টাইপ ৫৯ জি দুর্জয়
টাইপ ৫৯ জি দুর্জয় | |
---|---|
![]() অনুশীলন চলাকালীন একটি দুর্জয় ট্যাংক | |
প্রকার | প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক |
উদ্ভাবনকারী | বাংলাদেশ/চীন |
ব্যবহার ইতিহাস | |
ব্যবহারকাল | ২০১৮–বর্তমান |
ব্যবহারকারী | ![]() |
উৎপাদন ইতিহাস | |
উৎপাদনকারী | বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী |
উৎপাদনকাল | ২০১৫–বর্তমান |
উৎপাদন সংখ্যা | ১৭৪ |
তথ্যাবলি | |
ওজন | ৪০ টন (৩৯ লং টন; ৪৪ শর্ট টন) |
দৈর্ঘ্য | ৬.০৪ মিটার (১৯.৮ ফু) |
প্রস্থ | ৩.২৭ মিটার (১০.৭ ফু) |
উচ্চতা | ২.৫৯ মিটার (৮ ফু ৬ ইঞ্চি) |
ক্রু | ৪ |
Armor | চীনা তৃতীয় প্রজন্মের বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়াশীল বর্ম |
প্রাথমিক যুদ্ধাস্ত্র | ১২৫ মিমি মসৃণ-নলযুক্ত কামান, ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম |
Secondary armament |
১ × ডব্লিউ৮৫ ১২.৭ মিমি ভারী মেশিনগান ১ × টাইপ ৮৬ ৭.৬২ মিমি মেশিনগান |
ইঞ্জিন | ডিজেল ৭৩০ অশ্বশক্তি (৫৪০ কিওয়াট) |
অপারেশনাল রেঞ্জ |
৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মা) |
গতিবেগ | ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৩৪ মা/ঘ) |
টাইপ ৫৯ জি দুর্জয় হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য নির্মিত টাইপ ৫৯ ট্যাংকের একটি উন্নত সংস্করণ৷[১] চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরীর ৯০২ কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পুরাতন টাইপ ৫৯ ট্যাংকগুলোকে দুর্জয় মানে উন্নীত করা হচ্ছে।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
বাংলাদেশ হচ্ছে শতশত নদী ও অসংখ্য জলাভূমির সমন্বয়ে গঠিত একটি সক্রিয় বদ্বীপ। এখানকার নরম মাটি ভারী ট্যাংক চলচলের উপযুক্ত হয়, বিশেষকরে বর্ষাকালে তা আরও কঠিন হয়ে পরে। তাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য এমন ট্যাংক প্রয়োজন দেখা দেয় যা ওজনের দিক দিয়ে কম হবে আবার সুরক্ষাব্যবস্থা, গোলাবর্ষণ ক্ষমতা ও গতির দিক দিয়ে যুগোপযোগী হবে। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর নিকট একটি বড় সংখ্যক চীনা টাইপ ৫৯ ট্যাংক ছিল যা ধীরে ধীরে সেকেলে হয়ে পড়ছিল। একটি বড় সংখ্যক ট্যাংককে প্রতিস্থাপন করা ছিল ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অন্যদিকে, টাইপ ৫৯ ট্যাংকগুলো ওজনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের মাটির জন্য ছিল একদম যুতসই। ফলস্বরূপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই ট্যাংকগুলোকে আধুনিকায়ন করে যুগোপযোগী করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
বর্ণনা[সম্পাদনা]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/9/99/Bangladesh_Army_upgraded_T-59G_%27Durjoy%27_MBT._%2827682919308%29.jpg/220px-Bangladesh_Army_upgraded_T-59G_%27Durjoy%27_MBT._%2827682919308%29.jpg)
দুর্জয় ট্যাংকে মূল টাইপ ৫৯ ট্যাংকের কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে যা দৈর্ঘ্যে ৬.০৪ মিটার (১৯.৮ ফু), প্রস্থে ৩.২৭ মিটার (১০.৭ ফু) এবং উচ্চতায় ২.৫৯ মিটার (৮ ফু ৬ ইঞ্চি)। এই ট্যাংকের ওজন ৪০ টন (৩৯ লং টন; ৪৪ শর্ট টন) যা টাইপ ৫৯ ট্যাংক থেকে বেশি। মূলত আধুনিকায়নের সময় বিভিন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম ও অন্যান্য উন্নয়ন প্যাকেজ যুক্ত করার ফলে এর ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুর্জয় ট্যাংকে একটি ৭৩০ অশ্বশক্তি (৫৪০ কিওয়াট) ক্ষমতার ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়েছে যা ১৪০০ আরপিএম টর্ক উৎপন্ন করে এবং এর ওজন-ক্ষমতার অনুপাত টনপ্রতি ১৭.৫ অশ্বশক্তি। এই যানের সর্বোচ্চ গতি ৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা (৩৪ মা/ঘ) এবং সর্বোচ্চ পাল্লা ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মা)। নরম মাটিতে চলাচলের সুবিধার জন্য এতে রাবারের প্যাডযুক্ত ট্র্যাক ব্যবহৃত হয়েছে। এর ট্র্যাকে মোট পাচটি চাকা রয়েছে যার প্রথম ও দ্বিতীয় চাকার মাঝে লক্ষ্যণীয় পরিমান ফাকা জায়গা রয়েছে। ট্যাংকের পিছনে থাকা একটির চক্রদন্তের সাহায্যে এই ট্র্যাকটি চালানো হয়। একটি মোচড়ানো দন্ডের সাহায্যে এই ট্যাংকের সাসপেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্যাংকের বাম পাশে ইঞ্জিনের ধোয়া বের হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
