চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এর আন্তঃবিভাগীয় প্রকৃতির কারণে, ব্র্যান্ডিং, প্রযুক্তিগত এবং শৈল্পিক অঙ্কন, সাইনেজ, আলোকচিত্রশিল্প, চিত্র এবং ভিডিও সম্পাদনা, থ্রিডি মডেলিং, অ্যানিমেশন এবং প্রোগ্রামিং, অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে গ্রাফিক ডিজাইন প্রয়োগ হতে পারে।[১]

চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন (ইংরেজি: graphic design গ্রাফিক্‌ ডিজাইন্‌) বলতে এমন একটি পেশা,[২] কলা, উচ্চশিক্ষায়তনিক পাঠ্য বিষয়[৩][৪][৫] বা ফলিত শিল্পকলার ক্রিয়াকলাপকে বোঝায়, যেখানে কোনও একটি পৃষ্ঠতলে মুদ্রাক্ষরসজ্জা, আলোকচিত্রশিল্প ও চিত্রাঙ্কনকলার দক্ষ প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণত একাধিক সুনির্বাচিত প্রতীক, চিত্র ও পাঠ্যবস্তুর (অক্ষর, শব্দ, ইত্যাদি) পরিকল্পিত মিলন ঘটিয়ে একটি সুসজ্জিত সমাহার সৃষ্টি করে কোনও ধারণা বা বার্তাকে দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ দান করা]] হয়, যার অন্তিম লক্ষ্য নকশাটিকে যান্ত্রিকভাবে পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে সাধারণত বহুসংখ্যক পাঠক-দর্শকের কাছে সেই বার্তাটিকে জ্ঞাপন করা (অর্থাৎ দৃষ্টিনির্ভর গণযোগাযোগ স্থাপন করা)।[৬] গ্রাফিক ডিজাইন হল নকশা[১] এবং চারুকলার একটি আন্তঃবিভাগীয় শাখা। এর অনুশীলনে ম্যানুয়াল বা ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং পার্শ্বীয় চিন্তাভাবনা জড়িত, যেখানে দৃষ্টিনির্ভর যোগাযোগের জন্য পাঠ্যবস্তু এবং গ্রাফিক্স ব্যবহার করা স্বাভাবিক।

যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় গ্রাফিক ডিজাইনার বার্তার এনকোডার বা দোভাষী হিসাবে ভূমিকা পালন করে। তারা মূলত দৃষ্টিনির্ভর বার্তাগুলির ব্যাখ্যা, ক্রম এবং উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করে। সাধারণত, গ্রাফিক ডিজাইন মুদ্রাক্ষরসজ্জার নান্দনিকতা এবং পাঠ্যবস্তুর রচনামূলক বিন্যাস, অলঙ্করণ এবং ধারণা প্রকাশের জন্য চিত্রকল্প ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। ডিজাইনের কাজটি গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে করা যেতে পারে, যা ভাষাগতভাবে, মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, অর্থাৎ গ্রাফিক ডিজাইন একটি ভাষাগত বার্তাকে গ্রাফিক প্রকাশে রূপান্তরিত করে।[৭]

প্রয়োগের ক্ষেত্র হিসাবে গ্রাফিক ডিজাইনে, জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে যে কোনও ভিজ্যুয়াল যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি বিজ্ঞাপনের কৌশলগুলিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে, অথবা এটি বিমান চালনা[৮] বা মহাকাশ অনুসন্ধানের[৯][১০] জগতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই অর্থে, কিছু দেশে গ্রাফিক ডিজাইন শুধুমাত্র স্কেচ এবং অঙ্কন তৈরির সাথে সম্পর্কিত, যদিও এটি ভুল, যেহেতু ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন একটি বিশাল পরিসরের একটি ছোট অংশ যেখানে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

প্রাচীনত্ব এবং মধ্যযুগীয় উৎপত্তির পাশাপাশি, প্রয়োগ শিল্প হিসাবে গ্রাফিক ডিজাইন প্রাথমিকভাবে ১৫ শতকে ইউরোপে মুদ্রণের উত্থান এবং শিল্প বিপ্লবে ভোক্তা সংস্কৃতির বৃদ্ধির সাথে যুক্ত ছিল। সেখান থেকে এটি পশ্চিমে একটি স্বতন্ত্র পেশা হিসাবে আবির্ভূত হয়ে, ১৯ শতকে বিজ্ঞাপনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হ্যে উঠে[১১] এবং এর বিবর্তন ২০ শতকে এটিকে একীভূত করে। বর্তমানে তথ্য বিনিময়ের দ্রুত এবং ব্যাপক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, অভিজ্ঞ ডিজাইনারদের চাহিদা আগের চেয়ে বেশি, বিশেষ করে নতুন প্রযুক্তির বিকাশের কারণে এবং তাদের বিকাশকারী প্রকৌশলীদের দক্ষতার বাইরে মানবিক কারণগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন।[১২]

এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট নকশাটি কোনও ভৌত মাধ্যমে (physical) কিংবা অসদ্‌ মাধ্যমে (virtual) রূপায়িত হতে পারে, স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদের সময়ের জন্য পরিবেশিত হতে পারে, ক্ষুদ্র একক ডাকটিকিট থেকে শুরু করে জাতীয় ডাকসংকেত ব্যবস্থার মত বিশালায়তন হতে পারে। নকশার উদ্দীষ্ট দর্শকের সংখ্যা সীমিত হতে পারে, যেমন কোন এককালীন প্রদর্শনীর নকশা প্রণয়ন বা সীমিত-প্রকাশনার বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ; আবার এটি লক্ষ কোটি দর্শকের জন্যও তৈরি করা হতে পারে, যেমন কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থার ওয়েবসাইটের নকশা। কেবল বাণিজ্যিক নয়, শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন করা হতে পারে। চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা প্রাচীরপত্র, বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র, মুদ্রিত বিজ্ঞাপন, মোড়ক ও অন্যান্য মুদ্রিত মাধ্যমের জন্য এবং সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে তথ্য লেখচিত্রণের জন্য নকশা প্রণয়ন করেন।[১৩]

পরিভাষা[সম্পাদনা]

উইলিয়াম অ্যাডিসন ডুইগিন্সকে প্রায়শই ১৯২২ সালের একটি নিবন্ধে "গ্রাফিক ডিজাইন" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়।[১৪] যদিও এটি ১৯০৮ সালের ৪ জুলাই অর্গানাইজদ লেবার নামে সান ফ্রান্সিসকোর শ্রমিক ইউনিয়নের একটি সংখ্যায় (ভলিউম ৯, সংখ্যা ২৭) প্রিন্টারদের জন্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধে: প্রকাশিত হয়েছিল।[১৫]

An Enterprising Trades Union
… The admittedly high standard of intelligence which prevails among printers is an assurance that with the elemental principles of design at their finger ends many of them will grow in knowledge and develop into specialists in graphic design and decorating. …

এক দশক পরে, ক্যালিফোর্নিয়া স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্টস-এর ১৯১৭-১৯১৮ কোর্স ক্যাটালগ গ্রাফিক ডিজাইন এবং লেটারিং শিরোনামের একটি কোর্সের বিজ্ঞাপন দেয়, যা অ্যাডভান্সড ডিজাইন অ্যান্ড লেটারিং নামক একটি কোর্সকে প্রতিস্থাপন করে। উভয় ক্লাসে ফ্রেডরিক মেয়ার পাঠদান করতেন।[১৬]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়নের দীর্ঘ ইতিহাসে এবং বিংশ এবং একবিংশ শতকে দৃষ্টিনির্ভর যোগাযোগের তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণে, বিজ্ঞাপন, শিল্পকলা, গ্রাফিক ডিজাইন এবং ললিতকলার মধ্যে পার্থক্য বিলীন হয়ে গেছে। তারা অনেক উপাদান, তত্ত্ব, নীতি, অনুশীলন, ভাষা এবং কখনও কখনও একই উপকারকারী বা গ্রাহককে ভাগ করে নেয়। বিজ্ঞাপনে, চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল পণ্য এবং পরিষেবা বিক্রয়। অন্যদিকে গ্রাফিক ডিজাইনে, "সারাংশ হ'ল তথ্যের ধারাবাহিকতা, ধারণার গঠন, অভিব্যক্তি এবং শিল্পবস্তুর অনুভূতি যা মানুষের অভিজ্ঞতাকে নথিভুক্ত করে।"[১৭]

