খাগড়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খাগড়া
Common Mime
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Papilionidae
গণ: Papilio
প্রজাতি: P. clytia
দ্বিপদী নাম
Papilio clytia
প্রতিশব্দ
  • Chilasa clytia

খাগড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Papilio clytia(Linnaeus))[১] এক প্রজাতির বড় আকারের প্রজাপতি, যার শরীর ও ডানা মূখ্যত কালচে খয়েরি অথবা কালোর উপর সাদা দাগ এবং ডোরা যুক্ত। এরা ‘প্যাপিলিওনিডি’ পরিবারের এবং 'প্যাপিলিওনিনি' উপগোত্রের সদস্য।[২]

আকার[সম্পাদনা]

খাগড়া এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৯০-১২০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[২]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

ভারতে প্রাপ্ত খাগড়া এর উপপ্রজাতি হল- [৩]

  • Papilio clytia clytia Linnaeus, 1758 – Oriental Common Mime
  • Papilio clytia flavolimbatus Oberthür, 1879 – Andaman Common Mime

বিস্তার[সম্পাদনা]

খাগড়াদের সমগ্র ভারত এই দেখা যায়।[৪]এছাড়া পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা এর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়।[৫]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

clytia রূপঃ- স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই, ডানার উপরিতল আকর্ষনীয় ভাবে ঘন কালচে বাদামী এবং তাতে ক্রীম রঙা দাগ-ছোপ যুক্ত। সামনের ডানার উপরিতলে একসারি টার্মিনাল ছোপ এনং শিরামধ্যে অবস্থিত একসারি অর্ধচন্দ্রাকৃতি সাব টার্মিনাল ছোপ বর্তমান। পিছনের ডানার উপরিপৃষ্ঠে, তীরের মাথার মত দেখতে লম্বাটে ডিসকাল দাগের সারি এবং অর্ধচন্দ্রাকৃতি সাব-টার্মিনাল ছোপের সারি দেখা যায়। এছাড়াও টার্মেনে শিরার মধ্যবর্তী অংশে সরু হলুদ অথবা সাদা প্রান্তরেখা এবং হলুদ টর্নাল ছোপ বিদ্যমান।

ডানার নিম্নতল উপরিতলের অনুরূপ, তবে পিছনের ডানায় প্রতি শিরামধ্যে বড় হলুদ টার্মিনাল ছোপের সারি চোখে পড়ে।[৬][৭]

dissimilis রূপঃ- স্ত্রী-পুরুষ উভয় প্রকারেই, ডানার উপরিতলের মূল রঙ কালো এবং ডানাটি ক্রীম রঙের বিভিন্ন আকার আকৃতির ছোট, বড়, সরু এবং চওড়া দাগ ছোপের দ্বারা আকর্ষনীয় ভাবে চিত্রিত। সামনের ডানার উপরিতলে সেল এর মধ্যে চারটি সরু লম্বা দাগ ডানার বেস অথবা গোড়ায় গিয়ে মিশেছে এবং সেল এর প্রান্তভাগে ৪টি ছোপ বর্তমান। পিছনের ডানার উপরিপৃষ্ঠে সেল ক্রীম রঙা এবং মধ্যভাগে লম্বাভাবে একটি সরু কালো রেখা যুক্ত। লম্বা এবং সামান্য চওড়া ডিসকাল দাগের সারি বর্তমান এবং দাগগুলির বহিপ্রান্ত খাঁজ কাটা। শিরামধ্যে অবস্থিত সাব-টার্মিনাল ছোপের সারিতে ছোপগুলি তীরের মাথার ন্যায় দেখতে। টার্মেনে শিরামধ্যে সরু সাদা অথবা হলুদ প্রান্তরেখা লক্ষ্য করা যায়।

ডানার নিম্নতল উপরিতলের অনুরূপ। পিছনের ডানায় প্রতি শিরামধ্যে বড় হলুদ টার্মিনাল ছোপ এর সারি দেখা যায়।[৬][৭]

আচরণ[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির উড়ান দ্রুত অথবা শক্তিশালী নয়, বরং মিল্কউইড প্রজাতির প্রজাপতিদের মত ডানা ভাসিয়ে ওড়ে এবং মাঝেমধ্যে হালকা ডানা ঝাপটিয়ে চলে। তবে সচকিত হলে হটাৎ গতি বাড়িয়ে তীরের বেগে উড়ে যায়। গ্রীষ্ণকালে এদের দলবদ্ধ ভাবে মাডপাডল করতে দেখা যায়।[৮] এরা ফুলে বসে মধুপান করতে দেখা যায়। মূলত নীচু উচ্চতাসম্পন্ন অঞ্চলে এবং সমতলে বনাঞ্চল ও ঝোপঝাড় পূর্ন পরিবেশে এদের দর্শন মেলে। হিমালয়ের পাহাড়ে ২৫০০ মিটার এবং দক্ষিন ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে ৯০০ মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় এদের বিচরন চোখে পড়ে। উক্ত উচ্চতায় বনাঞ্চল এদের প্রিয় বাসভূমি।[৯] দক্ষিন ভারতে অনুকূল পরিবেশে বর্ষার পূর্বে এবং বর্ষায় এদের অধিকতর সংখ্যায় দেখা যায়। উত্তর ভারতে প্রাক্‌ বর্ষা এবং বর্ষার পরে এদের বিচরন লক্ষ্য করা যায়।[২]

