জাপানি শহুরে কিংবদন্তি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(জাপানীজ শহুরে কিংবদন্তি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

একটি জাপানীজ শহুরে কিংবদন্তি (日本の都市伝説, নিহন নো তোশি দেনসেতসু) হলো জাপানি লোককথার এমন একটি গল্প যা সত্য বলে মানা হয়। এই শহুরে কিংবদন্তিগুলির বৈশিষ্ট্য হলো এরা জাপানে সৃষ্টি হয়েছে বা জাপানে বিখ্যাত হয়ে গেছে। সাধারণত কোনো অলৌকিক অস্তিত্ব বা পশুর কথা এখানে বলা হয় যারা মানুষদের উপর আক্রমন করে, কিন্তু এগুলি আবার জনপ্রিয় সংস্কৃতির লৌকিক গুজবও হতে পারে। সাধারন শহুরে কিংবদন্তিতে "ইয়োকাই" লোককথাটি খুব কমই অন্তর্গত থাকে, তার পরিবর্তে প্রাথমিকভাবে "ইউরেই"-এর (জাপানি ভূত) উপর বেশিরভাগগুলি নির্ভরশীল হয়। আধুনিক জাপানীজ শহুরে কিংবদন্তি বিদ্যালয় বা শহরে অবস্থান করে, এবং কয়েকটি সাবধানতামূলক গল্পও হয়ে থাকে।।

লৌকিক কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

১৯৩২ সালের শিরোকিয়া ডিপার্টমেন্ট স্টোরে মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৩২ সালের শিরোকিয়া ডিপার্টমেন্ট স্টোরে আগুন

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৩২ সালে, টোকিওর শিরোকিয়া ডিপার্টমেন্ট স্টোর অগ্নিকাণ্ডে ১৪জনের মৃত্যু হয়। ঘটনা চলাকালীন বহু কিমোনো পড়ে থাকা বিক্রয়িকাদের আট তলা ছাদের উপর উঠে যেতে বলা হয়। পরে গুজবে শোনা যায়, তাদের মধ্যে কিছু মহিলারা নিচের সেফটি নেটে ঝাঁপ মারতে চায়নি, যা দমককর্মীরা তাদের জন্যে পেতে রেখেছিল। পরম্পরাগতভাবে, মহিলারা তাদের কিমোনোর ভিতরে কোনো পোশাক পরে না, কাজেই ঝাঁপ দিলে নিজের সম্মানহানী হওয়ার ভয়ে তারা ঝাঁপ দেয় না, ফলে তারা সেখানেই মারা যায়।[১][২] এই খবর এমনকি ইউরোপের বাসিন্দাদেরও আকর্ষিত করে। অগ্নিকাণ্ডের পর, ডিপার্টমেন্ট স্টোর ম্যানেজমেন্ট সমস্ত বিক্রয়ীকাদের কিমোনোর ভেতরে প্যাণ্টি পড়ার নির্দেশ জারি করে, পোশাকের এই প্রবণতা ছড়িয়ে যায়।[১][২]

এই বিশ্বাসের অপরপক্ষে, আন্তর্জাতিক জাপানি পড়াশোনা গবেষণা কেন্দ্রের জাপানি সংস্কৃতি ও স্থাপত্যবিদ্যার অধ্যাপক শোইচি ইনোউয়ে এই প্রতিকূল লজ্জাবতীদের কাহিনী অস্বীকার করেছেন। ইনোউয়ে বলেন, প্রায় সকলকেই দমকলকর্মীরা বাঁচিয়ে নিয়েছিল, বিদেশিদের জন্যে এই কাহিনী একদম মনগড়া। গল্পটি বহু উল্লেখিত বইয়ের মধ্যে দেওয়া আছে, এমনকি দমকল বাহিনীদের প্রকাশিত কিছু বইয়েও এটি রয়েছে। তাছাড়াও, জাপানে সাধারনত বিশ্বাস করা হয়, শিরোকিয়া ডিপার্টমেন্ট স্টোরের অগ্নিকাণ্ডের প্রভাবে নতুন ফ্যাশনের প্রচলন শুরু হয়, বিশেষত পশ্চিমা-ধরনের প্যাণ্টি পড়ার, যদিও এই বিশ্বাসের কোনো শক্ত প্রমাণ নেই।।[৩]

সনি টাইমার[সম্পাদনা]

