নেফ্রন
| নেফ্রন | |
|---|---|
লম্বা জাক্সটামেডুলারি নেফ্রন (বামে) ও খাটো কর্টিকাল নেফ্রন (ডানে) | |
| বিস্তারিত | |
| পূর্বভ্রূণ | মেটানেফ্রিক ব্লাস্টেমা (ইন্টারমিডিয়েট মেসোডার্ম) |
| তন্ত্র | রেচনতন্ত্র |
| শনাক্তকারী | |
| লাতিন | nephroneum |
| মে-এসএইচ | D009399 |
| এফএমএ | FMA:17640 |
| শারীরস্থান পরিভাষা | |
নেফ্রন (ইংরেজি: Nephron) বৃক্কের আণবীক্ষণিক গঠনগত এবং কার্যকরী একক। এটি রেনাল চক্রিকা (করপাসল) ও রেনাল নালিকা নিয়ে গঠিত। রেনাল চক্রিকা গ্লোমেরুলাস নামক একগুচ্ছ কৈশিক জালিকা এবং বোম্যান্স ক্যাপসুল নামক পেয়ালাকৃতির গঠন নিয়ে গঠিত। রেনাল নালিকা ক্যাপসুল থেকে বিস্তৃত। ক্যাপসুল ও নালিকা পরস্পর সংযুক্ত এবং এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে তৈরি। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষের দেহে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ নেফ্রন থাকে।[১] নেফ্রন রক্ত পরিশোধন করে এবং এ প্রকিয়ায় দেহের তরল ও অন্যান্য উপাদানের পরমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়। নালিকার শেষ প্রান্তে পরিশোধিত তরল মূত্র হিসেবে জমা হয়।
বোম্যান্স ক্যাপসুলের ভিতরকার স্থান বোম্যান্স স্পেস নামে পরিচিত, যেখানে গ্লোমেরুলার কৈশিক নালিকার মাধ্যমে পরিশোধিত তরল এসে জমা হয়। এছাড়াও এখানে থাকে মেসানজিয়াল কোষ। একত্রে এরা রেনাল করপাসল গঠন করে এবং পরিশোধনের একক হিসেবে কাজ করে। গ্লোমেরুলার পরিশোধন বাধ তিনটি স্তরে বিভক্ত: এন্ডোথেলিয়াল কোষ, বেসমেন্ট পর্দা ও পোডোসাইট নামক পা আকৃতির কোষ। গঠনগত ও কার্যগত দিক থেকে নালিকার পাঁচটি পৃথক অংশ থাকে: নিকটবর্তী নালিকা, যা নিকটবর্তী প্যাঁচানো অংশ (নিকটবর্তী প্যাঁচানো নালিকা) ও পরবর্তী সোজা অংশে বিভক্ত; হেনলির লুপ, যাতে উর্ধ্বগামী (উর্ধ্বগামী হেনলির লুপ) ও নিম্নগামী (নিম্নগামী হেনলির লুপ) – দুইটি অংশ থাকে; দূরবর্তী প্যাঁচানো নালিকা; সংযোগী নালিকা এবং সংগ্রাহী নালিকা। নেফ্রনের দৈর্ঘ্য দুই ধরণের হয়: লম্বা জাক্সটামেডুলারি (মেডুলার নিকটবর্তী) নেফ্রন ও কর্টিকাল (কর্টেক্সে অবস্থিত) নেফ্রন, যাদের মুত্র ঘনত্বকারী ক্ষমতা ভিন্নরকম।
নেফ্রনের প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]কর্টেক্সে নেফ্রনের ম্যালপিজিয়ান করপাসলের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে নেফ্রনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়,-
- সুপারফিসিয়াল নেফ্রন (৮৫%):-এই প্রকার নেফ্রন ছোট আকৃতির হয় এবং বৃক্কের সুপারফিসিয়াল কর্টেক্সে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এই প্রকারের নেফ্রন ই মূত্র উৎপাদন করে।
- মিড করটিক্যাল নেফ্রন(৫%)- এদের লুপ খাটো, লম্বা বা মাঝারি প্রকৃতির।
- জাক্সট্রামেডুলারি নেফ্রন (১০%):- এই প্রকার নেফ্রন তুলনামূলকভাবে বড় আকৃতির হয় এবং বৃক্কের জাক্সট্রামেডুলারি কর্টেক্সে অর্থাৎ মেডুলার ঠিক উপরে কর্টক্সে থাকে। জরুরী অবস্থায় বা পীড়ন অবস্থায় এই প্রকারের নেফ্রন মূত্র উৎপাদন করে।
নেফ্রনের গঠন
