তিলাইয়া (প্রজাপতি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তিলাইয়া
Common Pierrot
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Lycaenidae
গণ: Castalius
প্রজাতি: C. rosimon
দ্বিপদী নাম
Castalius rosimon
(Fabricius, 1775)
প্রতিশব্দ

Papilio rosimon Fabricius, 1775

তিলাইয়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Castalius rosimon)[১][২][৩] লাইসিনিডি (Lycaenidae) পরিবারভুক্ত ছোট প্রজাপতি। সাদা দেহের ওপর অসংখ্য ছোট-বড় কালো ফোঁটার জন্য এর নাম তিলাইয়া।[৪]তিলাইয়ার মুখমণ্ডল সাদা ও চোখ কালো। সামনের ডানার নিচের দিকটা সাদা এবং তাতে বিভিন্ন আকারের কতগুলো ফোঁটা বা দাগ সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। পেছনের ডানার ঠিক মাঝামাঝি কোনো ফোঁটা থাকে না। তবে নিচের প্রান্তে গোড়ার দিকে একটি উজ্জ্বল সবুজ গোলাকার ফোঁটা আছে। এদের পিছনের ডানায় খুব সরু, কালো আর সাদায় মেশানো একটা লেজ থাকে। ওপর দিক থেকে দেখলে ডানার গোড়া ধাতব সবুজ দেখায়। সামনের ও পেছনের ডানার প্রান্তে মোটা কালো বা কালচে-ধূসর রেখা থাকে; আর তাতে থাকে ছোট সাদা ফোঁটা। পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে একই রকম হয়।[৪]

আকার[সম্পাদনা]

তিলাইয়ার প্রসারিত অবস্থায় ডানার মাপ ২৪-৩২ মিলিমিটার হতে পারে।[৪][৫]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

ভারতে প্রাপ্ত তিলাইয়া এর উপপ্রজাতি হল- [৬]

  • Castalius rosimon rosimon Fabricius, 1775 – Continental Common Pierrot
  • Castalius rosimon alarbus Fruhstorfer, 1922 – Andaman Common Pierrot

বিস্তার[সম্পাদনা]

সাধারণত বনাঞ্চলে এদের দেখা মেলে। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশেও এদের দেখা যায়[৭]। উত্তর -পশ্চিমের শুষ্ক অঞ্চল ছাড়া সমগ্র ভারত এছাড়া শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও মায়ানমারে এদের দেখা পাওয়া যায়।[৪]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই ডানার উপরিতল সাদা, চওড়া কালো বর্ডার এবং বেসাল থেকে ডিসকাল অংশে কালো ছোপযুক্ত। কোস্টাল বর্ডার চওড়া এবং এপিকাল ও টার্মিনাল বর্ডার অধিকতর চওড়া। ডানার গোড়া (base) ধাতব নীলচে আঁশে ছাওয়া। স্ত্রী প্রকারে এ ছাড়াও ডানার গোড়ায় কালো আঁশের ছিটা (spray) লক্ষনীয়। টার্মেন উভয় ডানাতে পর্যায়ক্রমে সাদা এবং কালো। পিছনের ডানায় সাবমার্জিনাল অর্ধচন্দ্রাকৃতি সাদা ছোপের একটি সারি বর্তমান। পিছনের ডানা লেজযুক্ত। লেজটি কালো এবং একদম অগ্রভাগে সাদা।

ডানার নিম্নতল সাদা এবং বিভিন্ন আকৃতির কালো দাগ-ছোপ দ্বারা চিত্রিত। উভয় ডানাজুড়ে বেসাল অংশে অথবা ডানার গোড়ায় একটি লম্বা কালো তীর্যক বন্ধনী বিদ্যমান। সামনের ডানায় কোস্টা ডানার মধ্যভাগ থেকে অ্যাপেক্স পর্যন্ত সরুভাবে কালো, পিছনের ডানার অধিকাংশ ছোপ চৌকো। পিছনের ডানায় টর্নাল ছোপটি এবং তার উপরিবর্তী ছোপটি কালোর মধ্যে ধাতব সবুজ আঁশযুক্ত।[৮]

আচরণ[সম্পাদনা]