গুজব শোনা যায় যে, সনি করপোরেশন তাদের বৈদ্যুতিক প্রোডাক্টগুলিতে একপ্রকারের যন্ত্র লাগিয়ে দেয়, যেটি সেই প্রোডাক্টগুলির ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ার পর, আপনা থেকেই তাদের কাজ করা বন্ধ করে দিত, একটি অবৈধ বিলোপপ্রবণতার পরিকল্পনা

এটিকে কখনো প্রমাণিত করা যায়নি এবং সনি যে তাদের হার্ডওয়্যারে এইরকম কোনো যন্ত্র লাগাবে, এটি প্রায় অসম্ভাব্য। "সনি টাইমার" এও বোঝায় যে সনি তাদের যন্ত্রগুলি পর্যাপ্ত ব্যবহারের জন্যেই তৈরি করে। ২০০৭ সালের বার্ষিক শেয়ারহোল্ডার মিটিংয়ে, প্রধান রিয়োজি চুবাচি বলেন যে তিনি এই শব্দ "সনি টাইমার"-এর বিষয়ে জানতেন।[৪]

অলৌকিক কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

আকা মান্ত ("লাল আলখাল্লা")[সম্পাদনা]

আকা মান্ত (赤マント, লাল আলখাল্লা)কে একটি পুরুষ আত্মা হিসেবে বর্ণিত করা হয়েছে, যে এক লাল আলখাল্লা ও মুখ ঢাকা দেওয়ার জন্যে একটি মাস্ক পড়ে এবং একে জনসাধারণের বা স্কুলের বাথরুমে আস্তানা গাড়তে শোনা যায়, বিশেষত মহিলাদের বাথরুমের শেষ স্টলে। [৫]কিংবদন্তি অনুযায়ী, টয়লেটের মধ্যে থাকা ব্যক্তিকে "আকা মান্ত" লাল কাগজ বা নীল কাগজের মধ্যে কোনো একটি বেঁছে নিতে বলে (কিছু সময়, কাগজের বদলে লাল বা নীল রঙের আলখাল্লাও বলা হতে পারে)।[৬][৭] "লাল" বেঁছে নিলে আত্মাটি ব্যক্তিটির দেহে গভীর ক্ষত সৃষ্টি অথবা তার চামড়া ছাড়িয়ে নিতে পারে, অন্যদিকে "নীল" বেছে নিলে আত্মাটি হয় তার গলা চেপে ধরে নয়তো ব্যক্তিটির শরীরের সমস্ত রক্ত চুষে নেয়।[৮] আলাদা কোনো রঙ বেঁছে নিলে ব্যাক্তিটিকে পাতাল বা নরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, কিছু ক্ষেত্রে "হলুদ" বেঁছে নিলে ব্যক্তিটির মাথা টয়লেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।[৮][৯][১০][১১] আত্মাটিকে পাত্তা না দিয়ে, কোনোটিই না বেঁছে বাথরুম থেকে পালিয়ে আসলে অথবা পূর্বোক্ত কিছু পদ্ধতির ব্যবহার করলে ব্যাক্তি বেঁচে যাবে।[৮]

অভিশপ্ত ক্লিনিক্স বিজ্ঞাপন[সম্পাদনা]

১৯৮০-এর দিকে, ক্লিনিক্স তাদের টিস্যুর জন্যে তিনটি জাপানি বিজ্ঞাপন বের করেছিল, যেটিতে দেখা যায় কেইকো মাতসুজাকা একজন সাদা পোশাক পরা মহিলার ও একটি বাচ্ছা জাপানি রাক্ষস সেজে খড়ের উপর বসে ছিল। প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপনে এডওয়ার্ড বার্টন ও জেনের গাওয়া "ইটস আ ফাইন ডে" পাশে বাজছিল।[১২][১৩] দর্শকরা টেলিভিশন স্টেশন ও ক্লিনিক্সের যৌথ সদর দপ্তরে অভিযোগ জানায় কারন এই বিজ্ঞাপনটি বেশ বিরক্তিকর, কয়েকজন দাবি জানায় যে বিজ্ঞাপনের গানটি জার্মান অভিশাপের মতো শুনতে লাগে, যদিও সেটি ইংরেজিতেই লেখা হয়েছিল।[১৩] অভিনয় দলের উপর মিথ্যা গুজব রটানো হয়, যে বিজ্ঞাপন তৈরিতে যারা যারা যুক্ত ছিল তাদের সকলের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে, এবং বিজ্ঞাপন বানানোর পরেই নাকি মাতসুজাকা মানসিক চাপের শিকার হয়ে পড়েছিলেন, অথবা একটি রাক্ষস শিশুর গর্ভধারিনী হয়েছিলেন। রাক্ষস শিশুটি কিন্তু আসলে উরুসেই ইয়াতসুরা অ্যানিমের চরিত্র তেন হওয়ার কথা ছিল।[১৩]যেহেতু এই বিজ্ঞাপনটিকে ইউটিউবের মতো ইন্টারনেট ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল, সেখানে একটি গুজব শোনা যায় যে বিজ্ঞাপনটি ঠিক মাঝরাত্রে বিগড়ে যাওয়া শুরু করে।।

