তল্লার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তল্লার
Indian wanderer
Male
Female
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Pieridae
গণ: Pareronia
প্রজাতি: P. hippia
দ্বিপদী নাম
Pareronia hippia
(Fabricius, 1787)
প্রতিশব্দ
  • Papilio hippia Fabricius, 1787
  • Danais anais Lesson, 1837
  • Eronia gaea C. & R. Felder, 1865
  • Nepheronia valeria persides Fruhstorfer, 1903
  • Pareronia valeria persides Fruhstorfer, 1910
  • Pareronia anais f. lutea Eliot, 1978
  • Nepheronia valeria hippia ab. livilla Fruhstorfer, 1903

তল্লার (বৈজ্ঞানিক নাম: Pareronia valeria) এক প্রজাতির মাঝারি আকারের প্রজাপতি, যাদের মুল শরীর আর ডানা সাদা এবং আকাশী নীল বর্ণ যুক্ত। এরা ‘পিয়েরিডি’ পরিবার এবং 'পিয়েরিনি' উপগোত্রের সদস্য।

আকার[সম্পাদনা]

তল্লার এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৬৫-৮০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[১]

বিস্তার[সম্পাদনা]

সমগ্র ভারত, নেপাল, মায়ানমার, তাইল্যান্ড সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এদের দেখা যায়।[২][টীকা ১]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

পুরুষ[সম্পাদনা]

সামনের ডানার ওপর পিঠ উজ্জ্বল আকাশী নীল বর্নের। শিরার ওপর দিয়ে গাঢ় কালো রেখা টানা থাকে। ডানার প্রান্তে এবং শীর্ষে চওড়া কালো দাগ দেখা যায়। নিচের পিঠের রঙ তুলনায় ফিকে এবং শিরা বরাবর কালো দাগগুলি নিষ্প্রভ।

ডানার উপরিতল এর মূল রঙ পরিচ্ছন্ন হালকা নীল অথবা নীলতে সাদা, তবে পেল ওয়ান্ডারার অপেক্ষা অধিকতর ঘন রঙ বিশিষ্ট। সমস্ত শিরাগুলি কালো দাগ দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে বিন্যাস্ত। সামনের ডানায় কোস্টাল প্রান্তরেখা চওড়া কালো। টার্মেনের এই চওড়া কালো প্রান্তরেখাটি টর্নাসের দিকে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের লম্বাটে এবং তেরচা একসারি নীলচে-সাদা সাব-টার্মিনাল ছোপ আড়াআড়ি ভাবে এই কালো প্রান্তরেখাটিকে ছেদ করেছে। এই নীলচে-সাদা সাবটার্মিনাল ছোপগুলির সংখ্যা বিভিন্ন নমুনাতে ভিন্ন ভিন্ন হয়। ৩ নং ইন্টারস্পেসে অবস্থিত নীলচে সাদা লম্বাটে প্রায় ত্রিভুজাকৃতি ছোপটি সামনের ডানার বেস পর্যন্ত বিস্তৃত। উক্ত সবকটি লম্বাটে ছোপই সেল এর প্রান্তভাগ থেকে শুরু হয়ে টার্মিনাল কালো প্রান্তরেখা অবধি বিস্তৃত।ডানার উপরিতল এর মূল রঙ পরিচ্ছন্ন হালকা নীল অথবা নীলতে সাদা, তবে পেল ওয়ান্ডারার অপেক্ষা অধিকতর ঘন রঙ বিশিষ্ট। সমস্ত শিরাগুলি কালো দাগ দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে বিন্যাস্ত। সামনের ডানায় কোস্টাল প্রান্তরেখা চওড়া কালো। টার্মেনের এই চওড়া কালো প্রান্তরেখাটি টর্নাসের দিকে ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে গেছে এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের লম্বাটে এবং তেরচা একসারি নীলচে-সাদা সাব-টার্মিনাল ছোপ আড়াআড়ি ভাবে এই কালো প্রান্তরেখাটিকে ছেদ করেছে। এই নীলচে-সাদা সাবটার্মিনাল ছোপগুলির সংখ্যা বিভিন্ন নমুনাতে ভিন্ন ভিন্ন হয়। ৩ নং ইন্টারস্পেসে অবস্থিত নীলচে সাদা লম্বাটে প্রায় ত্রিভুজাকৃতি ছোপটি সামনের ডানার বেস পর্যন্ত বিস্তৃত। উক্ত সবকটি লম্বাটে ছোপই সেল এর প্রান্তভাগ থেকে শুরু হয়ে টার্মিনাল কালো প্রান্তরেখা অবধি বিস্তৃত।

