গুয়ে বাবলা
গুয়ে বাবলা | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) |
গোষ্ঠী: | ট্র্যাকিওফাইট (Tracheophytes) |
ক্লেড: | সপুষ্পক উদ্ভিদ (অ্যাঞ্জিওস্পার্মস) |
ক্লেড: | ইউডিকটস |
গোষ্ঠী: | রোসিদস |
বর্গ: | Fabales |
পরিবার: | Fabaceae |
গোষ্ঠী: | Mimosoideae |
গণ: | Acacia |
প্রজাতি: | A. farnesiana |
দ্বিপদী নাম | |
Acacia farnesiana | |
Varieties (all currently disputed) | |
প্রতিশব্দ | |
|
গুয়ে বাবলা বা গুয়া বাবলা, বাবলা ফার্নেসিয়ানা নামেও পরিচিত (বৈজ্ঞানিক নাম: Vachellia farnesiana, পূর্বে Acacia farnesia আকাশিয়া ফার্নেসিয়ানা) হলো মিমোসা (Mimosaceae) পরিবারের এক প্রজাতির উদ্ভিদ।[১১][১২] সারা পৃথিবীতে এই ভেষজ উদ্ভিদের ৫৫০ টি প্রজাতি বর্তমান, তন্মধ্যে ভারতে বাইশটি প্রজাতি বিদ্যমান। এর ফুল সুগন্ধি শিল্পে ব্যবহৃত হয়। এই গাছ থেকে যে খদির (খয়ের) তৈরী হয়, তাকে বলা হয় বিট্ খদির। এটা পানের সঙ্গে খেলে ঠোঁট দুটি লাল হয় বটে, তবে মুখে আসে বিষ্ঠার গন্ধ। এমনকি গাছটির কাছে গেলেও বিষ্ঠার গন্ধ পাওয়া যায়। তাই বাংলায় এর প্রচলিত নাম গুয়ে বাবলা। গাছটির পাতা ও ছাল ঔষধার্থে ব্যবহৃত হয়।[১৩] কিন্তু গুয়ে বাবলার ফলে পাওয়া যায় প্রসিদ্ধ মাইমোসার (Mymosa) গন্ধ।
বিবরণ
[সম্পাদনা]অরিমেদ তথা গুয়ে বাবলা কাঁটাদার গাছ।[১৩] উদ্ভিদটি পরিসীমার কিছু অংশে পর্ণমোচী, [১৪]তবে বেশিরভাগ এলাকায় চিরহরিৎ। [১৫] এর কাণ্ড অত্যন্ত শক্ত কাষ্টাল। একাধিক কাণ্ড থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এটি ৪.৬-৯.১ মিটার (১৫-৩০ ফুট) উঁচু হতে দেখা যায় এবং দীর্ঘদিন বৃদ্ধি হয়। [১২] গাছটির বাকল বা ছাল ছাই রঙের বা সাদা ধূসর এবং ফাটা ফাটা। [১৬] প্রতিটি পাতার গোড়ায় শাখায় এক জোড়া কাঁটা থাকে। [১৭] পাতা খুব সরু, ১/২ ইঞ্চি (১.২৭ সেন্টিমিটার) লম্বা। গাছটির ফুল উজ্জ্বল পীতবর্ণের তথা হলুদ রঙের এবং সুগন্ধ যুক্ত। একটি বীজ শুঁটি যুক্ত গাঢ় বাদামী, রঙের ফল ২/৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। [১৩]
বিতরণ এবং বাসস্থান
[সম্পাদনা]আকাসিয়া (Acacia) প্রজাতির উদ্ভিদ সমগ্র পৃথিবীতেই পাওয়া যায়। ১৬২৫ খ্রিস্টাব্দে টোবিয়াস অ্যালডিনি নামক একজন ইউরোপিয়ান উদ্ভিদবিদ সান্টো ডোমিঙ্গো হতে সংগৃহীত বীজ হতে জন্মানো এক উদ্ভিদের বিবরণ উপস্থাপন করেন। সেটি ছিল ভ্যাচেলিয়া ফার্নেসিয়ানা প্রজাতির উদ্ভিদ। কিন্তু উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিতর্ক রয়ে যায়। উদ্ভিদের একটি প্রজাতির উৎপত্তিস্থল ক্যারিবিয়ান, গুয়ানাস, মেক্সিকোর এবং/অথবা মধ্য আমেরিকা মনে করা হলেও প্রজাতির বিশ্বব্যাপী বন্টনে বেশিরভাগ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকার বৃহৎ অংশ, দক্ষিণ ইউরোপ এবং দক্ষিণ এশিয়াও সংযুক্ত হয়। প্রাকৃতিক কারণে উদ্ভিদের বীজের ব্যাপ্তি ঘটিয়ে উদ্ভিদটির ৫৫০ রকমের প্রজাতি নিয়ে সেদিক থেকে সমগ্র বিশ্বই উদ্ভিদটির আবাসভূমিতে পরিণত হয়েছে। ভারতের উষ্ণাঞ্চল, বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য সহ আরবদেশে এটিকে পাওয়া যায়। ভারতে যে কয়েকটি প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায়, তার সংখ্যা বাইশ। [১৩] তবে উদ্ভিদটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ুতে সম্পূর্ণ সূর্যালোক পছন্দ করে।
বাস্তুতন্ত্র
