গিলবার্ট এফ. হোয়াইট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গিলবার্ট এফ. হোয়াইট
জন্মনভেম্বর ২৬, ১৯১১
শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুঅক্টোবর ৫, ২০০৬
কলোরাডোর বোল্ডার, যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তাআমেরিকান
মাতৃশিক্ষায়তনশিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়
পুরস্কারচার্লস পি. ডালি মেডেল (১৯৭১)
টাইলার পুরস্কার (১৯৮৭)
ভলভো পরিবেশ পুরস্কার (১৯৯৫)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রভূগোল

গিলবার্ট ফাওলার হোয়াইট (ইংরাজী: Gilbert Fowler White) (নভেম্বর ২৬, ১৯১১ - অক্টোবর ৫, ২০০৬) ছিলেন একজন বিখ্যাত মার্কিনভূগোলবিদ। কখনও কখনও তিনি "প্লাবন সমতল ব্যবস্থাপনার জনক" এবং "বিংশ শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ ভূগোলবিদ" (ওয়েসকোট, ২০০৬) হিসাবে অভিহিত হন। হোয়াইট প্রাকৃতিক বিপত্তি, বিশেষ করে বন্যা এবং সমসাময়িক সমাজে সাউন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁর কাজের জন্য প্রধানত পরিচিত।

পটভূমি[সম্পাদনা]

হোয়াইট শিকাগোর হাইড পার্কে বেড়ে ওঠেন এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়-এ পড়াশুনার আগে তিনি ইয়মিংয়ের টঙ্গু নদী উপত্যকায় গ্রীষ্মকাল কাটান। যেখানে তিনি তাঁর বি.এস. ১৯৩২ সালে এবং তাঁর পিএইচডি ১৯৪২ সালে সম্পন্ন করেন (১৯৪৫ সালে প্রকাশিত)। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত তিনি হাভারফোর্ড কলেজ-এর সভাপতি ছিলেন। এরপরে তিনি ভূগোলের অধ্যাপক হিসাবে শিকাগোতে ফিরে আসেন এবং সেখানে তিনি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিষয়ক গবেষণার "শিকাগো স্কুল" এর কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালে তিনি কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়-এ চলে আসেন। এরও দশ বছর পরে তিনি সেখান থেকেই অবসর নেন। ১৯৩৫ সালে তঁর প্রথম পেপার প্রকাশিত হওয়ার পরেও, তিনি তাঁর গবষণাপত্র ৯০ এর দশকেও (ওয়েসকোট অ্যান্ড হোয়াইট, ২০০৩) নিয়মিত প্রকাশ করে গিয়েছেন।

হোয়াইট মানবতার পক্ষে উপকারী গবেষণা করার জন্য তাঁর কোয়াকার বিশ্বাসে খুব অনুপ্রাণিত ছিলেন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-এর সময় এক বিবেকবান ব্যক্তি হিসাবে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটির পক্ষে যুদ্ধের শরণার্থীদের সহায়তায় কাজ করেছিলেন। তখন সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বাডেন-বাডেনে নাৎসিরা তাঁকে অন্তরীণ করে রেখেছিল। তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময় ধরে বিভিন্ন কোয়াকার সেবা সংস্থায় নেতা হিসাবে কাজ করে গেছেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্য প্রাচ্যের বন্যা ও জলের নীতি সংস্কারের জন্য তিনি তাঁর গবেষণাকে কাজে লাগাতেও প্রচুরভাবে জড়িত ছিলেন।

১৯৪৪ সালে তিনি অ্যানি আন্ডারউডকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তান (উইল, মেরি এবং ফ্রান্সেস)। অ্যানি ১৯৮৯ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত গিলবার্টকে তাঁর গবেষণার কাজে যথেষ্ট সহযোগিতা করে গেছেন। অ্যানির মৃত্যুর পর গিলবার্ট ২০০৩ সালে ক্লেয়ার শেরিডানকে বিয়ে করেছিলেন।

পান্ডিত্যপূর্ণ অবদান[সম্পাদনা]

সমাজে এবং বিদ্যাবত্তায় গিলবার্ট এফ. হোয়াইটের প্রধান অবদান নিয়ে কেটস (২০১১) নিম্নলিখিত শ্রেণিবিন্যাস করেছেন:

  • মানবাধিকার হিসাবে কীভাবে বিশ্বের সমস্ত মানুষ নিরাপদে জল পেতে পারে
  • বিশ্বব্যাপী বিপজ্জনক মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা কীভাবে হ্রাস করা যায়
  • যৌথ জল উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে শান্তিতে সুবিধে লাভ করা যায়
  • কীভাবে ভূগোল (বিশেষত) এবং বিজ্ঞানকে (সাধারণভাবে) বিশ্বে আরও কার্যকর করা যায়
  • কীভাবে মানুষ প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান করতে পারবে এবং মজবুত বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হবে।