এই প্রজাতির দুটি রূপ- clytia এবং dissimilisclytia রূপটি ডানার গঠন এবং ওড়ার ভঙ্গিতে কাওয়া এবং dissimilis রূপ একই ভাবে Blue Glassy Tigerকে নকল করে। বিশেষত ফুলে বসার সময় অথবা ভিজে ছোপ এবং পাতার উপর পাক খেয়ে বেরনোর সময় উক্ত প্রজাতিগুলির ওড়ার ভঙ্গিমা অবিকল একইরকম।[১০]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ডিম[সম্পাদনা]

ডিম গোলাকার, চকচকে এবং হলদে-কমলা বর্নের হয়। স্ত্রী খাগড়া কচি পাতা অথবা পাতার মুকুলে ডিম পাড়ে।[১০]

শূককীট[সম্পাদনা]

প্রথম অবস্থায় শূককীট কালচে ঘন সবুজ বর্নের হয়। পরবর্তী দশাতে ধীরে ধীরে রঙ বদলাতে থাকে। কালো অথবা কালচে খয়রি শরীরের অপর, পাশ এবং পিঠের দিকে অনিয়ত আকারের তিন-চারটি লম্বাটে হলুদ পটি দেখা যায়। সারা গায়ে মাংসল কাঁটা লক্ষ্য করা যায়। কাঁটার গোড়ায় উজ্জ্বল লাল বৃত্ত, ডগাগুলি কালো বর্নের।[১০] ওসমেটেরিয়াম হালকা নীল বর্নের হয়।[১১]

আহার্য উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

এই শূককীট Lauraceae পরিবারের উদ্ভিদ যেমন- Alseodaphne semecarpifolia, Cinnamomum camphora, Cinnamonum macrocarpum, Cinnamomum verum, Litsea chinensis,[১০] Litsea deccansis, Tetranthera apetala গাছের কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে।[৬]

মূককীট[সম্পাদনা]

জীবনচক্রের চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ১৫। 
  2. Isaac, Kehimkar (২০০৮)। The book of Indian Butterflies (1st সংস্করণ)। New Delhi: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 126। আইএসবিএন 978 019569620 2 
  3. "Papilio clytia Linnaeus, 1758 - Common Mime"Butterflies of India। সংগ্রহের তারিখ 5 Juy 2022  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. Nihlani, Gaurav; M.K.Bharos, Arun; Bharos, Akhilesh (২০১৯)। A Pictorial guide Butterflies of Bhoramdev Wildlife Sanctuary Chhattisgarh (1 সংস্করণ)। Raipur: State Biodiversity Board, State Forest Depertment Chhattisgarh। পৃষ্ঠা 49। আইএসবিএন 978-81-953898-4-1 
  5. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 159–160। আইএসবিএন 9789384678012 
  6. Bingham, C.T. (১৯০৭)। The Fauna of British India, Including Ceylon and BurmaII (1st সংস্করণ)। London: Taylor and Francis, Ltd.। পৃষ্ঠা 75–78। 
  7. Wynter-Blyth, Mark Alexander (১৯৫৭)। Butterflies of the Indian Region। Bombay, India: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 381। আইএসবিএন 978-8170192329 
  8. Baidya, Sarika; Karmakar, Tarun; Roychaudhury, Devsena (২০১৯)। Butterflies of Buxa Tiger Reserve (1 সংস্করণ)। Kolkata: Buxa Tiger Conservation Foundation Trust Wildlife Wing, Directorate of Forests, Goverment of West Bengal। পৃষ্ঠা 8। আইএসবিএন 978-93-81493-75-5 
  9. Kunte, Krushnamegh (২০১৩)। Butterflies of The Garo Hills। Dehradun: Samrakshan Trust, Titli Trust and Indian Foundation of Butterflies। পৃষ্ঠা 145। 
  10. দাশগুপ্ত, যুধাজিৎ (২০০৬)। পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপ্রতি (১ম সংস্করণ সংস্করণ)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা ৪৫। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  11. Moore, Frederic (১৯০৩–১৯০৫)। Lepidoptera Indica. Vol. VI। London: Lovell Reeve and Co.। পৃষ্ঠা 82–93। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]