জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধাপভিত্তিক বন্ধকরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(জীবাশ্ম জ্বালানি নির্মূলকরণ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বিনিয়োগ: কোম্পানি, সরকার এবং পরিবারগুলো ডিকার্বোনাইজেশনে বর্ধিত পরিমাণে বিনিয়োগ করে চলেছে। এই বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং এ সংক্রান্ত অবকাঠামো, জ্বালানি সঞ্চয়, জ্বালানি-সাশ্রয়ী উত্তাপ ব্যবস্থা, কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজ এবং হাইড্রোজেন জ্বালানি।[১][২]
ব্যয়: নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ক্রমবর্ধমান ব্যাপক প্রয়োগের সাথে সাথে, শক্তির সমতাকৃত ব্যয় (levelised cost of energy) হ্রাস পেয়েছে, বিশেষভাবে সৌর প্যানেল দ্বারা উৎপাদিত শক্তির ক্ষেত্রে।[৩][৪]

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধাপভিত্তিক বন্ধকরণ বলতে বায়ুদূষণজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতা হ্রাস করা, জলবায়ু পরিবর্তন সীমিত করা এবং জ্বালানি স্বনির্ভরতা জোরদার করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও উৎপাদন শূন্যে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এটি চলমান নবায়নযোগ্য জ্বালানিগুলিতে স্থানান্তরণ প্রক্রিয়াটির একটি অংশ, তবে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকির কারণে প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

যদিও অনেক দেশ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিচ্ছে,[৫][৬][৭] তবুও জলবায়ু লক্ষ্য পূরণের জন্য তড়িৎ উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসছে না।[৮] এবং আরও অনেক দেশ পেট্রোলডিজেলচালিত গাড়ি বিক্রি বন্ধ করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা সত্ত্বেও জীবাশ্ম গ্যাস পোড়ানো বন্ধ করার সময়সীমা এখনও নির্ধারিত হয়নি।[৯]

বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগ করার মধ্যে পরিবহন এবং উত্তাপের মতো ক্ষেত্রগুলিতে জীবাশ্ম জ্বালানিকে টেকসই জ্বালানি উৎস দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিকীকরণ, সবুজ হাইড্রোজেন এবং জৈব জ্বালানি। ক্রমান্বয়ে পরিত্যাগ করার নীতিগুলির মধ্যে রয়েছে চাহিদা-পক্ষ এবং সরবরাহ-পক্ষ উভয় ধরনের পদক্ষেপ।[১০] চাহিদা-পক্ষের পদক্ষেপগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করে, অন্যদিকে সরবরাহ-পক্ষের উদ্যোগগুলো জ্বালানি খাতের পরিবর্তনের গতি ত্বরান্বিত করতে এবং নির্গমন হ্রাস করতে উৎপাদন সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করে। জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে তারা যতটা কার্বন নির্গত করে ঠিক ততটাই কার্বন হ্রাস করার জন্য আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।[১১] আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা অনুমান করে যে, শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের জন্য, বৈশ্বিকভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ ২০৩০ সালের মধ্যে তিনগুণ বৃদ্ধি করতে হবে, যা বার্ষিক ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি হবে।[১২][১৩]

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

প্লাস্টিক দূষণ কমানোর লক্ষ্যে সার্কুলার ইকোনমি ও বায়োবেসড ইকোনমি (যেমন বায়োপ্লাস্টিক) উন্নত করা হচ্ছে।[১৪] সেইসাথে রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতে (যেমন প্লাস্টিকের নতুন উপাদান তৈরিতে) অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে। কিন্তু, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগের মূল লক্ষ্য হলো এই জ্বালানী পোড়ানো বন্ধ করা এবং এর ফলে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ রোধ করা। তাই, প্লাস্টিক শিল্পে তেল ও গ্যাসের ব্যবহার কমানোর চেষ্টাগুলো সরাসরি জীবাশ্ম জ্বালানি বর্জন বা হ্রাস করার পরিকল্পনার অংশ নয়।

জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন কয়লা, তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস, শতাব্দী ধরে বিশ্বের প্রধান শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এই জ্বালানির দহনের ফলে পরিবেশে বিপুল পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধান কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলির দিকে মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।

জীবাশ্ম জ্বালানীর প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

কয়লা[সম্পাদনা]

২০১০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বার্ষিকভাবে বাতিল হওয়া কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।[১৫] তবে, বর্তমানে কয়লা বিদ্যুৎ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার হার স্থবির হয়ে পড়েছে,[১৫] এবং কয়লা বিদ্যুৎ থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে আসার বৈশ্বিক প্রক্রিয়া এখনও প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।[১৬]
কিছু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার পাশাপাশি, অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও যুক্ত হচ্ছে, যদিও ২০১০ এর দশক থেকে নতুন কেন্দ্রের সংযোজনের বার্ষিক পরিমাণ কমে আসছে।[১৭]

প্যারিস চুক্তির ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) নিচে বিশ্ব উষ্ণায়ন রাখার লক্ষ্য পূরণের জন্য, ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার অর্ধেক কমাতে হবে।[১৮] ২০১৭ সাল পর্যন্ত কয়লা বিশ্বের এক চতুর্থাংশেরও বেশি প্রাথমিক শক্তির যোগান দিয়েছে[১৯] এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৪০% এর জন্য দায়ী।[২০] কয়লার ব্যবহার ধীরে ধীরে কমানোর ফলে স্বল্পমেয়াদী স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সুবিধা রয়েছে যা ব্যয়ের অর্থমূল্যকে ছাড়িয়ে যায়[২১] এবং এটি ছাড়া প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব নয়।[২২] তবে কিছু দেশ এখনও কয়লার ব্যবহারকে সমর্থন করে[২৩] এবং কত দ্রুত এটি বন্ধ করা উচিত তা নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে।[২৪][২৫]

২০১৮ সালে, ৩০টি দেশ এবং অনেক উপ-জাতীয় সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান[২৬] 'পাওয়ারিং পাস্ট কোল অ্যালায়েন্স'-এর সদস্য হয়। উন্নত প্রযুক্তি ছাড়া কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের অগ্রগতির লক্ষ্যে প্রতিটি দেশ এ জোটে যোগদানের ঘোষণা দেয়। (উন্নত প্রযুক্তি বলতে কার্বন ক্যাপচার ও স্টোরেজ বা CCS-কে বোঝানো হয়েছে, তবে প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রেই এই প্রযুক্তি নেই কারণ এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।)[২৭] ২০১৯ সাল অবধি, যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহার করে, তারা এই জোটে যোগ দেয়নি এবং কিছু দেশ নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও অর্থায়ন অব্যাহত রেখেছে। ইউরোপীয় ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কয়লা থেকে ন্যায়সঙ্গতভাবে সরে আসার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।[২৮]

২০১৯ সালে, জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন যে 'সম্পূর্ণ বিপর্যয়ের' মুখোমুখি না হতে চাইলে দেশগুলোর উচিত ২০২০ সাল থেকে নতুন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করা।[২৯]

২০২০ সালে, যদিও চীন কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছিল, তবুও বিশ্বব্যাপী নির্মিত কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে বেশি সংখ্যক কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন যে OECD দেশগুলিকে ২০৩০ সালের মধ্যে এবং বাকি বিশ্বকে ২০৪০ সালের মধ্যে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা উচিত।[৩০]

খনিজ তেল[সম্পাদনা]

২০১০ সালে ডিপওয়াটার হরাইজন তেল অনুসন্ধান কূপ থেকে ৪.৯ মিলিয়ন ব্যারেল (৭৮০,০০০ ঘনমিটার) তেল ছড়িয়ে পড়েছিল।

খনিজ তেল (Crude oil)-কে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানি তেল (fuel oil), ডিজেল (diesel) এবং পেট্রোল (petrol)-এ পরিশোধিত করা হয়। এই পরিশোধিত পণ্যগুলো প্রধানত ঐতিহ্যবাহী গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন, বিমান এবং জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়।[৩১]

প্রাকৃতিক গ্যাস[সম্পাদনা]

জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের কূপ।

প্রাকৃতিক গ্যাস একটি বহুল-ব্যবহৃত জ্বালানী যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর থেকে নির্গত কার্বনের পরিমাণ প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ গ্রাম। গৃহস্থালীর কাজে তাপ উৎপাদনের জন্যও গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের একটি বড় উৎস। এছাড়াও, গ্যাসের লিক থেকে বায়ুমণ্ডলে মিথেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

কিছু দেশে, কয়লার পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাসকে অস্থায়ীভাবে "ব্রিজ ফুয়েল" হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এর স্থলে নবায়নযোগ্য জ্বালানী বা হাইড্রোজেন-ভিত্তিক অর্থনীতির দিকে ধাবিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।[৩২] তবে, এই "ব্রিজ ফুয়েল" জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘায়িত করতে পারে। ফলস্বরূপ, ২০২০-এর দশকে নির্মিত গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির অব্যবহৃত হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে কারণ সাধারণত একটি প্ল্যান্টের গড় আয়ু ৩৫ বছর।[৩৩] প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার তেল ও কয়লার পরে শেষ হলেও (সম্ভবত ২০৫০ সাল পর্যন্ত নয়), তবুও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এর কারণে সুনামের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।[৩৪]

২০১৯ সাল থেকে, কিছু অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় নেটওয়ার্ক অফ ট্রান্সমিশন সিস্টেম অপারেটরস ফর গ্যাস (ENTSOG) হাইড্রোজেনের ব্যবহার বাড়াচ্ছে।[৩৫] এছাড়াও, গ্যাস উত্তাপনের ব্যবহার কমানোর লক্ষ্যে ভবন নির্মাণের নিয়মকানুনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে।[৩৬][৩৭]

কারণ[সম্পাদনা]

জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

১. বায়ু দূষণ কমিয়ে জনস্বাস্থ্য উন্নত করা: জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে বায়ু দূষণ কমিয়ে জনস্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব।

২. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা: জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব।

৩. জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আর্থিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি: অনেক দেশ জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল। এর ফলে তাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে আর্থিক স্বাধীনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।[৩৮][৩৯]

৪. জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি: জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত সীমিত এবং দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে জ্বালানি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

৫. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।

উল্লেখ্য যে, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরিতে উচ্চ খরচ, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক শিল্প ও কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব।

স্বাস্থ্য[সম্পাদনা]

জীবাশ্ম জ্বালানির কারণেই বায়ু দূষণজনিত অকাল মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা ঘটে।[৪০][৪১] এই দূষণ ঘরের ভেতরে যেমন রান্না বা উত্তাপের ধোঁয়া থেকে হতে পারে, তেমনি যানবাহনের নির্গমনের কারণে ঘরের বাইরেও হতে পারে। একটি অনুমান অনুযায়ী, অকাল মৃত্যুর ৬৫% ঘটনা বায়ু দূষণের জন্য হয় এবং প্রতি বছর ৩৫ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।[৪২] লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর অধ্যাপক স্যার অ্যান্ডি হেইন্সের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করার ফলে স্বাস্থ্যের যে উন্নতি হবে তার আর্থিক মূল্য (অর্থনীতিবিদরা প্রতিটি দেশের জীবনের মূল্য ব্যবহার করে অনুমান করেন) প্যারিস চুক্তির ২-ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য অর্জনের ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি।[৪৩]

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের প্রচেষ্টা[সম্পাদনা]

জলবায়ু পরিবর্তন সীমাবদ্ধ রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ করা। এর কারণ হলো বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৭০%-এরও বেশি এই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে।[৪৪] আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (International Energy Agency) ২০২০ সালে উল্লেখ করেছে, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে হলে, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিত্যাগের প্রক্রিয়াটি "চারগুণ দ্রুততর হতে হবে"।[৪৫] বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়নকে শিল্পোত্তর-পূর্ব যুগের তুলনায় মাত্র ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির মধ্যে সীমিত রাখতে হলে, ২০২১ সালের হিসেবে দেশ ও কোম্পানিগুলির মালিকানাধীন বেশিরভাগ জীবাশ্ম জ্বালানি মাটির নিচে রেখে দিতে হবে।[৪৬][৪৭]

