ঘনাদা
| ঘনশ্যাম দাস ঘনাদা | |
|---|---|
| 'ঘনাদা' চরিত্র | |
"দুনিয়ার ঘনাদা" বইয়ের অলংকরণে ঘনাদা ও তাঁর শ্রোতারা | |
| প্রথম উপস্থিতি | ১৯৪৫ |
| স্রষ্টা | প্রেমেন্দ্র মিত্র |
| তথ্য | |
| ডাকনাম | ডস |
| লিঙ্গ | পুরুষ |
| ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
| জাতীয়তা | ভারতীয় |
ঘনাদা বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৪৫ সালে প্রেমেন্দ্র মিত্র এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। ঘনাদার প্রকৃত নাম ঘনশ্যাম দাস। ঘনাদার বক্তব্য অনুযায়ী ইউরোপিয়ান লোকেরা তাকে 'ডস' নামে চেনে। ঘনাদা তার মেসের প্রতিবেশী চার যুবককে নিজের জীবনের নানা অভিযান সম্পর্কে গল্প মুখে মুখে শোনান।
চরিত্র
[সম্পাদনা]ঘনাদার ষষ্ঠ গল্প টুপিতে প্রথম জানা যায় তিনি কলকাতা শহরে বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের একটি মেসবাড়িতে বসবাস করেন[১] এবং তিনি তার অধিকাংশ গল্প এই মেস বাড়িতেই বলেছেন। এই মেসবাড়ির চার বাসিন্দা শিবু, শিশির, গৌর ও গল্পের কথক সুধীর সর্বদা বিভিন্ন উদ্ভাবনী পরিকল্পনা করে ঘনাদাকে ঠকিয়ে বা খুশি করে তার কাছ থেকে কল্পবিজ্ঞান, অভিযান বা ঐতিহাসিক গল্পের বিভিন্ন সব গল্পের সম্ভার শোনার চেষ্টা করতে থাকেন। অধিকাংশ গল্পে নায়ক থাকেন স্বয়ং ঘনাদা। একজন বাকসর্বস্ব সাধারণ বাঙালি চরিত্রের বাগাড়ম্বরতার পাশাপাশি অসাধারণ পাণ্ডিত্য, প্রখর উপস্থিত বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী প্রতিভা ঘনাদা চরিত্রকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করেছে।[n ১] ঘনাদা ধূমপায়ী ও ভোজনবিলাসী। মশা গল্পে দেখা যায় তিনি মেসের অন্যান্য বাসিন্দাদের কাছ থেকে সিগারেট ধার করেন[৩], কিন্তু নুড়ি গল্পে জানা যায় তিনি শিশিরের কাছ থেকেই সিগারেট ধার করেন।[৪] মেসবাড়ির আড্ডা ছাড়াও পার্কের বৈকালিক আড্ডাতে পাড়ার প্রবীনদের কাছে ঘনশ্যাম বাবু নামে পরিচিত তিনি। 'রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন' গল্পটি ঘনশ্যাম বাবুর মস্তিষ্কজাত।
কথক
[সম্পাদনা]ঘনাদার গল্পগুলিতে গল্পের কথক সুধীর নামের চরিত্র। প্রেমেন্দ্র মিত্র এই চরিত্রটি প্রথম আঠাশটি গল্পে উত্তম পুরুষ উপস্থাপিত করলেও তার নাম জানা যায়নি। এই সকল গল্পে গল্পের কথক শিবু, শিশির এবং গৌরের মতন বাহাত্তর নম্বর বনমালি নস্কর লেনের বাসিন্দা ছিলেন, শুধু এটুকু জানা গিয়েছিল। কিন্তু 'ধুলো' গল্পে প্রথম তার নাম জানা যায়। ঘনাদা এই গল্পে এই চরিত্রটিকে সুধীর নামে অভিহিত করেন।[৫] এরপর 'কাদা'[৬], 'ঘনাদার হিজ্ বিজ্ বিজ্'[৭], 'ঘনাদার চিঠিপত্র ও মৌ-কা-সা-বি-স'[৮] প্রভৃতি গল্পে তার নাম পাওয়া যায়।
সাহিত্যে
[সম্পাদনা]ছোট গল্প
[সম্পাদনা]১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ বা ১৩৫২ বঙ্গাব্দে কলকাতা হতে প্রকাশিত আলপনা নামক দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশনীর পূজাবার্ষিকীতে মশা গল্পে প্রেমেন্দ্র মিত্র ঘনাদা চরিত্রটিকে প্রথম উপস্থাপিত করেন। এরপর প্রতি বছর তিনি প্রতি দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশনীর পূজাবার্ষিকীতে একটি করে গল্প লিখতে থাকেন।
- মশা
- পোকা
- নুড়ি
- কাচ
- মাছ
- টুপি
- ছড়ি
- লাট্টু
- দাদা
- ফুটো
- দাঁত
- ঘড়ি
- হাঁস
- সুতো
- ঢিল
- ছুঁচ
- শিশি
- ঘনাদাকে ভোট দিন
- কেঁচো
- মাছি
- জল
- চোখ
- ছাতা
- ঘনাদা কুলপি খান না
- তেল
- ভাষা
- মাপ
- মাটি
- ধুলো
- মুলো
- টল
- নাচ
- কাদা
- কাঁটা
- গান
- কীচকবধে ঘনাদা
- পৃথিবী বাড়ল না কেন?
