বিষয়বস্তুতে চলুন

জেবউন্নিসা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জেবউন্নিসা
মোঘল সাম্রাজ্যের শাহজাদী
শাহজাদী জেবউন্নিসা
জন্ম১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৩৮
দৌলতবাদ, মোঘল সাম্রাজ্য
মৃত্যু২৬ মে ১৭০২(1702-05-26) (বয়স ৬৪)
দিল্লী, মোঘল সাম্রাজ্য
সমাধি
রাজবংশতৈমুর বংশ
পিতাআওরঙ্গজেব
মাতাদিলরস বানু বেগম
ধর্মইসলাম

জেবউন্নিসা (ফার্সি : زیب النساء مخفی‎‎)[] (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৩৮ – ২৬ মে ১৭০২)[] ছিলেন একজন মোঘল রাজকুমারী ও সম্রাট আওরঙ্গজেব এবং তার প্রথম ও প্রধান স্ত্রী দিলরস বানু বেগমের জ্যেষ্ট সন্তান।তিনি আলিমা, ফাজিলা, আরিফা ও ফার্সি ভাষার কবি এবং তিনি তিন বছরে পবিত্র কোরআন মুখস্থ করেন।তিনি আরবি,ফার্সি ও উর্দু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি দর্শন ও সাহিত্যেও প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।তিনি একজন পণ্ডিত, সাহিত্য প্রেমী ও কবি। আর এই কারণেই তাঁর নামে বহু বই, পত্রিকা ও দিওয়ান লেখা হয়েছে। তাঁর বাবা সব বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করতেন।তিনি অবিবাহিত অবস্থায় ৬৫ বছর বয়সে মারা যান।তাঁর গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো-জাইব আল-তাফসীর ও জাইব আল-মানশাত গ্রন্থ।[]

জেবউন্নিসা ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৩৮ সালে দৌলতাবাদ, দাক্ষিণ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আওরঙ্গজেবের প্রথম সন্তান ছিলেন এবং তার মা দিলরস বানু বেগম ইরানের সাফাভি রাজবংশের রাজকন্যা ছিলেন। আওরঙ্গজেবের প্রিয় কন্যা হওয়ায় তিনি অনেক অপরাধীকে ক্ষমা করানোর ক্ষমতা রাখতেন।

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

বাদশাহ আওরঙ্গজেব জেবউন্নিসার শিক্ষার জন্য আমীর এনায়েতুল্লাহ খানের মা হাফেজা মরিয়ম বেগমকে নিযুক্ত করেন। মরিয়ম বেগম কাছে পড়াশোনা শুরু করেন।প্রথমেই তাকে কোরআন হিফজ করানো হয়। জেবুন্নেসার হিফজ সমাপ্ত হলে সম্রাট আলমগির খুশি হয়ে কন্যাকে ত্রিশ হাজার স্বর্নমুদ্রা উপহার দেন। প্রায় সকল ইতিহাসগ্রন্থের বক্তব্য অনুসারে জেবুন্নেসা আরবী ও ফার্সী ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। এমনকি সেযুগের বড় বড় জ্ঞানীরাও নানা প্রয়োজনের জেবুন্নেসার দারস্থ হতেন। জেবুন্নেসার উস্তাদদের মধ্যে মোল্লা সাইদ আশরাফ উল্লেখযোগ্য। মোল্লা সাইদের তত্ত্বাবধানেই জেবুন্নেসা কাব্যচর্চা ও নানা বিষয়ে পড়াশোনা করেন।

রাজনীতি

[সম্পাদনা]

জেবুন্নেসা কাব্যচর্চায় আগ্রহী ছিলেন। সারাদিন পড়াশোনাতেই ব্যস্ত থাকতেন। সমকালীন রাজনীতি থেকে ছিলেন দূরে। কিন্তু ১০৯১ হিজরীতে রাজপুতরা বিদ্রোহ করে। আলমগীর এই বিদ্রোহ দমনের জন্য শাহজাদা আকবরকে সসৈন্যে যোধাপুর প্রেরণ করেন। কিন্তু রাজপুতদের প্ররোচনায় শাহজাদা আকবর নিজেই পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। এইসময় জেবুন্নেসার সাথে শাহজাদার পত্রালাপ চলতো। এই পত্রালাপ রাজনৈতিক ছিল না, শুধুই ভাইবোনের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বহিপ্রকাশ। ঘটনাচক্রে দুয়েকটি পত্র ধরা পড়ে এবং আলমগীর জানতে পারেন জেবুন্নেসা ভাইয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। আলমগীর ক্রোধে অগ্নিমর্শা হয়ে যান। জেবুন্নেসার বার্ষিক ভাতা, যা ছিল চার লাখ স্বর্নমুদ্রা, তা বন্ধ করে দেয়া হয়। জেবুন্নেসার সমস্ত সম্পদ কেড়ে নেয়া হয়। জেবুন্নেসাকে সেলিমগড়ে বন্দী করা হয়। তবে শীঘ্রই জেবুন্নেসা নির্দোষ প্রমানিত হন। তাকে আবার সব ফিরিয়ে দেয়া হয়। সম্রাটের সাথেও তার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। ১০৯২ হিজরীতে রুহুল্লাহ খানের আম্মা হামিদা বানু বেগম ইন্তেকাল করলে আলমগীর জেবুন্নেসাকে হামিদা বানুর ঘরে প্রেরণ করেন। একই বছর আলমগীরের চতুর্থ ছেলে শাহজাদা কাম বখশের বিবাহতে জেবুন্নেসার মহলেও কয়েকটি অনুষ্ঠান হয়।