শক্তির উৎস পরিবর্তনে কর্মসংস্থান[সম্পাদনা]

নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে রূপান্তর বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং এসব কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের মাধ্যমে চাকরির বাজার সম্প্রসারিত হয়। জার্মানির বায়ুশক্তি শিল্পের বিকাশ এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।[৪৮]

একইভাবে, পারমাণবিক শক্তির উপর নির্ভরতাও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। পারমাণবিক প্রযুক্তি উন্নয়ন, নির্মাণ শ্রমিক, প্রকৌশলী এবং বিকিরণ সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞদের মতো দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হয়।[৪৯] বিদ্যুতের প্রায় ৭৫% পারমাণবিক শক্তি থেকে উৎপাদনকারী দেশ ফ্রান্সে এই খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে।[৫০]

নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাড়ানো হলে দেশেও কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ তৈরি হতে পারে। সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎসে দক্ষ জনবলের চাহিদা বাড়বে, যার ফলে বিভিন্ন কারিগরি ও সাধারণ শ্রমিকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

শক্তি স্বনির্ভরতা[সম্পাদনা]

যেসব দেশের তেল-গ্যাস বা কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদ নেই, তারা প্রায়ই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার পেছনে শক্তি স্বনির্ভরতা বৃদ্ধির যুক্তি দেখায়।

সুইজারল্যান্ডে ব্যাপকভাবে রেলওয়ে নেটওয়ার্ককে বিদ্যুতায়িত করার সিদ্ধান্তটি দুটি বিশ্বযুদ্ধের আলোকে নেওয়া হয়েছিল (যে সময়ে সুইজারল্যান্ড নিরপেক্ষ ছিল)। সেই যুদ্ধের সময় কয়লা আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছিল। সুইজারল্যান্ডে পর্যাপ্ত জলবিদ্যুৎ সম্পদ থাকায়, বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ বা ডিজেলের বিপরীতে বৈদ্যুতিক ট্রেনগুলিকে দেশীয় শক্তির উৎস দিয়ে পরিচালিত করা যেতে পারে। এটি কয়লা আমদানির প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমিয়ে দেয়।[৫১][৫২]

১৯৭৩ সালের তেল সংকটের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য অনেক দেশেই শক্তি আমদানি ও রপ্তানি নীতিমালার পরিবর্তন ঘটে। ফ্রান্স সরকার তখন পারমাণবিক শক্তি সম্প্রসারণের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করে। ১৯৮০-এর দশকের শেষ নাগাদ তারা বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কয়লা, গ্যাস এবং তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রায় পুরোপুরি পারমাণবিক শক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ে।[৫৩][৫৪]

নেদারল্যান্ডস[৫৫][৫৬] এবং ডেনমার্কে[৫৭][৫৮] সাইকেল চালানো উৎসাহিত করার প্রবণতাও ১৯৭৩ সালের তেল সংকটের সাথে মিলে যেত। পরিবহন খাতে তেল আমদানির প্রয়োজন কমানো এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকির পর্যায়ক্রমিক অপসারণ[সম্পাদনা]

বিশ্বব্যাপী অনেক দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয়।[৫৯] ২০১৯ সালে, বিভিন্ন দেশে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে প্রদত্ত এই ভর্তুকির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[৬০] সেই একই বছর, সরকারগুলো এই খাতে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভর্তুকি প্রদান করে।[৬১] তবে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ব্যয়কে ভর্তুকি হিসেবে ধরার একটি অপ্রচলিত সংজ্ঞা ব্যবহার করে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) হিসাব করে দেখে যে ২০১৭ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৫.২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মোট জিডিপির ৬.৪%।[৬২] কিছু জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানি সরকারগুলোকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাতে এসব ভর্তুকি চালু রাখা হয়।[৬৩]

জীবাশ্ম জ্বালানির ভর্তুকিগুলি ধাপে ধাপে বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।[৬৪] তবে সামাজিক বিক্ষোভ এড়াতে[৬৫] এবং দরিদ্র মানুষকে আরও দরিদ্র করে না তোলার স্বার্থে এটি অবশ্যই সতর্কতার সাথে করতে হবে।[৬৬] বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, জীবাশ্ম জ্বালানির কম দাম, দরিদ্র পরিবারের তুলনায় ধনী পরিবারগুলিকে বেশি উপকৃত করে। তাই দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে সাহায্য করার জন্য, জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকির চেয়ে অন্যান্য পদক্ষেপগুলি আরও কার্যকর হতে পারে।[৬৭] ফলে, এই ভর্তুকি সংস্কারের পক্ষে জনসমর্থনও বাড়তে পারে।[৬৮]

অর্থনৈতিক তত্ত্ব নির্দেশ করে যে, কয়লা খনন ও পোড়ানোর ভর্তুকি অপসারণ এবং সেগুলিকে উচ্চহারে কর আরোপের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করাই হবে সর্বোত্তম নীতিমালা।[৬৯]:৫৬৮ বিশ্বব্যাপী গবেষণাগুলি দেখায়, শুধু ভর্তুকি অপসারণের মাধ্যমেই (কর আরোপ ছাড়াই) দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিবেশের ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব।[৭০] এই ভর্তুকিগুলি অপসারণ জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। আইএমএফ ২০২৩ সালে অনুমান করেছিল যে জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি অপসারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার অনেক কাছাকাছি (২ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও অনেক কম) নিয়ে আসতে পারে।[৭১]

জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি অপসারণের ফলে কী প্রভাব পড়বে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে কী ধরনের ভর্তুকি অপসারণ করা হচ্ছে এবং অন্যান্য জ্বালানি উৎসের সহজলভ্যতা ও অর্থনীতির উপর।[৭২] আরেকটি সমস্যা হলো "কার্বন লিকেজ" (carbon leakage)। শক্তি-নিবিড় একটি শিল্প থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করলে, এর উৎপাদন কম নিয়ন্ত্রিত অন্য কোনও দেশে স্থানান্তরিত হতে পারে এবং ফলস্বরূপ বৈশ্বিক নির্গমনের পরিমাণ আসলে বেড়ে যেতে পারে।

উন্নত দেশগুলিতে, জ্বালানি খরচ কম এবং এখাতে প্রচুর ভর্তুকি দেওয়া হয়। সে তুলনায় উন্নয়নশীল দেশে, দরিদ্র মানুষকে নিম্নমানের সেবার জন্য উচ্চ মূল্য দিতে হয়।[৭৩]

২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ১০০% শক্তির চাহিদা বায়ু, জলবিদ্যুৎ এবং সৌরশক্তি দিয়ে মেটানোর একটি পরিকল্পনা সামনে রাখা হয়েছে।[৭৪][৭৫] এতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য শক্তিতে ভর্তুকির স্থানান্তর করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, খরা এবং অন্যান্য চরম আবহাওয়ার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির জন্য কার্বনের উপর একটি মূল্য নির্ধারণের সুপারিশও করা হচ্ছে।

ভর্তুকি ছাড়াই ভারত এবং চীনে বড় আকারের সৌরবিদ্যুতের সমতুল্য বিদ্যুৎ খরচ (levelised cost of electricity) ২০২১ সাল থেকেই বিদ্যমান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির চেয়ে কম হয়ে গেছে।[৭৬]

রাইস ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর এনার্জি স্টাডিজ নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে:[৭৭]

  • সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সম্পূর্ণ ভর্তুকি প্রত্যাহার: দেশগুলিকে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত এবং অন্তর্ভুক্ত জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত।
  • ভর্তুকি সংস্কারের ভাষাকে স্বচ্ছতা দান: দ্ব্যর্থবোধক পরিভাষা দূর করার জন্য ভর্তুকি সংস্কার-সংক্রান্ত ভাষা সুস্পষ্ট হওয়া উচিত।
  • সংস্কার পদ্ধতিকে আইনসিদ্ধ করা: প্রভাবিত দেশগুলিতে আনুষ্ঠানিক আইন প্রণয়ন করা উচিত যেখানে সংস্কারের পথগুলি সুনির্দিষ্ট করা থাকবে এবং পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোন সুযোগ থাকবে না।
  • বাজার-সম্পর্কিত মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা: বাজার-সম্পর্কিত মূল্য নির্ধারণের জন্য স্বচ্ছ ফর্মুলা প্রকাশ করা এবং মূল্য সমন্বয়ের নিয়মিত সময়সূচি মেনে চলা দরকার।
  • ক্রমান্বয়ে পূর্ণ সংস্কার: সুনির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসারে ক্রমান্বয়ে মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের দিক থেকে স্পষ্ট সংকেত দেয়। একইসাথে শক্তির সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে আংশিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারটি সামাল দেওয়ার সুযোগ দেয়।
  • বহিঃখাতের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস: কালক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি পণ্য ও সেবার ওপর কর বা ফি আরোপ করা এবং ট্যাক্স কোডে জীবাশ্ম জ্বালানির ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা রয়েছে সেগুলি অপসারণ করা উচিত।
  • সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তর: সমাজের দরিদ্র অংশগুলির উপকারের জন্য ভর্তুকিযুক্ত মূল্য সংরক্ষণের পরিবর্তে সরাসরি নগদ অর্থ স্থানান্তরের ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।
  • বিস্তৃত জন-যোগাযোগ ক্যাম্পেইন: ব্যাপক জন-যোগাযোগ ক্যাম্পেইন চালু করতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক মূল্যে ভর্তুকি: বাকি যে অংশের জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি থাকবে সেগুলো আন্তর্জাতিক মূল্যের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে বাজেটভুক্ত হতে হবে এবং জাতীয় কোষাগার থেকে প্রদান করতে হবে।
  • প্রতিবেদন প্রণয়ন: মূল্য পরিবর্তন এবং নির্গমন পরিবর্তন সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করে নথিবদ্ধ করতে হবে।

জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগ সম্পর্কিত গবেষণা[সম্পাদনা]

Reduction in fossil fuel capacity compared to renewables
নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, বিশেষ করে সৌর ফটোভোল্টাইক এবং বায়ু শক্তি, ক্রমবর্ধমান মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।[৭৮]
২০২৩ সালে, বায়ু এবং সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছিল।[৭৯]
যেসব দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল, সেসব দেশে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে কত শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সে বিষয়ে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। ফলে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের বৃদ্ধির সম্ভাবনায়ও ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে।[৮০]

২০১৫ সালে, গ্রিনপিস এবং ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক ইউরোপ জুড়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্রিয়ভাবে বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তার উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ইইউ (EU) রেজিস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা তাদের বিশ্লেষণ করেছিল।[৮১]

২০১৬ সালে অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদন এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বর্তমানে চালু খনি এবং তেলক্ষেত্রগুলোতে নিহিত কার্বন নিঃসরণ (যদি এগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়) বিশ্বকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সীমার বাইরে নিয়ে যাবে। এই সীমাটি ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৮২][৮৩][৮৪] রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, "সবচেয়ে শক্তিশালী জলবায়ু নীতি লিভারগুলির মধ্যে একটি হল ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির জন্য আর খনন না করা।"[৮৫]:

২০১৬ সালে, ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই) এবং ১১টি অন্যান্য এনজিও এমন দেশগুলিতে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ বিদ্যুতের সংযোগ থেকে বঞ্চিত। রিপোর্টটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, সামগ্রিকভাবে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ দরিদ্রদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে খুব কমই কাজ করে। উপরন্তু, সৌর ও বায়ুশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুত উৎপাদনের খরচ কমে আসায় তা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।[৮৬][৮৭][৮৮]

২০১৮ সালের 'নেচার এনার্জি'তে প্রকাশিত একটি গবেষণা ইঙ্গিত দেয় ইউরোপের ১০টি দেশ তাদের বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া অন্তত ৩০% কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করতে পারে।[৮৯]

২০২০ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন সীমিত করার লক্ষ্য নিয়ে সাপ্লাই-সাইড পদক্ষেপগুলির প্রথম বৈশ্বিক হিসাব 'ফসিল ফুয়েল কাটস ডাটাবেস' দিয়ে শুরু হয়।[৯০] ডাটাবেসের সর্বশেষ আপডেটে, ১৯৮৮ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবরের মধ্যে ১১০টি দেশে বাস্তবায়িত প্রধান সাত ধরনের সরবরাহ-পক্ষের পদ্ধতির (উদাহরণ: বিনিয়োগ প্রত্যাহার, অবরোধ, মামলা, স্থগিতাদেশ ও নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি) ১৯৬৭টি উদ্যোগের রেকর্ড করা হয়।