কলোনেলের অভিশাপ[সম্পাদনা]

কলোনেলের অভিশাপ (カーネルサンダースの呪い, কানেরু সানদাসু নো নোরোই) অনুমিতভাবে হানশিন টাইগারস বেসবল টিমকে ভুগিয়েছিল এবং জাপান চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজে তাদের খারাপ খেলার কারন হিসেবে একই ধরা হয়। ১৯৮৫ সালে, হানশিন টাইগারস ফ্যানেরা টিমের প্রথম ও একমাত্র সিরিজ জয়ে ফুর্তিতে কলোনেল স্যান্ডার্সের (কেএফসির প্রতিষ্ঠাতা ও মাস্কট) একটি মূর্তি দোতোনবোরি নদীতে ছুঁড়ে দিয়েছিল। ঘটনার পরবর্তী বছরগুলিতে, টিমটি একবারও চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে পারেনি, কিছু ফ্যানেরা বিশ্বাস করে যে টিমটি আবার কখনোই জিততে পারবে না যতক্ষণ না সেই মূর্তিটিকে পুনরায় উদ্ধার করা হচ্ছে।[১৪]

কিংবদন্তিটি বাম্বিনোর অভিশাপের মতো।।[১৪]

গোজু (গরু মাথা)[সম্পাদনা]

গোজু (牛頭, "গরু মাথা"), বা "বলদ মাথা", হলো "গরু মাথা" নামের একটি কল্পকাহিনীর উপর কেন্দ্রিভুত জাপানীজ শহুরে কিংবদন্তি। বলা হয়, এই "গরু মাথা" গল্পটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে যারা এটা পড়ে বা শোনে, তারা তাদের মৃত্যু পর্যন্ত প্রত্যেক দিন ভয়ে কাঁপতে থাকে।[১৫][১৬]

গল্পটির গুজব অনুযায়ী, এটি কল্পবিজ্ঞান লেখক সাকিয়ো কোমাতসুর একটি অপ্রকাশিত রচনা, কিন্তু তার কোনো প্রমাণ নেই। এক ইউক্রেনিয়ান লোককথায় গরুর মাথার অস্তিত্ব আছে, সেখানে একজন মহিলার কথা বলা রয়েছে, সে একটি বিদেহী গরুর মাথাকে খাবার ও আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে সৌভাগ্য অর্জন করে, যার সাথে এক রাত্রে তার সাক্ষাৎ হয়।[১৭] সোমিন শোরাই নামের একটি জিয়ন মাতসুরি লোককথাতেও একজন গরীব কিন্তু দাতব্য ব্যক্তির কথা বলা আছে যে এক রাত্রে গোজু তেন্নো নামের এক পর্যটককে থাকার জায়গা দিয়ে সৌভাগ্য পেয়েছিল।।[১৮]

টয়লেটের হানাকো-সান ( তোইরে নো হানাকো-সান)[সম্পাদনা]

হানাকো-সান, বা তোইরে নো হানাকো-সান (トイレのはなこさん, টয়লেটের হানাকো), হলো হানাকো নামের একটি ছোট্ট মেয়ের আত্মার কিংবদন্তি যে স্কুলের বাথরুমে থাকে।[১৯][২০] গল্পের বিভিন্ন সংস্করণ অনুযায়ী হানাকো-সান হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিমান হামলায় আত্মহত্যা করা একজন মেয়ের ভূত,[৬][৯] স্কুলের অন্যান্য ছাত্রছাত্রী ও বন্ধুদের দ্বারা ঘৃণিত ও পীড়িত হওয়ার[৯][১৯] ফলে সে স্কুলের বাথরুমে আত্মহত্যা করে।[১৯] হানাকো-সানকে নিয়ে গড়ে ওঠা কিংবদন্তি ও গুজব জাপানের প্রাইমারি স্কুলগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যেখানে বাচ্চারা তাদের সহপাঠীদের হানাকো-সানকে ডাকার চেষ্টা করতে আহ্বান জানায়।।[৯]

