ডেনিস উড
ডেনিস উড একাধারে একজন শিল্পী, লেখক, মানচিত্রকর এবং উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (নর্থ ক্যারলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি) ডিজাইন বিষয়ের একজন প্রাক্তন অধ্যাপক। ইনি ১৯৪৫ সালে ক্লিভল্যান্ড, ওহাইও -তে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয় ( যা এখন কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত) থেকে কলা বিভাগে স্নাতক হন। তিনি ম্যাসাচুসেটস-এর ওয়ার্সেস্টার ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে স্নাতকোত্তর (১৯৭১ সালে) এবং পিএইচডি (১৯৭৩ সালে) ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। উড ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান, ভূদৃশ্য, ইতিহাস ও নকশা অলঙ্করণ (ডিজাইন) ইত্যাদি প্রভূত বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন। সেইসময় তিনি ও তার পরিবার বয়ল্যান হাইটস নামক স্থানে বসবাস করতেন। ১৯৯৬ সালের শুরুর থেকে এক কিশোর ছেলের শ্লীলতাহানির অপরাধে তিনি দুই বছরেরও বেশি সময় কারাগারে বন্দি ছিলেন।[১]
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]এই article এমনভাবে লেখা হয়েছে যে মনে হচ্ছে এটি একটি ব্যক্তিগত ভাবনা বা মতামত সম্বলিত রচনা এবং হয়তো নিবন্ধটির পরিচ্ছন্নকরণ প্রয়োজন। (February 2014) |
তার রচিত গ্রন্থ মানচিত্রের প্রভাব (আসল নাম, দ্যা পাওয়ার অফ ম্যাপস্, ১৯৯২ সালে রচিত)[২] সম্পাদনার সময় একটি প্রাথমিক গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] গ্রন্থটি আধুনিক মানচিত্র অঙ্কন কৌশলের কাজে অপরিহার্য হয়ে ওঠে কারন এই গ্রন্থে এক নতুন পদ্ধতির সাহায্যে, সামাজিক বিচারের উপর ভিত্তি করে মানচিত্রকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আধুনিক মানচিত্র-অঙ্কন বিদ্যা ও মানচিত্রকরদের আদর্শ নিয়ে উডের ধারাবাহিক, বিস্তারিত , সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা তাকে পরিচিতি দেয়। ২০০৪ সালে জন পিকেলস এবং উত্তর ক্যারলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর্লি এন ফিলিপ উডের অবদানের সংক্ষিপ্তসার করে বলেছিলেন, "পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ডেনিস উড মানচিত্র এবং মানচিত্রের ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের আলাদা এবং সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে প্ররোচিত করে চলেছেন।" [৩] ১৯৯২ সালে নিউ ইয়র্ক -এর কুপার হুইট জাতীয় সংগ্রহশালায় মা্নচিত্রের প্রভাব নামক বইটির প্রথম পঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান প্রতিষ্ঠানে এই অনুষ্ঠানটি পুনরায় সম্প্রচার হয়। এই প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রের মাধ্যমে ধারাভাষ্য ও লেখনির সহায়তায় ১৯৯২ সালে প্রকাশিত বইটি পুনরায় প্রদর্শিত হয়। [৪] এর ফলে বইটির সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ে। [৫]
