দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আলবার্ট পিংকহাম রেডামের অঙ্কিত দ্য ফ্লাইং ডাচম্যান সি. ১৮৮৭ (স্মিথসোনিয়াম আমেরিকান আর্ট মিউজিয়াম)।

ফ্লাইং ডাচম্যান একটি কিংবদন্তি ভৌতিক জাহাজ যা কোনদিন কোথাও নোঙ্গর করেনি এবং সমুদ্রযাত্রায় চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে। ভুতূড়ে জাহাজ নিয়ে যত লোককাহিনী প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ফ্লাইং ডাচম্যান। এই লোককাহিনীটির উৎপত্তি মূলত ১৭-শতকের সামুদ্রিক লোকাঁচারবিদ্যা থেকে। প্রাচীন নথিপত্রে এই জাহাজটিকে ১৮-শতকের শেষের দিকের জাহাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রচলিত রয়েছে, ১৯ ও বিংশ-শতকের দিকে সমুদ্রের মাঝে জাহাজটিতে ভূতুরে আলো দেখা যেত। ফ্লাইং ডাচম্যান যখন কোন জাহাজকে অতিক্রম করত তখন এর ক্রুরা বহুদূরের প্রেতাত্মা বা অশুভ শক্তিকে বার্তা পাঠাত। সামুদ্রিক কিংবদন্তি অনুসারে, অভিশপ্ত জাহাজটি ঝড়ের কবলে পরে সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সাড়া বিশ্বে নাবিকদের মাঝে এই অভিশপ্ত ও ভৌতিক জাহাজটির কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। অনেক নাবিক মনে করেন, জাহাজটি ও তার ক্রুরা সকলেই অভিশপ্ত এবং ঈশ্বরের অভিশাপের কারণেই তারা কোনদিন নোঙ্গর করতে পারেননি। কাহিনী অনুসারে, ফ্লাইং ডাচম্যান সমুদ্রে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায় এবং এটি যেমন সমুদ্রে হঠাৎ করেই অবির্ভাব হয় তেমনি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। অনেক নাবিকরা তাদের জীবন বাজি রেখে ফ্লাইং ডাচম্যানকে তাদের জাহাজের পাশ দিয়ে যেতে দেখেছেন বলে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া এই জাহাজ নিয়ে হলিউডে একাধিক সিনেমা তৈরি হয়েছে । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ' পাইরেটস্ অব দ্যা ক্যারাবিয়ান' এবং ' প্যান্ডোরা অ্যান্ড দ্যা ফ্লাইং ডাচম্যান ্ '।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

লিখিত সংস্করণে ফ্লাইং ডাচম্যান সম্পর্কে প্রথম জানা যায় জর্জ বেরিংটন (১৭৫৫-১৮০৪) সংকলিত অ্য ভয়েজ টু বোটানি বে (১৭৯৫) (অ্য ভয়েজ টু নিউ সাউথ ওয়াল্‌স নামেও পরিচিত)-এর ষষ্ঠ অধ্যায়ে:[nb ১]

আমি প্রায়ই নাবিকদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন কাহিনীগুলো শুনতাম কিন্তু প্রতিবেদগুলোতে কাউকেই খুব বেশি কৃতিত্ব নিতে দেখি নি; এটা মনে হচ্ছে যে, কয়েক বছর পূর্বে একজন ওলন্দাজ লোক যুদ্ধে কেপ অফ গুড হুপে হারিয়ে যান এবং জাহাজের ডেকের সকল নাবিকই অভিশপ্ত হয়ে যান। এসময় জাহাজটি মাঝ সমুদ্রে একটি ঝড়ের কবলে পরে এবং শীঘ্রই কেপ টাউনে এসে পৌঁছেন। পরবর্তীতে জাহাজটিকে সংস্কার করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুতি নেন কিন্তু একই অক্ষাংশে ভয়াল একটি ঝড়ে ফ্লাইং ডাচম্যান জর্জরিত হয়। একই রাতে কিছু লোক দেখেছিল অথবা দেখেছিল বলে কল্পনা করেছিল, একটি জাহাজ তাদের জন্য ঝড়ের মধ্যে যাত্রা করার উদ্দেশ্যে অপেক্ষা করছে। জাহাজটি যেমন হঠাৎ করেই উদয় হয়েছিল তেমনি হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকে কাহিনীটি নাবিকদের মনে স্থান করে নিয়েছিল এবং যখন তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে আসে তখন কাহিনীটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পরে এবং জাহাজটির নাম দেওয়া হয় ফ্লাইং ডাচম্যান বা উড়ন্ত ওলন্দাজ। সেসময়কার ওলন্দাজদের কাছ থেকে ইংরেজ নাবিক ও কিছু ভারতীয় নাবিকও মনে করেন জাহাজটির ডেকে তারা কিছু প্রেতাত্মা দেখেছেন।[১]