ইনোকাশিরা পার্কের অভিশাপ[সম্পাদনা]

টোকিওর ইনোকাশি পার্কে দেবী বেনজাইতেনের একটি মন্দির আছে, এছাড়াও সেখানে ইনোকাশি পুকুর ও একটি হ্রদ রয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা ভাড়া দিয়ে নৌকা বাইতে পারবে।[২১][২২] এখানের শহুরে কিংবদন্তি অনুযায়ী, যদি দুই প্রেমিক একটি নৌকায় একসাথে বসে, তাদের সম্পর্ক অকালে শেষ হয়ে যাবে।[২৩] কিংবদন্তির আরো কিছু বর্ণনায় বলা আছে, পার্কে খুশি প্রেমিক প্রেমিকাদের দেখে হিংসুটে বেনজাইতেন তাদের অভিশাপ দিয়ে সম্পর্ক ছেদ করে।।[২১][২২]

জিনমেনকেন ("মানুষ-মুখী কুকুর")[সম্পাদনা]

জাপানীজ শহুরে কিংবদন্তি জিনমেনকেন (人面犬, "মানুষ-মুখী কুকুর")রা হলো এমন কুকুর যাদের মুখ মানুষের মতো ও এদের আবির্ভাব যথাসম্ভব রাত্রে হয়।[২৪] গুজবে শোনা যায় এরা হাইওয়ে দিয়ে প্রচণ্ড দ্রুত গতিতে ছুটে যেতে পারে, ফলে যেকোনো গাড়িকে পাশ কাটিয়ে এরা গাড়ির চালককে তাদের মানুষ মুখ দেখায়।[২৪][২৫] জিনমেনকেন কথা বলতে পারে, কিন্তু একা থাকতে বেশি পছন্দ করে।[২৫] কিছু গল্প বেশ কৌতুকের সাথে সাজানো হয়, যেখানে ব্যাক্তি আবর্জনায় একটি কুকুরের গুঞ্জন শুনতে পায়, কাছে গেলে কুকুরটি মুখ তুলে তার মানুষ মুখটি দেখায় ও এরকম কিছু বলে "আমায় একলা ছেড়ে দাও!" (বা "হোত্তইতে কুরে!")।[২৪] "জিনমেনকেন"-এর ব্যাখ্যা হলো যে এরা কোনো জেনেটিক পরীক্ষার ফলাফল, বা একটি "জিনমেনকেন" হলো একটি মানুষের ভূত যে এক কুকুরের সাথে হাটতে হাটতে গাড়ি চাপা পড়েছিল।[২৪]

মানুষ মুখ-ধারী কুকুরের ধারণা ১৮১০ সালের সময় থেকে শোনা যায়। সেইসময় একটি "মানুষ মুখ-ধারী কুকুরের বাচ্ছা"কে একটি "মিসেমোনো"তে প্রদর্শিত হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল।[২৬][২৪] জিনমেনকেনের গুজব ১৯৫০-এর দিকে সার্ফারদের মধ্যে প্রচারিত হলেও, কিংবদন্তিটির আধুনিক ধারণা জাপানে ১৯৮৯ সালে প্রথমবার ছড়িয়ে গিয়েছিল।[২৪] এছাড়াও, "জিনমেনকেন" বা মানুষ মুখধারী কুকুরের আবির্ভাব আরো অন্যান্য মিডিয়ায় ঘটেছে। মানুষের মুখ সমেত একটি কুকুরকে ১৯৭৮ সালের আমেরিকান চলচ্চিত্র "ইনভেসন অফ দা বডি স্ন্যাচারস"-এ দেখা গেছে,[২৭] এবং "জিনমেনকেন" অ্যানিমে ও "ইয়ো-কাই ওয়াচ" নামের ভিডিও গেম ফ্র্যাঞ্চাইজে প্রদর্শিত হয়েছিল।।[২৮]

