কখনো আসেনি
কখনো আসেনি | |
---|---|
![]() কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের ডিভিডি প্রচ্ছদ | |
পরিচালক | জহির রায়হান |
প্রযোজক |
|
রচয়িতা | জহির রায়হান |
চিত্রনাট্যকার | জহির রায়হান |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | খান আতাউর রহমান |
চিত্রগ্রাহক | কিউ, এম, জামান |
সম্পাদক | কিউ, এম, জামান |
প্রযোজনা কোম্পানি | লিটল সিনে সার্কেল |
পরিবেশক | এরা ফিল্মস, ঢাকা |
মুক্তি |
|
দৈর্ঘ্য | ১৪১ মিনিট |
দেশ | পাকিস্তান বাংলাদেশ (প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান) |
ভাষা | বাংলা |
কখনো আসেনি ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি সামাজিক বাংলা চলচ্চিত্র।[১] রচনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন জহির রায়হান। পরিচালক হিসেবে এটিই জহির রায়হানের প্রথম চলচ্চিত্র।[২][৩][৪] ছবিটি প্রযোজনা করেছেন আজিজুল হক ও মঞ্জুরুল হক। অভিনয় করেছেন সুমিতা দেবী, খান আতাউর রহমান, সঞ্জীব দত্ত, শবনম, কণা প্রমুখ।
কাহিনীসারাংশ[সম্পাদনা]
এই ছবিটিতে একজন ব্যর্থ ব্যক্তির জীবনে ঘটে যাওয়া করুন কিছু কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। এখানে নায়ক শওকত তার দারিদ্রতার জন্য তার আপন দুই বোনকে ছেড়ে চলে যান। সেই দুই বোন ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যায়। অন্য দিকে একজন সুন্দরী নারী (মরিয়ম) সুন্দর হওয়ায় তাকে পাথরের মত করে রাখতে চেয়েছিলেন এক যাদুঘরের মালিক (সুলতান)। নায়িকা এই মূর্তি হিসেবে যাদুঘরটিতে দাঁড়িয়ে থাকতো। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের দ্বারা এভাবে মূর্তির মত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব। শওকতের বোন একদিন নায়িকাদের বাসায় যায় এভাবে একদিন নায়িকাও শওকতের বাসায় যায়, এভাবেই নায়কের সঙ্গে নায়িকার দেখা, পরবর্তীতে নায়িকা নায়কের গ্রামে যায় এবং সেই সাথে গ্রামে যাওয়া সবকিছুই নায়িকার ভালো লাগে। তাই নায়িকা একসময় নায়কের প্রেমে পড়ে যায়।
কিন্তু নায়ক টাকার অভাবে তার প্রেমে সফলতা আনতে পারেন না। এর ফলাফল হিসেবে নায়ক তার দুই বোনকে তাদের মত পথ বেছে নিতে বলে। দুই বোনের কাছে কোন টাকা পয়সা না থাকায় অভাবের জন্য তারা না খেয়ে এক সময় মারা যায়। শেষ পর্যায়ে এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে নায়ক নিজে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। তাই সেই মূর্তির অভিনয় করে জাদুঘরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে মুক্ত করার জন্য আর কেউ কখনো আসেনি।
পরবর্তীতে নায়কের মত অনেকেই এভাবে সেই বাসা ভাড়া নেয় (নায়ক যে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো) , সেখানে বসবাস করে এবং এক সময় চলে যায়। কিন্তু কেউ তার (নায়িকার) মনের দুঃখ বুঝতে পারেনা এবং তাকে সেই বন্দী জাদুঘর থেকে মুক্ত করে না।
অভিনয় শিল্পী[সম্পাদনা]
- সুমিতা দেবী - মরিয়ম
- আনিস (খান আতাউর রহমান) - শওকত
- সঞ্জীব দত্ত - সুলতান
- শবনম
- কণা
- মেসবাহ
- শহীদুল আমীন
- আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম
- বি, এ, মালেক
- নারায়ন চক্রবর্ত্তী
- মফিজুল ইসলাম
- সুশীল মজুমদার
- মোহাম্মদ হাবিব
- চকন
- তাহের
- অনিমা
- দেবদাস চক্রবর্ত্তী
কলা কুশলী[সম্পাদনা]
- কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ জহির রায়হান
- প্রযোজনাঃ আজিজুল হক ও মঞ্জুরুল হক
- সম্পাদনাঃ কিউ, এম, জামান
- চিত্রগ্রহণঃ এম, জামান
- শব্দগ্রহণঃ মোহসীন
- শিল্প নির্দেশনাঃ হাসান আলি, আবদুস সবুর
- সঙ্গীত পরিচালনাঃ খান আতাউর রহমান
- কন্ঠ শিল্পীঃ মাহবুবা রহমান, কলিম শরাফী, খান আতাউর রহমান
- রূপসজ্জাঃ শমসের আলি
- ব্যবস্থাপনাঃ মোহাম্মদ হাবিব
- সাজ-সজ্জাঃ ড্রেস হাউস
- চিত্র নির্মাণ ও পরিবেশনাঃ এরা ফিল্মস, ঢাকা
নির্মাণ ইতিহাস[সম্পাদনা]