পিছনের ডানার ডর্সাল এবং কোস্টাল প্রান্তরেখা চওড়া এবং সাদাটে অথবা ফ্যাকাশে সাদা। টার্মিনাল প্রান্তরেখা চওড়া কালো, বিশেষতঃ শীর্ষভাগ অংশে। এই কালো প্রান্তিক অংশটি (টর্নাসের অংশটুকু বাদ দিয়ে) বিশেষ ধরনের একপ্রকার স্বচ্ছ দেখতে আঁশ দিয়ে ঢাকা।

ডানার নিম্নতল এর মূল রঙ অতি ফ্যাকাশে নীলচে, উভয় ডানার চওড়া টার্মিনাল প্রান্তরেখা আবছা এবং ঘন কালো বর্নের যাতে খুব অস্পষ্ট এবং তীর্যক একসারি সাবটার্মিনাল সাদাটে অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ছোপ প্রান্তরেখার সাথে সমান্তরাল অবস্থানে বিদ্যমান। সামনের ডানার শিরাগুলি কমবেশি চওড়া কালো রেখা দ্বারা সীমায়িত, যে রেখাগুলি টার্মেন অভিমুখে অধিকতর চওড়া দেখা যায়। সামনের ডানার কোস্টার ঠিক নিচে কোস্টাল প্রান্তরেখার সাথে সমান্তরাল একটি লম্বা সরু ফ্যাকাশে নীলচে দাগ চোখে পড়ে। সেল এ আড়াআড়ি ভাবে লম্বাটে একটি কালো দাগ অবস্থিত যার প্রথমটি বেস থেকে শুরু হয়েছে। পিছনের ডানার সাবকোস্টাল শিরা এবং ৬,৭ ও ৮ নং শিরা চওড়া ভাবে এবং বাকী শিরাগুলি খুব সংকীর্ন অথবা সরুভাবে কালো রেখায় মোড়া। ১নং ইন্টারস্পেসে একটি খুব সরু কালো সোজা রেখা বেস থেকে টর্নাস পর্যন্ত বিস্তৃত। সামনের এবং পিছনের উভয় ডানার সিলিয়া অথবা প্রান্তদেশীয় রোয়া খুব সংকীর্ন এবং সাদা, শুংগ কালো; মাথা, থোরাক্স এবং উদরদেশের উপরিতল ধূসর কালো। থোরাক্স লম্বা ইষদ নীলচে লোমে ঢাকা। পাল্পি, থোরাক্স এবং উদরের নিম্নপৃষ্ঠ হালকা রূপোলী এবং নীলচে সাদা।

স্ত্রী[সম্পাদনা]

স্ত্রী প্রজাপতির ডানার বর্ন মলিন আকাশী। পুরুষের ডানার শিরা বরাবর কালো রেখাগুলি স্ত্রী তল্লারদের ক্ষেত্রে চওড়া এবং কালচে খয়েরি বর্নের। স্ত্রী প্রজাপতির বর্ন পুরুষের তুলনায় অনুজ্জ্বল। নিচের পিঠ ওপরের পিঠের মতোই, তবে হাল্কা বর্নের।[৪]

প্রথম রূপ[সম্পাদনা]