সমাজের চাহিদা, নকশাপ্রণেতাদের কল্পনা ও নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব, এ সবই চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়নের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। প্রাচীন চীন, মিশর ও গ্রিসের পুঁথিতে চিত্রলৈখিক নকশার প্রচুর সুন্দর উদাহরণ রয়েছে। ১৫শ শতকে ইউরোপে পুস্তক মুদ্রণশিল্পের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটলে বইয়ের পাতা সাজানোর কাজটি ধীরে ধীরে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। যারা বইয়ের হরফ সাজাতেন, তারাই বইয়ের পৃষ্ঠার নকশা করতেন। ১৯শ শতকের শেষ দিকে এসে আলাদা শিল্প বিপ্লব-পরবর্তী সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমের (যেমন প্রাচীরপত্র বা বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র) নকশা প্রণয়ন ও এগুলির গণ-উৎপাদনের প্রক্রিয়া দুইটি পৃথক হয়ে যায়। ফলে একটি বিশেষায়িত পেশা হিসেবে আধুনিক চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়নের উদ্ভব হয়।

২০শ শতকের শুরুতে বই ও সংবাদপত্রের প্রকাশক, বিজ্ঞাপনী সংস্থা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিল্প পরিচালক নামক পদের সৃষ্টি করেন, যে পদে নিযুক্ত ব্যক্তির কাজ ছিল যোগাযোগের সমস্ত দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়গুলিকে সাজিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাহার তৈরি করা। ১৯২২ সালে মুদ্রাক্ষরিক উইলিয়াম ডুইগিনস এই বিকাশমান নতুন পেশাক্ষেত্রটির ইংরেজি নাম দেন "গ্রাফিক ডিজাইন", অর্থাৎ চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন।

২০শ শতকের পুরোটা জুড়েই চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা নতুন নতুন প্রাগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার করতে থাকেন, ফলে শৈল্পিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই সম্ভাবনার অনেক দুয়ার উন্মুক্ত হতে থাকে। পেশাটি উত্তরোত্তক প্রসার লাভ করতে থাকে। চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা সাময়িকীর পাতা, বইয়ের প্রচ্ছদ, বিজ্ঞাপনী প্রচারপত্র, সিডির প্রচ্ছদ, ডাকটিকিট, পণ্যের মোড়ক, ব্যবসায়িক মার্কা, প্রতীক, বিজ্ঞাপন, টেলিভিশনে ও চলচ্চিত্রে প্রদর্শিত চলমান শিরোনাম, ওয়েবসাইট, ইত্যাদির নকশা করেন।

২১শ শতাব্দীতে এসে চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন একটি বিশ্বব্যাপী পেশায় পরিণত হয়েছে। এটি কাগজে মুদ্রণভিত্তিক ও ইলেকট্রনিক তথ্য ব্যবস্থাসমূহের একটি প্রধান গাঠনিক উপাদান। তথ্য সরবরাহ, পণ্যের পরিচিতি প্রদান, বিনোদন ও প্ররোচণামূলক বার্তা জ্ঞাপন - এই সব উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন সমকালীন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। দ্রুত কর্মক্ষম শক্তিশালী কম্পিউটার ও উপকারী সফটওয়্যারের আবির্ভাব এই ধরনের নকশা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। ইন্টারনেটের আবির্ভাবের কারণে সমাজ, দেশ এমনকি বিশ্বের সর্বত্র এই ধরনের নকশা বিতরণ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে চৈত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা সাধারণত হাতে প্রাথমিক নকশা এঁকে পরে কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন করেন।

মুদ্রণের আবির্ভাব[সম্পাদনা]

চীনে, তাং রাজবংশের (শা. ৬১৮–৯০৭) সময় কাপড়ে ছাপানোর জন্য এবং পরে বৌদ্ধ গ্রন্থগুলি পুনরুত্পাদনের জন্য কাঠের খণ্ড কাটা হয়েছিল। ৮৬৮ সালে মুদ্রিত একটি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ প্রাচীনতম পরিচিত মুদ্রিত বই। চীনে ১১ শতকের শুরুতে, স্থানান্তর উপযোগি মুদ্রণ ব্যবহার করে দীর্ঘ স্ক্রোল এবং বই তৈরি করা হয়েছিল, যা গানের রাজবংশের (শা. ৯৬০–১২৭৯) সময় বইগুলিকে ব্যাপকভাবে উপলব্ধ করে তোলে।[১৮]

সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশার সাথে তুলনা[সম্পাদনা]

