জাং দ-জিওন
জসিয়ন রাজবংশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী | |
কোরীয় নাম | |
---|---|
হাঙ্গুল | 정도전 |
হাঞ্জা | 鄭道傳 |
সংশোধিত রোমানীকরণ | জং দজন |
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়া | চং তজন |
পেন নাম | |
হাঙ্গুল | 삼봉 |
হাঞ্জা | 三峰 |
সংশোধিত রোমানীকরণ | সাম্বং |
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়া | সাম্বং |
সৌজন্যের নাম | |
হাঙ্গুল | 종지 |
হাঞ্জা | 宗之 |
সংশোধিত রোমানীকরণ | জংজী |
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়া | চংজী |
মরণোত্তর নাম | |
হাঙ্গুল | 문헌 |
হাঞ্জা | 文憲 |
সংশোধিত রোমানীকরণ | মোনহিওন |
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়া | মুনহিওন |
জাং দ-জিওন (কোরিয়াঃ 정도전, হাঞ্জাঃ 鄭道傳, ১৩৪২- ৬ অক্টোবর, ১৩৯৮), যিনি সাম্বং নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন গোরিও রাজবংশের শেষ সময়ের এবং জসিয়ন রাজবংশের শুরুর দিকের রাজনীতিবিদ। যিনি জসিয়ন রাজবংশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেবা করেন ১৩৯২ থেকে ১৩৯৮ পর্যন্ত যতক্ষণনা তিনি নিহত হন ই বাং-উন(পরবর্তিতে রাজা তাইজং) এর দ্বারা, যিনি পঞ্চম ছেলে ছিলেনে ই সাং-গাইয়ের(জসিয়নের রাজা তাইজ, যিনি ছিলেন প্রথম রাজা এবং জসিয়ন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকারী, যিনি গোরিও রাজবংশ ভূপাতিত করে জসিয়ন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন)। জাং দ-জিয়ন ছিলেন ই সাং-গায় এর সমর্থক ও উপদেষ্টা এবং জসিয়ন রাজপ্রশাসনালী এর প্রধান রুপকর্তা, তিনি স্থাপন করেন আদর্শিক, প্রতিষ্ঠানিক এবং আইনি কাঠামো যেটি আধিপত্য করে পাঁচ শতাব্দী জুড়ে(৫০৫ বছর, ১৩৯২-১৮৯৭ এর মধ্যে)।[১]
জীবনী
[সম্পাদনা]প্রারম্ভিক জীবন এবং প্রাথমিক পেশাজীবন
[সম্পাদনা]জাং দ-জিওন জন্মগ্রহণ করেন এক উচ্চবংশীয় পরিবারে ইয়ংজুতে যেটি বর্তমান দক্ষিণ কোরিয়া। তার পরিবার চার প্রজন্ম আগের সাধারণ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে তারা সরকারী পর্যায়ে পৌছে।তার পিতা পরিবারের মধ্যে প্রথম উচ্চ পদ লাভ করেন। বিভিন্ন দূরহ এর মধ্যেও সাম্বং শিষ্য হন ই জে-হিওন এবং সেসময়কার বিশিষ্ট দার্শনিকদের। তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা কোরিয়ার রাজনীতিতে প্রভাব পড়তে থাকে।
ই সাং-গায় এর সাথে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]জাং দ-জিওনের সাথে ই সাং-গায়ের বন্ধন ঘটে এবং জসিয়নের ভিত্তি একদম কাছে এসে যায়। তিনি তাদের সম্পর্ককে জাং লিয়াং এবং সম্রাট গায়জু এর সাথে তুলনা করেন। জাং দ-জিওন এর রাজনৈতিক চিন্তা জসিয়ন রাজবংশের রাজনীতি এবং নীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। তারা দুজন প্রথম পরিচিত হন ১৩৮৩ সালে, জাং দি-জিওন ই সাং-গায়ের হামগায়ং প্রদেশের শিবিরে। এরপর ই সাং-গায়(জসিয়নের রাজা তাইজ) ১৩৯২ সালের জুলাইয়ে জসিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন, তিনি জাং দি-জিওনকে অসামরিক এবং সামরিক অফিসে একসাথে সর্বোচ্চপদে নিয়োগ দেন, তাকে সকল প্রকার ক্ষমতা দেন নতুন রাজত্ব প্রতিষ্ঠার। সকল প্রকার সামরিক বিষয়, কূটনীতিক এবং শিক্ষা নীতি পর্যন্ত, তিনি জসিয়নের সকল প্রকার রাজনৈতিক নীতি নির্ধারন করেন এবং কর কমিয়ে দেন, তিনি দার্শনিক মতবাদের সাথে বৌদ্ধ ধর্ম পুনরায় প্রবর্তন করেন জাতীয় ধর্ম হিসাবে, রাজধানী গাসিয়ং থেকে হানাইয়াং(বর্তমান সিওল) এ স্থানান্তর করেন, রাজ্যের রাজনৈতিক রীতি পরিবর্তন করে সামতন্ত্র থেকে অত্যন্ত আমলাতন্ত্রতে কেন্দ্রীভূত করেন, এবং কিছু নিয়মাবলী লিখেন যেটি জসিয়নের সংবিধান হয়। এমনকি তিনি সব জায়গার নামও রাখেন, আট প্রদেশ এবং রাজধানীর জেলাগুলোর। তিনি দাসপ্রথা মুক্ত করতে কাজ করেন এবং নীতি সংশোধিত করেন।