জেবুন্নেসা সম্পর্কিত বিতর্কিত ঐতিহাসিক বর্ণনা

[সম্পাদনা]

জেবুন্নেসাকে ঘিরে কিছু ভিত্তিহীন গল্প প্রচলিত রয়েছে। এসব গল্পের মধ্যে অন্যতম হলো আকিল খানের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের কাহিনি। বলা হয়, জেবুন্নেসা প্রায়ই আকিল খানকে নিজের মহলে আমন্ত্রণ জানাতেন এবং তাদের মধ্যে প্রেমালাপ হতো। একবার সম্রাট আওরঙ্গজেব (আলমগীর) জানতে পারেন যে আকিল খান জেবুন্নেসার মহলে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হলে আকিল খান গোসলখানায় ঢুকে গরম পানির ডেগের ভেতর লুকিয়ে পড়েন। এরপর আওরঙ্গজেব তার প্রহরীদের আদেশ দেন পানি গরম করতে, ফলে আকিল খান গরম পানিতে পুড়ে মারা যান। তবে, এই গল্পের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। আকিল খানের জীবনী বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য ইতিহাসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে, যেমন আলমগীরনামা, মাআসিরুল উমারা, মাআসিরে আলমগীরি, খাজানায়ে আমেরা, তাজকিরায়ে সারখোশ, ইয়াদে বাইদা, সরদে আজাদ ইত্যাদি। এসব গ্রন্থে আকিল খানের জীবনের নানা দিক আলোচিত হলেও উল্লেখিত ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই। জেবুন্নেসাকে কেন্দ্র করে আরেকটি প্রসিদ্ধ গল্প হলো, তিনি একবার একটি পংক্তি রচনা করেন:"আয হাম নমী শাওয়াদ যে হালাওয়াত জুদা লবম"(অর্থ: শিরীন হতে আমার অধর পৃথক নাহি হতো।) এই পংক্তির দ্বিতীয় চরণ খুঁজতে তিনি কবি নাসির আলীর শরণাপন্ন হন। কথিত আছে, নাসির আলী জবাবে লিখেন:"শায়দ রসীদ বর লবে জেবুন্নিসা লবম।"(অর্থ: জেবুন্নেসার অধর যদি আমার অধর ছুঁতো।) তবে, এই গল্পেরও ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায় না।[]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

১১১৩ হিজরীতে, আলমগীরের শাসনামলের ৪৮ বছর চলছে তখন, জেবুন্নেসা দিল্লীতে মৃত্যুবরণ করেন। আলমগীর সেসময় দক্ষিনাত্যে , একের পর এক যুদ্ধে ব্যস্ত। প্রিয় কন্যার মৃত্যুসংবাদে তিনি ভেংগে পড়েন। তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়ায়। শান্ত, ধীর স্বভাবের এই সম্রাট নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। পরে তিনি শায়খ আতাউল্লাহ, সাইয়েদ আমজাদ খান ও হাফেজ খানের কাছে লিখিত পত্রে মরহুমার ইসালে সওয়াবের জন্য দান খয়রাতের নির্দেশ দেন। এছাড়া মরহুমার কবর পাকা করারও নির্দেশ দেন।[] তাঁকে ‘তিঁস হাজারি’ (৩০ হাজার গাছবিশিষ্ট) বাগানে সমাহিত করা হয়।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Also romanized as Zebunnisa, Zebunniso, Zebunnissa, Zebunisa, Zeb al-Nissa. زیب Zēb means "beauty" or "ornament" in Persian and نساء Nissa means "women" in Arabic, Zebunnisa means "most beautiful of all women"
  2. Sir Jadunath Sarkar (১৯৭৯)। A short history of Aurangzib, 1618–1707। Orient Longman। পৃষ্ঠা 14। 
  3. https://ur.m.wikipedia.org/wiki/%D8%B2%DB%8C%D8%A8_%D8%A7%D9%84%D9%86%D8%B3%D8%A7%D8%A1
  4. "জেবুননেসা বিনতে আলমগীর"। ২০২৫-০২-২৪। 
  5. মাআসিরে আলমগিরি , ৪৬২ পৃষ্ঠা।
  6. "সাত বছর বয়সে কোরআন হিফজ করেছিলেন যে মোগল শাহজাদি"kalerkantho (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-১০-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২৪