[সম্পাদনা]
নেফ্রন হলো কিডনির গাঠনিক ও কার্যকরী একক। অর্থাৎ নেফ্রনেই কিডনির মূল কাজ সম্পাদিত হয়। একটি নেফ্রন দুটি অংশ দিয়ে তৈরি: একটি রেনাল করপাসল, যা প্রাথমিক ফিল্টারিং উপাদান এবং একটি রেনাল নল যা ফিল্টার করা তরলটি প্রক্রিয়া করে এবং বহন করে। [3]
রেনাল করপাসল
[সম্পাদনা]রেনাল করপাসল রক্ত রক্তরস পরিস্রুতনের স্থান। রেনাল করপাসল গ্লোমেরুলাস এবং গ্লোমেরুলার ক্যাপসুল বা বোম্যান্স ক্যাপসুল দিয়ে তৈরি।
রেনাল করপাসেলের দুটি অংশ রয়েছে: একটি ভাস্কুলার মেরু এবং একটি নলাকার মেরু। রেনাল সংবহন থেকে ধমনীগুলি প্রবেশ করায় এবং গ্লোমেরুলাসকে ভাস্কুলার মেরুতে ছেড়ে দেয়। গ্লোমেরুলার ফিল্টারেট মূত্রনালীতে রেনাল টিউবুলে বোম্যানের ক্যাপসুল ছেড়ে দেয়।
গ্লোমারুলাস
[সম্পাদনা]গ্লোমারুলাস বোম্যান্স ক্যাপসুলের রেনাল করপাসলের ভাস্কুলার মেরুতে অবস্থিত ফিল্টারিং কৈশিকগুলির একটি টুফ্ট হিসাবে পরিচিত নেটওয়ার্ক। প্রতিটি গ্লোমারুলাস রেনাল সংবহন একটি অভিজাত ধমনী থেকে তার রক্ত সরবরাহ গ্রহণ করে। গ্লোমেরুলার রক্তচাপ জলের জন্য ড্রাইভিং শক্তি সরবরাহ করে এবং রক্তের রক্তরস থেকে ফিল্টার করার জন্য দ্রবণগুলি এবং বোম্যানের ক্যাপসুলের অভ্যন্তরে Bowman's কে যায় যা বোম্যানের স্থান বলে।
প্লাজমার প্রায় এক পঞ্চমাংশই গ্লোমারুলাসে ফিল্টার হয়। বাকিগুলি একটি উত্তেজনাপূর্ণ আর্টেরিওলে যায়। এফিগেরেন্ট আর্টেরিওলের ব্যাস অ্যাফেরেন্টের চেয়ে ছোট, এবং এই পার্থক্যটি গ্লোমারুলাসের হাইড্রোস্ট্যাটিক চাপকে বাড়িয়ে তোলে।এটি ছাঁকনির মতো কাজ করে। গ্লোমেরুলাস নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থবিশিষ্ট রক্ত থেকে যে পরিস্রুত তরল উৎপন্ন করে তাকে বলা হয় আল্ট্রাফিল্ট্রেট।[২]
মূত্র উৎপাদন
[সম্পাদনা]মূত্র উৎপাদন ( Formation of Urine):অন্তর্মুখী সূক্ষ্মধমনী (Afferent arteriole) মারফৎ বিভিন্ন রেচন পদার্থ (প্রধানত ইউরিয়া) সমন্বিত রক্ত গ্লোমেরুলাসে আসে। আমাদের যকৃতে ইউরিয়া উৎপাদনের কাজ চলে। গ্লোমেরুলাস বোম্যান্স ক্যাপস্যুল দিয়ে ঘেরা থাকে। উক্ত ক্যাপস্যুল পরিস্রবণের (Filter) কাজ করায় এবং উক্ত অংশে পরিস্রাবণ বা ছাঁকনের উপযোগী চাপ থাকায় প্লাজমার অ-কলয়েডীয় উপাদান পরিস্রাবণ-প্রক্রিয়ায় রেনাল টিউব্যুলে আসে।
রেনাল টিউব্যুলের প্রথম অংশে ইউরিয়ার সঙ্গে প্রোটিন, গ্লুকোজ, জল, ভিটামিন সোডিয়াম, পটাসিয়াম ইত্যাদি লবণ অর্থাৎ দেহের পক্ষে দরকারী উপাদানেরও প্রবেশ ঘটে। শোষণ ক্রিয়ায় মাইক্রোভিলাই অংশ নেয়। নেফ্রনের পরবর্তী অংশে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি রক্তের মধ্যে পুনরায় শোষিত হয়, কিন্তু দেহের পক্ষে ক্ষতিকারক অপ্রয়োজনীয় পদার্থ (যেমন, ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড) শোষিত হয় না এবং অশোধিত পদার্থগুলি জলের সঙ্গে একসঙ্গে মিশে মূত্রের সৃষ্টি করে। রেনাল টিউব্যুল থেকে সংগ্রাহী নালীর মাধ্যমে ঐ মূত্র রেনাল পেলভিস (Renal Pelvis) অংশে আসে। সেখান থেকে ইউরেটার বা মূত্রনালীর মাধ্যমে মূত্র এসে মূত্রাশয়ে জমা হয়।[৩]