বিশ্ব যদি পুরোপুরি নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসে রূপান্তরিত হয় তবে ১৫৬টি দেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে তা মূল্যায়ন করে জিগালো ইনডেক্স অফ জিওপলিটিক্যাল গেইনস অ্যান্ড লসেস। প্রাক্তন জীবাশ্ম জ্বালানি রপ্তানিকারকদের ক্ষমতা হারাতে পারে, যেখানে প্রাক্তন জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিকারক এবং নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পদে সমৃদ্ধ দেশগুলির অবস্থান শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।[৯১]

বেশ কয়েকটি ডিকার্বোনাইজেশান পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে যা কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনকে শূন্যে নামিয়ে আনবে।

গার্ডিয়ানের একটি তদন্তে ২০২২ সালে দেখানো হয়েছে যে বড় জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলি নতুন জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে। এসব প্রকল্প জলবায়ুকে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত তাপমাত্রা সীমার বাইরে চালিত করবে।[৯২]

নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা[সম্পাদনা]

সিডনি ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ফিউচারস-এর গবেষক ডঃ স্ভেন টেস্ক এবং ডঃ সারাহ নিকলাস ২০২১ সালের জুন মাসে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাদের গবেষণায় দেখা যায় যে, "বিদ্যমান কয়লা, তেল ও গ্যাস উৎপাদন বিশ্বকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।" 'ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ'-এর সহযোগিতায় তারা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন যার শিরোনাম ছিল, "Fossil Fuel Exit Strategy: An orderly wind down of coal, oil, and gas to meet the Paris Agreement." এই প্রতিবেদনে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে, "পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলই জীবাশ্ম জ্বালানিকে নবায়নযোগ্য শক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারে। এতে করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫° সেলসিয়াসের নিচে রাখা যাবে, সেই সাথে সবার জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে।"[৯৩]

অপসারণ প্রতিরোধের দায়িত্বের মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে, প্রথম বৈজ্ঞানিক মূল্যায়ন প্রদান করা হয়েছিল। এই মূল্যায়নে বলা হয়েছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৫০% সম্ভাবনায় সীমাবদ্ধ রাখতে বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিটি অঞ্চলে কতটুকু জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।[৯৪][৯৫]

মূল্যায়নের ফলাফল: বিশ্বব্যাপী, ২০৫০ সালের মধ্যে ৯০% কয়লা, ৬৮% তেল এবং ৪৫% প্রাকৃতিক গ্যাস অপসারণকরা থেকে বিরত থাকতে হবে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ করা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ২০৪০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ করা থেকে বিরতথাকতে হবে।

মূল্যায়ন থেকে স্পষ্ট যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মূল্যায়নে আরও বলা হয়েছে যে জীবাশ্ম জ্বালানি অপসারণ করা থেকে বিরত থাকার জন্য নীতিগত পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন। নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস, কার্বন নিরপেক্ষ পরিবহন ব্যবস্থা এবং শক্তি দক্ষতা বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করবে। মূল্যায়নের ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্ব নেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা প্রদান করে।

জীবাশ্ম জ্বালানি বাতিলের চ্যালেঞ্জ[সম্পাদনা]

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী তেল ও গ্যাস শিল্পের নিট আয় রেকর্ড ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।[৯৬]
কোভিড-১৯ মহামারী থেকে সেরে ওঠার পর, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ফলে জ্বালানির উচ্চমূল্য থেকে বর্ধিত আয়ের পাশাপাশি ঋণের মাত্রা হ্রাস, রাশিয়ায় বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলোতে কর ছাড় এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের পূর্ববর্তী পরিকল্পনা থেকে সরে আসার মাধ্যমে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে।[৯৭] রেকর্ড মুনাফা অপ্রত্যাশিত লাভের উপর কর আরোপের জনসাধারণের দাবির জন্ম দিয়েছে।[৯৭]

জীবাশ্ম জ্বালানি বাতিল করা বেশ কঠিন কারণ বর্তমানে বিশ্ব এগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ২০১৪ সালে, জীবাশ্ম জ্বালানি বিশ্বের প্রাথমিক শক্তি ব্যবহারের ৮০% এরও বেশি সরবরাহ করেছিল।

জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগ করার অন্যতম প্রধান প্রভাব হতে পারে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। বিকল্প শক্তির উৎস দিয়ে এই জ্বালানির অংশ পূরণে যে নতুন বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে তা বিদ্যুৎ খরচে যুক্ত হবে।

জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, এগুলো বাতিলের প্রচেষ্টা যৌক্তিকভাবে অবাঞ্ছিত। ফলস্বরূপ, এই শিল্পে নিযুক্ত লোকেরা সাধারণত এমন যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে যা তাদের শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলে। এন্ড্রে টভিন্নেরেইম এবং এলিজাবেথ ইভারসফ্লাটেন জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে কর্মসংস্থানের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন নীতির সমর্থনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন। জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প থেকে বাস্তুচ্যুত কর্মীদের জন্য ভূতাত্ত্বিক শক্তি শিল্পে কর্মসংস্থানের একটি সম্ভাব্য সুযোগ হতে পারে। জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগের উদ্যোগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর একটি উদাহরণ হল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের ভোট কীভাবে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের প্রাধান্যের সাথে সম্পর্কিত।

এছাড়াও আরও চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- টেকসই পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা, প্রয়োজনীয় উপকরণের উৎস করা, বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোর স্থানান্তর, পরিবর্তনশীল নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবস্থাপনা, সর্বোত্তম জাতীয় পর্যায়ক্রম নীতি তৈরি করা, পরিবহন অবকাঠামো রূপান্তর করা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাশন প্রতিরোধ নিশ্চিত করা। এই ধরনের সমস্যা সমাধানে সক্রিয় গবেষণা ও উন্নয়ন চলছে।

মিশরে COP27 সম্মেলনে, বিশ্বকে কম তেল পোড়ানোর আহ্বান বন্ধ করার জন্য সৌদি আরব প্রতিনিধিরা চাপ দেয় বলে সেখানে উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন। সৌদি আরব এবং আরও কয়েকটি তেল উৎপাদক দেশের আপত্তির পর, সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি বাতিলের আহ্বান অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে, জলবায়ু বিজ্ঞানীদের সাথে জাতিসংঘের একটি বৈঠকে, সৌদি আরব, রাশিয়ার সাথে মিলে একটি সরকারী নথি থেকে "মানুষ-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন" এর উল্লেখ মুছে ফেলার জন্য চাপ দেয়। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার করে যে মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ু সংকটের মূল চালিকাশক্তি।

প্রধান উদ্যোগ ও আইন যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করবে[সম্পাদনা]

চীন[সম্পাদনা]

চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, কয়লা খনন এবং বিদ্যুৎ শিল্পে কর্মরত ৩ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিকের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর প্রয়োজন। এখনও স্পষ্ট নয় যে চীন সেই তারিখের মধ্যে সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার বন্ধ করার লক্ষ্য রাখে কিনা, অথবা একটি ছোট অংশ কার্বন ক্যাপচার এবং স্টোরেজ প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহার করা হবে। ২০২১ সালে, কয়লা খননকে সর্বোচ্চ ক্ষমতায় চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

চীন বিশ্বের বৃহত্তম জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারকারী দেশ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি মোকাবেলায়, চীন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে রূপান্তর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

২০১৫ সালে, চীন জাতিসংঘের কাছে জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা (INDC) জমা দিয়েছে। INDC-তে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন তীব্রতা ২০১৫ সালের তুলনায় ৬০-৬৫% কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চীন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কয়লা খনির উৎপাদন কমানো, নতুন কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা এবং গাড়ি নির্গমন মানদণ্ড কঠোর করা। চীন নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়নকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য ভর্তুকি প্রদান, নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের জন্য আইনি কাঠামো তৈরি করা।

চীন বিশ্বের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনকারী দেশ। ২০১৮ সালে, চীনের নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতা ৭২৮ গিগাওয়াট ছিল, যা বিশ্বের মোট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন ক্ষমতার ২৮%। চীন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি বন্ধ করা, গাড়িতে ইলেকট্রিক যানবাহন ব্যবহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে জ্বালানি দক্ষতা উন্নত করা। চীন ২০১৭ সালে একটি জাতীয় কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন ট্রেডিং ব্যবস্থা এবং এটি চীনের কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন[সম্পাদনা]

২০১৯ সালের শেষ দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেয় – ইউরোপিয়ান গ্রিন ডিলের সূচনা। এই পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করা এবং ইউরোপকে আরো পরিবেশবান্ধব অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে যেসব প্রধান পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেগুলো হলো:

  • এনার্জি ট্যাক্সেশন ডিরেক্টিভের সংশোধন: জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি এবং কর ছাড় (বিশেষ করে বিমান ও জাহাজ চলাচল খাতে) যাচাই-বাছাই করা।
  • সার্কুলার ইকোনমি অ্যাকশন প্ল্যান: যেখানে সম্পদ ও পণ্যের পুনর্ব্যবহারে জোর দেওয়া হচ্ছে, বর্জ্য কমানোর উপর দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
  • জলবায়ু-সম্পর্কিত নীতির পর্যালোচনা ও সংশোধন: নির্গমন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (Emissions Trading System) এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
  • টেকসই ও দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থার কৌশল: যাতে পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও পরিবহনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম (CBAM): যেসব দেশ তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মাপকাঠিতে কমাতে ব্যর্থ হবে তাদের উপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা।

উপরন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন গবেষণা ও কারিগরি উদ্ভাবনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে:

  • Horizon Europe: জাতীয় পর্যায়ে এবং বেসরকারি বিনিয়োগকে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে একটি বড় ধরনের প্রকল্প। পরিবহন ক্ষেত্রের প্রযুক্তি উন্নয়ন (যেমন ব্যাটারি, ক্লিন হাইড্রোজেন, পরিবেশবান্ধব ইস্পাত উৎপাদন, ইত্যাদি) এই প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
  • ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক: ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শক্তি খাতের উন্নয়নে এই ব্যাংক ৮১ বিলিয়ন ইউরোর বেশি সাহায্য দিয়েছে। পাওয়ার গ্রিড, শক্তি সাশ্রয়, নবায়নযোগ্য শক্তির খাতে ইউরোপ এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিনিয়োগ এই সাহায্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ভারত[সম্পাদনা]

প্যারিস চুক্তিতে, ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে তার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০% অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে একটি ইন্টেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস (INDC) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ভারত আশাবাদী যে তারা এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে, এমনকি ছাড়িয়ে যেতে পারবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভারত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, জৈব জ্বালানি ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ চুরি রোধ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য ভর্তুকি ও প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। সরকারি যানবাহনগুলোকে ধাপে ধাপে ইলেকট্রিক যানবাহনে রূপান্তর করার পরিকল্পনাও রয়েছে। জৈব জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য 'জাতীয় জৈব জ্বালানি নীতি' (National Biofuel Policy) প্রণয়ন করা হয়েছে। ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে 'কার্বন নিরপেক্ষ' (Net Zero) হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে।

জাপান[সম্পাদনা]

জাপান ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অর্থাৎ, জাপান ২০৫০ সালের মধ্যে তার গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন (যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড) শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনবে।