কোক্কুরি[সম্পাদনা]

কোক্কুরি (こっくり, 狐狗狸) বা কোক্কুরি-সান (こっくりさん) হলো মেইজি যুগের একটি বিখ্যাত জাপানি খেলা।[২০] খেলাটি ঔজা বোর্ডের ব্যবহারের মতো,[২৯] কিন্তু এখানে দোকান থেকে বর্নমালা সমেত বোর্ড না এনে ও প্ল্যানচেট না করে, "হিরাগানা" অক্ষর লিখে একটি পয়সার উপর নিজের আঙ্গুল রাখতে হয় ও তারপর "কোক্কুরি-সান"কে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। জাপানি উচ্চ বিদ্যালয়ে এটি একটি জনপ্রিয় খেলা।[৩০]

খেলার কিংবদন্তিগুলি জানায়, "কোক্কুরি-সান" শুধুমাত্র খেলুড়েদের মৃত্যুর তারিখই বলে দেয়, অন্যদিকে এটাও শোনা যায় যে খেলুড়ে "কোক্কুরি-সান"কে যে কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করতে পারে। তবে, খেলুড়েকে খেলা শেষ করতে গেলে টেবিল থেকে ওঠার আগে "কোক্কুরি-সান"কে বিদায় বলতে হবে, নয়তো একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খেলার সরঞ্জামগুলি নষ্ট করে দিতে হবে, যেমন পয়সাটি ব্যয় করে দেওয়া অথবা "হিরাগানা" যে কালির পেন দিয়ে লেখা হয়েছিল সেটিকে দিয়ে অন্য কিছু লেখা।।[৩১]

কুচিসাকে-ওন্না ("মুখ-কাটা মহিলা")[সম্পাদনা]

কুচিসাকে-ওন্না (口裂け女, "মুখ-কাটা মহিলা") হলো বিকৃত মুখের একটি মহিলার দুষ্ট আত্মা বা ওনরিয়ুর শহুরে কিংবদন্তি। বলা হয়, সে তার মুখ মাস্ক বা অন্যকিছু দিয়ে ঢেকে রাখে ও সে তার হাতে সর্বদা ধারালো অস্ত্র রাখে, একটি ছুরি বা বৃহৎ কাঁচির মতো।[৩২] জনপ্রিয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, সে তার শিকারদের জিজ্ঞাসা করে যে সে সুন্দরী কিনা।[৩৩] যদি কেউ সাড়া দেয় "না", তো সে তাকে তার অস্ত্র দিয়ে খুন করে দেয়। যদি তারা "হ্যাঁ" বলে, তো সে তার মাস্ক খুলে নিজের কান পর্যন্ত কাটা মুখ দেখায়।[৩৪][৩৫] এরপরেও ব্যক্তিটি তার জবাবে না বললে, বা ভয়ে চিৎকার করলে, সে তার অস্ত্র দিয়ে তাদের হত্যা করে ফ্যালে।[৩৩] যদি এরপর তারা "হ্যাঁ" উত্তর দেয়, সে তাদের মুখও নিজের মুখের মতো করে কেটে দেবে।[৩৩] বলা হয়, কুচিসাকে-ওন্নার থেকে বাঁচতে হলে, ব্যাক্তিটিকে তার প্রশ্নের উত্তর হিসেবে জানাতে হয় যে সে মোটামুটি সুন্দর, ও টাকা বা শক্ত ক্যান্ডি দিয়ে তাকে বিহ্বল করে দেওয়া প্রয়োজন, অথবা "পোমাদে" শব্দটি তিনবার বলার মাধ্যমে তার কবল থেকে মুক্ত হওয়া যেতে পারে।[৩৩][৩২]

কুনেকুনে ("মোচড়ানো দেহ")[সম্পাদনা]