দুর্জয় ট্যাংক চালাতে মোট ৪ জন সৈন্যের প্রয়োজন হয় যারা হলেন একজন কমান্ডার, একজন চালক, একজন গোলন্দাজ ও একজন লোডার। এই ট্যাংকে সৈন্যদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ও তাদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক-জীবাণু-রাসায়নিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে যা মূল টাইপ ৫৯ ট্যাংকে অনুপস্থিত।
সুরক্ষা[সম্পাদনা]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/f/fe/Bangladesh_Army_upgraded_T-59G_%27Durjoy%27_MBT._%2833659625935%29.jpg/220px-Bangladesh_Army_upgraded_T-59G_%27Durjoy%27_MBT._%2833659625935%29.jpg)
দুর্জয় ট্যাংকের প্রাথমিক সুরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে পুরু ইস্পাতের যৌগিক বর্ম। ডানা-নিয়ন্ত্রিত বর্মভেদী গোলা, ট্যাংক-বিধ্বংসী ভারী বিস্ফোরক গোলা ও ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে চীনা তৃতীয় প্রজন্মের বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়াশীল বর্ম যা ট্যাংকের সম্মুখভাগ ও টারেটে বসানো রয়েছে। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য টারেটের পেছনে একটি খাচা-বর্ম বসানো আছে। টারেটের উভয় পাশে আছে ধুম্র-গ্রেনেড উৎক্ষেপক। ট্যাংকে থাকা সৈন্যদের জীবন বাচানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য একটি আধুনিক অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা রয়েছে যাতে শত্রু আক্রমণ বা অন্য কোন কারণে আগুন লাগলে দ্রুত নেভানো সম্ভব হয়।
এই ট্যাংকগুলোতে লেজার ওয়ার্নিং রিসিভার রয়েছে যা শ্ত্রুর লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার বা লেজার ডেজিগনেটরের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলে পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। পাশাপাশি এতে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক প্রতিব্যবস্থা।
অস্ত্রব্যবস্থা[সম্পাদনা]
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/4/43/Bangladesh_Army_upgraded_T-59G_%27Durjoy%27_MBT._%2833659622075%29.jpg/220px-Bangladesh_Army_upgraded_T-59G_%27Durjoy%27_MBT._%2833659622075%29.jpg)
দুর্জয় ট্যাংকে রয়েছে একটি ১২৫ মিমি মসৃণ-নলযুক্ত কামান যা এই ট্যাংকের মূল অস্ত্র। এই কামানের রয়েছে একটি দুই-অক্ষ বিশিষ্ট স্থিতিকারক যা দিক পরিবর্তনের সময়েও ট্যাংককে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম করে তোলে। এই কামান থেকে ভারী বিস্ফোরক, ট্যাংক-বিধ্বংসী ভারী বিস্ফোরক ও ডানা-নিয়ন্ত্রিত বর্মভেদী গোলা নিক্ষেপ করা যায়। পাশাপাশি এই কামান থেকে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করাও সম্ভব। এই ট্যাংক মূল কামানের জন্য মোট ২৮টি গোলা বহন করে যা মিনিটে ৪টি হারে নিক্ষেপ করা সম্ভব।
এতে সহায়ক অস্ত্র হিসেবে রয়েছে ৩০০০ গুলিসহ একটি ডব্লিউ৮৫ ১২.৭ মিমি ভারী মেশিনগান ও ৫৫০–৬০০ গুলিসহ একটি টাইপ ৮৬ ৭.৬২ মিমি মেশিনগান। ১২.৭ মিমি মেশিনগানকে বিমান-বিধ্বংসী অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
ইলেক্ট্রনিক্স[সম্পাদনা]
দুর্জয়তে আধুনিক গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা রয়েছে যা চীনা চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংকের সাথে তুলনীয়। এর গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণ কম্পিউটারে তাপীয়-প্রতিবিম্ব নির্মাণ ব্যবস্থা ও লেজার নিয়ন্ত্রিত লক্ষ্যস্থিরকরণ ব্যবস্থা সমন্বিত রয়েছে। এতে কমান্ডারের স্বতন্ত্র দৃষ্টিব্যবস্থা রয়েছে।
চলাচলের জন্য ট্যাংকে রয়েছে রাত্রিকালীন দর্শনব্যবস্থা ও জিপিএস-চালনব্যবস্থা যা এই ট্যাংককে দিনে-রাতে ও সব ধরনের আবহাওয়ায় ব্যবহারোপযোগী করে তুলেছে। এই ট্যাংকে আরো রয়েছে কৌশলগত তথ্য-সংযোগ ব্যবস্থা যা একে অধিকতর পরিস্থিতিগত সচেতনতা প্রদান করে। যোগাযোগের জন্য দুর্জয় ট্যাংক এক্সডিজেড–১ কৃত্রিম উপগ্রহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভিআরসি–২০০০এল রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে।
ব্যবহারকারী[সম্পাদনা]
- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী: ১৭৪টি ট্যাংককে রূপান্তর করা হচ্ছে।
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী"। banglanews24.com। ২০২২-০৩-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৪।