জাপান বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতি এবং জীবাশ্ম জ্বালানির বৃহৎ ব্যবহারকারী। জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়ে, জাপান ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাপান সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, জৈব জ্বালানি এবং ভূ-তাপীয় শক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে, জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান ২০% এ পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাপান পুরাতন ও অকার্যকর কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে, জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার অবদান ৫০% কমিয়ে ২০% এ নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাপান ২০২১ সালে কার্বন মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চালু করেছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে, কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য কোম্পানিগুলোকে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। জাপান বিদ্যুৎ ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত বিদ্যুৎ সরঞ্জাম ব্যবহার, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ভবন নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। জাপান হাইড্রোজেন জ্বালানিকে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে, জাপান হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন কমাতে চায়। জাপান CCS প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড আটক করে ভূগর্ভস্থ স্তরে সংরক্ষণ করার জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। জাপান ২০৫০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান ৫০-৬০% এ পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর জন্য, জাপান সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ, জৈব জ্বালানি এবং ভূ-তাপীয় শক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। জাপান পরিবহন খাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এর জন্য, জাপান ইলেকট্রিক যানবাহন (EV) ব্যবহারের প্রসার ঘটাবে এবং হাইড্রোজেন জ্বালানি চালিত যানবাহনের উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে। জাপান কার্বন নিরপেক্ষ শহর তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এর মধ্যে রয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, বিদ্যুৎ দক্ষতা বৃদ্ধি, এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন।

জাপানের জীবাশ্ম জ্বালানি পরিত্যাগের পথ সহজ নয়। জাপানের বিদ্যুৎ উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানির অবদান এখনও অনেক বেশি। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে জাপানকে বিদ্যুৎ গ্রিড উন্নত করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও, জাপানকে পরিবহন খাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে হবে।

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্য ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনে আইনিভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য, দেশটির জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঘরবাড়ি গরম করার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমানো। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, বিকল্প সবুজ পুনরুদ্ধার আইন প্রণয়নের পরিকল্পনা বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক প্রস্তাব করা হয়েছে। এই পরিকল্পনাগুলোর লক্ষ্য হলো প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে দ্রুততম সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা।

প্রস্তাবিত বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • সৌর ও বায়ু বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ঘর গরম করা।
  • হাইড্রোজেন গ্যাসের মতো কার্বন-নিরপেক্ষ জ্বালানি ব্যবহারের জন্য ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামোকে অভিযোজিত করা।
  • বিদ্যুৎ ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ভবনগুলির উন্নতিতে বিনিয়োগ করা।

এই পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ এবং নীতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। যাইহোক, জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার মাধ্যমে, যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

কয়লা বিদ্যুৎ বাতিলের আইন ও উদ্যোগসমূহ[সম্পাদনা]

কয়লার ব্যবহার বন্ধ করা একটি পরিবেশ নীতি যার লক্ষ্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পোড়ানো বন্ধ করা। এটি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কয়লা সবচেয়ে বেশি কার্বন-নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি। সেজন্য কয়লার ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা জলবায়ু পরিবর্তন সীমাবদ্ধ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমনটা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বর্ণনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক জ্বালানী সংস্থা (IEA) অনুমান করে যে, শিল্প-পূর্ব যুগের তুলনায় বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ৩০% এরও বেশির জন্য কয়লা দায়ী। 'পাওয়ারিং পাস্ট কোল অ্যালায়েন্স'-এর কিছু দেশ ইতিমধ্যেই কয়লার ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করেছে।

চীন এবং ভারতে বিপুল পরিমাণে কয়লা পোড়ানো হয়। কিন্তু বর্তমানে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বড় ধরনের অর্থায়ন শুধুমাত্র চীনের কয়লা বিদ্যুৎ খাতই পাচ্ছে। কয়লার ব্যবহার বন্ধ করলে যে পরিমাণ স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত উপকার পাওয়া যাবে, যেমন জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগ কমানো, তার চেয়ে ব্যয় অনেক কম। তাই উন্নত দেশগুলো 'জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশন পার্টনারশিপ'-এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কয়লা বিদ্যুৎ পরিত্যাগ করতে সাহায্য করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আর কোনো নতুন কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর একটি বড় উদাহরণ হল, G7 (অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সাতটি দেশের সংস্থা) ২০২১ সালে বছরের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে সহায়তা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল।

অনুমান করা হয়েছে যে একবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত প্রতি বছর কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার মাধ্যমে সমাজ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১% এরও বেশি উপকৃত হতে পারে। তাই অর্থনীতিবিদরা 'কোসিয়ান বার্গেইন' নামে একটি প্রক্রিয়া প্রস্তাব করেছেন, যেখানে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কয়লা নির্ভরতা কমানোর প্রক্রিয়ায় অর্থসাহায্য প্রদান করবে।

জীবাশ্ম জ্বালানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির পর্যায়ক্রমিক অপসারণ[সম্পাদনা]

ব্লুমবার্গ NEF রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী শক্তি রূপান্তর বিনিয়োগ প্রথমবারের মতো জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের সমান হয়েছে।[৯৮]
২০২০ সালে, প্রথমবারের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বিদ্যুৎ উৎস হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানিকে ছাড়িয়ে গেছে।[৯৯]

বিকল্প জ্বালানি বলতে এমন যেকোনো জ্বালানি উৎসকে বোঝায় যা জীবাশ্ম জ্বালানির ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বা যে জ্বালানি নবায়নযোগ্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়, সেটি বিকল্প জ্বালানির একটি প্রকার। তবে, বিকল্প জ্বালানি অ-নবায়নযোগ্য উৎসগুলিকেও উল্লেখ করতে পারে, যেমন পারমাণবিক শক্তি। বিকল্প জ্বালানি উৎসের মধ্যে রয়েছে: সৌর শক্তি, জলবিদ্যুৎ, সামুদ্রিক শক্তি, বায়ু শক্তি, ভূতাত্ত্বিক শক্তি, জৈব জ্বালানি, ইথানল এবং হাইড্রোজেন।

জীবাশ্ম জ্বালানি বাতিল করার সময় বিকল্প জ্বালানি উৎসের ব্যবহারের পাশাপাশি জ্বালানি দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবায়নযোগ্য শক্তি[সম্পাদনা]

নবায়নযোগ্য শক্তি, সবুজ শক্তি, বা নিম্ন-কার্বন শক্তি হলো এমন শক্তির উৎস যা প্রাকৃতিকভাবে মানুষের জীবদ্দশার মধ্যেই পুনরায় পূরণ হতে পারে। নবায়নযোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে সূর্যালোক, বায়ু, জলের প্রবাহ এবং ভূ-তাপীয় তাপ। যদিও বেশিরভাগ নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস টেকসই, কিছু উৎস রয়েছে যেগুলো বর্তমান ব্যবহার-হারে টেকসই নয়। উদাহরণস্বরূপ, কিছু জৈববস্তুর উৎসকে তাদের বর্তমান ব্যবহার হার বিবেচনা করে টেকসই মনে করা হয় না। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রায়শই বিদ্যুৎ উৎপাদন, উত্তাপ এবং শীতলীকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলি সাধারণত বড় আকারের হয়, তবে সেইসাথে এগুলো গ্রামীণ ও দূরবর্তী এলাকা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্যও উপযুক্ত, যেখানে শক্তি প্রায়শই মানব উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নবায়নযোগ্য শক্তি প্রায়শই আরও বিদ্যুতায়নের সাথে মিলিতভাবে ব্যবহার হয়, যার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে: বিদ্যুৎ তাপ বা বস্তুকে দক্ষতার সাথে স্থানান্তর করতে পারে এবং ব্যবহারের সময় পরিচ্ছন্ন হয়। ২০১১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, নবায়নযোগ্য শক্তি বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহের ২০% থেকে ২৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ৬৮% থেকে ৬২% এ নেমে এসেছে, এবং পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার ১২% থেকে ১০% এ নেমেছে। জলবিদ্যুতের অংশ ১৬% থেকে ১৫% এ কমেছে যখন সূর্য ও বায়ু থেকে শক্তি ২% থেকে ১০% বেড়েছে। বায়োমাস এবং ভূ-তাপীয় শক্তি ২% থেকে ৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৩৫ টি দেশে ৩,১৪৬ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি ইনস্টল করা রয়েছে, যেখানে ১৫৬টি দেশের নবায়নযোগ্য শক্তি খাত নিয়ন্ত্রণকারী আইন রয়েছে। ২০২১ সালে, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ বৃদ্ধিতে বিশ্বব্যাপী প্রায় অর্ধেক অবদান ছিল চীনের।

বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি শিল্পের সাথে এক কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান যুক্ত, যার মধ্যে সৌরবিদ্যুত (সোলার ফটোভোলটাইক) খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মী নিয়োজিত। নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা দ্রুত আরও কার্যকরী এবং সস্তা হয়ে উঠছে এবং মোট শক্তি খরচের মধ্যে এর ভাগ ক্রমশ বাড়ছে। বিশ্বে নতুন করে ইনস্টল করা বিদ্যুৎ ক্ষমতার বৃহৎ অংশই নবায়নযোগ্য। বেশিরভাগ দেশে, ফটোভোলটাইক সৌর বা স্থলভাগের বায়ুশক্তি থেকে নতুন বিদ্যুৎ সবচেয়ে সস্তায় উৎপাদন করা সম্ভব।

বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যেই তাদের মোট শক্তি সরবরাহের ২০% এরও বেশি অংশে নবায়নযোগ্য শক্তির অবদান রাখছে। কিছু দেশ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে তাদের অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর কিছু দেশ তাদের সমস্ত বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন করে। আগামি ২০২০ দশক এবং তারও পরে জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি বাজারগুলির দৃঢ়ভাবে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইইএ (IEA) এর মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে নিট-শূন্য নির্গমন অর্জন করতে হলে, বিশ্বব্যাপী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯০% নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করতে হবে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে সমস্ত সেক্টর - বিদ্যুৎ, তাপ, পরিবহন ও শিল্প - জুড়ে ১০০% নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিশ্বব্যাপী রূপান্তর সম্ভব এবং অর্থনৈতিকভাবে টেকসই।

নবায়নযোগ্য শক্তির সম্পদ বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকা জুড়ে বিদ্যমান, জীবাশ্ম জ্বালানির বিপরীতে, যেগুলি সীমিত সংখ্যক দেশে কেন্দ্রীভূত। নবায়নযোগ্য শক্তি এবং শক্তি দক্ষতার প্রযুক্তি বাস্তবায়নের ফলে উল্লেখযোগ্য শক্তি সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তবে শত শত বিলিয়ন ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি নবায়নযোগ্য শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করছে। আন্তর্জাতিক জনমত জরিপে সৌর শক্তি এবং বায়ু শক্তি ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির জন্য শক্তিশালী সমর্থন দেখা যায়। ২০২২ সালে, আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (International Energy Agency) দেশগুলিকে আরও নবায়নযোগ্য শক্তি যুক্ত করার নীতিগত, নিয়ন্ত্রক, অনুমতি এবং অর্থায়নের বাধাগুলি সমাধান করার জন্য বলেছে। এতে করে ২০৫০ সালের মধ্যে নিট-শূন্য কার্বন নির্গমন অর্জনের সম্ভাবনা বাড়বে।

জলবিদ্যুৎ[সম্পাদনা]

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের ব্রিজপোর্টের কাছে অবস্থিত চিফ জোসেফ বাঁধ একটি বড় রান-অফ-দ্য-রিভার স্টেশন যার কোন উল্লেখযোগ্য জলাধার নেই।

জলবিদ্যুৎ একটি গুরুত্বপূর্ণ নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। ২০১৫ সালে, জলবিদ্যুৎ বিশ্বের মোট বিদ্যুতের ১৬.৬% এবং সমস্ত নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ৭০% উৎপাদন করেছিল। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়, বড়ো জলাধার তৈরি করে যে পরিবেশগত ক্ষতি হতো, তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ১৯৯০-এর দশকে বাঁধ নির্মাণ কমে যায়। সেই সময় থেকে, চীন, ব্রাজিল এবং ভারতের মতো দেশগুলিতে বড়ো বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। তবে পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় জলাধার সৃষ্টি করে এমন প্রচলিত বাঁধের বিকল্প হিসেবে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ('রান-অফ-দ্য-রিভার' জলবিদ্যুৎ) এবং ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বায়ু শক্তি[সম্পাদনা]

