টাইফাকে জনগোষ্ঠী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টাইফাকে
মোট জনসংখ্যা
প্রায় ২০০০
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
আসাম, অরুণাচল প্রদেশ
ভাষা
টাইফাকে ভাষা
ধর্ম
বৌদ্ধ ধর্ম
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
টাই গোষ্ঠী

টাইফাকে জনগোষ্ঠী হল আসাম এবং অরুণাচলের একটি টাই জাতির অন্তর্গত উত্তরপূর্বের টাই জনগোষ্ঠী। আসাম-এর ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া জেলা-এর সাথে অরুণাচল প্রদেশ-এর লোহিত এবং চাংলাং জেলায় এই জনগোষ্ঠীর সীমিত সংখ্যক লোকেরা বাস করে আসছে। টাইফাকেদের ফাকিয়াল বা ফাকে নামেও জানা যায়। টাইফাকেদের জনসংখ্যা প্রায় ২০০০ জন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই সীমিত জনসংখ্যাই বর্তমান গোষ্ঠীটির জাতীয় জীবনের প্রতিটি দিকে নেতৃত্ব বহন করে চলেছে। ভাষা-সাহিত্য, গান-নাচ, পরম্পরাগত আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব, বেশভূষা, খাদ্যাভাস ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে আসছে।

ধর্ম-সংস্কৃতি এবং পরম্পরা[সম্পাদনা]

টাইফাকেরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী লোক। হুকং উপত্যকায় বসবাস করার সময় থেকেই বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করায় তাঁদের সমাজে বর্তমানে লোক পরম্পরার সাথে ধর্মীয় পরম্পরাও যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করে আসছে। তাঁদের পালন করা উৎসব, লোকাচার, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে পরম্পরাগত লোকবিশ্বাস এবং ধর্মীয় রীতি-নীতির প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। তাঁদের পালন করা অনুষ্ঠানসমূহের বৈশিষ্ট্য অনুরূপে টাইফাকেদের উৎসবকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন - লোক উৎসব বা পরম্পরা এবং ধর্মীয় উৎসব বা পরম্পরা। অবশ্য কোনো একটি অনুষ্ঠানকে স্পষ্টভাবে বিভক্ত করা যায় না।

পাটকাই পার হয়ে আসামে প্রব্রজন[সম্পাদনা]

হুকং উপত্যকায় ফাকে রাজ্যের পতন ঘটার পর ফাকেরা পাটকাই অতিক্রম করে ১৭৭০ সাল থেকে আসামে প্রব্রজনের প্রস্তুতি চালায়। তথ্য অনুসারে ১৭৭৫সালে টাইফাকেরা পাটকাই পার হয়ে আসামভূমিতে প্রব্রজন করেছিল। পাংচাও গিরিপথ দিয়ে এই টাইফাকে দলটি আসে। তাঁরা এসে প্রথমে পাটকাই পর্বতের যেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল সেগুলি বর্তমানে পাংচাও হিসাবে পরিচিত হয়ে পড়ে। টাই ভাষায় পাং মানে স্থান বা অঞ্চল এবং চাও মানে বিশ্রাম নেওয়া স্থান। পাংচাওতে কিছুদিন কাটিয়ে তাঁরা নংতাও (বর্তমান অরুণাচল)তে প্রথমে বসতি স্থাপন করে। নং মানে পুষ্করিণী এবং তাও মানে শেলুবৈ। অর্থাৎ‌ শেলুবৈতে পরিপূর্ণ পুষ্করিণী বা বিলের পারে বসবাস করেছিল বলে স্থানটির নাম নংতাও হিসাবে পরিচিত হয়। নংতাওতে বসবাস করা সময়কালে ফাকেরা খামতিদের সান্নিধ্যে আসে এবং ১৭৯৭ শদেয়া খোয়া গোঁসাঁইর বিরুদ্ধে খামতিরা করা বিদ্রোহের সময় টাইফাকেরা খামতিদের সহযোগিতা করে। তাঁদের বসতি শদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পরবর্তী সময় আহোম রাজা বিদ্রোহ দমন করে ফাকেদের তার থেকে নিয়ে আহোমদের শেষ রাজধানী যোরহাটের সমীপের দিচৈ নদীর পারে (বর্তমান ককিলামুখ) করে। ইতিহাসের তথ্য অনুসারে মানের আসাম আক্রমণের পর মান সেনাপতি ফাকেদের নিজ দেশে পুনরায় ফিরে যেতে নির্দেশ দেয় এবং ফাকেরা ১৮১৭ সালে মান সৈন্যের সাথে ফিরে গিয়ে বর্তমানের অরুণাচলের নামচিক পানগিয়ে। কিন্তু সেটি পাওয়ার সাথে সাথে বর্ষা আরম্ভ হওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্য্যোগের আশঙ্কা করে মান সেনাপতির সম্মতি সাপেক্ষে ফাকেরা নামচিকে থেকে যায় এবং মানরা ফিরে যায়। পরবর্তী সময় আসাম ব্রিটিশের অধীন হওয়ায় ফাকেরা পুনরায় ভৈয়ামে ফিরে আসে এবং ১৮২৬-২৭ মার্ঘেরিটার সমীপে বুঢ়ীদিহিং নদীর পারে ইংথঙে বসবাস করতে থাকে। কিছু বছর পর তাঁরা সামান্য উজানে বরফাকে গ্রাম প্রতিষ্ঠা করে। এটি হচ্ছে বর্তমান টাইফাকেদের অস্তিত্ব বহনকারীর বহু থেকে পুরানো টাইফাকে গ্রাম। তারপর তাঁদের কিছু বছরের জন্য বসবাস করা এবং বর্তমান অস্তিত্ব না থাকা গ্রামসমূহের মধ্যে কয়েকটি হল-নংচেং, ক’নয়েট’, চায়াকুং, পাবৈ, শিলেখাজান,টিরাপ, টিপলিং ইত্যাদি।

টাইফাকেদের সমাজ জীবন[সম্পাদনা]

আধুনিক প্রযুক্তি স্পর্শ করলেও টাইফাকেদের জনজীবন সম্পূর্ণ পরম্পরাগত পদ্ধতিতে চলে আসছে। পূর্বের মত না হলেও এখনও তাঁদের মধ্যে ভাবের আদান প্রদানের জন্য নিজস্ব ভাষা, পরম্পরাগত গান-নাচ, লোকবিশ্বাস, উৎসব, বেশভূষা, খাদ্যাভাস ইত্যাদি প্রচলিত হয়ে আসছে। ব্রিটিশ শাসনের সময় তাঁদের দুই একজনে রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করে মৌজাদারের মতো পদ লাভ করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে তাঁরা মিত্রশক্তির অন্যতম পথপ্রদর্শক হিসাবে কাজ করেছিল। তাঁদের মধ্যে একজন ছিল নিঙ্গাম গাঁওয়ের প্রতিষ্ঠাতা আই ক্যা চাখাপ। বিংশ শতকের সূত্রপাতে টাইফাকেদের গ্রামসমূহে শিক্ষা প্রসারের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল যদিও সমাজে শিক্ষার প্রসার ভালমতো ছিল না। ফলে বর্তমান রাজ্যের শিক্ষা মানদণ্ডের তুলনাত টাইফাকেদের শিক্ষার মান বিশেষ আগবঢ়াব থেকে নেই। বর্তমান সময়ও তাঁদের মধ্যে উচ্চ পদস্থ সরকারী আধিকারিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীধারী লোকের সংখ্যা তেমনই সীমিত।

টাইফাকেদের বসতি স্থান[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:আসামের জনগোষ্ঠী