বিষয়বস্তুতে চলুন

ঘূর্ণিঝড় বায়ু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় বায়ু
অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় (আইএমডি স্কেল)
শ্রেণী ৩ (স্যাফির-সিম্পসন মাপনী)
Vayu at peak intensity on 13 June, just off the coast of Gujarat's Saurashtra Peninsula
গঠন10 June
বিলুপ্তি19 June
(17 June পরে অবশিষ্টাংশ কম)
সর্বোচ্চ গতি৩-মিনিট স্থিতি: ১৮৫ কিমি/ঘণ্টা (১১৫ mph)
১-মিনিট স্থিতি: ১৮৫ কিমি/ঘণ্টা (১১৫ mph)
সর্বনিম্ন চাপ৯৫০ hPa (mbar); ২৮.০৫ inHg
২০১৯ ভারত মহাসাগরের উত্তরভাগে ঘূর্ণিঝড় মরসুমের অংশ

অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় বায়ু একটি শক্তিশালী গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় যা শক্তিশালী হয় যা পূর্ব আরব সাগরের উত্তরে সৃষ্টি হয়। বায়ু তৃতীয় মাত্রার ক্রান্তীয় নিম্নচাপ, তৃতীয় ঘূর্ণিঝড় এবং ২০১৯ উত্তর ভারত মহাসাগর ঘূর্ণিঝড়ের দ্বিতীয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়় এবং বছরের প্রথম ঝড় যা আরব সাগরে গঠিত হয়েছিল।

আবহাওয়া তথ্য

[সম্পাদনা]
স্যাফির-সিম্পসন মাপনী অনুযায়ী মানচিত্রে ঝড়টির পথ ও তীব্রতা দেখানো হয়েছে।
মানচিত্রের ব্যাখ্যা
  ক্রান্তীয় নিম্নচাপ (≤৩৮ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≤৬২ কিমি/ঘণ্টা)
  ক্রান্তীয় ঝড় (৩৯–৭৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ৬৩–১১৮ কিমি/ঘণ্টা)
  শ্রেণী ১ (৭৪–৯৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১১৯–১৫৩ কিমি/ঘণ্টা)
  শ্রেণী ২ (৯৬–১১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৫৪–১৭৭ কিমি/ঘণ্টা)
  শ্রেণী ৩ (১১১–১২৯ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ১৭৮–২০৮ কিমি/ঘণ্টা)
  শ্রেণী ৪ (১৩০–১৫৬ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ২০৯–২৫১ কিমি/ঘণ্টা)
  শ্রেণী ৫ (≥১৫৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা, ≥২৫২ কিমি/ঘণ্টা)
  অজানা
ঝড়ের ধরন
▲ অ-ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় / ছোট নিম্নচাপ/ ক্রান্তীয় গোলযোগ / মৌসুমী নিম্নচাপ

২০১৯ সালের জুন মাসে মালদ্বীপের ঠিক উত্তর পশ্চিমে আরবসাগরে একটি নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় এবং আইএমডি একে "এআরবি ০১" হিসেবে শনাক্ত করে। নিম্নচাপটি উত্তরদিকে সরতে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। একইদিনে ঘূর্ণিঝড় বায়ু হিসেবে পরিগণিত হয়। ১১ জুন এটা ঘূর্ণিঝড় বায়ু হওয়ায় পরে সাফির-সিম্পসন হারিকেন উইন্ড স্কেল হিসেবে ক্যাটাগরি ১ মাত্রার ঝড় হিসেবে পরিচিতি পায়। ১২ জুন এটা ক্যাটাগরি ২ মাত্রার ঝড়ে রূপান্তরিত হয়। বায়ু প্রবল শক্তি নিয়ে ক্রমশ ভারতের উত্তরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।[][]

প্রস্তুতি

[সম্পাদনা]

ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা

[সম্পাদনা]

