কাঁটা চামচ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিভিন্ন ধরনের কাঁটা চামচ. ছবির বাঁ থেকে ডেজার্ট ফর্ক, রেলিশ ফর্ক, সালাদ ফর্ক, ডিনার ফর্ক, আইসক্রীম ফর্ক, পরিবেশনার কাঁটা চামচ, খোদাই করার কাঁটা চামচ.

কাঁটা চামচ হলো এক ধরনের রান্না সামগ্রী যার এক পাশে হাতল এবং আরেক পাশে[১] কিছু সরু কাঁটার মত দন্ড থাকে। সাধারণত পাশ্চাত্য বিশ্বে কাঁটা চামচের উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এশিয়া জুড়েও এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চাইনিজরা আগের মত চপস্টিকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। খাদ্যকে মুখের কাছে নিয়ে যেতে অথবা খাদ্যকে প্লেটে ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে কাঁটতে ব্যবহৃত হয়। কাঁটা চামচের মাথার কাঁটা গুলো ব্যবহারের সুবিধার জন্য একটু বাকানো থাকে। কাঁটা চামচের মাথা সাধারণত ত্রিশূলের মত হয়।

কাটা চামচ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে বাসাবাড়িতে খাওয়ার জন্য নরমাল কাটা চামচ ব্যবহার করা হয়। তবে বিশেষ বিশেষ খাবার খাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা ধরনের কাটা চামচ ব্যবহার করা হয়। চাইনিজ খাওয়ার জন্য এক ধরনের নকশা করা কাটা চামচ ব্যবহার করা হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের সময় বড় সাইজের এক ধরনের ধরালো কাটা চামচ ব্যবহার করা হয় যাতে সহজেই খাদ্য পরিবেশন করা সম্ভব হয়।

শুধু তাই নয়, চমৎকার এবং নকশাতেও রয়েছে বিভিন্ন রকম ধরন। চামচ গুলোর হাতলে অবার সুন্দর সুন্দর নকশা করা হয়ে থাকে যাতে সেগুলো আকর্ষণীয় দেখায়‌। কখনো আবার সেগুলোর উপর বিভিন্ন রকম প্রতিফলক দিয়ে মোড়ানো থাকে যাতে সেগুলো চকচক করে।

সাধারণত বাংলাদেশের শহরের রেস্তোরায়, হোটেলে কিংবা বড় কোন বিয়ের আয়োজনে কাটা চামচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের গ্রাম কিংবা বাসাবাড়িতে কিংবা শহরের পরিবারগুলোর মধ্যে হাত দিয়ে খাবার খাওয়ার চল এখনও রয়েছে। মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে মানুষ হাত দিয়ে খেয়ে থাকে। তবে উচ্চবিত্ত সম্পন্ন ধনী পরিবারের মানুষরা সাধারণত কাটা চামচের সাহায্যে খেয়ে থাকে।

ত্যশাস প্রতিষ্ঠানে কাটা চামচ দিয়ে খাওয়া কে নিয়ম বলে গণ্য করা হয়।


ইতিহাস[সম্পাদনা]

মানব সভ্যতা উৎপত্তি থেকেই চামচ ব্যবহার করা হতো । যদিও তখনকার চামচগুলো ছিল ঝিনুক আর পাথরের তৈরি। হাতল লাগানো চামচের প্রথম ব্যবহার হয় ১০০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে, মিশরে। তখন শুধুমাত্র ধর্মীয় কাজকর্মে চামচ ব্যবহার করা হতো। এগুলো তৈরি হতো হাতির দাঁত, কাঠ, চুমকি পাথর ও স্লেট পাথর দিয়ে।[২]

প্রাচীণকাল থেকেই খাবার তোলার সুবিধার্থে কাঁটার ব্যবহার ছিল। তবে কাঁটা ওয়ালা চামচ বা কাঁটা চামচের ব্যবহার প্রথম শুরু হয় প্রাচীন মিশরে। কুইজিয়া (Qijia) সংস্কৃতিতে কাঁটা চামচ ব্যবহার হতো। এর পরবর্তীকালে প্রায় কয়েক হাজার বছর পর পাশ্চাত্যে কাঁটা চামচ জনপ্রিয়তা লাভ করে।[৩][৪] জানা যায়, একাদশ শতাব্দীতে বায়জান্টাইন রাজকুমারী.[৫][৬] থিওডোরা আন্না দৌকাইনা (Theodora Anna Doukaina) এর বিয়ের যৌতুক হিসেবে স্বর্ণের তৈরি কাঁটা চামচ নিয়ে এসেছিলেন বর। কিন্তু সেই দেশের জনগণ বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারেনি। ঈশ্বরের দেওয়া হাত ব্যবহার না করে চামচ ব্যবহার করে খাওয়াকে[২][৭] ঈশ্বরের অপমান হিসেবে নিয়েছিল তারা। মূলত ১৬ শতাব্দীর দিকে কাঁটা চামচ জনপ্রিয়তা লাভ করে। [৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Θεοφανώ η Ελληνίδα βασίλισσα της Γερμανίας"। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৬ 
  2. Ward, Chad (৬ মে ২০০৯)। "The Uncommon Origins of the Common Fork"। Leite's Culinaria। 
  3. Needham (1986), volume 6 part 5 105–108
  4. "Forks"। ১৪ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৬ 
  5. "Fitzwilliam Museum – A combination Roman eating implement"। ৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৬ 
  6. Sherlock, D. (1988)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] A combination Roman eating implement (1988). Antiquaries Journal [comments: 310–311, pl. xlix]
  7. Wright, Clifford A. (১৯৯৯)। A Mediterranean Feast: The Story of the Birth of the Celebrated Cuisines of the Mediterranean from the Merchants of Venice to the Barbary Corsairs, with More than 500 Recipes। William Morrow Cookbooks। পৃষ্ঠা 82আইএসবিএন 978-0-688-15305-2 
  8. চামচ, কাঁটা চামচ ও ছুরির ইতিহাস