একজন চিত্রশিল্পীর সাথে একজন পেশাদার চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতার পার্থক্য হল এই যে চিত্রশিল্পী তার শিল্পকর্মটি একবারের জন্যই সৃষ্টি করেন, কিন্তু তার বিপরীতে চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতা যান্ত্রিক পুনরুৎপাদনের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে তার নকশাটি প্রণয়ন করেন, যাতে বহুসংখ্যক মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে এটিকে ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যায়।[১৯] চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন তাই কোনও বিশুদ্ধ শিল্পকলা নয়, বরং এটি এক ধরনের শিল্পকলাভিত্তিক বাণিজ্যিক বা গণসেবামূলক কর্মকাণ্ড। এ কারণে কেউ কেউ একে "বাণিজ্যিক শিল্পকলা" নামেও ডেকে থাকেন। চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন একটি সহযোগিতামূলক ক্ষেত্র। লেখকেরা নকশাতে ব্যবহার্য শব্দ বা লেখাটি রচনা করেন। অন্যদিকে আলোকচিত্রগ্রাহক ও আঁকিয়েরা চিত্র সৃষ্টি করেন। চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতাদের কাজ হল এই পূর্বসৃষ্ট রচনা ও চিত্রগুলি থেকে পরিকল্পিতভাবে কয়েকটি নির্বাচন করে একটি সুসমন্বিত ও অখণ্ড দৃষ্টিনির্ভর যোগাযোগমূলক বার্তা সৃষ্টি করা।

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

চিত্রলৈখিক নকশা এক বা একাধিক উদ্দেশ্যে নির্মিত হতে পারে। একটি উদ্দেশ্য হল নকশার পাঠক-দর্শককে কোনও বাণিজ্যিক (বা অবাণিজ্যিক কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ) তথ্য প্রদান। দ্বিতীয় একটি উদ্দেশ্য হল পাঠক-দর্শকের মানসিকতাকে প্রভাবিত করা, তাকে কিছু করতে প্ররোচিত করা, বা তাকে কোনও কিছু করতে সহায়তা করা। তৃতীয় আরেকটি উদ্দেশ্য আলঙ্কারিক, অর্থাৎ পাঠক-দর্শককে দৃষ্টিগত ও বুদ্ধিগতভাবে নান্দনিক বিনোদন প্রদান করা।

সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন প্রক্রিয়াটি সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটির উদ্দেশ্য একটি নির্দিষ্ট সমাজের বহু মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা, তাই নকশা প্রণয়ন প্রক্রিয়ার পটভূমিতে অবস্থিত সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ বা মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি চিত্রলৈখিক নকশাতে দেখতে পাওয়া যায়। আবার এর বিপরীতে চৈত্রলৈখিক নকশাগুলি নিজেরাও সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন মূল্যবোধ নির্মাণে ও পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

উপাদানসমূহ[সম্পাদনা]

চিত্রলৈখিক নকশাপ্রণেতারা এক ধরনের দৃষ্টিনির্ভর "ভাষা" ব্যবহার করেন, যার ভিত্তি কতগুলি মৌলিক উপাদান ও মূলনীতি। মৌলিক উপাদানগুলি হল রেখা, আকৃতি, রঙ, মুদ্রাক্ষর-সজ্জা (ভাষাগত অর্থের পাশাপাশি আকৃতি ও রেখার মত কাজ করে), বৈপরীত্য, বিন্যাস, আকার, শূন্যস্থান ও বুনট।[২০]

মূলনীতিসমূহ[সম্পাদনা]

উপরের উপাদানগুলি একজন নকশাপ্রণেতা কতগুলি মূলনীতি মেনে সজ্জিত করেন। প্রধান মূলনীতিগুলি হল একতা, বৈচিত্র্য, গুরুত্বক্রম, আধিপত্য, অনুপাত ও ভারসাম্য। এগুলি নকশাটিকে সামগ্রিকভাবে প্রভাবিত করে। আর গৌণ মূলনীতিগুলি হল মাপ, গুরুত্বপ্রদান, ছন্দ, চলন, নৈকট্য ও পুনরাবৃত্তি। এগুলি নকশার ভেতরে অবস্থিত মৌলিক উপাদানগুলির মধ্যকার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে।[২০]

প্রয়োগ[সম্পাদনা]