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বায়ু খামার।

বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে উপযোগী কাজ সম্পাদন করাকেই বায়ু শক্তির ব্যবহার বলে। ঐতিহাসিকভাবে, পালতোলা জাহাজ, বায়ুকল এবং বায়ু পাম্পে বায়ু শক্তি ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে, বায়ু শক্তি মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই নিবন্ধে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়ু শক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজকাল বায়ুশক্তি প্রায় সম্পূর্ণভাবেই উইন্ড টারবাইন দিয়ে উৎপাদন করা হয়, যেগুলো সাধারণত একত্রে বায়ু খামার তৈরি করে এবং বৈদ্যুতিক গ্রিডের সাথে সংযুক্ত থাকে।

২০২২ সালে, বায়ু শক্তি থেকে ২০০০ টেরাওয়াট-ঘণ্টারও বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছিল, যা বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৭% এর বেশি এবং বিশ্ব শক্তির প্রায় ২%। ২০২১ সালে বেশিরভাগ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১০০ গিগাওয়াট যোগ হওয়ার সাথে সাথে, বিশ্বব্যাপী ইনস্টল করা বায়ু বিদ্যুতের ক্ষমতা ৮০০ গিগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১%-এর বেশি হওয়া উচিত।

বায়ু শক্তিকে একটি টেকসই, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর তুলনায় পরিবেশের উপর এর প্রভাব অনেক কম। বায়ু শক্তি পরিবর্তনশীল, তাই বিদ্যুতের একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে শক্তি সঞ্চয় বা অন্যান্য সহজে ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎসের প্রয়োজন হয়। স্থলভিত্তিক (অনশোর) বায়ু খামারগুলোর উৎপাদিত শক্তির তুলনায় অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে চাক্ষুষ প্রভাব বেশি থাকে। তবে অফশোর, অর্থাৎ সমুদ্রে অবস্থিত বায়ু খামারগুলির চাক্ষুষ প্রভাব কম এবং এগুলোর ক্ষমতা সাধারণত বেশি হয়, যদিও তৈরি করতে খরচও বেশি হয়। অফশোর বায়ু শক্তির বর্তমানে নতুন ইন্সটলেশনের প্রায় ১০% অংশ রয়েছে।

বায়ু শক্তি উৎপাদিত শক্তির একক প্রতি সবচেয়ে কম খরচের বিদ্যুৎ উৎসগুলির মধ্যে একটি। অনেক জায়গায়, নতুন স্থলভিত্তিক বায়ু খামারগুলি নতুন কয়লা বা গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে সস্তা।

উচ্চ উত্তর এবং দক্ষিণ অক্ষাংশের অঞ্চলগুলিতে বায়ু শক্তির সর্বোচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। বেশিরভাগ অঞ্চলে, রাতের বেলায় এবং শীতকালে বায়ু শক্তির উৎপাদন বেশি হয় যখন সৌরশক্তির উৎপাদন কম থাকে। এই কারণে, বায়ু এবং সৌর শক্তির সমন্বয় অনেক দেশেই উপযুক্ত।

সৌরশক্তি[সম্পাদনা]

২০১৭ সালে, সৌরশক্তি বিশ্বব্যাপী মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১.৭% যুগিয়েছিল এবং এই হার প্রতিবছর ৩৫% করে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ২০২০ সালের মধ্যে চূড়ান্ত বিশ্বব্যাপী শক্তি খরচে সৌরশক্তির অবদান ১% ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

সৌর আলোকতড়িৎ[সম্পাদনা]

জার্মানির লিবারোসে অবস্থিত ৭১.৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর আলোকতড়িৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

সৌর আলোকতড়িৎ কোষ সূর্যালোককে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে এবং অনেক সৌর আলোকতড়িৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। গত দশকে এই কেন্দ্রগুলির আকার ক্রমশ বেড়েছে এবং ঘন ঘন নতুন সক্ষমতার রেকর্ড হচ্ছে। এই কেন্দ্রগুলির অনেকগুলি কৃষির সাথে একীভূত এবং কিছুতে নতুন ধরনের অনুসরণ ব্যবস্থা (ট্র্যাকিং সিস্টেম) ব্যবহার করা হয়, যেগুলি সূর্যের দৈনিক গতিপথ অনুসরণ করে। ফলে প্রচলিত স্থির সিস্টেমের তুলনায় এরা আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি পরিচালনের সময় জ্বালানী খরচ হয় না এবং নিঃসরণও (emissions) থাকে না।

কেন্দ্রীভূত সৌরশক্তি[সম্পাদনা]

স্পেনে অবস্থিত ১৫০ মেগাওয়াটের আন্ডাসল সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি বাণিজ্যিক প্যারাবোলিক ট্রফ সৌর তাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আন্ডাসল কেন্দ্রটি সৌরশক্তি সঞ্চয় করার জন্য গলিত লবণের ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে, যাতে সূর্য না থাকলেও বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে।[১০০]

কেন্দ্রীভূত সৌরশক্তি (CSP) সিস্টেমগুলি একটি বড় এলাকার সূর্যালোককে একটি ছোট আলোকরশ্মি পটিতে (beam) কেন্দ্রীভূত করতে পরকলা (লেন্স) বা আয়না এবং অনুসরণ ব্যবস্থা (ট্র্যাকিং সিস্টেম) ব্যবহার করে। এরপর এই ঘনীভূত তাপকে একটি প্রচলিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তাপীয় উৎস হিসাবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ঘনীভবন প্রযুক্তি রয়েছে; যার মধ্যে সর্বাধিক উন্নত হল অধিবৃত্তীয় অবতল প্রতিফলক (প্যারাবোলিক ট্রফ parabolic trough), ঘনবিন্যস্ত রৈখিক ফ্রেনেল প্রতিফলক (কমপ্যাক্ট লিনিয়ার ফ্রেনেল রিফ্লেক্টর Compact linear Fresnel reflector), স্টারলিং অবতল প্রতিফলক (স্টারলিং ডিশ Stirling dish) এবং সৌরশক্তি বুরূজ ( সোলার পাওয়ার টাওয়ার solar power tower)। সূর্যকে অনুসরণ করতে এবং আলোকে কেন্দ্রীভূত করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়। এই সমস্ত ব্যবস্থায় একটি কর্মক্ষম তরল (working fluid) ঘনীভূত সূর্যালোক দ্বারা উত্তপ্ত হয় এবং তারপর এটি বিদ্যুৎ উৎপাদন বা শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।

পারমাণবিক শক্তি[সম্পাদনা]

২০১৪ সালের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেলের (IPCC) প্রতিবেদনে পারমাণবিক শক্তিকে এমন একটি প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ-এর তুলনায় মাত্র ৫% গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নির্মাণাধীন পারমাণবিক চুল্লীর সংখ্যা ৬০টিরও বেশি, যেখানে চীন ২৩টি চুল্লি নিয়ে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। বিশ্বব্যাপী, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বন্ধ হওয়া চুল্লির তুলনায় নতুন চুল্লী উন্মুক্ত করার সংখ্যা কম হলেও, সামগ্রিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ভারতও তার পারমাণবিক শক্তি ব্যাপকভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। ম্যানহাটন ২ প্রকল্প একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে যাতে কারখানায় অটোমেশনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে পারমাণবিক শক্তি বাড়ানোর উপায় বর্ণনা করা হয়েছে।

পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধের উদ্দেশ্যে অনেক দেশ আইন প্রণয়ন করেছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধীরে ধীরে বন্ধের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে এবং কিছু দেশ ইতিমধ্যে কয়েকটি চুল্লি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে। পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্র নির্মাণে মন্দার পেছনে মূলত তিনটি দুর্ঘটনার প্রভাব রয়েছে: ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের থ্রি মাইল আইল্যান্ড দুর্ঘটনা, ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের চেরনোবিল দুর্ঘটনা এবং ২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়।

২০১১ সালের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর জার্মানি তার ১৭টি চুল্লির মধ্যে আটটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে এবং ২০২২ সালের শেষের মধ্যে বাকি চুল্লিগুলো বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতালি তাদের দেশকে পারমাণবিক-মুক্ত রাখার জন্য নির্ণায়ক ভোট দেয়। সুইজারল্যান্ড এবং স্পেন নতুন চুল্লি নির্মাণ নিষিদ্ধ করেছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী পারমাণবিক শক্তির উপর জাপানের নির্ভরতা নাটকীয়ভাবে হ্রাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতিও একই আহ্বান জানান। ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে দেশটির ৫৪টি পারমাণবিক কেন্দ্রের কিছু চালু করার এবং নির্মাণাধীন কিছু চুল্লি নির্মাণ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

২০১৬ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং নরওয়ের মতো দেশগুলিতে কোনও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই এবং তারা পারমাণবিক শক্তির বিরোধী। জার্মানি, ইতালি, স্পেন এবং সুইজারল্যান্ড তাদের পারমাণবিক বিদ্যুৎ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দিচ্ছে। তবুও, IPCC অনুসারে, বৈশ্বিক বিদ্যুৎ চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ধাপে ধাপে বন্ধ করার অধিকাংশ উপায়ের মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক শক্তির সম্প্রসারণ। জাতিসংঘের ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশনও বলেছে যে পারমাণবিক সম্প্রসারণ ছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু লক্ষ্যগুলি সম্ভবত পূরণ করা হবে না।

খরচ বৃদ্ধি, নির্মাণ বিলম্ব, মারাত্মক দুর্ঘটনার হুমকি এবং নিয়ন্ত্রক বাধাসমূহ প্রায়ই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্প্রসারণকে বাস্তবিকভাবে অসম্ভব করে তোলে। কিছু সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ব্যয়, সময়কাল এবং ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। উদাহরণস্বরূপ, NuScale Power একটি হালকা-জল চুল্লির জন্য পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক কমিশন থেকে নিয়ন্ত্রক অনুমোদন পেয়েছে যা তত্ত্বগতভাবে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে পারে এবং ঐতিহ্যবাহী পারমাণবিক কেন্দ্রগুলির চেয়ে কম খরচে নির্মিত হতে পারে। এনার্জি ইমপ্যাক্ট সেন্টারের OPEN100 (একটি প্ল্যাটফর্ম যা একটি ১০০-মেগাওয়াট চাপযুক্ত ওয়াটার রিঅ্যাক্টর সহ একটি পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ওপেন-সোর্স ব্লুপ্রিন্ট সরবরাহ করে) দাবি করে যে তাদের মডেলটি মাত্র দুই বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে নির্মিত হতে পারে। উভয় পরিকল্পনাতেই, ছোট মডুলার চুল্লিগুলিকে ব্যাপক আকারে উৎপাদন করার ক্ষমতা তাত্ত্বিকভাবে নির্মাণের সময় কমিয়ে দেবে।

বায়োমাস[সম্পাদনা]

বায়োমাস হলো জীবন্ত বা সম্প্রতি মৃত জীব থেকে প্রাপ্ত জৈব পদার্থ। সাধারণত উদ্ভিদ বা উদ্ভিদজাত উপাদানকে বায়োমাস বলা হয়। এটি একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। বায়োমাসকে সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়, কিংবা প্রক্রিয়াজাত করে বায়োফুয়েলের মতো অন্যান্য শক্তি পণ্য তৈরি করা যায়। তাপীয় রূপান্তর, রাসায়নিক রূপান্তর, এবং জৈবরাসায়নিক রূপান্তর - এই তিনটি প্রক্রিয়ায় বায়োমাসকে শক্তিতে রূপান্তর করা যায়।

বায়োমাসকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করলে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx), উদ্বায়ী জৈব যৌগ (VOC), ক্ষুদ্রকণা এবং অন্যান্য দূষক তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে, এসব দূষকের পরিমাণ কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাসের মতো প্রচলিত জ্বালানি থেকেও বেশি হতে পারে (যেমন, ঘরের ভেতরে রান্না বা উত্তাপের কাজে ব্যবহারের সময়)। তবে বনজঙ্গলে অনিয়ন্ত্রিত দাবানল কিংবা উন্মুক্তভাবে জ্বালানোর তুলনায় কাঠের বায়োমাস থেকে কম কণা এবং অন্যান্য দূষক তৈরি হয়। জীবাশ্ম জ্বালানি, বায়োফুয়েল, এবং বায়োমাস পোড়ানোর ফলে ব্ল্যাক কার্বন নামক এক ধরনের দূষক তৈরি হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ এই ব্ল্যাক কার্বন। ২০০৯ সালে সুইডেনে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল এলাকাগুলোকে সমયાনুবর্তীভাবে ঢেকে ফেলা বাদামী ধোঁয়াশার সিংহভাগই তৈরি হয়েছিল বায়োমাস পোড়ানোর ফলে, যদিও জীবাশ্ম জ্বালানিরও কিছুটা অবদান ছিল। বর্তমানে ডেনমার্ক কয়লার ব্যবহার কমিয়ে বায়োমাস ও আবর্জনার ব্যবহার বাড়িয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহন বন্ধ করা[সম্পাদনা]