সমগ্র ভারত এর বিভিন্ন প্রদেশে সুলভ (উত্তর ভারতের কিছু শুষ্ক অঞ্চল ব্যাতীত) এই প্রজাতির উড়ান মধ্যমগতির; ভূমির কাছাকাছি নিচু উচ্চতায় এরা ডানা ঝাপটে ওড়ে (fluttering flight)। এরা পাতায় অথবা সরু ডাল এ বসে রোদ পোহাতে, মাড-পাডল করতে, দুই রকমের কুলগাছ Ziziphus mauritiana এবং Ziziphus rugosa ও মাটি ঘেঁষা ছোট ছোট ফুলের মধু আহারন করতে ভালোবাসে।[৪] এবং মৃত পতঙ্গ এবং পাখীর বিষ্ঠার উপর অবস্থান করে খাদ্যরস সংগ্রহ করতে বিশেষ পছন্দ করে। সমতল ভূমির উন্মুক্ত অংশে এবং ঝপঝাড় পূর্ন জঙ্গলা পরিবেশে, সমতল জঙ্গলে এবং হিমালয়ের পার্বত্য জঙ্গলে ২৫০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের বিচরন লক্ষ্য করা যায়।পুরুষ প্রকার অনেকে একসাথে মাড-পাডল করে। Castalius বর্গের অন্যান্য প্রজাতি অপেক্ষা তিলাইয়া অধিকতর রৌদ্র প্রিয় এবং সংখ্যাতেও অনেক বেশী। দক্ষিন ভারতের পার্বত অঞ্চলে উপযুক্ত পরিবেশে ১৪০০মিটার উচ্চতার মধ্যে এদের দর্শন মেলে। তবে সর্বত্রই বর্ষাকালে এদের বেশি সংখ্যায় দেখা যায়। সাধারনত, জানুয়ারী থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রজাতির সক্রিয়তা চোখে পড়ে।[৯]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ডিম[সম্পাদনা]

স্ত্রী প্রজাপতি কচি পাতায় ডিম পাড়ে। প্রতি পাতায় একটি করে ডিম থাকে। তিলাইয়ার ডিম খুব হাল্কা আকাশি বর্নের বা কখনো কখনো হাল্কা সবুজ হয়। ডিমের আকৃতি গোল এবং পুরু চাকতির মতো, মাঝখানটা বাদ দিয়ে সারা গায়ে উঁচু উঁচু গুটি আছে। এরা পাতার নিচে বা পাতার কিনারায় খাঁজে সচরাচর ডিম পাড়ে।[৪]

শূককীট[সম্পাদনা]

শূককীট গুলি লম্বাটে এবং সবুজ রঙের হয়। দেখতে অনেকটা পুরু চিঁড়ের মতো। দেহখন্ডগুলোর ফাঁকে ফাঁকে আড়াআড়ি কয়েকটা খাঁজ বা হালকা দাগ লক্ষ্য করা যায়।

মূককীট[সম্পাদনা]

মূককীট এর রঙ ফ্যাকাসে সবুজ হয়, তার ওপর হালকা খয়েরি বা কালো ফুটকি থাকে। পাতার নিচের পিঠে মূককীট তৈরী হয়।[১০]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Card for Castalius rosimon in LepIndex. Accessed 28 Jun2007."। ১০ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  2. Marrku Savela's Website on Lepidoptera Page on Castalius genus.
  3. Evans,W.H.(1932) The Identification of Indian Butterflies, ser no H11.1, pp 214
  4. সাদায়-কালোয় তিলাইয়া[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], আ ন ম আমিনুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  5. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 246। আইএসবিএন 9789384678012 
  6. "Castalius rosimon Fabricius, 1775 – Common Pierrot"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  7. R.K., Varshney; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 134। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  8. Wynter-Blyth, Mark Alexander (১৯৫৭)। Butterflies of the Indian Region। Bombay, India: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 259। আইএসবিএন 978-8170192329 
  9. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। নতুন দিল্লি: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। পৃষ্ঠা 251। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  10. Kunte, Krushnamegh (২০০০)। Butterflies of Peninsular India। New Delhi: Orient Blackswan Pvt. Ltd.। আইএসবিএন 81-7371-354-5