খস (প্রাচীন জাতি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খস ( দেবনাগরী : खश ; Khaśa ) ছিল একটি প্রাচীন ইন্দো-আর্য উপজাতি। এছাড়াও উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশের হিমালয় অঞ্চলের একটি শেষ জনপদ রাজ্য [১] -এর নাম ছিল খস। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভারতীয় শিলালিপি এবং প্রাচীন ভারতীয় হিন্দু ও তিব্বতি সাহিত্যে এর উল্লেখ করা হয়েছে। তৎকালীন ইউরোপীয় নথিগুলিতে উত্তর-পশ্চিম হিমালয়ে বসবাসকারী খস উপজাতির বর্ণনা করা হয়েছে। রোমান ভূগোলবিদ প্লিনি দ্য এল্ডার "খস"দের বিশেষ ভারতীয় মানুষ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[২] মহাভারত অনুসারে তারা গান্ধার, ত্রিগর্তা এবং মদ্র রাজ্যের আশেপাশে বাস করত বলে জানা গেছে।

খস উপজাতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মধ্যযুগীয় পশ্চিম নেপালের খস জনগোষ্ঠী, ভারতীয় গাড়ওয়াল অঞ্চল এবং কুমায়ুনে বসবাসকারী মধ্যযুগীয় এক বিশেষ জনগোষ্ঠী, কাংড়া, হিমাচল এবং গাড়োয়ালের কানেট জনগোষ্ঠী, জৌনসার-বাওয়ারের বসবাস্কারী খস জনগোষ্ঠী ইত্যাদি। পাশাপাশি কাশ্মীরের খাখা রাজপুত এবং বোম্বা গোষ্ঠীও খস উপজাতির অন্তর্ভুক্ত। উত্তর পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে খস জনগোষ্ঠীর শাখা দেখা যায়।

সংস্কৃত সাহিত্যে খশ শব্দটির উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায় ( সংস্কৃত : खश)। সম্ভবত যেখান থেকে এই জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন নামকরণ হয়েছে, যেমন খস (खस), খাস (खष) এবং খাশিরা (खशीर)। [৩] [৪]

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুদামা মিশ্র পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, খস জনপদ ছিল প্রাচীন ভারতীয় লৌহ যুগের পার্বত্য আর্যাবর্ত অর্থাৎ হিমালয় বেষ্টিত আর্যাবর্ত‌ -এর বিস্তৃত বিভাগের অন্তর্গত একটি সীমান্তবর্তী জনপদ। প্রায় ১১০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বিস্তৃত সময়কালে এর অস্তিত্ব ছিল বলে জানা যায়।[১]

ব্রাহ্মণ-এর পবিত্র আচার-অনুষ্ঠান বর্জন করা এবং অবহেলার কারণে মনুস্মৃতি খস উপজাতির লোকেদের পূর্ব ক্ষত্রিয় হিসেবে উল্লেখ করেছে।[৫]

ভাগবত পুরাণ বিভিন্ন বিতাড়িত উপজাতির একটি তালিকা দেওয়া আছে যাদের মধ্যে খসরাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এও জানা গেছে যে খসরা বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করে পুনরুদ্ধার পান।[৩] মহাভারতে খসদের উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী একটি উপজাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহাভারতের উল্লেখ অনুযায়ী খসরা সাত্যকির বিরুদ্ধে কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিল।[৬] মহাভারতের কর্ণ পর্বে, আরাট এবং ভাসাতির মধ্যবর্তী পাঞ্জাব অঞ্চলে খসদের বসবাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Misra 1973
  2. Grierson 1916
  3. Thakur 1990
  4. Saksena 2019
  5. www.wisdomlib.org (২০১৬-১২-২৯)। "Manusmriti Verse 10.44"www.wisdomlib.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৪ 
  6. Saklani 1998