নুরুল উদ্দীন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

নূরলদীন বা নুরুল উদ্দীন (মৃত্যু- ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৭৮৩) হলেন কৃষক বিদ্রোহের নেতা। তিনি ইংরেজ বেনিয়াদের নিষ্ঠুর শাসন ও তাদের সহযোগী দেবী সিংহ ও অন্যান্য জমিদারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে পরিচিতি পান।[১] তার নেতৃত্বে সমস্ত ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। [২] রংপুরের কৃষক বিদ্রোহে প্রাণ হারানোদের একজন ছিলেন নুরুলদীন। তিনি কৃষকদের নবাব নূরলদীন নামেও পরিচিত। তার আসল নাম ছিল নূরুউদ্দীন মোহাম্মদ বাকের জং। ইংরেজ শাসন উৎখাতে ১৭৬০ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত একাধিক যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।[৩][৪] তাকে নিয়ে সাব্যসাচি লেখক সৈয়দ শামসুল হক রচিত কাব্যনাটক নূরলদীনের সারাজীবন বেশ আলোচিত। [৫][৬]

জীবনী[সম্পাদনা]

নুরুলদীন রংপুর মিঠাপুকুরের কাছে ফুলচৌকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৭০ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানে চরম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। নুরুলদীনকে এ দুর্ভিক্ষের প্রতিবাদে ইংরেজদের বিরুদ্ধে হাজারো কৃষক নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং আন্দোলনে অনেক কৃষক প্রাণ হারান।

বাংলা অঞ্চলে হাহাকারের মধ্যে লুণ্ঠনের মাধ্যমে অর্জিত টাকায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবস্থা রমরমা। রাজস্ব ক্ষমতা হাতে পেয়ে ইংরেজরা চালু করে ইজারা প্রথা। এই ইজারাদারি ব্যবস্থায় রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলের দায়িত্ব পান জমিদার দেবী সিংহ। তিনি স্থানীয় কৃষকদের ওপর চড়া মূল্যের ইজারা আদায় করেন, এতে করে নূরলদীন ও তার বাহিনী কৃষক স্বার্থবিরোধী এই ইজারাপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করেন। [৭]

যুদ্ধ ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৭৮৩ সালের জানুয়ারিতে রংপুর, দিনাজপুর, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির ইংরেজ বিদ্রোহী প্রজারা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে অবস্থান করছিলেন। ইংরেজ-সমর্থিত জমিদাররা তখন প্রাণভয়ে আত্মগোপন করেন। নূরলদীনের নেতৃত্বে একটি দল পাটগ্রামের মোগলহাটে পৌঁছালে তার সঙ্গে কতজন সৈন্য আছেন তা অনুমান করতে , ইংরেজ বাহিনী তাদের দুজন সৈন্যকে কৃষকদের পোশাক পরিয়ে নূরলদীন বাহিনীর পেছনে পাঠিয়ে দেয়। গোয়েন্দাগিরি করে নূরলদীন বাহিনীর তথ্য জানাই ছিলো এ কাজের উদ্দেশ্য। একপর্যায়ে নূরলদীন তার প্রধান দুই সহযোগী লালমনি ও দয়াশীলসহ ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। যুদ্ধের মধ্যে একজন ইংরেজ সৈন্য পেছন দিক থেকে নূরলদীন আক্রমণ করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লালমনিসহ অন্যরা তৎক্ষণাৎ নূরলদীনকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। কিন্তু যুদ্ধে তার অপর সহযোগী দয়াশীল নিহত হন।[৮][৯]

আহত নূরলদীনকে তিস্তা নদীতীরবর্তী এলাকায় নিয়ে সেবা করেন লালমনি। কিন্তু ইংরেজ বাহিনী আহত নূরলদীনকে খুঁজতে থাকলে গভীর রাতে তিস্তা নদী পার হয়ে রংপুরের মিঠাপুকুরের কাছে ফুলচৌকি গ্রামে নূরলদীনকে নিয়ে যাওয়া হয়, যেটি তার নিজের গ্রাম। আহত অবস্থায় ১৭৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নূরলদীন ফুলচৌকির নিজ বাড়িতে মারা যান এবং বাড়িতেই দাফন করা হয় । [১০] [১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sangbad, Protidiner। "নূরলদিন, স্বাধীনতাকামী একজন কৃষকের গল্প"Protidiner Sangbad। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০২ 
  2. "জাগো বাহে কোনঠে সবায় (শেষ পর্ব)"banglanews24.com। ২০১৫-০২-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০২ 
  3. হক, আরিফুল (২০২১-০৮-২৬)। "নূরলদীনের গ্রাম"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০২ 
  4. রায়, সুপ্রকাশ রায়। ভারতের কৃষক বিদ্রোহ  ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন – সুপ্রকাশ রায় 
  5. সাদী, মোহাম্মদ শেখ (২০২২-১২-২৭)। "সৈয়দ শামসুল হকের নূরলদীনের সারাজীবন: বিবিধ ভাবনা"The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০২ 
  6. "নূরলদীন ও রংপুর কৃষক বিদ্রোহ: জাতিসত্তার দ্রোহ ও মুক্তি"আজকের পত্রিকা। ৪ মে ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০২৩ 
  7. আমানতুল্লা আহমেদ, খাঁন চৌধুরী। কোচবিহারের ইতিহাস 
  8. "ইতিহাসে মোগলহাট ইউনিয়ন"mogolhatup.lalmonirhat.gov.bd। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০২ 
  9. "রংপুর জেলার ইতিহাস - জেলা প্রসাশন, রংপুর"www.rokomari.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১০-০২ 
  10. রংপুর জেলার ইতিহাস। বাংলাদেশ: রংপুর জেলা প্রশাসক। 
  11. মনিরুজ্জামান, মুহম্মদ (১৯৯১)। রঙ্গপুরের প্রাচীন ইতিহাস (প্রথম খণ্ড)