[সম্পাদনা]হরিণ এবং পেক্কারি গুয়ে বাবলা গাছের ফল খায়, নানা পাখি গাছে বাসা বাঁধে, পোকামাকড় এর ফুলের মধু বা নির্যাস খায় এবং বিরক্ত হলে, এটি সহজেই ছড়িয়ে ফেলে। এটি শুষ্ক, লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মাটিতে জন্মায়। উদ্ভিদটি ইকো-সিস্টেমের তথা বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। গাছটির শক্ত কাঠ দিয়ে পূর্বে কৃষি সরঞ্জাম (যেমন, লাগল, ঢেঁকি, গরুর গাড়ি) তৈরি করা হত। ফল, আঠা ও বাকল ভেষজ কাজে আসে, তেমনই কৃষির উপকারের প্রাকৃতিক উপায়ে নাইট্রোজন সরবরাহ সম্ভব হয়। গাছের পাতা, ফুল ও ফল গবাদি পশুর সুষম পশুখাদ্য। তাদের উপযুক্ত চারণভূমি হিসাবেও বিবেচিত হয়।
ব্যবহারসমূহ
[সম্পাদনা]পারফিউম
[সম্পাদনা]গুয়ে বাবলার ফুল হতে পাতন প্রক্রিয়ায় 'ক্যাসি' নামের একটি সুগন্ধি তৈরি হয়। এটি ইউরোপের সুগন্ধি শিল্পে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। ভারতে 'ক্যাসি' থেকে সুগন্ধযুক্ত মলম তৈরি হয়। [১৮]
আঠা
[সম্পাদনা]গাছটির ছাল বা বাকল হতে আঠা নির্গত হলে তা সংগ্রহ করে নানা কাজে ব্যবহার করা হয়
ট্যানিং লেদার
[সম্পাদনা]উদ্ভিদের ছালে উচ্চমাত্রার ট্যানিন উপাদান থাকে।[১৮] এর বীজের শুঁটিতে ট্যানিনের ঘনত্ব প্রায় ২৩%। [১৮] সেকারণে উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ ট্যানিন সমৃদ্ধ হওয়ায় সেগুলি ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
খাদ্য
[সম্পাদনা]গাছের কচি পাতা, ফুল এবং বীজের শুঁটি কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয়
পশুখাদ্য এবং চারণভূমি
[সম্পাদনা]গুয়ে বাবলা গাছের পাতায় প্রোটিনের মাত্রা মোটামুটি ১৮ শতাংশ। সেকারণে এর পাতা মৌমাছিসহ নানা পোকামাকড়ের একটি উল্লেখযোগ্য খাদ্য।[১৮] এর বীজের শুঁটিও গবাদি পশুদের পছন্দের পশুখাদ্য।
রং এবং কালি
[সম্পাদনা]গাছের বাকল এবং ফল হতে কালো রঙ্গক ও কালি নিষ্কাশন করা যায়।
ঐতিহ্যগত ঔষধ
[সম্পাদনা]- অগ্নিমান্দ্যে— গুয়ে বাবলা গাছের ছাল ১০ গ্রাম একটু থেঁতো করে ৫/৬ কাপ জলে সিদ্ধ করতে হবে। দু'কাপ পরিমাণ থাকতে নামিয়ে ৪/৫ বার ২/৩ ঘন্টা অন্তর পান করলে অগ্নিমান্দ্যে উপশম হয়।
- ক্ষৌদ্র মেহে বা মধুমেহে— গুয়ে বাবলা কাঠের সার অংশের ৭/৮ গ্রাম (১২ গ্রাম পর্যন্ত) ভালভাবে থেঁতো করে আর লিটার জলে সিদ্ধ করতে হবে। দু'কাপ পরিমাণ থাকতে জলটি ছেঁকে ২/৩ বার পান করলে মধুমেহের উপশম হয়।
- রক্তপিত্তে— গুয়ে বাবলা গাছের টাটকা বা কাঁচা ফুল জলসহ থেঁতো করে ১৫/২০ ফোঁটা রস দুধসহ সেবন করলে ২/৩ দিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যায়। তবে কাঁচা বা টাটকা ফুল না পাওয়া গেলে, শুকনো ফুল চূর্ণ করে ২৫০ মিলিগ্রাম মাত্রায় অল্প মধু'র সঙ্গে মিশিয়ে সকালে ও বিকালে দু'বার দু'চার দিন খেলে রক্তস্রুতি বন্ধ হয়।
- স্বরভঙ্গে—গাছের ছালচূর্ণ দিয়ে ছোট ছোট গুলি তৈরি করে মুখে রেখে চুষলে স্বরভঙ্গ কমে যায়।
- আমরক্তে, অর্থাৎ আমরক্তযুক্ত অতিসার, পেট কুনিয়ে ব্যথাসহ আমরক্তযুক্ত মল নিঃসরণ হলে—গুয়ে বাবলা গাছের ছাল আন্দাজ ৩ গ্রাম (কাঁচা), শুকনো হলে এক গ্রাম এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে ছেঁকে সেই জলটা ২/৩ ঘন্টা অন্তর অল্প অল্প করে খেলে ২/৩ দিনে উপশম হয়।
- শ্বেত বা রক্তপ্রদরে—গুয়ে বাবলা গাছের ছাল কাঁচা হলে ৬ গ্রাম, শুকনো হলে ৩ গ্রাম এক কাপ গরম জলে ভিজিয়ে , ছেঁকে সেই জলটা সারা দিনে ৩/৪ বার পান করলে শ্বেত বা রক্তপ্রদরের উপশম হয়।[১৩]
