পচন নিবারক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পচন নিবারক পভিডোন-আয়োডিন ত্বকে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
পচন নিবারক ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানলের দ্রবণের (৭০%) বোতল

পচন নিবারক বলতে এমন কিছু সক্রিয় রাসায়নিক যৌগকে বোঝায় যেগুলি নিরাপদে ত্বকে বা সজীব দেহকলার পৃষ্ঠতলে (যেমন মিউকাসময় পৃষ্ঠতল) অবস্থিত জীবাণুদের ধ্বংস করতে পারে বা সেগুলির বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে, যাতে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর কারণে সৃষ্ট রোগ সংক্রমণ এবং পচন নিবারণ বা প্রতিরোধ করা যায়।[১][২][৩] পচন নিবারক পদার্থগুলি সংক্রমণ নিবারক হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। অনেক সময় দেহের অভ্যন্তরে অন্ত্র বা মূত্রথলিতে জীবাণু সংক্রমণ সারানোর জন্য বিশেষ ধরনের পচন নিবারক ব্যবহার করা হয়।[৩][৪] পচন নিবারকগুলি এক ধরনের জীবনাশকজীবাণু নিরোধক[৫] এগুলি জীবাণুদের কোষপ্রাচীরের ক্ষতিসাধন করে এগুলিকে মেরে ফেলে বা প্রতিরোধ করে।[৫] পচন নিবারককে ইংরেজি পরিভাষায় অ্যান্টিসেপ্টিক (Antiseptic) বলা হয়।

পচন নিবারকগুলি শিল্পকারখানাতে ব্যবহারযোগ্য পণ্য এবং গৃহস্থালি পণ্য হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়। শিল্পকারখানাতে ব্যবহার্য পচন নিবারকগুলিতে সক্রিয় রাসায়নিক পদার্থের ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে, তাই এগুলি অধিকতর বিষাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ত্বকে ব্যবহার্য পচন নিবারকগুলি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও নিরাপদ, এগুলি দেহকলার ক্ষতি করতে পারে না। তবে ব্যবহারযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে এগুলি বিপজ্জনক এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।[২]

ঐতিহ্যগতভাবে অ্যালকোহলের দ্রবণ (যেমন ৭০% ইথাইল অ্যালকোহল, মিথাইল অ্যালকোহল বা আইসো-প্রোপানল) পচন নিবারক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্লোরহেক্সিডিন বা আয়োডিন জাতীয় হ্যালোজেন যৌগের ব্যবহার বেশি (যেমন আয়োডিন টিংচার)। এছাড়া হাইড্রোজেন পারক্সাইডও পচন নিবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংক্রমণ নিবারকের মধ্যে আছে সেট্রিমাইড, পারদের বাইক্লোরাইড, বোরিক অ্যাসিড, হাইপোক্লোরাইট, মার্কিউরোক্রোম, পভিডোন-আয়োডিন এবং মার্থিয়োলেট[২][৩][৬] এছাড়া প্রাকৃতিক পচন নিবারক যেমন স্যাংকুইনারিন দাঁতের মাজন বা টুথপেস্টে ব্যবহার করা হয়।[৫]

ইংরেজ শল্যচিকিৎসক জোসেফ লিস্টার ১৮৬৭ সালে চিকিৎসাক্ষেত্রে পচন নিবারকের ব্যবহার প্রচলন করেন। লিস্টার জার্মান শরীরতত্ত্ববিদ টেওডোর শভান এবং ফরাসি জৈবরসায়নবিদ লুই পাস্তরের গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপরে কাজ করেন এবং এই কাজের উপর ভিত্তি করে শল্যচিকিৎসাজনিত ও দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের ক্ষতগুলিকে কার্বলিক অ্যাসিড তথা ফেনলের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করেন। এছাড়া তিনি শল্যযন্ত্রপাতিগুলিকেও ফেনল দিয়ে পরিষ্কার করতেন। তিনি ফেনলের একটি স্প্রে-ও উদ্ভাবন করেন যা শল্যচিকিৎসা কক্ষ ও রোগীর চিকিৎসা-পরিবর্তী আরোগ্যলাভ কক্ষে বাতাসে ছিটিয়ে দেয়া হত। এর ফলে ৫ বছরের ব্যবধানে অঙ্গকর্তনমূলক গুরুতর শল্যচিকিৎসাতে মৃত্যুর হার প্রায় ৫০ শতাংশ থেকে মাত্র প্রায় ১২ শতাংশে নেমে আসে।[৭] তবে কার্বলিক অ্যাসিড বা ফেনল বেশি বিষাক্ত বলে এটি আর ব্যবহার করা হয় না।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Robert Hine, সম্পাদক (২০১৯), A Dictionary of Biology (8 সংস্করণ), Oxford University Press 
  2. D. Nicholas Bateman; Robert D. Jefferson; Simon Thomas; John Paul Thompson (২০১৪), Oxford Desk Reference: Toxicology, Oxford University Press 
  3. Elizabeth A. Martin; Tanya A. McFerran, সম্পাদকগণ (২০১৭), A Dictionary of Nursing (7 সংস্করণ), Oxford University Press 
  4. Elizabeth Martin, সম্পাদক (২০১৫), Concise Medical Dictionary (9 সংস্করণ), Oxford University Press 
  5. Robert Ireland, সম্পাদক (২০১০), A Dictionary of Dentistry, Oxford University Press 
  6. Miquel Porta; John M. Last, সম্পাদকগণ (২০১৮), A Dictionary of Public Health (2 সংস্করণ), Oxford University Press 
  7. Richard L. Myers (২০০৭), "Phenol", The 100 Most Important Chemical Compounds: A Reference Guide, Greenwood Press, পৃষ্ঠা 241