will see Parzania if Bajrangi says OK!"The Times of India। ৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  15. "Gujarat finally screens Parzania"। CNN-IBN। ২৪ এপ্রিল ২০০৭। ১২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Rahul Dholakia টেমপ্লেট:2002 Gujarat Violence