প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়ন কোনও বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়মূলক প্রতীক বা মার্কা তৈরি করতে ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়া বাণিজ্যিক পণ্য বিপণন ও বিজ্ঞাপন প্রক্রিয়াতেও এ ধরনের নকশা বহুল ব্যবহৃত হয়। পণ্যের মোড়কের নকশাও একই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। প্রকাশনা শিল্পে (বই, সংবাদপত্র, সাময়িকী, ইত্যাদি) পৃষ্ঠার বিভিন্ন উপাদান, মুদ্রাক্ষর, অলঙ্করণ, পৃষ্ঠাসজ্জা, ইত্যাদিকে দৃষ্টিনন্দনভাবে উপস্থাপন করতে চিত্রলৈখিক নকশা প্রণয়নের সাহায্য নেওয়া হয়। আবার কোনও একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপত্য, শূন্যস্থান, তথ্যবাহী বা দিকনির্দেশক চিহ্ন, দেয়ালচিত্র, ইত্যাদির মাধ্যমে দর্শককে স্থানটির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে এই ধরনের নকশা কাজে লাগে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

সংশ্লিষ্ট এলাকা[সম্পাদনা]

সম্পর্কিত বিষয়[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Vise, Kristen। "An Interdisciplinary Approach to Graphic Design"। College of Liberal Arts। ১৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২১ 
  2. Quintela, Pedro। "From the shadow to the centre: Tensions, contradictions and ambitions in building graphic design as a profession" (পিডিএফ)। University of Coimbra। ৭ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০২২ 
  3. Khaled Nabil, Al-Momani (২৫ আগস্ট ২০২০)। "Characteristics of Design as an Academic and Creative Discipline"Kne Social Sciences। Ural Federal University: 294–298। এসটুসিআইডি 221710217ডিওআই:10.18502/kss.v4i11.7560। ২৬ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Bravo, Rafael Ángel (৪ মার্চ ২০১৬)। "Vigencia de la Bauhaus en la formación académica de los diseñadores gráficos" [Currency of the Bauhaus in the academic training of graphic designers] (স্পেনীয় ভাষায়)। Francisco José de Caldas District University। ১৬ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "Graphic Design"। College of the Sequoias। ২৮ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২২ 
  6. "Professional Graphics Design"। Scholar IT Institute। ২৬ আগস্ট ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২২ 
  7. Wong, Wucius (1995) (১৯৯৩)। Principles of Form and Design 
  8. Eveleth, Rose (২৫ জুলাই ২০১৪)। "How Graphic Design Can Make Flying Just a Little Bit Safer"nautil.us। Nautilus। ১১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০২১ 
  9. Junkunc, Ashley (২২ অক্টোবর ২০১৯)। "NASA needs more than just rocket scientists"udayton.eduUniversity of Dayton। ২০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২১ 
  10. Monaghan, Heather (৪ মার্চ ২০২১)। "We Are NASA: Reese Patillo, Junior Animator/Graphic Designer (Contractor)"nasa.govNational Aeronautics and Space Administration (NASA)। ১৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০২১ 
  11. Raffel, Burton; Thomson, Ellen Mazur (১ জানুয়ারি ১৯৯৭)। The Origins of Graphic Design in America, 1870–1920 (ইংরেজি ভাষায়)। Yale University Press। পৃষ্ঠা 85। আইএসবিএন 978-0-300-06835-1 
  12. Frascara, Jorge (1988)। Diseño y Comunicación 
  13. Juliette Cezzar (অক্টোবর ৫, ২০১৭), What is Graphic Design?, American Institute of Graphic Arts, মার্চ ১, ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ৯, ২০১৮ 
  14. Shaw, Paul (১৯৮৪)। "Tradition and Innovation: The Design Work of William Addison Dwiggins"Design Issues1 (2): 26–41। আইএসএসএন 0747-9360জেস্টোর 1511497ডিওআই:10.2307/1511497 
  15. Paul Shaw, Blue Pencil no. 46—Yet more on the early history of the term "graphic design" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে, 1 June 2020.
  16. Paul Shaw, "The Definitive Dwiggins no. 81—Who Coined the Term 'Graphic Design'? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২১-১১-২৭ তারিখে", Blue Pencil, 7 January 2018.
  17. Meggs, Philip B., 'A history of graphic design'. New York: Van Nostrand Reinhold, 1983
  18. Wilkinson, Endymion (২০০০)। Chinese History। Cambridge: Harvard University Asia Center। পৃষ্ঠা 450আইএসবিএন 0674002490 
  19. Paul Jobling; David Crowley (১৯৯৬), Graphic Design: Reproduction and representation since 1800, পৃষ্ঠা 1-3 
  20. Poppy Evans; Mark A. Thomas (২০১৩), Exploring the Elements of Design, Cengage Learning, পৃষ্ঠা 3-5 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Visualization টেমপ্লেট:Design