গতানুগতিক মানচিত্রকরদের প্রচলিত ধারনার বিরোধিতা করে উড এবং তার সমর্থকরা এক নতুন পদ্ধতিতে মানচিত্র অঙ্কনের প্রস্তাব দেন। এই নবীন মানচিত্রকররা লেখচিত্র এবং নির্দিষ্ট সরলরৈখিক পরিমাপের সাহায্যে মানচিত্র অঙ্কনের প্রস্তাবনা দেন।[৬] এই নবীন মানচিত্র অঙ্কন সম্পর্কিত সকল গবেষণা ও তার প্রয়োগ-পদ্ধতি উড এবং জন ফেলস দ্বারা রচিত ২০০৮ সালে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা (ইউনিভারসিটি অফ শিকাগো প্রেস)-র মানচিত্রের প্রকৃতি (আসল নামঃ দ্যি নেচারস্ অফ ম্যাপ) বইটির কেন্দ্রীয় আলোচনার বিষয়।[৭] একজন সমালোচকের উদ্ধৃতি অনুসারে, "১৯৮৬ সালে উড এবং ফেলস মানচিত্রের প্রচলিত ধারনার পরিবর্তন ঘটিয়ে দেন; দশটি বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থপূর্ণ চিহ্নের উদ্ভাবন করে মানচিত্রকে তাদের মাধ্যমে তারা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। এই বিষয়ে তাদের সমস্ত যুক্তি ও তর্ক মানচিত্রের প্রকৃতি নামক বইতে সংকলিত আছে। ২১ বছর পর উড এবং ফেলস্ মানচিত্র অঙ্কনের ধারনাকে একত্রিত করে তার পুরাতন ধারণার পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন ধারনার উদ্ভব ঘটালেন।" উড এবং ফেলস্-এর মতে "মানচিত্র কোনও ছবি নয়" বরং, "এটি একটি যুক্তিসম্মত রেখচিত্র...মানচিত্রের উপর থেকে নিচ অবধি তার প্রতিটি অংশের মধ্যে যুক্তিসম্মত বিবরন থাকা উচিত।"
এই নতুন ধারনায় অঙ্কিত মানচিত্রগুলি বাস্তবতার পরিবর্তে পরিমাপ পদ্ধতি ও যুক্তির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। উড ও ফেলসের তর্ক অনুসারে বিচার করলে তাদের মানচিত্র অঙ্কন প্রস্তাবনা এই ধারনার উতপত্তি করেছে যে সম্পূর্ণ পৃথিবীকে আমরা সামাজিক-শর্তযুক্ত দৃষ্টিকোণ সাপেক্ষে বিভিন্ন পরিমাপ পধতির নিরিখে বাধিত করতে পারি যা কেবলমাত্র তার্কিক ভাবেই সম্ভব, বাস্তবিক পরিপ্রেক্ষিতে নয়। এই প্রসঙ্গে ২০০৪ সালের সম্পাদনায় প্রকাশিত উডের বিশ্ব পরিবর্তনের ৫ বিলিয়ন বছরঃ ভুমির ইতিহাস (আসল নাম- ৫ বিলিয়ন ইয়ারস্ অফ গ্লোবাল চেঞ্জঃ আ হিস্ট্রি অফ ল্যান্ড) বইতে উল্লেখযোগ্য আলোচনা রয়েছে।
মানচিত্র অঙ্কন
[সম্পাদনা]অতি সম্প্রতি উড তার শিল্প ও শিল্প ইতিহাসে আগ্রহসহিত, মানচিত্র অঙ্কনে তার পারদর্শিতাকে কাজে লাগিয়ে মানচিত্রের উন্নতিসাধনের কাজে লিপ্ত হয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরে তিনি মানচিত্র অঙ্কনের ইতিহাস নিয়ে একটি তথ্যসমৃদ্ধ বই রচনা করেছেন যাতে মানচিত্রের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারনাকে কীভাবে প্রকাশ করা সম্ভব তার বিস্তারিত বিবরন আছে। এই বইটিতেও উডের মানচিত্র বিষয়ক প্রাথমিক ধারণা যেখানে, মানচিত্র কেবলমাত্র একটি চিত্র নাকি যুক্তিসম্মত রেখচিত্র-এই তর্কের ছায়া বর্তমান।
দোষপ্রমাণ ও দণ্ডাদেশ
[সম্পাদনা]১৯৯৬ সালে উডের বিরুদ্ধে "প্রাকৃতিক নিয়মভঙ্গ" এবং "অপ্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে বহুবার অশ্লীল ব্যবহার করার" অপরাধ লাগু হয়।[১][৮] ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল অবধি ২৬ মাস তিনি উত্তর ক্যারলিনা দণ্ডব্যবস্থার অধীনে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করেন। তিনি প্রকাশ্যে এসে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং একথাও বলেন যে তিনি যৌন অপরাধীদের কোনও জাতীয় বা আঞ্চলিক নিবন্ধভুক্ত নন।[৯]
লেখক এবং স্বেছাসেবক জেন জ্যাকবস্ পরবর্তীকালে মন্তব্য করেন যে, হয়তো উডের বিরুদ্ধে লাগু অপরাধ ও সাজা তার কাজের যোগ্য স্বীকৃতি থেকে তাকে বঞ্চিত করেছে। সাজাপ্রাপ্তির পরও তার লেখালেখি ও অন্যান্য কাজ অব্যাহত ছিল। মুক্তির পর তিনি রেইলিঘ্ এনসি-তে বসবাস শুরু করেন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার কাজকর্ম ও বক্তৃতা চালু রাখেন। ২০০৮ সালে তিনি লন্ডনের রয়্যাল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ উপস্থাপনা করেছিলেন।
