চিলেকোঠার সেপাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চিলেকোঠার সেপাই
চিলেকোঠার সেপাই বইয়ের প্রচ্ছদ
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকআখতারুজ্জামান ইলিয়াস
প্রচ্ছদ শিল্পীসমর মজুমদার
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধরনউপন্যাস
প্রকাশিত১৯৮৬
প্রকাশকদি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড
প্রকাশনার তারিখ
জুলাই ২০২০ (সর্বশেষ)
মিডিয়া ধরনছাপা (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩০৪ (১৯৮৬ সংকরণ)
আইএসবিএন৯৭৮৯৮৪৫০৬০৫২৩
ওসিএলসি১১০২০৯৩২৩৬
পরবর্তী বইখোয়াবনামা (১৯৯৬) 
ওয়েবসাইটপ্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট

চিলেকোঠার সেপাই বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত প্রথম উপন্যাস। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত এটি একটি মহাকাব্যিক উপন্যাস। স্বাধীনতার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা বৃহত্তর আন্দোলনের জোয়ারে চিলেকোঠায় বাসকরা একজন সাধারণ মানুষের যোগ দিতে সক্ষম হওয়ার গল্প চিলেকোঠার সেপাই[১] এই উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮৭ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।[২]

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে দৈনিক সংবাদের সাহিত্যপাতায় চিলেকোঠার সেপাই ধারাবাহিকভাবে ছাপা হতে শুরু করে। যদিও তৎকালীন সরকার পরিবর্তনের কারণে অসমাপ্ত অবস্থায় উপন্যাসটির প্রকাশ বন্ধ করে দেয়।[৩] পরে ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত উপন্যাসটি সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।[৪] ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে ঢাকার দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে এটি প্রকাশিত হয়। বইটির উৎসর্গ করা ছিল ইলিয়াসের পিতা বি. এম. ইলিয়াসকে।[৫] ১৯৯৩ সালের আগস্টে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সেবছরই জুন মাসে কলকাতার প্রতিভাস প্রকাশনী থেকে বইটির কলকাতা সংস্করণ বের করা হয়।[৬] ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র-২ গ্রন্থেও উপন্যাসটি সংকলিত হয়।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ের প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দুই বছর আগে বিপুল গণ-অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল। আখতারুজ্জামনের কাছে তা আগের যেকোনো আন্দোলনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৭] উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর মনোবিশ্লেষণ। ঊনসত্তর সালের প্রবল গণঅভ্যুত্থানের যারা প্রধান শক্তি ছিল, সেই শ্রমজীবী জনসাধারণ কীভাবে আন্দোলন-পরবর্তী সময়টিতে প্রতারিত এবং বঞ্চিত হলো, বামপন্থীদের দোদুল্যমানতা আর ভাঙনের ফলে, জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে যথাযথভাবে ধারণ করতে না পারার ফলে অজস্র রক্তপাতের পরও রাজনীতির ময়দান থেকে তাদের পশ্চাদপসরণ ঘটলো, আওয়ামী লীগ প্রধান শক্তি হয়ে উঠলো, উপন্যাসটির উপজীব্য সেই ঐতিহাসিক সময়টুকুই। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এর অভিনব কাঠামো এবং নতুন ভাষাভঙ্গি পরবর্তী প্রজন্মের নতুন লেখকদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবান্বিত করে যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ শহিদুল জহির

কাহিনীসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

আপাতদৃষ্টিতে ওসমান এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওসমান গণি ওরফে রঞ্জু, যে একজন ছোটখাট সরকারি চাকুরে। অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে এর প্রধান চরিত্র বলা যায় হাডডি খিজির, যে কিনা ওসমানের বাড়িওয়ালার ভাগনের গ্যারেজ দেখাশোনা করে। এই দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা ও স্তরের চরিত্রই উপন্যাসটিকে টেনে নিয়ে গেছে ঊনসত্তরের উত্তাল সময়ের ভেতর দিয়ে। আরেকটি গুরুত্ববহ চরিত্র আনোয়ার, যে মূলতঃ একজন বামপন্থী কর্মী। ঊনসত্তরের এই টালমাটাল বিক্ষুব্ধ সময়েই সে ঘটনাক্রমে যায় তার গ্রামের বাড়িতে, যেখানে যে চাক্ষুষ করে জনৈক গ্রাম্য জোতদার খয়বার গাজীর শোষণ ও অত্যাচার এবং সেটিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট তীব্র জনরোষ। উপন্যাসের কাহিনীকে পূর্ণতা দিতেই উঠে আসে দরিদ্র যুবক চেংটু কিংবা করমালি, যারা খয়বার গাজীর বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার ধৃষ্টতা দেখায়। অন্যদিকে স্বাভাবিক নিয়মেই গতি পায় ওসমানের অবদমিত কামনা, রেস্তোরাঁর আড্ডায় চায়ের কাপে তুমুল ঝড়, হাডডি খিজির ও তার পারিপার্শ্বিক নিম্নবিত্ত চরিত্রগুলোর চিরাচরিত জীবনযাপন; আর এই সবকিছুই ছাপিয়ে উপন্যাসটি হয়ে ওঠে ওই বিক্ষুব্ধ কালের এক মহাকাব্যিক আখ্যান।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুব্রত, এস ডি (৫ জানুয়ারি ২০২৩)। "চিলেকোঠার সেপাই"দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০২৩ 
  2. রুহুল আমিন (ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭)। "আখতারুজ্জামান ইলিয়াস: সাহিত্যে জীবনের অস্তিত্ব"রাইজিংবিডি ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৭ 
  3. হক ২০১৯, পৃ. ৪৭৬।
  4. হক ২০১৯, পৃ. ৪৭৬-৪৭৭।
  5. পৃষ্ঠা-৬৯৯, জীবনপঞ্জি, খালেকুজ্জামান ইলিয়াস, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনা সমগ্র-২, প্রথম প্রকাশ মার্চ ১৯৯৯, পঞ্চম মুদ্রণ মার্চ ২০০৮, মাওলা ব্রাদার্স, আইএসবিএন ৯৪৮-৪১০-১৩৫-৬
  6. হক ২০১৯, পৃ. ৪৭৮।
  7. পৃষ্ঠা-৫-৬, ভূমিকা, প্রাগুক্ত
  8. "চিলেকোঠার সেপাই ক্রমায়াত মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্য"ইত্তেফাক। ২০১৮-০৩-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-২৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

হক, আহমেদ মাহমুদুল, সম্পাদক (২০১৯)। গল্পসমগ্রঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ৪৭৯। আইএসবিএন 9789849333296ওসিএলসি 1114270077 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]