বৈদ্যুতিক যানবাহনের (EVs) বিক্রয় থেকে বোঝা যায় যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী গ্যাস-চালিত যানবাহন থেকে মানুষ ধীরে ধীরে সরে আসছে।[১০১]

অনেক দেশ ও শহরে নতুন অভ্যন্তরীণ দহন ইঞ্জিন (Internal Combustion Engine - ICE) চালিত যানবাহনের বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফলে সমস্ত নতুন গাড়িকে বৈদ্যুতিক হতে হবে অথবা দূষণমুক্ত অন্যান্য শক্তি দ্বারা চালিত হতে হবে। যুক্তরাজ্যে ২০৩৫ সালের মধ্যে এবং নরওয়েতে ২০২৫ সালের মধ্যে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হবে। বায়ুদূষণ সীমিত করার জন্য, অনেক গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক বাস ক্রয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে আইসিই যানবাহনের ব্যবহার সীমিত করছে। অনেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যে শূন্য-নির্গমন যানবাহন ('zero-emissions vehicle') নীতি রয়েছে, যেখানে বিক্রিত গাড়ির একটি নির্দিষ্ট শতাংশকে বৈদ্যুতিক হতে হবে। জার্মানিতে ভেরকেসওয়েন্ডে ('Verkehrswende') নামক পদটির প্রচলন রয়েছে যার মূল ভাব হলো দহন-চালিত সড়ক পরিবহন থেকে সাইকেল, পায়ে হাঁটা এবং রেল পরিবহনে স্থানান্তর এবং অবশিষ্ট সড়ক যানবাহনগুলিকে বৈদ্যুতিক সংযোগে প্রতিস্থাপন করা।

বায়োফুয়েল (জৈব জ্বালানি)[সম্পাদনা]

তরল জ্বালানী আকারে বায়োফুয়েলগুলি, যা উদ্ভিজ্জ উপকরণ থেকে উদ্ভূত, বাজারে প্রবেশ করছে। যাইহোক, বর্তমানে যে সমস্ত জৈব জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে তার মধ্যে অনেকগুলিই পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং ভূমি ব্যবহারের উপর বিরূপ প্রভাবের জন্য সমালোচিত হয়েছে।

মতামত[সম্পাদনা]

ওয়াশিংটনের অলিম্পিয়ায় আইনসভা ভবনের সামনে বিক্ষোভ। দীর্ঘদিনের পরিবেশ কর্মী টেড ন্যাশন বিক্ষোভের প্লেকার্ডের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।

জরিপ[সম্পাদনা]

২০২৩ এ, পিউ একটি জরিপ করে যার ফলাফল অনুযায়ী দেখা যায় যে প্রায় ৩১% আমেরিকান তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে প্রস্তুত। ৩২% চান ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করা হোক এবং ৩৫% কখনই চান না যে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করা হোক।

কয়লা ব্যবহার স্থগিত করার পক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত[সম্পাদনা]

মার্কিন রাজনীতিবিদ অ্যাল গোর বলেছেন:

"যদি আপনি একজন তরুণ হন এবং একটি টেকসই ভবিষ্যত দেখতে চান, কিন্তু দেখছেন যে সঠিক পদক্ষেপগুলি নেওয়া হচ্ছে না, তবে আমি মনে করি এখন সময় এসেছে অসামরিক অবাধ্যতার। আমাদেরকে অবশ্যই কার্বন ক্যাপচার ও সিকুয়েস্ট্রেশন ছাড়া নতুন কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।"

কয়লা ব্যবহার বন্ধ করার পক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত[সম্পাদনা]

গুগলের তৎকালীন সিইও এরিক শ্মিট সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানিকে বিশ বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস দিয়ে প্রতিস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।

শীর্ষ তেল সংকট প্রশমন[সম্পাদনা]

একটি অঞ্চলের সময়ের সাথে সাথে ক্রুড অয়েল উৎপাদনকে চিত্রিত করে এমন একটি আদর্শ হুবার্ট বক্ররেখা।
১৯৭০-২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী শক্তি ব্যবহার। উৎস: আন্তর্জাতিক এনার্জি আউটলুক ২০০৪।

শীর্ষ তেল সংকট বলতে বোঝায় এমন একটি সময় যখন তেলের সর্বোচ্চ উৎপাদনের হার অর্জিত হবে, তারপর থেকে ক্রমান্বয়ে উৎপাদন হ্রাস পাবে। শীর্ষ তেল সংকট প্রশমনের লক্ষ্য হলো পেট্রোলিয়ামের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে শীর্ষ তেল সংকটের সম্ভাব্য নেতিবাচক সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে বিলম্বিত করা বা হ্রাস করা। পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে, প্রশমনের প্রচেষ্টা হুবার্ট বক্ররেখার আকারকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করতে চায়। হুবার্ট শীর্ষ তত্ত্ব অনুযায়ী এই বক্ররেখাটি সময়ের সাথে তেল উৎপাদনের হারকে নির্দেশ করে। বক্ররেখার শীর্ষবিন্দুকে শীর্ষ তেল হিসেবে অবহিত করা হয়, এবং প্রশমনের মাধ্যমে এই বক্ররেখার আকার পরিবর্তন করে শীর্ষ তেল উৎপাদনের সময়সীমাকে প্রভাবিত করা যায়। হার্শ প্রতিবেদনের লেখক তাঁর বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন যে প্রশমন প্রচেষ্টার মাধ্যমে তেল উৎপাদন বক্ররেখার আকার পরিবর্তন করা সম্ভব হলেও, তেল উৎপাদনের প্রকৃতিও প্রশমন কৌশলকে প্রভাবিত করে।

ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বব্যাপী তেল ব্যবহারের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৯৭৩ এবং ১৯৭৯ সালের তেল সংকটের সময়ে প্রশমনের প্রচেষ্টা তেল ব্যবহার কমিয়েছিল। অন্যদিকে ১৯৭০ এর দশক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের অর্থনৈতিক মন্দা ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত তেল ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য হ্রাস আনতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে, উচ্চ তেলের দামের প্রতিক্রিয়ায় তেল ব্যবহার হ্রাস পায়।

প্রশমন প্রচেষ্টার সফলতার জন্য মূল বিষয়গুলো হলো বিভিন্ন পদ্ধতির কার্যকারিতা, সরকারি ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা, এবং কত তাড়াতাড়ি সমাধান বাস্তবায়ন করা যায়। এই প্রশ্নগুলির উত্তর ও প্রশমন সংক্রান্ত নীতিমালা গ্রহণ করা সমাজের বর্তমান জীবনধারা অক্ষুণ্ন রাখতে এবং পৃথিবীর জনসংখ্যা বহন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিকল্প জ্বালানি[সম্পাদনা]

শীর্ষ তেলের প্রভাব প্রশমনের সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি হল পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে নবায়নযোগ্য বা বিকল্প জ্বালানি উৎস ব্যবহার করা।

পরিবহণ খাতে জ্বালানি ব্যবহার[সম্পাদনা]

সিংহভাগ তেল ব্যবহৃত হয় পরিবহণের জন্য বলে, প্রশমনের অধিকাংশ আলোচনাই পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর নিবদ্ধ।

জ্বালানি প্রতিস্থাপন[সম্পাদনা]

যদিও কিছু ক্ষেত্রে পরস্পরের বদলে ব্যবহার করা যায়, তবে বিকল্প জ্বালানির প্রকারভেদ মূলত নির্ভর করে জ্বালানিটি স্থিতিশীল ব্যবহারে নাকি পরিবহনে ব্যবহৃত হবে তার ওপর।

জৈব জ্বালানি[সম্পাদনা]

জৈব জ্বালানি হলো এমন জ্বালানি যা জৈববস্তু থেকে অপেক্ষাকৃত কম সময়ের মধ্যে উৎপাদিত হয়। তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরিতে যে দীর্ঘ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া জড়িত, জৈবজ্বালানি সেভাবে তৈরি হয় না। জৈব জ্বালানি, উদ্ভিদ, কৃষিজাত, গার্হস্থ্য বা শিল্পজাত বর্জ্য থেকে উৎপাদন করা যায়। এসব জ্বালানি মূলত পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে তাপ উৎপাদন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহার করা যেতে পারে। জৈব জ্বালানিকে সাধারণত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, জৈব-জ্বালানির ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু সমালোচনাও আছে। "খাদ্য বনাম জ্বালানি" বিতর্ক, টেকসই উৎপাদন, বন উজাড়, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ইত্যাদি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

সাধারণত, জৈব জ্বালানি ইঞ্জিনে পোড়ানোর সময় কম পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে। জৈব জ্বালানি উৎপাদনের ফসল বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণ করে বলে এগুলোকে সাধারণত কার্বন নিরপেক্ষ জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে, জৈবজ্বালানির জীবনচক্র বিশ্লেষণে (life-cycle assessment) দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য ব্যাপক আকারে ভূমি-ব্যবহারের পরিবর্তন করতে হয়, যার সাথে উল্লেখযোগ্য নির্গমন জড়িত। জৈব জ্বালানি থেকে জলবায়ুগত প্রভাব সম্পর্কে অনুমানগুলো পরিস্থিতি এবং ব্যবহৃত পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। অতএব, জৈব-জ্বালানির কারণে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের সম্ভাবনাও ব্যাপকভাবে ভিন্ন। কিছু ক্ষেত্রে নির্গমনের মাত্রা জীবাশ্ম জ্বালানির সাথে তুলনীয়, আবার অন্যান্য ক্ষেত্রে জৈব জ্বালানির নির্গমন নেতিবাচকও হতে পারে (অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন অপসারণ ঘটাতে পারে)।

দুটি সবচেয়ে সাধারণ ধরনের জৈব জ্বালানি হলো বায়োইথানল এবং বায়োডিজেল। ব্রাজিল বায়োইথানলের বৃহত্তম উৎপাদক, আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে বায়োডিজেলের বৃহত্তম উৎপাদক। বৈশ্বিকভাবে বায়োইথানল ও বায়োডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে যথাক্রমে ২.২ ও ১.৮ এক্সাজুল শক্তি উৎপাদন করা হয়। উল্লেখ্য, বিমান চলাচলের জন্য জৈব-জ্বালানির চাহিদা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বায়োইথানল: মূলত চিনি বা শর্করা জাতীয় ফসল যেমন ভুট্টা, আখ বা মিষ্টি জোয়ার থেকে গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়োইথানল নামক অ্যালকোহল তৈরি করা হয়। গাছ এবং ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ যেগুলো খাদ্য উৎস নয়, সেগুলোর সেলুলোজ থেকেও ইথানল উৎপাদনের প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে। বিশুদ্ধ ইথানল (E100) সরাসরি যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে, অকটেন রেটিং বাড়াতে এবং যানবাহনের নির্গমন উন্নত করতে একে সাধারণত গ্যাসোলিনের সাথে যুক্ত করা হয়।

জৈবডিজেলের একটি নমুনা

বায়োডিজেল: তেল বা চর্বি থেকে ট্রান্সএস্টেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়োডিজেল তৈরি করা হয়। বিশুদ্ধ বায়োডিজেল (B100) সরাসরি যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।তবে, সাধারণত ডিজেল চালিত যানবাহনে পার্টিকুলেট, কার্বন মনোক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনের মাত্রা কমাতে একে ডিজেলের সাথে যুক্ত করা হয়।

স্থায়ী স্থাপনা[সম্পাদনা]

যদিও তেল ও ডিজেল এখনও বিশ্বব্যাপী বিদ্যুতের একটি ছোট অংশ সরবরাহ করে, কিছু মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী দেশ সৌর বিদ্যুতের সাথে প্রতিস্থাপন করছে, কারণ তেল রপ্তানি করা বেশি লাভজনক।

মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন[সম্পাদনা]

পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে তেলের অনন্য ভূমিকা রয়েছে কারণ এটি একটি উচ্চ ঘনত্বের শক্তির উৎস এবং ব্যবহার করা সহজ। তবে, অন্যান্য বেশ কিছু সম্ভাব্য বিকল্প রয়েছে। জৈবজ্বালানিগুলোর মধ্যে বায়োইথানল এবং বায়োডিজেলের ব্যবহার ইতিমধ্যেই কিছু দেশে প্রচলিত রয়েছে।

হাইড্রোজেন জ্বালানি আরেকটি বিকল্প যা বিভিন্ন দেশে বিকাশাধীন রয়েছে। পাশাপাশি, হাইড্রোজেন যানবাহনও রয়েছে। তবে হাইড্রোজেন মূলত একটি শক্তি সঞ্চয় মাধ্যম, প্রাথমিক শক্তির উৎস নয়। ফলে, হাইড্রোজেন ব্যবহারের জন্য একটি অ-পেট্রোলিয়াম উৎস প্রয়োজন। যদিও ব্যয় এবং দক্ষতার দিক থেকে ব্যাটারি চালিত যানবাহনগুলি বর্তমানে হাইড্রোজেনকে ছাড়িয়ে গেছে, তবুও কিছু ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন কার্যকরী হতে পারে। যেমন, স্বল্প দূরত্বের ফেরি এবং অত্যন্ত শীতল জলবায়ুতে হাইড্রোজেন উপযোগি হতে পারে। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলগুলি ব্যাটারি চালিত যানের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কার্যকরী এবং পেট্রোল চালিত গাড়ির তুলনায় দ্বিগুণ দক্ষ।

ব্যাটারি দ্বারা চালিত বৈদ্যুতিক যানবাহন আরেকটি বিকল্প, এবং এগুলির যেকোন শক্তির পথের সর্বোচ্চ "ওয়েল-টু-হুইল" দক্ষতা রয়েছে। ফলে, এটি অন্য যেকোনো পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক যানবাহনের ব্যবহার সম্ভব করে তোলে। এছাড়া, যদি বিদ্যুৎ কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও উৎপন্ন করা হয়, তবেও দুটি সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, লক্ষ লক্ষ যানবাহন পুনঃস্থাপনের চেয়ে কয়েক হাজার চিমনি থেকে কার্বন আলাদা করা সস্তা। দ্বিতীয়ত, বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার উৎসাহিত করা নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলিকে আরো বৃদ্ধি করার পথ সুগম করে।

বিকল্প বিমান জ্বালানি[সম্পাদনা]

এয়ারবাস এ৩৮০ প্রথমবারের মতো ১ ফেব্রুয়ারী ২০০৮ সালে বিকল্প জ্বালানিতে চালিত হয়েছিল। বোয়িংও তাদের ৭৪৭ বিমানে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে। কিছু বায়োজ্বালানি, যেমন ইথানল, কম শক্তি ধারণ করে, তাই এই ধরনের বিমানের জন্য আরও বেশি "ট্যাঙ্কস্টপ" (জ্বালানি ভরার জন্য বিরতি) প্রয়োজন হতে পারে।

মার্কিন বিমান বাহিনী বর্তমানে তাদের পুরো বিমানবহর ফিশার-ট্রপশ প্রক্রিয়া থেকে উৎপাদিত সিন্থেটিক জ্বালানি এবং জেপি-৮ জেট জ্বালানির ৫০/৫০ মিশ্রণে চালানোর জন্য সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।

সংরক্ষণ[সম্পাদনা]

যখন বিকল্প জ্বালানি উপলব্ধ থাকে না, তখন শক্তি-দক্ষ যানবাহনের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। পরিবহনে তেলের ব্যবহার কমাতে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানো, গণপরিবহন ব্যবহার করা, কার-পুলিং, বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং উচ্চ জ্বালানি-দক্ষ ডিজেল এবং হাইব্রিড যানবাহন ব্যাবহার এসবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

আরও ভালোভাবে প্রভাব কমানোর মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিমান পরিকল্পনার মাধ্যমে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্মার্ট গ্রোথের দিকে মনোযোগ দেওয়া যাতে ব্যক্তিগত পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা কমে, গণপরিবহনের ব্যবহার বাড়ানো, ভ্যান-পুলিং ও কার-পুলিং, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, দূর থেকে কাজ করা (রিমোট ওয়ার্ক) এবং মানুষ-চালিত পরিবহন বাড়ানো। রেশনিং এবং গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করাও ব্যক্তিগত পরিবহন কমানোর পদ্ধতি হতে পারে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে উচ্চ তেলের দাম যুক্তরাষ্ট্রের চালকদের ২০০৭ সালে কম গাড়ি চালাতে এবং ২০০৮ সালের প্রথম তিন মাসে আরও অনেক বেশি কম গাড়ি চালাতে উৎসাহিত করেছে।

