কালুপোল রাজার ভিটা

স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৩′৩০.২৯″ উত্তর ৮৮°৫৪′৫৫.০৫″ পূর্ব / ২৩.৫৫৮৪১৩৯° উত্তর ৮৮.৯১৫২৯১৭° পূর্ব / 23.5584139; 88.9152917
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কালুপোল রাজার ভিটা
স্থানাঙ্ক২৩°৩৩′৩০.২৯″ উত্তর ৮৮°৫৪′৫৫.০৫″ পূর্ব / ২৩.৫৫৮৪১৩৯° উত্তর ৮৮.৯১৫২৯১৭° পূর্ব / 23.5584139; 88.9152917[১]
নির্মিতপঞ্চদশ শতক[ক]
মালিকবাংলাদেশ সরকার

কালুপোল রাজার ভিটা একটি প্রত্নঢিবি বা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের কালুপোল গ্রামে ১.০৮ একর[খ][৩] জমির উপর অবস্থিত। স্থানটি রাজা গন্ধর্ব রায় নামক এক রাজার প্রাসাদ বা ভিটা ছিল।[গ] স্থানীয়দের কাছে এটি রাজার ভিটা নামে সুপরিচিত।[১][২]

আবিষ্কার ও উৎখননের ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০১৫-১৬ খ্রিষ্টাব্দে চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ ও প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই সময় কালুপোল গ্রামের রাজার ভিটা নামে একটি প্রত্নঢিবি আবিষ্কৃত হয়। প্রারম্ভিক অনুসন্ধান কার্যক্রমে ঢিবির নিচে পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় এবং প্রতীয়মান হয় এটি সুলতানী আমলের বিলুপ্ত একটি স্থাপনা। প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের সময়কালে ঢিবির শীর্ষে খানজাহান আলীর স্থাপত্য নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা ইটের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ কয়েকটি বর্গাকৃতির লাল পোড়া টালি ইট পাওয়া গেছে। ইটের পরিমাপ ও নির্মাণ উপকরণ বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হয়, ঢিবির পাদদেশে অবস্থিত অনেক বিলুপ্ত পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এগুলো খানজাহান আলী এর সমসাময়িক অর্থাৎ সুলতানী শাসনামলের বলে অনুমিত।[১][৪]

প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে চিত্রা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থানটির প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের ১২ জন কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি খনন দল গঠিত হয়।[৫] এই খনন দল ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে পরীক্ষামূলক প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম চুয়াডাঙ্গার কালুপোল রাজার ভিটায় পরিচালনা করে। ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপত্যিক অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বস্তু এই প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া সম্ভব হয়েছে। পরবর্তীতে আবার ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ খ্রিষ্টাব্দেও প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্যক্রমে দুইটি নির্মাণ পর্বের ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হয়। তাদের মধ্যে কতগুলো- কর্ণার, সংযোগ দেয়াল, ইমারতের দেয়াল প্রভৃতি। এইসকল প্রত্নবস্তু ও স্থাপত্যের সাথে শহর খলিফাতাবাদ[ঘ] এবং শহর মুহাম্মাদাবাদ[ঙ] এর প্রত্নবস্তুগুলোর সাথে সাদৃশ্য রয়েছে।[১][৪]

প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শন[সম্পাদনা]

কালুপোল রাজার ভিটা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রত্নবস্তুর মধ্যে রয়েছে- ফুল লতাপাতার নকশাঙ্কিত পোড়ামাটির ইট, স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, লৌহ নির্মিত বস্তু, পোড়ামাটির বল, পোড়ামাটির চুড়ির ভাঙ্গা অংশ, পোড়ামাটির খেলনা, পোড়ামাটির গুটিকা, হরিণের শিং প্রভৃতি।[৬][৭][৮] এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মৃৎপাত্র ও আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে- লালচে রঙের বদনার নল, নীল গ্লেইজড ওয়্যার, লালচে রঙের তৈল প্রদীপ, সাধারণ মানের ঘট, পানি খাওয়ার পাত্র, থালা, বাটি, হাড়ি কড়াই, ঢাকনা, কলস প্রভৃতি।[৭][৯] এছাড়াও বেশকিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এইগুলো প্রাক-মুসলিম পর্বের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হতে পারে।[১]

পরিচালনা[সম্পাদনা]

এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হওয়ায় এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে।[১০]

জাদুঘর[সম্পাদনা]

এখানে একটি জাদুঘর আছে। একজন ব্যক্তি এটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন। বর্তমানে এই জাদুঘরের অবস্থা শোচনীয়।[৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. জনশ্রুতি থেকে জানা গেছে, ‘মালেক উল গাউচ’ নামক প্রখ্যাত ব্যক্তি, যার সাথে যুদ্ধ করে গন্ধর্ব রায় নিহত হয়েছিলেন, খানজাহান আলীর অনুসারী ও ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। সেজন্য অনুমান করা হয় রাজা গন্ধর্ব রায় সম্ভবত পঞ্চদশ শতকে খানজাহান আলীর সমসাময়িক সময়ের রাজা ছিলেন এবং এই প্রাসাদ বা ভিটাটি সেই সময়কালে তৈরি করা হয়েছিল।[১][২]
  2. প্রদত্ত তথ্যসূত্রে প্রাপ্ত জমি পরিমাণ শতক থেকে একরে রূপান্তর করা হয়েছে।
  3. চুয়াডাঙ্গার কোনো আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থে এই স্থানটির ইতিহাস সম্পর্কিত কোন তথ্য বিদ্যমান নেই। তবে এটি প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে এই তথ্য জানা গেছে। প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে আরও জানা যায় যে, রাজা গন্ধর্ব রায়ের সঙ্গে ‘মালেক উল গাউচ’ যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে রাজা গন্ধর্ব রায় পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন।[২]
  4. বর্তমান নাম বাগেরহাট।[২]
  5. বর্তমান নাম বারবাজার।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনা বিভাগ"archaeology.khulnadiv.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৬-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  2. "বিলুপ্তির পথে চুয়াডাঙ্গার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন"dhakamail.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  3. "চুয়াডাঙ্গার কালুপোল ঐতিহাসিক রাজার ভিটার নিদর্শন আবিষ্কারের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে – দৈনিক মাথাভাঙ্গা"old.mathabhanga.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  4. নিউজ, সময়। "রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন | বাংলাদেশ"Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  5. "চুয়াডাঙ্গায় রাজার ভিটায় মিললো প্রাচীন নিদর্শন"জাগো নিউজ২৪ 
  6. "চুয়াডাঙ্গায় রাজার ভিটায় মিলছে প্রাচীন নিদর্শন"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  7. প্রতিবেদন, সমীকরণ (২০১৭-০৪-২৮)। "কালুপোলে রাজার ভিটা পরিদর্শনকালে এমপি টগর : রাজার ভিটায় যাওয়ার রাস্তাটি পিচ করা হবে | Daily Somoyer Somikoron" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  8. shomoyBD। "কালুপোল গন্ধর্ব রায় রাজার ভিটা সুলতানি আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন"সময়বিডি - shomoybd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  9. "ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক জনপদ চুয়াডাঙ্গা"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২৯ 
  10. "খুলনা বিভাগের সংরক্ষিত ঘোষিত পুরাকীর্তির তালিকা - প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর" (পিডিএফ)khulnadiv.gov.bd