দ্রুত ভাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বাংলাদেশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দ্রুত ভাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা ভাড়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, যা বিদ্যুতের অতিরিক্ত চাহিদার সময় দ্রুত ভাড়া নেওয়া হয়। বাংলাদেশে এরকম বেশিরভাগ প্ল্যান্ট আমদানিকৃত তরল জ্বালানি দিয়ে চলে।[১] অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই পদ্ধতিটি টেকসই নয়, কেননা বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ, তথাপি যেসব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলোর জন্যও সরকারকে টাকা দিতে হয়। ২০০৯ এর দিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি থাকায় বেসরকারী এই ব্যবস্থা চালু হয়।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে ঘোরতর আপত্তির মুখেও এই ব্যবস্থার মেয়াদ "বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১" পাঁচ বছর বাড়ানো হয়।[২][৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০০৭-৯ এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা নতুন অধিষ্ঠিত সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাৃনের উদ্দেশ্যে প্রসারণ করে। এই ব্যবস্থায় আইনি এড়াতে সরকার 'দায়মুক্তি আইন-২০১০' গ্রহণ করে।[৩] এসময় দুর্নীতি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে অনেক সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে তবে লোডশেডিং কমে যায়। এই ব্যবস্থা শুরুর সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ছিল ৳২.৫৫ প্রতি ইউনিট।

২০১০-১১ সালে এটি ৩-৫ বছরের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যতদিন না সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়, কিন্তু পরবর্তিতে এটিই বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল ভিত্তি হয়। মনে করা হয়, এটি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বণ্টনের একটি পদ্ধতি। বিশ্বব্যাংক ক্রমশ এই বেসরকারি ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার কথা বললেও সরকার ক্রমশ এই পদ্ধতি বৃদ্ধি করেছে।[৪][৫]

বিদ্যুতের এই ভর্তুকির জন্য ২০০৭ সালে জিডিপির .১% খরচ হলেও ২০১৩ সালে তা হয় জিডিপির ১.৭%, যা বছরে ৳২০,০০০ কোটি এর সমান।[৪] ২০১৯-২০২২ এ প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে খরচ হয়।[৬]

২০২১ এ বিদ্যুৎ চাহিদা ৯ থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াট হলেও, উৎপাদন সক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াট। এই অতিরিক্ত সক্ষমতার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও বেসরকারি চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা দিতে হয়, যার ফলস্বরূপ দাম বৃদ্ধি পায়। ক্যাব(ক্রেতা সংগঠন) ২০২১ সালে কুইক রেন্টাল পদ্ধতি সম্পূর্ণ তুলে নেওয়া সহ[৭]

ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ, সিপিডি বলে বিদেশি গ্যাসের দাম দেশে উৎপন্ন গ্যাসের তুলনায় ২৪ গুণ দামি।[৮] বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ গ্যাসে উৎপন্ন হয়। দেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে গ্যাস খনন করতে খরচ কম পড়লেও যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার গ্যাস প্রতিষ্ঠানকে বাপেক্সের আবিষ্কৃত গ্যাস উত্তোলনের কাজ দেওয়া হয়।

২০২২ এ বৈদেশিক মুদ্রা সংকটে লোড শেডিং তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়ায় বিদ্যুৎ ও ক্যাপাসিটি চার্জ নিয় আবার আলোচনা শুরু হয়।[৯][১০][৬]

আগস্ট ২০২২, পেট্রোবাংলাকে দায়মুক্তির জন্য আইনে সুপারিশ করা হয়, যার কিছু সময় আগে তেলের দাম ৫২% বাড়ানো হয়।[১১]

প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা[সম্পাদনা]

২০২০ সালে আইনজীবী ও সামাজিক কর্মীরা এই আইনকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যায়িত করে, কেননা এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়।[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বিদ্যুৎ উৎপাদন: কুইক রেন্টালে কতটা লাভবান বাংলাদেশ?"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২১ 
  2. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চলবে আরও ৫ বছর, বিল পাস"প্রথম আলো। ২০২১-১০-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২১ 
  3. মোর্তোজা, গোলাম (২০২১-০৯-১০)। "বিদ্যুৎ 'উন্নয়ন' দর্শনে ত্রুটি"দৈনিক ডেইলি স্টার বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০৯ 
  4. বাইরন, রেজাউল করিম; রহমান, মো. ফজলুর (২০১৪-০৪-২০)। "Phase out quick rental plants[কুইক রেন্টাল সরিয়ে ফেলুন]"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৬ 
  5. আলী রীয়াজ, মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান (জানুয়ারি ২০২১)। বাংলাদেশে মিডিয়ার মালিক কারা? (পিডিএফ)। ৪৫/১ নিউ ইস্কাটন, ২য় তলা, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ: সেন্টার ফর গর্ভন্যান্স স্টাডিজ। পৃষ্ঠা ৭। আইএসবিএন 978-984-95364-1-3 
  6. Welle (www.dw.com), Deutsche। "ক্যাপাসিটি চার্জের শক: তিন বছরে হাওয়া ৫৪ হাজার কোটি টাকা | DW | 20.07.2022"DW.COM। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫ 
  7. রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০২১-০৯-২১)। "বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিতে ক্যাবের ৫ দাবি"দ্য ডেইলি স্টার বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৬ 
  8. "Imported LNG to be 24 times more expensive than local gas: CPD"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০২-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৭ 
  9. "রাত আটটায় দোকান বন্ধ করলে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে?"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫ 
  10. "বিদ্যুৎ না দিলেও কেন ভারতীয় কোম্পানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে বাংলাদেশকে"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০৫ 
  11. রহমান, আসিফুর; হাসান, রাশিদুল (২০২২-০৮-২৩)। "পেট্রোবাংলার জন্যও দায়মুক্তির আইন"The Daily Star Bangla। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-২৩ 
  12. প্রতিবেদন, স্টার অনলাইন (২০২০-০৭-১০)। "Lawyers and activists term speedy energy supply act 'unconstitutional'"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-০৫