১৯৫৯-৬০ সালে জহির রায়হান এ জে কারদারের বিখ্যাত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ সহ এহতেশাম, সালাউদ্দীনের মতো নামী পরিচালকের কয়েকটি চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এসময় তিনি নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবেন।
১৯৬০ সালের প্রথম দিকে জহির রায়হান তার প্রথম ছবি ‘কখনো আসেনি’র শুটিং শুরু করেন।[৫][৬] আজিজুল হক ও মঞ্জুরুল হক এ ছবির প্রযোজনা করেন। নায়িকা হিসেবে নির্বাচন করেন সুমিতা দেবীকে ও তার বিপরীতে অভিনয় করেন খান আতাউর রহমান।[৭] ১৯৬১ সালের ২৪ নভেম্বর চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। মুক্তির দিনে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে একটি অসম্ভব সাহসী বিবৃতি প্রকাশ করা হয় । বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল,
“ | দেশের জনসাধারণ ২০ বছর পর যে ছবি দেখবে বলে আশা করেছিল, ২০ বছর আগেই দেশের তরুণরা সে ছবি তাদের উপহার দিলো।[৮] | ” |
গ্রহণ[সম্পাদনা]
এই চলচ্চিত্রের সাফল্য নিয়ে জহির রায়হানের অনেক আশা ছিল। কিন্তু এটি বাণিজ্যিকভাবে তেমন সফল হয়নি। তবে, ব্যতিক্রমধর্মী কাহিনী, সাবলীল ভাষা, উপস্থাপনা ও নির্মাণশৈলীর জন্য এই ছবি সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সে সময় এবং পরবর্তী সময়েও এই ছবি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। প্রায় সব সমালোচকই জহির রায়হানকে সে সময়ের তুলনায় অগ্রবর্তী নির্মাতা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
সংগীত[সম্পাদনা]
কখনো আসেনি চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন খান আতাউর রহমান।[৯] এই চলচ্চিত্রে মোট ৬ টি গান রয়েছে। এর মধ্যে কোন দূর বাতায়নে গানটি রচনা করেন কলিম শরাফী [১০] গানগুলোতে কন্ঠ দেন মাহবুবা রহমান, খান আতাউর রহমান ও কলিম শরাফী।
কখনো আসেনি | |
---|---|
মাহবুবা রহমান, খান আতাউর রহমান ও কলিম শরাফী কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম | |
মুক্তির তারিখ | ১৯৬১ |
শব্দধারণের সময় | ১৯৬০ |
পরিচালক | খান আতাউর রহমান |
প্রযোজক | আজিজুল হক মঞ্জুরুল হক |
চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানের তালিকা | ||||
---|---|---|---|---|
নং. | শিরোনাম | গীতিকার | শিল্পী | দৈর্ঘ্য |
১. | "দুনিয়া বড় এলোমেলো" | খান আতাউর রহমান | খান আতাউর রহমান | ৩:৫১ |
২. | "সোনা রোদে ভরা এই পৌষালী দুপুরে" | খান আতাউর রহমান | খান আতাউর রহমান | ৩:৫৫ |
৩. | "নিরালা রাতের প্রথম প্রহরে" | মাহবুবা রহমান | ৩:৩০ | |
৪. | "এখন রাত্রি" | মাহবুবা রহমান | ৩:২৯ | |
৫. | "কি পেলাম" | মাহবুবা রহমান | ৪:২৪ | |
৬. | "কোন দূর বাতায়নে" | কলিম শরাফী | কলিম শরাফী | ৪:৩৮ |
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ "Homage to Zahir Raihan"। thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Profiles of martyred intellectuals"। thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "জহির রায়হান: পরিচয় যার বহুমাত্রিক"। ১৯ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "জহির রায়হান - গুনীজন.কম"। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে জহির রায়হান"। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "ZAHIR RAIHAN: CAPTURING NATIONAL STRUGGLES ON CELLULOID"। thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "সাধের সিনেমা আজ কোথায়?"। www.amardeshonline.com/। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "জহির রায়হান বিহীন বাংলাদেশের ৪৩ বছর"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "Khan Ataur Rahman: The eternal bohemian"। thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৪।
- ↑ "চলচ্চিত্রে কলিম শরাফী"। gunijon.com। ২৯ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৪।