কুনেকুনে (くねくね, "মোচড়ানো দেহ") হলো এমন এক শহুরে কিংবদন্তি যা উষ্ণ গ্রীষ্মের দিনে ধান বা বার্লির ক্ষেতে খুব দূরে দেখতে পাওয়া যাওয়া। একটি "কুনেকুনে" হলো অবর্ণনীয় একটি সাদা বস্তু, বেশ লম্বা, পাতলা কাগজের ফালা বা বোনা কোনো চাদর, যেটি এমনভাবে মোচড়াতে ও থাকে যেন হাওয়া দিচ্ছে, এমনকি হাওয়া না দিলেও। কিংবদন্তি অনুযায়ী, যেই সেটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে সে পাগল হয়ে যায় বা সেটিকে ছুলে মারা পড়ে। "কুনেকুনে"কে নিয়ে একই সময়ে বহু খবর কিছু ওয়েবসাইট দেখা দেয়। "কুনেকুনে" কিংবদন্তিটি কাকতাড়ুয়ার রাত্রে জীবন্ত হয়ে যাওয়ার (অথবা যখন কেউ তাদের দিকে খুব বেশিই তাকিয়ে থাকে) মতো স্থানীয় গল্প থেকে উদ্ভব হয়েছে। অভিযোগ আছে যে "কুনেকুনে" আসলে একটি কাকতাড়ুয়ার হাওয়ায় নড়চড় করার ফলে দূর থেকে দেখার ভুল[৩৬][৩৭] বা হালকা মাটিকে শক্ত করার জন্যে পোতা বেত ড্রেনের কারসাজি যা মাটির নিচে থেকে জল তোলে।।[৩৮]

টেকে টেকে (বা কাশিমা রেইকো)[সম্পাদনা]

টেকে টেকে (テケテケ) হলো একজন কমবয়সী মহিলা বা স্কুল ছাত্রীর ভূত যার শরীর রেলওয়ে লাইনের উপর পড়ে গিয়ে, ট্রেন আসার কারনে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল।[৩৯] সে হলো একটি "ওনরিয়ু", বা প্রতিহিংসাপূর্ণ একটি আত্মা। রাত্রে শহুরে জায়গায় ও ট্রেন স্টেশনগুলিতে তার আনাগোনা। যেহেতু তার দেহের নিচের অংশটি নেই, সে তার হাত বা কনুইয়ের উপর ভর করে চলে ও খাঁমচানির আওয়াজ বা "টেকে টেকে" শব্দ সৃষ্টি করে। যদি সে কোনো মানুষকে দেখতে পায়, তবে সে তার পিছু ধাওয়া করে তার জামার উপর দিয়ে একটি কাস্তে বা অন্য কিছু অস্ত্র চালিয়ে শরীর দ্বিখণ্ডিত করে দেয়।[৪০]

