খাটওয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খাটওয়া নামটি ভারতের বিহারের অ্যাপ্লিক কাজকে বোঝায়। কাপড়ের ছোট ছোট টুকরো কেটে নকশা অনুযায়ী অন্য কাপড়ে সেলাই করে বসানোর সূচিশিল্পটির নাম খাটওয়া। খাটওয়া মূলত নকশাদার তাঁবু, চন্দ্রাতপ এবং শামিয়ানা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। নারীদের পোশাকে নকশার ক্ষেত্রেও এই শিল্পকর্ম ব্যবহৃত হয়। এই সামগ্রীটি বাণিজ্য সম্পর্কিত বৌদ্ধিক সম্পত্তি অধিকার (টি.আর.আই.পি.এস) চুক্তির ভৌগোলিক নির্দেশকের আওতায় সুরক্ষার জন্য নিবন্ধিত হয়েছে।[১][২]

খাটওয়া কি[সম্পাদনা]

গ্রামের কারিগরদের জীবন সম্পর্কে বিবরণ তৈরি করতে একটি কৌশল হিসাবে খাটওয়া ব্যবহৃত হত এবং বিশেষত দেওয়াল সজ্জা, কুশন এবং বিছানা তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই পণ্যগুলি গ্রামের বাইরে স্থানীয় হাটে প্রদর্শনী হিসাবে সাজানো এবং বিক্রি হত। এই কারিগরদের অনেক আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল এবং আশেপাশের গ্রামগুলিতে আগ্রহী মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই শিল্পের অনুশীলনটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।[৩]

পদ্ধতি[সম্পাদনা]

বয়নশিল্পে, অ্যাপ্লিকের কাজ ও প্যাচ কাজে কখনও কখনও বিভ্রান্তি আনে। যদিও উভয় কৌশলেই পুরানো কাপড়ের টুকরো পুনর্ব্যবহার করে সেলাই করা হয়, তবুও তারা যথেষ্টই স্বতন্ত্র। প্যাচ কাজে বিভিন্ন কাপড় একসাথে সেলাই করে একটি একক বয়নসংক্রান্ত নকশা তৈরি করাকে বোঝায়। অন্যদিকে, অ্যাপ্লিক বলতে বিভিন্ন রঙিন কাপড় এবং আনুষঙ্গিক,- যেমন ছোট বৃত্তাকার আয়না ব্যবহার করে কাজকে বোঝায়। বিভিন্ন ধরনের সেলাই ব্যবহার করে একটি ছোট কাপড় অন্য একটি বড় কাপড়ের ওপর বসিয়ে বিস্তৃত নকশা তৈরি করাই হল অ্যাপ্লিক। অ্যাপ্লিক সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত কাপড়ের ধরনের কোনও বিধিনিষেধ নেই, এবং এমনকি বিভিন্ন গঠনবিন্যাসেরও হতে পারে। এটি প্রায়শই সূচিকর্মের সাথে পাওয়া যায় এবং দুটি কৌশলে এটি উপ-বিভক্ত হতে পারে। খুব সহজ কৌশলটিতে বিভিন্ন আকার এবং মাপের বিভিন্ন উপকরণগুলি খুব বেশি প্রস্তুতি ছাড়াই একসাথে সেলাই করা হয়। আরও জটিল কৌশলের ক্ষেত্রে উপকরণগুলি দিয়ে কোনও কাজ করার আগে নকশার পুরো পরিকল্পনা করে নিতে হয়।[৪] খাটওয়ার আরেকটি শৈলী হল অ্যাপ্লিক এর বিপরীত একধরনের রূপ, যাতে উপরের কাপড় থেকে নকশাগুলি কেটে নেওয়া হয় এবং তারপরে আলাদা রঙের প্রেক্ষাপটের কাপড়ের উপর সেলাই করে কাট আউট ডিজাইনগুলি নজরে আনা হয়। এগুলি প্রায়শই সূচিকর্মযুক্ত হয়।[৫] অ্যাপ্লিকে রেখাগত উপাদান হিসাবে কখনো সোজা এবং চেন সেলাই ব্যবহার করা হয়।[৬]

অনন্যতা[সম্পাদনা]

পুরানো প্রতীক, চিত্র, পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তিগুলি এখন আবার প্রদর্শিত হচ্ছে এই কারুশিল্পী মহিলাদের কাজে। নতুন ভিজ্যুয়াল ফর্মগুলিতে শিল্পীদের প্রকৃতির এবং চারপাশের সমসাময়িক জীবনের ছাপগুলি যেমন না্টক, সিনেমা, পাঠ্যপুস্তকের চিত্রগুলি এবং ক্যালেন্ডার ইত্যদির পর্যবেক্ষণ থেকে একত্রিত হয়েছে। এগুলি কপি করা হয়নি তবে নিজস্ব সমসাময়িক অস্তিত্ব থেকে খাটোয়া শিল্পী দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। সমসাময়িক জনপ্রিয় সংস্কৃতি উপর সচিত্র আখ্যান হিসাবে আরও লোকেরা, এই শিল্পকর্মগুলিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।[৭]

খাটওয়া শিল্পী[সম্পাদনা]

খাটওয়া মূলত নকশাদার তাঁবু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বা কার্যে তাঁবু তৈরি করার সময় একটি মোটা কাপড় এবং জ্যামিতিক নিদর্শন ব্যবহৃত হয়। এই জাতীয় তাঁবু তৈরির ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই কাজ করে। পুরুষেরা কাপড় কেটে দেয়, মহিলারা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করে নকশা অনুযায়ী সেগুলি সেলাই করে। নারীদের পোশাকে নকশার ক্ষেত্রেও এই শিল্পকর্ম ব্যবহৃত হয়। এখানেই বিহারের কাজের আসল প্রতিভা দেখা যায়। তৈরি করা নকশাগুলি আরও তীক্ষ্ণ, জটিল এবং অত্যন্ত আকর্ষক। বেশিরভাগ পোশাকের দোকানগুলি এই অত্যন্ত শৈল্পিক পোশাক বিক্রি করে। বিহারের কয়েকটি গ্রামের মানুষ কেবল শিল্পকর্মেই জড়িত থাকে এবং এটি তাদের আয়ের প্রধান উৎস। যেহেতু একই দক্ষতা বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয়, দক্ষতা এবং অভিনবত্বগুলি নিখুঁত। মনে করা হয় যে অ্যাপ্লিক কাজটি মধ্যপ্রাচ্যের ইউরোপ বা আরব থেকে বাণিজ্য যোগাযোগের মাধ্যমে পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করেছে।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Geographical Indication (GI) Tags in India: Memorize Faster"। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২১ 
  2. "State-wise List of GI Tagged Products in India"। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২১ 
  3. "Everything you need to know about the appliqué craft of Bihar, khatwa"। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২১ 
  4. "Why is Indian Applique so Exquisite?"। ২৭ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২১ 
  5. https://quiltersguild.blog/2020/09/23/contemporary-khatwa-from-bihar/
  6. https://www.dnaindia.com/lifestyle/report-chandra-bhushan-kumar-s-tree-of-life-based-art-1597412
  7. http://www.handicrafts.gov.in/CmsUpload/11422017114216applique.pdf
  8. "Printing Techniques Of Fabrics: Kalamkari, Tie And Dye, Batik And Embroidery"। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২১