ব্যবস্থাটি একটি গভীর নিম্নচাপে তীব্রতর হওয়ার ফলে, আইএমডি গুজরাটের উপকূলের একটি প্রাক-ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ শুরু করে। সংস্থাটি নির্দেশ করে যে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হবে। মৎস্যজীবীদের সতর্ক করা হয় যেন তারা ঝড়ের গতিপথের কাছাকাছি বা ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের পথে আরব সাগরে অগ্রসর না হয় এবং ইতোমধ্যে সমুদ্রে অবস্থানরত ব্যক্তিদের উপকূলে ফিরে আসতে আহ্বান জানানো হয়[]। ১২ জুন একটি খুব তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ১০ জুন ১২:০০ ইউটিসি তে গুজরাটের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাক-পর্যবেক্ষণ একটি হলুদ ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা জারি করে। ১১ জুন এটাকে একটি কমলা সতর্কতায় উন্নীত করা হয়।[]

১১ জুন, আইএমডি শক্তিশালীকরণ ব্যবস্থার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করে। গুজরাটের বেশ কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ১.০-১.৫ মিটার ঝড়ের প্রবাহ ছিল। বাসিন্দাদের বাড়িঘর এবং গাছপালা, পাশাপাশি বন্যা এবং বিপজ্জনক বায়ুজনিত ক্ষতির সম্ভাবনা সম্পর্কেও সতর্ক করা হয়। ১২ জুন 'বায়ুর তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে আইএমডি নির্দেশ করে যে ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কচ্ছ ঘরবাড়ির উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।[]

ভারতে প্রস্তুতি

[সম্পাদনা]

প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে মহারাষ্ট্র, গোয়া, গুজরাটের উপকূলীয় অঞ্চলে। ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হওয়া বায়ুর প্রভাবে ঝড় ও ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দেবভূমি দ্বারকা, পোরবন্দর, জুনাগড়, দিউ, গির সোমনাথ, আমরেলি ও ভাবনগর জেলার নিচু উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিতে পারে।[][]

১২ জুন বুধবার প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে উদ্ধার করে সুরক্ষিত জায়গায় সরানো হয়৷ পাশাপাশি মৎসজীবীদের সমুদ্রে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। উপকূলবর্তী এলাকায় স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।[]

গুজরাত

[সম্পাদনা]

উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় অপেক্ষাকৃত কম আঘাত হানে এবং গুজরাত রাজ্যটি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়নি। এর আগে ১৯৯৮ সালের জুনে একটি অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে যাতে ১০০০০ এর বেশি ব্যক্তির মৃত্যুর এবং ৪.৭ বিলিয়ন ডলার সম্পদের ক্ষতি হয়। বায়ুর প্রস্তুতির জন্য, ভারতীয় সরকার ১১ জুন জাতীয় দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনী থেকে ১৬০ জনকে গুজরাতে নিযুক্ত করে।[] পশ্চিম গুজরাটের সিক্কা বন্দর ১২ জুন বন্ধ থাকে এবং মুন্দ্রা এবং টুনা বন্দরে থেকে কর্মীদের সরিয়ের নেওয়া হয়।[১০]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "এবার ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'বায়ু'"। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  2. "ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় 'বায়ু', প্রভাব পড়বে না বাংলাদেশে"। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  3. Kumar, Naresh (১০ জুন ২০১৯)। "National Bulletin #3 (Vayu)" (পিডিএফ)India Meteorological Department। ১০ জুন ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৯ (ইংরেজি)
  4. Devi, Sunitha (১১ জুন ২০১৯)। "National Bulletin #10 (09Z)" (পিডিএফ)India Meteorological Department। ১১ জুন ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৯ (ইংরেজি)
  5. Pattanaik, D.R. (১২ জুন ২০১৯)। "National Bulletin #15 (00Z)" (পিডিএফ)India Meteorological Department। ১২ জুন ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ (ইংরেজি)
  6. "গুজরাটে আঘাত হানতে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় বায়ু, আগাম সতর্কতা"। ১২ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  7. "বৃহস্পতিতেই তীব্র আকারে গুজরাটে ঢুকবে ঘূর্ণিঝড় বায়ু, জারি লাল সতর্কতা"। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  8. "ঘূর্ণিঝড় বায়ু, স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ কর্তৃপক্ষের"। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ 
  9. Miller, Brandon; Ward, Taylor (১২ জুন ২০১৯)। "Millions in northwest India face tropical cyclone threat"CNN। ১২ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ (ইংরেজি)
  10. "Cyclone Vayu poised to hit India as year's second major storm"AL Jazeera। ১২ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৯ (ইংরেজি)

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]