বিষয়বস্তুতে চলুন

দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার
দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার
জন্ম(১৮৪৪-০১-০৭)৭ জানুয়ারি ১৮৪৪
মৃত্যু৮ অক্টোবর ১৯১১(1911-10-08) (বয়স ৬৭)
জাতীয়তাভারতীয়
পরিচিতির কারণশ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য
আত্মীয়প্রসন্ননাথ মজুমদার (পিতা)
বামাসুন্দরী দেবী (মাতা)

মহাত্মা দেবেন্দ্রনাথ মজুমদার (৭ জানুয়ারি ১৮৪৪ – ৮ অক্টোবর ১৯১১)[] ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের পরম ভক্ত, গৃহী সন্ন্যাসী ও গীতিকার। ভব সাগর তারণ কারণ হে — এই বিখ্যাত গুরুবন্দনাসহ অন্যান্য ভক্তিমূলক ভজনগানের রচয়িতা তিনি।[][]

জীবনী

[সম্পাদনা]

দেবেন্দ্রনাথ মজুমদারের জন্ম ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের যশোর জেলার নড়াইল থানার জগন্নাথপুর গ্রামের মজুমদার উপাধিধারী বন্দ্যোপাধ্যায় বংশে। তার জন্মের দুই মাস আগে তার পিতা প্রসন্ননাথ মারা যান। পরে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সুরেন্দ্রর মৃত্যু হলে তার মাতা বামাসুন্দরী দেবী চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েন।[] শেষে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির জমিদার সেরেস্তায় চাকরি নেন। এই সময় তিনি সাহিত্য চর্চার সঙ্গে যোগাভ্যাস করতে থাকেন এবং এর মধ্য দিয়ে তিনি বহু দেবদেবীর দর্শন পেতেন। ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন পান। এই সময়ে এক পুস্তকে পরমহংস রামকৃষ্ণ কথা দুটি পড়ে তার প্রতি এক প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি দক্ষিণেশ্বর যান এবং সেখানে রামকৃষ্ণের দেবদুর্লভ আচরণে যারপরনাই মুগ্ধ হন। কিন্তু এদিনই আকস্মিক অসুস্থতা নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। প্রবল জ্বরে শয্যাগত হলে তিনি তার শিয়রে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে অনুভব করতেন। এরপর যখন বলরাম বসুর গৃহে রামকৃষ্ণকে দর্শন করার পর মানসিকভাবে তিনি তাকে তার গুরু হিসাবে গ্রহণ করেন এবং অনুভব করেন যে তিনি যেন সর্বদা তার সাথে আছেন এবং নজর রাখেন। শীঘ্রই তিনি সেরেস্তার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন এবং সাধনার জীবন যাপন শুরু করেন। মাঝে মধ্যেই দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত শুরু করেন ঠাকুরের দর্শন লাভের প্রত্যাশায়। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল, শ্রীরামকৃষ্ণ বেশ কয়েকজন ভক্তের সাথে দেবেন্দ্রের বাড়িতে যান এবং তিনি ঠাকুরকে একদিন সেবা করার সুযোগ পান। দেবেন্দ্রনাথ সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানালে, ঠাকুর সম্মত হননি।

পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর দেবেন্দ্র সময় পেলেই বরানগর মঠ এবং কাঁকুড়গাছি যোগোদ্যানে যেতেন। ১৮৯৩ থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি গিরিশ ঘোষের মিনার্ভা থিয়েটারে কাজ করেছিলেন, কিন্তু কাজটি যেন তাকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে মনে করে, তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং আর্থিক অনটনে দিন যাপন করতে থাকেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ অর্চনালয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংসের মূর্তি

১৯০০ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে কলকাতার এন্টালির ৪৩, দেব লেনে হেমচন্দ্র বসুর বাড়িতে রামকৃষ্ণের অনুগামীদের নিয়ে ঠাকুরের ছবি স্থাপন করে পূজার্চনা করা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৯,দেব লেনে একটি বাড়িতে ঠাকুরের উপাসনার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ অর্চনালয়[] স্বরচিত শ্রীরামকৃষ্ণ ভজন, কীর্তনাদি পরিবেশন করার ব্যবস্থা করেন। তার রচিত গানগুলি পরে দেব-গীতি নামক পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। তার বিখ্যাত ভব সাগর তারণ কারণ হে ইত্যাদি গুরুবন্দনা ও অন্যান্য ভক্তিমূলক ভজন এখনও নিয়মিতই গাওয়া হয়।[]

১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ৮ অক্টোবর, অর্চনালয়ে দেবেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের নাম উচ্চারণ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। []

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Devendranath Nath Majumdar-Belur Math"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-২৪ 
  2. "শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতে উল্লিখিত ব্যক্তিদের পরিচয়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৪ 
  3. "Lay disciples of Sri Ramakrishna"। ২০১১-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৯-২৫