- ঘনাদার ধনুর্ভঙ্গ
- ঘনাদার ফুঁ
- ভারত যুদ্ধে পিঁপড়ে
- বেড়াজালে ঘনাদা
- কুরুক্ষেত্রে ঘনাদা
- খাণ্ডবদাহে ঘনাদা
- ঘনাদার হিজ্ বিজ্ বিজ্
- গুল-ই-ঘনাদা
- শান্তিপর্বে ঘনাদা
- ঘনাদার চিঠিপত্র ও মৌ-কা-সা-বি-স
- মৌ-কা-সা-বি-স ও ঘনাদা
- মৌ-কা-সা-বি-স থেকে রসোমালাই
- ঘনাদার শল্য সমাচার
- মৌ-কা-সা-বি-স -- একবচন না বহুবচন
- পরাশরে ঘনাদায়
- ঘনাদা ফিরলেন
- আঠারো নয় উনিশ
- ঘনাদার চিংড়ি বৃত্তান্ত
- ভেলা
- ঘনাদা এলেন
- হ্যালি-র বেচাল
- জয়দ্রথ বধে ঘনাদা
- রবিনসন ক্রুশো মেয়ে ছিলেন
- আগ্রা যখন টলমল
- দাস হলেন ঘনাদা
- ঘনাদার বাঘ
- মৌ-কা-সা-বি-স বনাম ঘনাদা
- কালোফুটো সাদাফুটো
উপন্যাস
[সম্পাদনা]ঘনাদাকে নিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র মোট চারটি উপন্যাস লিখেছেন। সেগুলি হল:
- তেল দেবেন ঘনাদা
- মঙ্গলগ্রহে ঘনাদা
- মান্ধাতার টোপ ও ঘনাদা
- সূর্য কাঁদলে সোনা
নাটিকা ও ছড়া
[সম্পাদনা]প্রেমেন্দ্র মিত্র 'পৃথিবী বাড়ল না কেন?' গল্প অবলম্বনে 'পৃথিবী যদি বাড়ত' নামে একটি নাটিকা রচনা করেন।[৯] এছাড়া তিনি 'ঘনার বচন' নামে চারটি ছড়া রচনা করেন।[১০]
কমিকস
[সম্পাদনা]জনপ্রিয় বাংলা বিজ্ঞান পত্রিকা কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান মশা, তেল, হাঁস, মাটি ও মঙ্গল গ্রহে ঘনাদা এই গল্প পাঁচখানি নিয়ে সাদা-কালো কমিকস প্রকাশ করেছে। এই সমস্ত কমিকসের চিত্রনাট্য অনিল কর্মকারের লেখা আর সাদাকালো ছবি এঁকেছেন গৌতম কর্মকার। এছাড়া আনন্দ পাবলিশার্সের জনপ্রিয় বাংলা শিশু কিশোর
রেডিও নাটক
[সম্পাদনা]ঘনাদার মশা এবং নুড়ি এই দুইটি গল্প নিয়ে রেডিওতে দুখানি শ্রুতিনাটক প্রযোজিত হয়েছে। এই দুইটি নাটকে প্রখ্যাত অভিনেতা শেখর চট্টোপাধ্যায় ঘনাদার চরিত্রে কন্ঠ-সংযোজনা করেছেন
চরিতাবলি
[সম্পাদনা]ঘনাদার অভিযান বা গুল্পগুলির মধ্যে আগমন ঘটে বহু বিচিত্র চরিত্রের। তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে নায়ক, খলনায়ক, সহযোগী; বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক, বিশ্ব-ইতিহাসের বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দেশনায়ক, যুদ্ধব্যাপারী, প্রমুখ। বাস্তব ও অতিবাস্তবের মধ্যে চলাচলের যোগসূত্র হিসেবে তাদের আগমন-নিস্ক্রমণ। আবার ঘনাদাকে নিছক প্যাঁচে ফেলবার জন্য চারমূর্তির কল্যাণে উপস্থিত হয় চারপাশের লোকজনের। তবে ঘনাদা ক্কচিত্ অসোয়াস্তিতে পড়লেও, পর্যদুস্ত হননা কখনই।
খলনায়ক
[সম্পাদনা]- নিশিমারা (মশা)
- জ্যাকব রথস্টাইন (পোকা)
- প্যাপেন (কাঁচ)
- বেনিটো (দাঁত)
- ব্রুল/মূলার (হাঁস)
- ডন বেনিটো (সুতো)
- স্যাভেজ (ঢিল)
- ইবন ফরিদ/সাবাটিনি (ছুঁচ)
- নাম-না-জানা বুড়ো (শিশি)
- সেভিল (ঘনাদাকে ভোট দিন)
- মিস্টার সিডনি (কেঁচো)
- সেনর ক্যাপেলা (মাছি)
- ফিংক (জল)
- চিং সুন (চোখ)
- বোথা (ছাতা)
- পেরীন (ঘনাদা কুলপি খাননা)
- ডুগান (তেল)
- কাউন্ট কার্নেরা (ভাষা)
- কেনি (মাটি)
- আহারা (নাচ)
- পামার (কাঁটা)
- মালাঞ্জা এমপালে (পৃথিবী বাড়ল না কেন?)
- লুই মার্ডেন (ঘনাদার ধনুর্ভঙ্গ)
- গাম্বো (ঘনাদার ফূঁ)
- কার্ল পাউলো (বেড়াজালে ঘনাদা)
- ডানি গাওয়ার (ঘনাদার হিজ্বিজ্বিজ্)
- বেসিল এসকল (গুল-ই ঘনাদা)
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- ↑ বিজ্ঞানভিত্তিক গল্প লেখার সময় একজন হিরোর দরকার পড়ল। বিদেসি সায়েন্স-ফিকশনের হিরোকে দেখা যায়, যেমন সে বিদ্যাদিগগজ তেমনই তার গায়ের জোর। আমি হিরো করলাম একজন সাধারণ অন্নভুক বাঙালিকে। সে কলকাতার মেসের ভাত খেয়ে এমন শক্তিমান যে তার মুখের জোরের ধারেকাছে কেউ দাঁড়াতে পারে না। পাঠকের কাছে ঘনাদা তাই এত ভালোবাসা পেয়েছে।[২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "টুপি"। ঘনাদা সমগ্র ১। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ৭৪-৮৭। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-৩৯৫-৩।
- ↑ কার্তিক মজুমদারের সঙ্গে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাক্ষাৎকার, আনন্দমেলা, ২৮শে মে, ১৯৮৩
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "মশা"। ঘনাদা সমগ্র ১। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ২১-২৯। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-৩৯৫-৩।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "নুড়ি"। ঘনাদা সমগ্র ১। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ৪৮১-৪৮৮। আইএসবিএন ৮১-৭২১৫-৩৯৫-৩।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "ধুলো"। ঘনাদা সমগ্র ২। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ২৩-৩৩। আইএসবিএন ৮১-৭৭৫৬-১০১-৪।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "কাদা"। ঘনাদা সমগ্র ২। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ৭৮-৯১। আইএসবিএন ৮১-৭৭৫৬-১০১-৪।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "ঘনাদার হিজ্ বিজ্ বিজ্"। ঘনাদা সমগ্র ২। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ২৩১-২৬০। আইএসবিএন ৮১-৭৭৫৬-১০১-৪।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "ঘনাদার চিঠিপত্র ও মৌ-কা-সা-বি-স"। ঘনাদা সমগ্র ২। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ২৮৭-২৯০। আইএসবিএন ৮১-৭৭৫৬-১০১-৪।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "পৃথিবী যদি বাড়ত"। ঘনাদা সমগ্র ২। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ৬২৭-৬৩৪। আইএসবিএন ৮১-৭৭৫৬-১০১-৪।
- ↑ প্রেমেন্দ্র মিত্র (২০১১)। "ঘনার বচন"। ঘনাদা সমগ্র ২। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। পৃ. ৬৩৭-৬৪০। আইএসবিএন ৮১-৭৭৫৬-১০১-৪।