পিক অয়েল থেকে সম্ভাব্য সমস্যাগুলি মোকাবেলা করার জন্য, কলিন ক্যাম্পবেল রিমিনি প্রোটোকল নামে একটি প্রস্তাব করেছেন। এই পরিকল্পনাটির অন্যান্য দিকের সাথে দেশগুলিকে তাদের বর্তমান উৎপাদনের সাথে তেলের ব্যবহারের ভারসাম্য রাখার দরকার রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Energy Transition Investment Hit $500 Billion in 2020 – For First Time"। Bloomberg New Energy Finance। ১৯ জানুয়ারি ২০২১। ১৯ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Catsaros, Oktavia (২৬ জানুয়ারি ২০২৩)। "Global Low-Carbon Energy Technology Investment Surges Past $1 Trillion for the First Time - Figure 1"। Bloomberg NEF (New Energy Finance)। ২২ মে ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। Defying supply chain disruptions and macroeconomic headwinds, 2022 energy transition investment jumped 31% to draw level with fossil fuels 
  3. Chrobak, Ula; Chodosh, Sara (২৮ জানুয়ারি ২০২১)। "Solar power got cheap. So why aren't we using it more?"Popular Science। ২৯ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  ● Chodosh's graphic is derived from data in "Lazard's Levelized Cost of Energy Version 14.0" (পিডিএফ)Lazard.com। Lazard। ১৯ অক্টোবর ২০২০। ২৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. "2023 Levelized Cost Of Energy+"। Lazard। ১২ এপ্রিল ২০২৩। পৃষ্ঠা 9। ২৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  (Download link labeled "Lazard's LCOE+ (April 2023) (1) PDF—1MB")
  5. "Nearly a quarter of the operating U.S. coal-fired fleet scheduled to retire by 2029"www.eia.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২১ 
  6. "Australia hastens coal plant closures to catch up on climate"Nikkei Asia (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২১ 
  7. "Our members"PPCA (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৮-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২১ 
  8. "Coal-Fired Electricity – Analysis"IEA (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২১ 
  9. "No EU agreement on fossil phase-out text"Argus Media (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০২-২০। ২০২৩-০২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২১ 
  10. Green, F.; Denniss, R. (২০১৮)। "Cutting with both arms of the scissors: the economic and political case for restrictive supply-side climate policies"। Climatic Change150 (1): 73–87। এসটুসিআইডি 59374909ডিওআই:10.1007/s10584-018-2162-xঅবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2018ClCh..150...73G 
  11. "Fossil fuel producers must be forced to 'take back' carbon, say scientists"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ জানুয়ারি ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০২৩ 
  12. Bank, European Investment (২০২৩-০২-০২)। Energy Overview 2023 (প্রতিবেদন) (ইংরেজি ভাষায়)। 
  13. Nations, United। "Renewable energy – powering a safer future"United Nations (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-০৯ 
  14. "EU's circular economy action plan released in 2020 A.D."। ২৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০২০ 
  15. "Retired Coal-fired Power Capacity by Country / Global Coal Plant Tracker"। Global Energy Monitor। ২০২৩। ৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  — Global Energy Monitor's Summary of Tables (archive)
  16. Shared attribution: Global Energy Monitor, CREA, E3G, Reclaim Finance, Sierra Club, SFOC, Kiko Network, CAN Europe, Bangladesh Groups, ACJCE, Chile Sustentable (৫ এপ্রিল ২০২৩)। "Boom and Bust Coal / Tracking the Global Coal Plant Pipeline" (পিডিএফ)। Global Energy Monitor। পৃষ্ঠা 3। ৭ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  17. "New Coal-fired Power Capacity by Country / Global Coal Plant Tracker"। Global Energy Monitor। ২০২৩। ১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  — Global Energy Monitor's Summary of Tables (archive)
  18. "Analysis: Why coal use must plummet this decade to keep global warming below 1.5C"Carbon Brief। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  19. "Statistics"iea.org। ২৮ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৯ 
  20. "China's unbridled export of coal power imperils climate goals"। ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  21. "Coal exit benefits outweigh its costs – PIK Research Portal"pik-potsdam.de। ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০২০ 
  22. "The Production Gap Executive Summary" (পিডিএফ)। ২১ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৯ 
  23. "In coal we trust: Australian voters back PM Morrison's faith in fossil fuel"Reuters। ১৯ মে ২০১৯। ২৮ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৯ 
  24. Rockström, Johan; ও অন্যান্য (২০১৭)। "A roadmap for rapid decarbonization" (পিডিএফ)Science355 (6331): 1269–1271। এসটুসিআইডি 36453591ডিওআই:10.1126/science.aah3443পিএমআইডি 28336628বিবকোড:2017Sci...355.1269R। ১৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  25. "Time for China to Stop Bankrolling Coal"The Diplomat। ২৯ এপ্রিল ২০১৯। ৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৯ 
  26. "Powering Past Coal Alliance members list"Poweringpastcoal.org। ২৭ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  27. "Powering Past Coal Alliance declaration"Poweringpastcoal.org। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  28. "The EBRD's just transition initiative"European Bank for Reconstruction and Development। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০২০ 
  29. "UN Secretary-General calls for end to new coal plants after 2020"Business Green (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ মে ২০১৯। ১৯ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৯ 
  30. "The dirtiest fossil fuel is on the back foot"The Economist। ৩ ডিসেম্বর ২০২০। আইএসএসএন 0013-0613। ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০২১ 
  31. "Clean Vehicles"। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  32. "COP26 Energy Transition Council launched"GOV.UK (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২০In the next phase of this partnership, we must focus even more strongly on working with business to accelerate the development of solutions that are critical to achieve net zero, such as energy storage and clean hydrogen production. 
  33. "Natural Gas as a Bridge Fuel : Measuring the Bridge" (পিডিএফ)Energycenter.org। ২০১৬। ২৪ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০১৭ 
  34. "Stranded assets are an increasing risk for investors"Raconteur (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ মার্চ ২০১৯। ১০ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৯ 
  35. Simon, Frédéric (২৭ মার্চ ২০১৯)। "Gas network chief: 'By 2050, we assume CO2 emissions from energy will be zero'"euractiv.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৯ 
  36. "Preparing Dutch homes for a natural gas-free future"European Climate Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১৯ 
  37. "Seattle Bans Natural Gas in New Buildings"The National Law Review (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০২১ 
  38. "End fossil fuel subsidies and reset the economy – IMF head"World Economic Forum (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ২০২০। ২৮ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  39. Krane, Jim; Matar, Walid; Monaldi, Francisco (অক্টোবর ২০২০)। "Fossil Fuel Subsidy Reform Since the Pittsburgh G20: A Lost Decade?"Rice University's Baker Institute for Public Policyডিওআই:10.25613/sk5h-f056। ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  40. Carrington, Damian (১২ মার্চ ২০১৯)। "Air pollution deaths are double previous estimates, finds research"The Guardian। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৯ 
  41. Ramanathan, V.; Haines, A.; Burnett, R. T.; Pozzer, A.; Klingmüller, K.; Lelieveld, J. (৯ এপ্রিল ২০১৯)। "Effects of fossil fuel and total anthropogenic emission removal on public health and climate"Proceedings of the National Academy of Sciences (ইংরেজি ভাষায়)। 116 (15): 7192–7197। আইএসএসএন 0027-8424ডিওআই:10.1073/pnas.1819989116অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 30910976পিএমসি 6462052অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2019PNAS..116.7192L 
  42. "Rapid global switch to renewable energy estimated to save millions of lives annually"LSHTM (ইংরেজি ভাষায়)। ২ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৯ 
  43. "Letters to the editor"The Economist। ৯ মে ২০১৯। আইএসএসএন 0013-0613। ২৩ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০১৯ 
  44. "Trends in global CO2 and total greenhouse gas emissions: 2019 Report" (পিডিএফ)। ৩১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২০ 
  45. "COP26 Energy Transition Council launched"GOV.UK (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ৬ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০২০The International Energy Agency has told us that to meet the goals of the Paris Agreement, the global transition to clean power needs to move four times faster than our current pace. 
  46. Welsby, Dan; Price, James; Pye, Steve; Ekins, Paul (৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "Unextractable fossil fuels in a 1.5 °C world"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 597 (7875): 230–234। আইএসএসএন 1476-4687এসটুসিআইডি 237455006 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1038/s41586-021-03821-8অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 34497394 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বিবকোড:2021Natur.597..230W 
  47. Damian, Carrington (৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "How much of the world's oil needs to stay in the ground?"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  48. Heinrichs, Heidi Ursula; Schumann, Diana; Vögele, Stefan; Biß, Klaus Hendrik; Shamon, Hawal; Markewitz, Peter; Többen, Johannes; Gillessen, Bastian; Gotzens, Fabian (১ মে ২০১৭)। "Integrated assessment of a phase-out of coal-fired power plants in Germany"। Energy126: 285–305। ডিওআই:10.1016/j.energy.2017.03.017 
  49. "Home"Nuclear Energy Institute (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০২১ 
  50. "Nuclear Power in France | French Nuclear Energy – World Nuclear Association"www.world-nuclear.org। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০২১ 
  51. "Elektrifizierung 2.0"। অক্টোবর ২০২১। 
  52. Boss, Stefan (৮ জুলাই ২০১৮)। "Unter Strom – wie die Schweiz elektrifiziert wurde"swissinfo.ch (জার্মান ভাষায়)। 
  53. "Why France has a nuclear-powered economy — and America doesn't | AEI" 
  54. "France Presses Ahead with Nuclear Power"NPR.org 
  55. "America, the Netherlands, and the Oil Crisis: 50 Years Later"। ২৬ এপ্রিল ২০১৯। 
  56. "Why is cycling so popular in the Netherlands?"BBC News। ৭ আগস্ট ২০১৩। 
  57. "The Danish Solution to the Oil Crisis"। ১০ আগস্ট ২০১৪। 
  58. "Danish cycling history" 
  59. Browning, Noah; Kelly, Stephanie (৮ মার্চ ২০২২)। "Analysis: Ukraine crisis could boost ballooning fossil fuel subsidies"Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০২২ 
  60. "Energy subsidies – Topics"IEA (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  61. "Data – Organisation for Economic Co-operation and Development"oecd.org (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  62. Irfan, Umair (১৭ মে ২০১৯)। "Fossil fuels are underpriced by a whopping $5.2 trillion"Vox (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৯ 
  63. Laville, Sandra (২৪ অক্টোবর ২০১৯)। "Fossil fuel big five 'spent €251m lobbying EU' since 2010"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৯ 
  64. "Breaking up with fossil fuels"UNDP (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২২ 
  65. Gencsu, Ipek; Walls, Ginette; Picciariello, Angela; Alasia, Ibifuro Joy (২ নভেম্বর ২০২২)। "Nigeria's energy transition: reforming fossil fuel subsidies and other financing opportunities"ODI: Think change (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০২২ 
  66. "How Reforming Fossil Fuel Subsidies Can Go Wrong: A lesson from Ecuador"IISD (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৯ 
  67. Carrington, Damian (৬ অক্টোবর ২০২১)। "Fossil fuel industry gets subsidies of $11m a minute, IMF finds"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০২১ 
  68. "Fossil Fuel Subsidies"IMF (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  69. Barker; ও অন্যান্য (২০০১)। "9.2.1.2 Reducing Subsidies in the Energy Sector"। Climate Change 2001: IPCC Third Assessment Report Working Group III: MitigationInternational Panel on Climate Change। ৫ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  70. "Fossil Fuel to Clean Energy Subsidy Swaps: How to pay for an energy revolution"IISD (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৯ 
  71. "Fossil Fuel Subsidies"IMF (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-০২Raising fuel prices to their fully efficient levels reduces projected global fossil fuel CO2 emissions 43 percent below baseline levels in 2030—or 34 percent below 2019 emissions. This reduction is in line with the 25-50 percent reduction in global GHGs below 2019 levels needed by 2030 to be on track with containing global warming to the Paris goal of 1.5-2C. 
  72. Barker; ও অন্যান্য (২০০১)। "9.2.1.2 Reducing Subsidies in the Energy Sector"। Climate Change 2001: IPCC Third Assessment Report Working Group III: MitigationInternational Panel on Climate Change। ৫ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  73. Hostettler, Silvia; Gadgil, Ashok; Hazboun, Eileen, সম্পাদকগণ (২০১৫)। Sustainable Access to Energy in the Global South: Essential Technologies and Implementation Approaches। Cham: Springer। আইএসবিএন 978-3-319-20209-9ওসিএলসি 913742250 
  74. Jacobson, M.Z. and Delucchi, M.A. (November 2009) "A Plan to Power 100 Percent of the Planet with Renewables" (originally published as "A Path to Sustainable Energy by 2030") Scientific American 301(5):58–65
  75. Jacobson, M.Z. (2009) "Review of solutions to global warming, air pollution, and energy security" Energy and Environmental Science 2:148-73 ডিওআই:10.1039/b809990c (review)
  76. Runyon, Jennifer (২৩ জুন ২০২১)। "Report: New solar is cheaper to build than to run existing coal plants in China, India and most of Europe"Renewable Energy World (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪ 
  77. Krane, Jim; Matar, Walid; Monaldi, Francisco (অক্টোবর ২০২০)। "Fossil Fuel Subsidy Reform Since the Pittsburgh G20: A Lost Decade?"Rice University's Baker Institute for Public Policyডিওআই:10.25613/sk5h-f056। ১৯ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ অক্টোবর ২০২০ 
  78. "Share of cumulative power capacity by technology, 2010-2027"IEA.org। International Energy Agency (IEA)। ৫ ডিসেম্বর ২০২২। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  Source states "Fossil fuel capacity from IEA (2022), World Energy Outlook 2022. IEA. Licence: CC BY 4.0."
  79. Bond, Kingsmill; Butler-Sloss, Sam; Lovins, Amory; Speelman, Laurens; Topping, Nigel (১৩ জুন ২০২৩)। "Report / 2023 / X-Change: Electricity / On track for disruption"। Rocky Mountain Institute। ১৩ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  80. Data: BP Statistical Review of World Energy, and Ember Climate (৩ নভেম্বর ২০২১)। "Electricity consumption from fossil fuels, nuclear and renewables, 2020"OurWorldInData.org। Our World in Data consolidated data from BP and Ember। ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  81. Jones, Dave; Gutmann, Kathrin (ডিসেম্বর ২০১৫)। End of an era: why every European country needs a coal phase-out plan (পিডিএফ)। London, UK and Brussels, Belgium: Greenpeace and Climate Action Network Europe। ১৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  82. Mathiesen, Karl (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "Existing coal, oil and gas fields will blow carbon budget – study"The Guardian। London, UK। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  83. Turnbull, David (২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "Fossil Fuel Expansion Has Reached the Sky's Limit: Report" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Washington DC, US: Oil Change International। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  84. Muttitt, Greg (সেপ্টেম্বর ২০১৬)। The sky's limit: why the Paris climate goals require a managed decline of fossil fuel production (পিডিএফ)। Washington DC, US: Oil Change International। ২০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  85. Muttitt, Greg (সেপ্টেম্বর ২০১৬)। The sky's limit: why the Paris climate goals require a managed decline of fossil fuel production (পিডিএফ)। Washington DC, US: Oil Change International। ২০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  86. Nuccitelli, Dana (৩১ অক্টোবর ২০১৬)। "Coal doesn't help the poor; it makes them poorer"The Guardian। London, United Kingdom। আইএসএসএন 0261-3077। ৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৬ 
  87. Granoff, Ilmi; Hogarth, James Ryan; Wykes, Sarah; Doig, Alison (অক্টোবর ২০১৬)। "Beyond coal: scaling up clean energy to fight global poverty"Overseas Development Institute (ODI)। London, United Kingdom। ১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৬ 
  88. Granoff, Ilmi; Hogarth, James Ryan; Wykes, Sarah; Doig, Alison (অক্টোবর ২০১৬)। Beyond coal: Scaling up clean energy to fight global poverty — Position paper (পিডিএফ)। London, United Kingdom: Overseas Development Institute (ODI)। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০১৬ 
  89. Wilson, IAG; Staffell, I (২০১৮)। "Rapid fuel switching from coal to natural gas through effective carbon pricing" (পিডিএফ)Nature Energy3 (5): 365–372। এসটুসিআইডি 169652126ডিওআই:10.1038/s41560-018-0109-0বিবকোড:2018NatEn...3..365W। ১ মে ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০১৯ 
  90. Gaulin, N.; Le Billon, P. (২০২০)। "Climate change and fossil fuel production cuts: Assessing global supply-side constraints and policy implications"Climate Policy20 (8): 888–901। এসটুসিআইডি 214511488ডিওআই:10.1080/14693062.2020.1725409বিবকোড:2020CliPo..20..888G। ৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০২১ 
  91. Overland, Indra; Bazilian, Morgan; Ilimbek Uulu, Talgat; Vakulchuk, Roman; Westphal, Kirsten (২০১৯)। "The GeGaLo index: Geopolitical gains and losses after energy transition"। Energy Strategy Reviews (ইংরেজি ভাষায়)। 26: 100406। hdl:11250/2634876অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1016/j.esr.2019.100406অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  92. Taylor, Damian Carrington Matthew (১১ মে ২০২২)। "Revealed: the 'carbon bombs' set to trigger catastrophic climate breakdown"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০২২ 
  93. Niklas, Sarah; Teske, Sven (জুন ২০২১)। "Fossil Fuel Exit Strategy: An orderly wind down of coal, oil, and gas to meet the Paris Agreement"। Institute for Sustainable Futures, University of Technology Sydney। পৃষ্ঠা 6। ১১ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২১  অজানা প্যারামিটার |quote-page= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  94. Ramirez, Rachel। "Majority of remaining fossil fuels must stay in the ground to limit climate crisis below critical threshold, study shows"। CNN। ১৮ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২১ 
  95. Welsby, Dan; Price, James; Pye, Steve; Ekins, Paul (সেপ্টেম্বর ২০২১)। "Unextractable fossil fuels in a 1.5 °C world"। Nature (ইংরেজি ভাষায়)। 597 (7875): 230–234। আইএসএসএন 1476-4687এসটুসিআইডি 237455006 Check |s2cid= value (সাহায্য)ডিওআই:10.1038/s41586-021-03821-8অবাধে প্রবেশযোগ্যপিএমআইডি 34497394 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)বিবকোড:2021Natur.597..230W 
  96. "World Energy Investment 2023" (পিডিএফ)IEA.org। International Energy Agency। মে ২০২৩। পৃষ্ঠা 61। ৭ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  97. Bousso, Ron (৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "Big Oil doubles profits in blockbuster 2022"Reuters। ৩১ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  ● Details for 2020 from the more detailed diagram in King, Ben (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)। "Why are BP, Shell, and other oil giants making so much money right now?"। BBC। ২২ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  98. "Energy Transition Investment Now On Par with Fossil Fuel"। Bloomberg NEF (New Energy Finance)। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  99. "The European Power Sector in 2020 / Up-to-Date Analysis on the Electricity Transition" (পিডিএফ)ember-climate.org। Ember and Agora Energiewende। ২৫ জানুয়ারি ২০২১। ২৫ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  100. Cartlidge, Edwin (১৮ নভেম্বর ২০১১)। "Saving for a rainy day"Science334 (6058): 922–924। ডিওআই:10.1126/science.334.6058.922পিএমআইডি 22096185বিবকোড:2011Sci...334..922C 
  101. Data from McKerracher, Colin (১২ জানুয়ারি ২০২৩)। "Electric Vehicles Look Poised for Slower Sales Growth This Year"। BloombergNEF। ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।