চার বায়ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চার বায়ত হল একটি ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী পরিবেশন শিল্পকলা। এটি পরিবেশন করেন একদল শিল্পী বা গায়ক। চার বায়ত বা চারটি স্তবক হল লোককাহিনী এবং পরিবেশন শিল্পকলার একটি রূপ। প্রাচীন এই কলাটি আজও কিছু জায়গায় পরিবেশিত হয়, যার মধ্যে আছে প্রধানত রামপুর (উত্তরপ্রদেশ), টঙ্ক (রাজস্থান), ভোপাল (মধ্যপ্রদেশ) এবং তেলেঙ্গানার (পূর্ববর্তী অন্ধ্রপ্রদেশ) হায়দ্রাবাদ[১] সঙ্গীত নাটক একাডেমী এটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

এর কাব্যিক রূপটির খোঁজ পাওয়া গেছে সপ্তম শতাব্দীতে আরবে, যার নাম ছিল রাজীজ[২] "চার বায়ত" শব্দের উৎপত্তি ফারসি ভাষায় পাওয়া যেতে পারে, যেখানে এটি একটি চার-স্তবক কবিতাকে বোঝায়। এই কবিতার প্রতিটি স্তবক চারটি লাইনের সমন্বয়ে গঠিত। কবিতাটি আরব বংশোদ্ভূত একটি তাল বাদ্যযন্ত্র ডাফের (এক ধরণের ঘাতযন্ত্র) সাথে গাওয়া হয়।[১] এই শিল্পরীতিটি পারস্য থেকে আফগানিস্তান হয়ে ভারতে এসেছিল। এর ব্যাপকভাবে স্বীকৃত উৎস হিসেবে বলা হয়, মুঘল সেনাবাহিনীর আফগান সৈন্যরা এই শিল্পটিকে ভারতে নিয়ে এসেছিল। যুদ্ধের সময় নিজেদের মধ্যে বীরত্ব ও সাহস সঞ্চার করতে সৈন্যরা গানগুলি গাইত।[৩]

সম্প্রদায়[সম্পাদনা]

রাজস্থান রাজ্যের টঙ্ক, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল এবং রামপুর, চাঁদপুর, উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মালিহাবাদ এবং আমরোহা জেলার মুসলিম সম্প্রদায় সদস্যরা চার বায়ত পরিবেশন করেন। চার বায়তের গায়কদের অনেকেই ১৮শ শতাব্দীতে ভারতে আসা আফগানদের বংশধর।[৩]

গঠন[সম্পাদনা]

এর আগে এটি ফারসি এবং পশতু ভাষায় রচিত হয়েছিল, তবে পরে এটি উর্দুতেও রচিত হয়েছিল। রূপটি ধীরে ধীরে স্থানীয় সংস্কৃতির মধ্যে নিহিত হয়ে যায় এবং এর বাগধারার মধ্যে ক্রমশ লোকজ শব্দ প্রবেশ করতে শুরু করে। "চার বায়ত" কবিতাটিতে উর্দু গজলের মতোই সংবেদনশীলতা প্রকাশ পায়। একটি চার বায়ত দলকে একটি 'আখড়া' (রঙ্গভূমি) হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যা একজন 'ওস্তাদ' (শিক্ষক / গুরু) দ্বারা পরিচালিত হয়। দলগুলি সন্ধ্যায় গান গায়, এবং একটি শিক্ষামূলক শৈলীতে একে অপরের সাথে প্রশ্ন উত্তরের প্রতিযোগিতা করে।[৩]


বর্তমান শিল্পীদের দল[সম্পাদনা]

শিল্পের বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

সাধারণত, "চার বায়ত" যুদ্ধ, সাহসিকতা, রোমান্স এবং কখনও কখনও আধ্যাত্মিকতা বর্ণনা করে। এটি মূলত একটি দীর্ঘ কবিতা, যাতে চারটি করে স্তবকের একটি শৃঙ্খল আছে। পূর্ববর্তী যুগে এর একটি সুফি রহস্যবাদী আধ্যাত্মিক বিষয় ছিল, পরে সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়গুলি আখ্যানের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Enjoy "Chaar Bayt" poetry this weekend"The Hindu। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০১৮ 
  2. ":: Parampara Project | Performing arts of Uttar Pradesh"। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৪ 
  3. "Name of the Element: Chaar Bayt: A Muslim tradition in lyrical oral poetry, Uttar Pradesh, Madhya Pradesh and Rajasthan, India" (পিডিএফ)Sangeet Natak Akademi। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২৪ 
  4. Chaar-Bayt ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে