চেতনাপ্রবাহ
চেতনাপ্রবাহ বা চেতনাস্রোত বলতে কল্পকাহিনী বর্গে ব্যবহৃত একটি আখ্যান কৌশলকে বোঝায়, যেখানে কোনও ব্যক্তির যৌক্তিক চিন্তাভাবনার পাশাপাশি বিদ্যমান ও তার চেতনাতে ছাপ রাখা দৃশ্য, শ্রাব্য, শারীরিক, সাম্পর্কিক, অবচেতন, স্মৃতি, অনুভূতি, ইত্যাদি সব ধরনের অন্তর্মুদ্রার ধারাবাহিক প্রবাহকে কোনও কমা-দাঁড়ি-বিরামচিহ্ন ছাড়াই বিচ্ছিন্ন, খণ্ড-খণ্ড আকারে অন্তর্কথনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়।[১]
পাশ্চাত্যে ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস তাঁর দ্য প্রিন্সিপলস অভ সাইকোলজি (১৮৯০) গ্রন্থে সর্বপ্রথম এই ধারণাটির ইংরেজি পরিভাষা "স্ট্রিম অভ কনশাসনেস" (Stream of consciousness) ব্যবহার করেন। ২০শ শতাব্দীতে ইংরেজি সাহিত্যে মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস লেখার বিকাশ ঘটার সময় কিছু লেখক তাদের রচিত চরিত্রগুলির যৌক্তিক চিন্তাভাবনাতে সীমাবদ্ধ না থেকে ঐ চরিত্রগুলির চেতনার সামগ্রিক প্রবাহকে তাদের লেখায় ধারণ করার চেষ্টা করেন। চরিত্রের মনে কী ঘটছে তার দ্রুতি, সূক্ষ্মতা ও প্রাচুর্য প্রকাশ করার জন্য লেখক সাধারণত এক চিলতে অযৌক্তিক চিন্তাভাবনা, ব্যাকরণগতভাবে অশুদ্ধ নির্মিতি, অবোধগম্য ধ্বনি এবং ধারণা, চিত্র ও শব্দের মুক্ত সমবায় ব্যবহার করেন।
চেতনাপ্রবাহভিত্তিক উপন্যাসে সাধারণত অন্তর্কথন নামক আখ্যানকৌশলটি ব্যবহার করা হয়। ইংরেজি সাহিত্যে এর সবচেয়ে বিখ্যাত উদাহরণটি হল জেমস জয়েস রচিত ইউলিসিস (১৯২২), যেখানে লিওপোল্ড, মলি ব্লুম ও স্টেফান ডিডালাস চরিত্রগুলির অন্তরের অবস্থার জটিলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অন্যান্য উল্লেখ্য উদাহরণের মধ্যে আছে আর্টুর শ্নিৎসলার রচিত লেউটনান্ট গুস্টল (১৯০১), যেখানে প্রাক-প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন ভিয়েনার আবহ পুনরায় সৃষ্টি করার জন্য চেতনাপ্রবাহের আশ্রয় নেয়া হয়; উইলিয়াম ফকনারের দ্য সাউন্ড অ্যান্ড দ্য ফিউরি (১৯২৯) যেখানে ঘটনা ঘটার সময় বা মনে করার সময় কম্পসন পরিবারের তিন সদস্যের মনে যে খণ্ডিত ও অন্তর্মুদ্রামূলক প্রতিক্রিয়াগুলির সৃষ্ট হয়, তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে; এবং ভার্জিনিয়া উলফের দি ওয়েভস (১৯৩১), যা একটি জটিল উপন্যাস ও যেখানে ছয়টি চরিত্র শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত তাদের জীবনের গল্প বলেছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Chris Baldick (২০০৮), The Concise Oxford Dictionary of Literary Terms (৩য় সংস্করণ), The Oxford University Press, পৃষ্ঠা 318