"টেকে টেকে" গল্পের কিছু সংস্করণে, আত্মাটির পরিচয় কাশিমা রেইকো হিসেবে জানা আছে, যার পাগুলি ট্রেনের তলায় কাটায় যাওয়ায় সে মারা যায়।[৩৯] কিংবদন্তি অনুযায়ী, তার পা-হীন ভূত বাথরুমে গিয়ে গিয়ে মানুষদের জিজ্ঞাসা করে যে তার পা কোথায়। যদি প্রশ্নবিদ্ধ সেই ব্যক্তিটি এমন কিছু উত্তর দেয় যা কাশিমার অপছন্দ হয়, তখন সে তার পাগুলিকেও ছিঁড়ে বা কেটে দেয়।[৬] কাশিমার থেকে বাঁচতে হলে ব্যক্তি উত্তর দিতে পারে যে তার পা মেইশিন এক্সপ্রেসওয়েতে আছে,[৬][৪১] বা "কামেন শিনিন মা" কথাটি দিয়ে তার প্রশ্নের উত্তর দিলেও বাঁচা যাবে, যার অনুবাদ হলো "মাস্ক মৃত্যু রাক্ষস"।।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Richie, Donald (২০০৬)। Japanese Portraits: Pictures of Different People। Tuttle Publishing। পৃষ্ঠা 85। আইএসবিএন 978-0-8048-3772-9 
  2. Dalby, Liza Crihfield (১৯৮৩)। Geisha। University of California Press। পৃষ্ঠা 318আইএসবিএন 978-0-520-04742-6shirokiya. 
  3. Shōichi, Inoue (২০০২)। パンツが見える。: 羞恥心の現代史 パンツが見える。: 羞恥心の現代史 [My panties are visible. The history of being ashamed] (জাপানি ভাষায়)। Asahi shimbun। আইএসবিএন 978-4-02-259800-4 
  4. ソニー、定時株主総会を開催。「利益を伴う成長へ」 「ソニータイマーという言葉は認識している」中鉢社長 (in Japanese), 2007-06-21, AV watch
  5. Bathroom Readers' Institute 2017, পৃ. 390।
  6. Grundhauser, Eric (২ অক্টোবর ২০১৭)। "Get to Know Your Japanese Bathroom Ghosts"Atlas Obscura। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  7. Joly 2012, পৃ. 55।
  8. "Aka manto"Yokai.com। ৩১ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  9. Yoda ও Alt 2013, পৃ. 237।
  10. Bathroom Readers' Institute 2017, পৃ. 391।
  11. Bricken, Rob (১৯ জুলাই ২০১৬)। "14 Terrifying Japanese Monsters, Myths And Spirits"Kotaku। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৯ 
  12. "Cursed Japanese Kleenex Commercial"Museum of Hoaxes। ১ অক্টোবর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৯ 
  13. Jacobson, Molly McBride (৫ অক্টোবর ২০১৬)। "Watch a Cursed Japanese Kleenex Ad"Atlas Obscura। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৯ 
  14. White, Paul (২১ আগস্ট ২০০৩)। "The Colonel's curse runs deep"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  15. Bingham 2015, পৃ. 49।
  16. Griffin, Erika (১২ জানুয়ারি ২০১১)। "8 Scary Japanese Urban Legends"Cracked। ১ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৯ 
  17. "Cow's Head: From Ghost Stories at Americanfolklore.net"americanfolklore.net 
  18. "Gion Goku-Tennō no engi"Kyoto University Rare Materials Digital Archive। ১৮ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০২১ 
  19. Meyer, Matthew (২৭ অক্টোবর ২০১০)। "A-Yokai-A-Day: Hanako-san (or "Hanako of the Toilet")"MatthewMeyer.net। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৯ 
  20. Fitch, Laura (৭ জুন ২০০৫)। "Have you heard the one about..?: A look at some of Japan's more enduring urban legends"The Japan Times। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  21. "Inokashira Park Benzaiten Shrine"Atlas Obscura। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  22. "Tokyo facts: 40 trivia tidbits to wow your mind"Time Out। ২৫ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  23. "The curse of Inokashira Pond"The Japan Times। ১৭ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  24. Dylan Foster 2015, পৃ. 226।
  25. Cameron, Kim (২১ ডিসেম্বর ২০১৫)। "Feature: Monster Mondays - Jinmenken (Human-Faced Dog)"Crunchyroll। ১৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  26. Murakami 2000, পৃ. 195।
  27. Dylan Foster 2015, পৃ. 226–227।
  28. Komatsu, Mikikazu (২৭ অক্টোবর ২০১৬)। "3rd "Yo-Kai Watch" Film New Trailer Introduces More Live-Action Cast including Human Face Dog"Crunchyroll। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  29. Kelly, Katy (২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "Ouija satchel lets you talk to a Shinto spirit while you shop"Japan Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১ আগস্ট ২০২০ 
  30. "Obakemono.com"। ২০১১-০৬-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১২-০১ 
  31. "Japanese Urban Legend: Kokkuri-san's voice"thejapanesehorror.com 
  32. Yoda ও Alt 2013, পৃ. 204–206।
  33. Meyer, Matthew (৩১ মে ২০১৩)। "Kuchisake onna"Yokai.com। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  34. Matchar, Emily (৩১ অক্টোবর ২০১৩)। "Global Ghosts: 7 Tales of Specters From Around the World"The Atlantic। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৯ 
  35. Philbrook, Scott (co-host); Burgess, Forrest (co-host); Meyer, Matthew (guest) (১৪ অক্টোবর ২০১৮)। "Ep 121: Yokai Horrors of Japan" (পডকাস্ট)। Astonishing Legends। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  36. Freeman 2010, পৃ. 200।
  37. Yamaguchi 2007, পৃ. 19–23।
  38. "発表報文(メディア紹介・発表論文)"Kinjo Rubber Co., Ltd.। Kinjo Rubber Co., Ltd.। ২১ মে ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৮ 
  39. Meza-Martinez, Cecily; Demby, Gene (৩১ অক্টোবর ২০১৪)। "The Creepiest Ghost And Monster Stories From Around The World"NPR। National Public Radio, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৯ 
  40. de Vos 2012, পৃ. 170।
  41. Bricken, Rob (১৯ জুলাই ২০১৬)। "14 Terrifying Japanese Monsters, Myths And Spirits"KotakuG/O Media। সংগ্রহের তারিখ ৬ আগস্ট ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]