জাহাজটি নিয়ে যেসব কাহিনী প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলে, ১৭২৯ সালে একজন ফ্লাইং ডাচম্যান ১ নামে একটি ওলন্দাজ জাহাজ যার ক্যাপ্টেন ছিলেন হেনড্রিক ভ্যান্ডারডেকেন। জাহাজটি কেপ টাউনের দিকে যাচ্ছিল কিন্তু যাত্রা পথে ঝড়ের কবলে পরে কিন্তু জাহাজে ক্রুরা ভয় পাওয়া স্বত্বেও ক্যাপ্টেন হেনড্রিক জাহাজটি কেপ টাউনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। এক পর্যায়ে নাবিকদের কিছু অংশ বিদ্রোহ করে কিন্তু ক্যাপ্টেন বিদ্রোহীদের ক্যাপ্টেনকে গুলি করে হত্যা করেন ও লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেন। এরপর থেকে জাহাজটি সমুদ্রে চিরতরে হারিয়ে যায়।

জাহাজটাকে নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯৩৯ সালের মার্চে। দক্ষিণ আফ্রিকার গ্গ্নেনকেইন বিচে জড়ো হওয়া কিছু মানুষ অবাক হয়ে দেখে, সপ্তদশ শতাব্দীর একটা পালতোলা জাহাজ ধীরে ধীরে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সমুদ্রতীরে আঘাত হানবে ওটা। সমুদ্রে একটু বাতাস না থাকলেও পাল ফুলিয়ে তরতর করে এগিয়ে আসছিল জাহাজটি। তীরে দাঁড়ানো মানুষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকল কী ঘটতে যাচ্ছে, তা দেখার জন্য। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিল পরের ঘটনাটি। যেভাবে হঠাৎ করে উদয় হয়েছিল ফ্লাইং ডাচম্যান নামের ভুতুড়ে জাহাজ, একইভাবে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়।

অপর কাহিনীমতে (রিচার্ড ওয়্যাগনার এর নাটক অবলম্বনে) ১৭২৯ সালে (১৬৮০ এর পরিবর্তে) ফ্লাইং ডাচম্যান এর ক্যাপ্টেনকে কোন কারণে অসন্তুষ্ট হয়ে শয়তান অভিসম্পাত করে যে এই জাহাজ নিয়ে ক্যাপ্টেন অনন্তকাল সমুদ্রে ভাসবে। তাঁর মুক্তির একমাত্র উপায় হচ্ছে কোন বিশ্বস্ত নারীর সত্যিকার ভালবাসা। তাই ধারণা করা হয় যে ফ্লাইং ডাচম্যান তার ক্যাপ্টেন সহ মাঝে মাঝে আবির্ভুত হয় সেই বিশ্বস্ত নারীর খোঁজে, মুক্তির আশায়। লোকমুখে শোনা যায় যে দ্য ফ্লাইং ডাচম্যানকে নাকি পরবর্তীতে ভূত-জাহাজ হিসেবে বেশ কয়েক বার সমুদ্রে দেখা যায়, বিশেষ করে ঝড়ের মধ্যে। ফ্লাইং ডাচম্যানকে স্বচক্ষে দেখেছেন বলে কেউ কেউ দাবিও করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

পদটীকা

  1. George Barrington (originally Waldron) was tried at the Old Bailey in London in September 1790 for picking pockets and sentenced to transportation for seven years. He embarked on the convict transport Active which sailed from Portsmouth on 27 March 1791 and arrived at Port Jackson (Sydney), just to the north of Botany Bay, on 26 September, having anchored briefly at Table Bay in very late June. The various accounts of his voyage and activities in New South Wales appear to be literary forgeries by publishers capitalising on both his notoriety and in public interest for the new colony, combining turns of phrase from his trial speeches with plagiarised genuine accounts of other writers concerning Botany Bay. See George Barrington's Voyage to Botany Bay edited by Suzanne Rickard (Leicester University Press, 2001). A Voyage to Botany Bay and A Voyage to New South Wales, both issued in 1795, were revamped versions of An Impartial and Circumstantial Narrative of the Present State of Botany Bay, which had appeared in 1793–94, but which did not include the Flying Dutchman reference.

উৎস

  1. Barrington 2004, পৃ. 30

গ্রন্থপঞ্জি

  • Barrington, George (২০০৪) [1795], Voyage to Botany Bay, Sydney University Press, আইএসবিএন 1-920897-20-8 
  • Meyer-Arendt, Jurgen (১৯৯৫) [1972], Introduction to Modern and Classical Optics, Prentice-Hall, Inc., আইএসবিএন 0-13-124356-X 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]