১৯৯৮ সালে নিউজ অ্যান্ড অবজারভার -এর সাথে তার সাক্ষাতকারে তিনি প্রকাশ করেন যে তার বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই প্রকাশে তিনি ইচ্ছুক। প্রাথমিকভাবে জন হপকিন্স ইউনিভারসিটি প্রেস থেকে এই বইটি প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল।[৯] বইটি বর্তমানে সেন্টার ফর আমেরিকান প্লেস দ্বারা প্রকাশের জন্য নির্ধারিত হয়েছে এবং এর বিতরন ও প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউনিভারসিটি অফ শিকাগ প্রেস-কে। ২০০৩ সালে আমেরিকান জনস্বাস্থ্য সমিতির বার্ষিক সভায় উড বইটির সম-শিরোনামের একটি উপস্থাপনা করার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।[১০]
বই সম্পাদনা
[সম্পাদনা]- মানচিত্রের প্রভাব (দ্যি পাওয়ার অফ ম্যাপস্) জন ফেলসের সাথে একত্রে- ১৯৯২ সালে প্রকাশ।
- Home Rules with Robert J. Beck - 1994, Johns Hopkins University Press, আইএসবিএন ০৮০১৮৪৬১৮৮
- মানচিত্রের গভীরে অবলোকন (আসল নাম- 'সীইং থ্রু ম্যাপস্), ওয়ার্ড কাইসেরের সাথে একত্রে- ২০০১ সালে প্রকাশনা এবং ২০০৬ সালে দ্বিতীয় সংস্করন।
- বিশ্ব পরিবর্তনের ৫ বিলিয়ন বছরঃ ভুমির ইতিহাস (আসল নাম- ৫ বিলিয়ন ইয়ারস্ অফ গ্লোবাল চেঞ্জঃ আ হিস্ট্রি অফ ল্যান্ড), ২০০৪ সালে প্রকাশনা।
- মানচিত্র অঙ্কন (আসল নাম- মেকিং মাপস্) জন ক্র্যগিএর -এর সাথে, ২০০৫ সালে প্রকাশনা।
- মানচিত্রের প্রকৃতি (আসল নাম- দ্যি নেচারস অফ ম্যাপস্) জন ফেলসের সাথে, ২০০৮ সালে প্রকাশ।
- মানচিত্রের প্রভাব পুনঃবিচার (আসল নাম- রিথিঙ্কিং দ্যা পাওয়ার অফ ম্যাপস্) জন ক্র্যগিএর -এর সাথে, ২০১০ সালে প্রকাশনা।
- Everything Sings: Maps for a Narrative Atlas with Ira Glass (Introduction), Siglio, 2011. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৭৯৯৫৬২-৪-৯
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Professor Admits Molesting Boy"। WRAL.com। ১৯৯৬-০৪-২১। ১ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০০৯।
- ↑ Wood, Denis; John Fels (১৯৯২-১০-১৬)। The Power of Maps। New York City: Guillford Press। আইএসবিএন 0-89862-493-2। ওসিএলসি 26399801।
- ↑ John Pickles, A History of Spaces: Cartographic reason, mapping and the geo-coded world, Routledge, NY, 2004, pp. 60-71.
- ↑ Pickles, John (২০০৪)। A History of Spaces: Cartographic Reason, Mapping, and the Geo-coded World.। [London, uk]: Routledge। পৃষ্ঠা 60–71। আইএসবিএন 0-415-14498-1।
- ↑ Glass, Ira (২০০৭-১০-১৯)। "This American Life."। Chicago: AMerican Public Radio।
- ↑ Rogoff, Irit (২০০০-০৯-২৩)। Terra Infirma: Geography's Visual Culture। London: Routledge। আইএসবিএন 0-415-09615-4। ওসিএলসি 42764764।
- ↑ Koch, Tom (২০০৮)। "Review: The Natures of Maps"। Cartographic Perspectives। University Park, Pennsylvania: North American Cartographic Information Society (59): 48–50। আইএসএসএন 1048-9053। ওসিএলসি 19657307।
- ↑ "NCSU Design Professor Admits Molestations of Teen Boy", News and Observer, Raleigh, NC, 21 April 1996, p. B-4.
- ↑ ক খ "Ex-con Maps Out Better Life", News and Observer, Raleigh, NC, 21 August 1998, p. B-1.
- ↑ ""Soft Time in a Hard Place", abstract of presentation at the annual meeting of the APHA, 18 November 2003"। ২৬ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০।