- বাহ্য প্রয়োগ—
- ফোঁড়া হলে গাছের ছাল জলে বেটে গরম করে ফোঁড়ায় লাগালে ফোঁড়া বসে যায় নতুবা তাড়াতাড়ি পেকে যায়।
- এছাড়াও দাঁত দিয়ে রক্ত পড়লে গাছের ডাল দিয়ে দাঁতন হিসাবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। [১৩]
গ্যালারি
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Clarke
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;IPNI5
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ "Acacia pinetorum F.J.Herm. — The Plant List"। The Plant List (Version 1.1)। Royal Botanic Gardens, Kew and Missouri Botanical Garden। সেপ্টেম্বর ২০১৩। ১০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৮।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;IPNI2
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;IPNI6
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;IPNI3
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;IPNI4
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Acacia minuta ssp. densiflora (Alexander ex Small) Beauchamp"। ITIS Reports। Integrated Taxonomic Information System। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-৩০।
- ↑ "Acacia smallii"। LegumeWeb। International Legume Database & Information Service। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১৫।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;IPNI1
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Vachellia farnesiana" (ইংরেজি ভাষায়)। ন্যাচারাল রিসোর্সেস কনসারভেশন সার্ভিস প্ল্যান্টস ডেটাবেস। ইউএসডিএ।
- ↑ ক খ "Lady Bird Johnson Wildflower Center - The University of Texas at Austin"। www.wildflower.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৬-২৮।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ শিবকালী ভট্টাচার্য (১৯৮৪)। চিরঞ্জীব বনৌষধি (সপ্তম খণ্ড)। আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৪৯–১৫৪। আইএসবিএন 978-81-7066-612-7।
- ↑ PDF Ursula K. Schuch and Margaret Norem, Growth of Legume Tree Species Growing in the Southwestern United States, University of Arizona.
- ↑ "Discover Life - Fabaceae: Acacia farnesiana (L. ) Willd. - Cassie Flower, Vachellia farnesiana, Poponax farnesiana, Mimosa farnesiana, Ellington Curse, Klu, Sweet Acacia, Mimosa Bush, Huisache"। Pick5.pick.uga.edu। ২০১২-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-১৯।
- ↑ U.S. Department of the Army (২০১৯)। The Official U.S. Army Illustrated Guide to Edible Wild Plants। Guilford, CT: Lyons Press। পৃষ্ঠা 8। আইএসবিএন 978-1-4930-4039-1। ওসিএলসি 1043567121।
- ↑ "Sweet Acacia (Acacia farnesiana)"। Native Plants of South Texas। Texas AgriLife Research and Extension। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-৩০।
- ↑ ক খ গ ঘ Eshel, Amram। "Sweet Acacia, Needle bush Medicinal,introduce,allergenic"। Wildflowers of Israel। israelbiz- בניית אתרים। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৮।