হোয়াইটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বন্যার জন্য সমন্বয় ব্যবস্থা চিহ্নিতকরণ এবং শ্রেণিবিন্যাস, প্রাকৃতিক বিপদের উপলব্ধি এবং প্রাকৃতিক বিপদ সমন্বয়ের বাছাই করতে পারার ব্যাপারটি জড়িত (হিনশাও, ২০০৬)। হোয়াইট বন্যার সাথে সমন্বয়গুলি চিহ্নিত করেছিল কাঠামোগত অথবা অ-কাঠামোগত ব'লে। তিনি ২০ ম শতাব্দীর গোড়ার দিকের নীতিতে আধিপত্যবাদী "কাঠামোগত" সমাধানগুলির (যেমন বাঁধ, লেভেল, এবং প্লাবন বাঁধ) পরিবর্তে বন্যার ঝুঁকির সাথে অভিযোজিত বা সমঝোতার ব্যবস্থা করার পক্ষে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইঞ্জিনিয়াররা বিকাশযুক্ত কাঠামোগত সমন্বয়ে বন্যার ঝুঁকিগুলিকে সংশোধন করার জন্য এমন ডিজাইন প্রস্তুত করেন যাতে মানুষ সুরক্ষিত থাকে এবং পর্যায়ক্রমে বন্যার (প্লাবনভূমির) অধীনে এমন অঞ্চলে বসবাস করতে পারে। হোয়াইটের অ-কাঠামোগত সামঞ্জস্যগুলি গঠিত ছিল প্লাবনভূমির ব্যবহারকে সীমাবদ্ধ করার জন্য পরিচালনা কমিটি (স্থানীয়, আঞ্চলিক, বা জাতীয়) দ্বারা আরোপিত ব্যবস্থাপনা অথবা বন্যার ঝুঁকির সাথে একটি নমনীয় মানবিক সামঞ্জস্য বিধান নিয়ে। এতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট বিনিয়োগ জড়িত থাকে না (টবিন এবং মন্টজ, ১৯৯৭))।

১৯৪৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়-এর ভূগোল বিভাগ দ্বারা প্রকাশিত "বন্যার প্রতি মানুষের সমন্বয়" শীর্ষক তাঁর প্রভাবশালী গবেষণামূলক প্রবন্ধে হোয়াইট যুক্তি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র-এ কাঠামোগত কাজগুলির কারণে প্রকৃতপক্ষে বন্যা হ্রাস করার পরিবর্তে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এই কাজে তাঁর বিখ্যাত যুক্তি দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন - "বন্যা ঈশ্বরের কাজ কিন্তু বন্যায় ক্ষতি অনেকাংশেই মানুষের কাজ"। একাধিক ভাষ্যকারের বিবেচনায় উত্তর আমেরিকার কোনও ভূগোলবিদের করা বিংশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষ্য এটি (হিনশাও ২০০৬, কেটস ২০০৭)। কাঠামোগত কাজে জনসাধারণের আস্থার কারণটি প্লাবনভূমি দখল করে নির্মাণ প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। নকশার মান অনেক সময় অনুপযুক্ত হয় এবং কখনও কখনও তা এমন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বিকাশ ঘটায় যে তার ফলে বন্যায় আরও খারাপ বিপর্য সৃষ্টি করে। কাঠামোগত কাজের প্রতি বিশ্বাসের প্রভাবের প্রাসঙ্গিক ও সাম্প্রতিকতম উদাহরণটি দেখা গেছে ২০০৫ সালের গ্রীষ্মে নিউ অরলিন্স-এর হারিকেন ক্যাটরিনার সময়ে। ঐতিহাসিকভাবে কমপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজের নকশাগুলি নির্দিষ্টকরণ নিয়ম মেনেই (যেমন, ১০০ বছরের বন্যা বা ১% বন্যা) প্রস্তুত করা হয়েছিল। উদাহরণে দেখা গেছে যেখানে নকশার নির্দিষ্টকরণগুলি অতিক্রম করে গেছে (১৫০ বছরের বন্যার ক্ষেত্রে ইত্যাদি) সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছে এবং তার ফলে অতিবিকশিত প্লাবনভূমিতে সেগুলিই বিপর্যয়কর ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে (হোয়াইট এট আল., ১৯৫৮)।

রাষ্ট্রপতি জনসনের অধীনে কমিটিসমূহে হোয়াইট কাজ করেছিলেন। কমিটি জাতীয় বন্যা বীমা কর্মসূচী প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু যখন তাঁর সাবধানতা অবহেলা করা হল এবং এনএফআইপি খুব তড়িঘড়ি চালু হয়ে গেল তখন তিনি তাতে খুশি হননি।

মানুষের শুষ্ক জমি দখল করে সেখানে স্থাপিত বসতিগুলির পরিচালন সমস্যাগুলির ক্ষেত্রেও হোয়াইট বড় অবদান রেখেছিলেন। তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের বিপদ নিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জল পরিচালন বিষয়ে বিভিন্ন কমিটির আসন অলংকৃত করেছিলেন। তিনি মধ্য প্রাচ্যে জল পরিচালনা বিরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বার্থরক্ষার তদারকিও করেছিলেন।

গিলবার্ট এফ. হোয়াইট তাঁর প্রাক্তন ছাত্র এবং সহকর্মী রবার্ট কেটস এবং ইয়ান বার্টন প্রমুখ সহ প্রাকৃতিক এবং প্রযুক্তিগত বিপর্যয় সংক্রান্ত বিষয়ে হয়ে উঠেছিলেন প্রভাবশালী পণ্ডিত ব্যক্তি।

স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

হোয়াইট তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য সম্মান পেয়েছেনঃ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "American Geographical Society Honorary Fellowships" (পিডিএফ)American Geographical Society। জুলাই ৪, ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২, ২০০৯ 
  2. "Public Welfare Award"National Academy of Sciences। জুন ৪, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১১