ই বাং-উন এর সাথে মতবিরোধ
[সম্পাদনা]১৩৯২ সালের জুলাই-এ জসিয়ন প্রতিষ্ঠার পর জাং দ-জিওনের সাথে ই বাং-উনের সাথে সংঘর্ষ ঘটে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী নির্বাচন করা প্রসঙ্গে, ই সাং-গায় এর পরবর্তি সফলকারী নিয়ে। সকল যুবরাজদের মধ্যে ই বাং-উন সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন তার পিতাকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং আশা করেছিলেন তিনিই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হবেন বলে যদিও তিনি তাইজয়ের পঞ্চম পুত্র। কিন্তু জাং দ-জিওন তাইজকে তার অষ্টম পুত্র ই বাং-সিওক(ই বাং-উন এর সৎ ভাই)কে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে নিয়োগ দিতে মত দেন। তাদের মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয় কারণ জং দ-জিওন চেয়েছিলেন একটি রাজ্য যেটি মন্ত্রীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে যেখানে রাজা একজন প্রতিক চিত্র মাত্র, অন্যদিকে ই বাং-উন চেয়েছেন পুরো সম্রাজ্য সরাসরি রাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।উভয়পক্ষ তাদের এই মহা বিদ্বেষ সম্পর্কে সতর্ক ছিল এবং তৈরি হচ্ছিল প্রথম আঘাত হানার জন্য। তারপর হঠাৎ ১৩৯৮ সালে রাণী সিন্দওক এর মৃত্যু হয়, যখন রাজা তাইজ শোকাচ্ছন ছিলেন তার স্ত্রীর(দ্বিতীয় স্ত্রী এবং ই বাং-সিওক এর মা)মৃত্যুতে, ই বাং-উন প্রথম আঘাত হানেন প্রাসাদ এর মধ্যে হানা দিয়ে এবং জাং দ-জিওন ও তার সমর্তকদের হত্যা করেন সাথে রাণী সিন্দওক এর দুই পুত্রকেও যার মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজও ছিল, একই আঘাতে যেটি পরিচিত হয় যুবরাজদের প্রথম দ্বন্দ্ব হিসাবে। তাইজ, যিনি অসহায়ভাবে দেখেন তার প্রিয় পুত্র এবং মন্ত্রীদের মৃত্যু ই বাং-উনের সৈন্যবাহিনী দ্বারা। বিতৃষ্ণায় সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং ই বাং-উন উপর ক্রুব্দ থাকেন জসিয়নের তৃতীয় রাজা তাইজং হওয়ার পরেও। জসিয়নের বেশিরভাগ ইতিহাসে, জাং দ-জিওনকে যথার্থ সম্মান দেয়া হয়নি কিংবা উপেক্ষিত করা হয়েছে জসিয়ন প্রতিষ্ঠায় তার অবদানের। অবশেষে তাকে ১৮৬৫ সালে স্বীকৃতি দেয়া হয় গায়ংবকাং(মূল প্রাসাদ) এর নকশাকারী হিসাবে তার ভূমিকাকে। এর আগে ১৭৯১ সালে জসিয়নের রাজা জিওংযো জাং দ-জিওনের কিছু লেখার সংগ্রহ প্রকাশ করা হয়। জাং দ-জিওনের সাবেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বী জাং মং-জু, যিনি ই বাং-উনের দ্বারা নিহত হয়েছিলেন গোরিও রাজবংশের প্রতি অনুগত থাকার জন্য, তাকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়া হয় এবং স্মরণ করা হয় বিশস্তের প্রতীক হিসাবে যদিও জসিয়ন রাজবংশের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিলেন।
বুদ্ধিজীবী কার্যকলাপ
[সম্পাদনা]গোরিও এর শেষের দিকে জাং দ-জিওন ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি ছিলেন জু জি ভাবনার শিষ্য। চেং জু স্কুল এর নব্য-কনফুশিয়ান দর্শন ভিত্তি হিসাবে বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন, তিনি তার কিছু গ্রন্থে বৌদ্ধ ধর্মকে ইহার প্রথা থেকে নীতিভ্রষ্ট এবং এর মতবাদকে ধ্বংসবাদ হিসাবে উল্লেখ করেন। যে সকল গ্রন্থে তিনি এসব বলেন তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বই হচ্ছে “বুলসি জাপবায়ন”(বৌদ্ধ ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনার সন্নিবেশ)। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সুংকায়ুকাওয়ানের, রাজ দর্শন শিক্ষায়তন, এবং শুরুর দিকের একজন অনুষদ সদস্য। জাং দ-জিওন কোরিয়ার প্রথম পণ্ডিতদের মধ্যে পড়েন যার ভাবনাকে নির্দেশ করা হয় সিলহাক বা “ব্যবহারিক জ্ঞান” হিসাবে। কিন্তু তাকে সিলহাকের ঐতিহ্যে তেমনভাবে ধরা হয়না, যেটি জসিয়নের সময়ের অনেক পর উদয় হয়েছিল।