ডানার উপরিতল এর মূল রঙ কালো এবং দাগ-ছোপগুলি নীলচে সাদা। সামনের ডানার সেল এ দুটি লম্বা ডোরা অবস্থিত যাদের সামনের অংশ একদম বেস থেকে শুরু হয়েছে এবং পরেরটি বেসাল থার্ড এর শেষভাগ থেকে বেরিয়েছে, কিন্তু সামনের ডোরাটিকে ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছে। সেল এর নিচে এবং একটু দূরে ইন্টারস্পেসগুলিতে একসারি ডোরা চোখে পড়ে। এই ডোরাগুলি দৈর্ঘ্যে ভীষনরকম অসমান; ১ নং ইন্টারস্পেসে অবস্থিত ডোরাটি দীর্ঘতম এবং সামনের দিকে কৌনিকভাবে অবস্থান করে এবং বেস এর কাছ থেকে অনুদৈর্ঘিক ভাবে বিভক্ত। ৩নং ইন্টারস্পেসে অবশিত ডোরাগুলি কম বেশি তেরচা ভাবে উপস্থিত। এই ডোরাগুলির একটু পরেই তীর্যক একসারি সাবটার্মিনাল ছোপ রয়েছে যাদের মধ্যে ৩নং ইন্টারস্পেসস্থ ছোপটি ভিতরের দিকে (বেসের দিকে) বিস্তৃত হয়েছে এবং শীর্ষকোণ এর বিপরীত দিকে অবস্থিওত ছোপগুলি পিছনের দিকে বেঁকে গেছে। পিছনের ডানায় কোস্টা এবং ডরসাম চওড়া সাদা। সেল এবং ইন্টারস্পেসগুলিতে একসারি ডরা এবং সাবটার্মিনাল ছোপ বিদ্যমান যেগুলি কমবেশি সামনের ডানারই অনুরূপ, কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিয়মিত। সেল এবং ১নং ইন্টারস্পেসে অবস্থিত ডোরা দুটি অনুদৈর্ঘিক ভাবে একে অপরকে ছেদ করেছে। সাবটার্মিনাল ছোপ এর সারি সমানভাবে বাঁকানো। ডানার নিম্নতল এর উপরিতলেই অনুরূপ, তবে মূল রঙ ফিকে, ধূসর এবং অস্পষ্ট, দাগ-ছোপগুলি উপরিতলের দাগ ছোপ অপেক্ষা অধিক চওড়া , তবে কম স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। সামনের ডানার এপিকাল অঞ্চলে ছোট সাদাটে আঁশ পাউডার এর মত ছড়ানো ছেটানো থাকায় এই অংশটি অস্পষ্ট অথবা আবছা, শুংগ, মাথা, থোরাক্স এবং উদর অনেকটা পুরুষ নমুনারই মত কিন্তু অধিকতর কালো।

দ্বিতীয় রূপ[সম্পাদনা]

প্রথম রূপের সাথে খুব সামঞ্জস্যপূর্ণ। ডানার উপরিতল এবং নিম্নতলের দাগ ছোপগুলিও অনুরূপ; কিন্তু পিছনের ডানার উপরিপৃষ্ঠে ১ক নং ইন্টারস্পেস এর বেস অংশে, সমগ্র ১ নং ইন্টারস্পেস, সেল এবং ২নং ইন্টারস্পেসের বেস অংশে গ্রাউন্ড কালার উজ্জ্বল হলুদ রঙের ছটা যুক্ত। ডানার নিম্নপৃষ্ঠে এই একই অঞ্চলগুলির রঙ অনুজ্জ্বল কমলা হলুদ। ডানার উপরিতলের এই উজ্জ্বল হলুদ রঙ এবং নিম্নতলের অনুজ্জ্বল কমলা হলুদ রঙ পরিবর্তনশীল; কিছু নমুনাতে এই দুই প্রকার রঙ অপেক্ষাকৃত চাপা, অন্যান্য নমুনাতে এই রঙ কোস্টা অবধি বিস্তৃত। তল্লার প্রজাতির সাধারন স্ত্রী রূপ গ্লাসি টাইগার কে অনুকরণ অথবা নকল করে খাদকের কবল থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে। স্ত্রী তল্লার এর এই দ্বিতীয় রূপটি (ফিলোমেলা রূপ) দুস্প্রাপ্য এবং ডানার বেস এ হলুদ রঙ দেখে চিহ্নিত করা যায় এদের। উত্তর পূর্ব ভারতে এই রূপটিকে অধিক দেখা যায়।

আচরণ[সম্পাদনা]