রাজনৈতিক চিন্তা
[সম্পাদনা]জাং দ-জিওন বিবেচিত করেন যে সরকার, এমনকি রাজা নিজে বিদ্যমান থাকবেন জনগণের জন্য, শুধু জনগণের সেবার জন্য। এর উপর ভিত্তি করেই তিনি গোরিও রাজবংশের পতন ঘটান, তর্ক করে যে গোরিও এর শাসকরা শাসন করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। জাং দ-জিওন সমাজকে তিনভাগে ভাগ করেন (ক)একদল বিশাল নিম্নবিত্ত যারা কৃষিকাজ করে এবং শ্রমিক, (খ) মধ্যবিত্ত যারা শিক্ষিতশ্রেণী এবং (গ) একটু উপরে উচ্চবিত্ত যারা আমলা। এই ক্রমের বাইরে যারা তাদেরকে তিনি সমাজের একটা “ব্যাধি” ও হুমকি মনে করেন যার মধ্যে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, ওঝা, এবং বিনোদনকারীও ছিল।
গ্রন্থসমূহ
[সম্পাদনা]- সাম্বং জিপ (삼봉집, 三峯集)
- জসিয়ন গায়ং গুজকিওন (조선경국전, 朝鮮經國典)
- দায়মায়ঙ্গ্রাল জসিয়নিওহায় (대명률조선어해, 大明律朝鮮語解)
- গায়ংজি মুঙ্গাম (경제문감, 經濟文鑑)
- বুলসসি জাপবায়ন (불씨잡변, 佛氏雜辨)
- সিমুন চেওন্দাপ (심문천답, 心問天答)
- সিমগিরি (심기리, 心氣理)
- হাকজা জিনামদো (학자지남도, 學者指南圖)
- জিন্মায়েক ডগইয়োল (진맥도결, 診脈圖結)
- গোরিও গুসকা (고려국사, 高麗國史)
- জিন বিওপ (진법, 陣法)
লোক সংস্কৃতিতে
[সম্পাদনা]- লি হো-জা ১৯৮৩ সালে অভিনয় করেন টেলিভিশন সিরিজ “৫০০ ইয়ারস অব জসিয়নঃ দা কিং অব চুডুং প্যালেস”
- কিম হিউং-কি ১৯৯৬-১৯৯৮সালে অভিনয় করেন টেলিভিশন সিরিজ “টিয়ারস অব ড্রাগন”
- চ যায়-হুন ২০১৪ সালে অভিনয় করেন দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিভিশন সিরিজ “জাং দ-জিওন”[২][৩]
- কিম মুং-মিন ২০১৫ সালে অভিনয় করেন দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিভিশন সিরিজ “সিক্স ফ্লায়িং ড্রাগন” এ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Jeong Do-jeon, Jeong Byeong-cheol. Sam Bong jeep vol. 1-4. Hangookhansooljeongbo co.(2009) আইএসবিএন ৮৯২৬৮০৫৮৯১.
- Jeong Byeong-cheol, Jeong Do-jeon's was born true and fabrication. kyobomungo pupol (2013).
- Han Yeong-u (1974). Jeong Do-jeon's philosophy of political reform. Korea Journal 14 (7-8). Reprinted in Lee et al. (2004), Korean philosophy: Its tradition and modern transformation, pp. 55–74. Seoul: Hollym. আইএসবিএন ১-৫৬৫৯১-১৭৮-৪.
- Korean Institute of Philosophical Thought (1995). 강좌 한국철학 (Gangjwa Hanguk Cheolhak, Guide to Korean philosophy), pp. 333–345. Seoul: Yemoon Seowon. আইএসবিএন ৮৯-৭৬৪৬-০৩২-৪.
- ↑ Lee, Yeong-hee (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Why people are so fascinated by Jeong Do-jeon"। Korea JoongAng Daily। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-১২।
- ↑ Do, Je-hae (৩ জানুয়ারি ২০১৪)। "Joseon founding seen in unique angle"। The Korea Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-২৪।
- ↑ Yang, Sung-hee; Kim, Hyung-eun (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Unique historical drama tries putting history first"। Korea JoongAng Daily। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-১২।