পুরুষ তল্লার এর দেখা মেলে বেশি। মাঝে মধ্যে এদের মাটির কাছাকাছি কোনও গাছের কান্ডে অথবা ডালে, ছায়াযুক্ত অঞ্চলে বিশ্রামরত অবস্থায় দেখা যায়। দুপুরবেলায় ঝোপঝাড়ের ভিতরে এলোমেলো ভাবে ওড়াওড়ি করতে থাকে। দিনের শুরুতে ডানা মেলে রৌদ্র পোহায়।[৫]ফুলের প্রতি এদের আসক্তি দেখা যায়।[৬] ভিজে মাটি থেকে রস আহরণ করতে এদের দেখা যায় না।[৭]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ডিম[সম্পাদনা]

তল্লারের ডিম সাদা বর্নের এবং মাথার দিক ছুঁচালো। এরা এক জায়গায় একসাথে পাঁচ-সাতটা ডিম পাড়ে।

শূককীট[সম্পাদনা]

শূককীট এদের শূককীট ঘন সবুজ বর্নের। এদের দেহে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রোঁয়া সহ অর্বুদ দেখা যায়। প্রতিটি রোঁয়ার মাথায় একটি করে তরলবিন্দু থাকে। দেহের পিছনদিকে দুটো ছোট ছোট ছুঁচলো উপাঙ্গ আছে। এরা পাতার অপর-পিঠে, সাধারনত মধ্যশিরা বরাবর রেশমি সুতোর একটা প্রলেপ তৈরি করে তার উপর বসে থাকে।

আহার্য উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

এই শূককীট Capparaceae গোত্রের বিভিন্ন গাছ যেমন-Capparis zeylenica, Capparis rheediiগাছের কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে।[৮]

মূককীট[সম্পাদনা]

মূককীট ফ্যাকাশে সবুজ বর্নের। একটি ঢিলে বেড়িতে এদের শরীর আটকানো থাকে। ডানার আবরনী অংশ লক্ষনীয়ভাবে অনেকটা উঁচু হয়ে থাকে। মাথার দিকটা একটা ছুঁচলো প্রান্তে শেষ হয়েছে।

জীবনচক্রের চিত্রশালা[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. এই ফর্ম (Philomela) mimics Danais aspasia, একটি প্রজাতি যা বার্মার পশ্চিমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। The appearance of a mimic in areas uninhabited by its pattern is unusual and an attempt to explain it has been made on the grounds that the selective agent is a wagtail that migrates from regions inhabited by Danais aspasia to India. To me this theory seems nonsense. A wagtail might take toll of a weak, low-flying insect, but never, surely, of an active, powerful butterfly such as this.[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ৬৪। 
  2. Mukherjee,, S. et,al.। "Butterfly diversity in Kolkata, India: An appraisal for conservation management" (পিডিএফ)Journal of Asia-pacific Biodiversity। পৃষ্ঠা 210-221। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৭  line feed character in |শিরোনাম= at position 71 (সাহায্য)
  3. Bingham, C.T. (১৯০৭)। The Fauna of British India, Including Ceylon and BurmaII (1st সংস্করণ)। London: Taylor and Francis, Ltd.। পৃষ্ঠা 444-445। 
  4. Kunte, Krushnamegh (২০০০)। India,a life scape:Butterflies of Peninsular India। পৃষ্ঠা 105-106। আইএসবিএন 81-7371-354-5 
  5. Peter, Smetacek (২০১৮)। A Naturalist's Guide to the Butterflies of India Pakistan, Nepal, Bhutan, Bangladesh and Sri Lanka (ইংরেজি ভাষায়) (1st সংস্করণ)। New Delhi: Prakash Books India Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা ৫০। আইএসবিএন 978 81 7599 406 5 
  6. Tiple,, A.D. et,al.। "Factors influencing nectar plant resource visits by butterflies on a university campus: implications for conservation" (পিডিএফ)Nota Lepidopterological Journal। পৃষ্ঠা 213-224। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৭  line feed character in |শিরোনাম= at position 70 (সাহায্য)
  7. বসু রায়, অর্জন; বৈদ্য, সারিকা; রায়, লিপিকা। সুন্দরবনের কিছু পরিচিত প্রজাপতি (মার্চ ২০১৪ সংস্করণ)। সুন্দরবন জীবপরিমণ্ডল,Department of Forest Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ২৬। 
  8. Kunte, K. (2006). Additions to known larval host plants of Indian butterflies. Journal of the Bombay Natural History Society 103(1):119-120

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]