উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল
 | |
| অবস্থান | নীলফামারী জেলা |
|---|---|
| শুরুর তারিখ | ২০০১ |
| মালিক | প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ |
| কর্মীর সংখ্যা | ৪০০০০ [১] |
| আকার | ২১৩.৬৬ একর |
উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সংক্ষেপে যেটি 'উত্তরা ইপিজেড', বা, 'নীলফামারী ইপিজেড' নামেও পরিচিত), বাংলাদেশের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নীলফামারীর অদূরে সংগলশী এলাকায় অবস্থিত।[২] এইটি এই রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয়।[৩] ২১৩.৬৬ একর এলাকার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেডটি বাংলাদেশের একমাত্র কৃষিভিত্তিক এবং ৭ম বৃহত্তম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা।[৪]
অবস্থান
[সম্পাদনা]উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলটি নীলফামারীর অদূরে সংগলশী এলাকায় অবস্থিত। এটি সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এছাড়া চিলাহাটি স্থলবন্দর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪০৯ কিলোমিটার উত্তরে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৮২ কিলোমিটার উত্তরে এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২১২ একর জায়গায় উত্তরা ইপিজেড স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেন।[৫] পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের জুলাইয়ে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০০১ সালের ১ জুলাই তিনি নীলফামারী এসে উত্তরা ইপিজেডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।[৫][৬] ওই সময় চীনের একটি মাত্র সোয়েটার কোম্পানি দিয়ে উত্তরা ইউপিজেডের পথচলা শুরু হয়েছিল।
শিল্প প্লট
[সম্পাদনা]২১৩.৬৬ একর এলাকার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেডটির ১৯০টি শিল্প প্লট রয়েছে এর মধ্যে ১৫৪টি প্লটে প্রায় ২৪টি দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কারখানা স্থাপিত হয়েছে।[৭][৮] প্রতিটি প্লটের আকার গড়ে প্রায় ২০০০ বর্গমিটার।[৭] ব্যাপক চাহিদার কারণে এর আকার আরো বেড়ে প্রায় ৩০০ একর হচ্ছে।[৯]
উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠান
[সম্পাদনা]উত্তরা ইপিজেডে যে কোম্পানি সমুহ পণ্য উৎপাদন করে তাদের নাম ও পণ্য :[১০]
- এভারগ্রীন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরী (বিডি) লিঃ (হংকং)- উইগ ও হেয়ার সামগ্রী,
- কর্ড (বিডি) লিঃ (হংকং)-ফেস্টিভাল কার্নিভাল
- ওয়েসিস ট্রান্সফরমেশন লিঃ (ব্রিটেন)- কফিন, বাশ-বেত সামগ্রী,
- ম্যাজেন (বিডি) ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (চীন)- সানগ্লাস, অপটিক্যাল ফ্রেম,
- ভেনচুরা লেদার ম্যানুফ্যাকচারিং (বিডি) লিঃ (চীন)- লেদার ব্যাগ, মানিব্যাগ, ওয়ালেট,
- সেকশন সেভেন ইন্টারন্যাশনাল লিঃ(বাংলাদেশ)- প্যান্ট-শার্ট,
- কোয়েস্ট এ্যাক্সেসরিজ লিঃ (বাংলাদেশ)- হ্যাংগার, পলিথিন, সুতার কোন, গার্মেন্টস এ্যাক্সেসরিজ,
- কেপি ইন্টারন্যাশনাল (বাংলাদশ)- সু্য়েটার,
- এসএ ইন্টারন্যাশনাল (বাংলাদেশ)-সু্য়েটার,
- ফারদিন এ্যাক্সেসরিজ (বাংলাদেশ)-হ্যাংগার, পলিথিন, সুতার কোন, গার্মেন্টস এ্যাক্সেসরিজ,
- সনিক বাংলাদেশ লিঃ (চীন)- খেলনা,
- ডং জিন ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ (হংকং)-উইগ,
- উত্তরা সুয়েটার ম্যানুফ্যাকচারিং কোঃ লিঃ (চীন-হংকং)- সুয়েটার, কার্টিগান
- টিএইচটি-স্পেস ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিঃ (চীন-সাংহাই) (THT-Space Electrical Company Ltd.)
- দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড
- নীলফামারী প্যাকেজিং লিমিটেড
উল্লেখযোগ্য উৎপাদিত পণ্য
[সম্পাদনা]- হ্যান্ডব্যাগ
- তৈরি পোষাক (ডেনিম)[১১]
- পরচুলা (উইগ)
- সানগ্লাস
- চশমা ও চশমার ফ্রেম
- খেলনা ও মডেল কার
- বাঁশ-বেতের তৈরি কফিন
- সোয়েটার
- কার্টিগান
- গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ পণ্য
- মানিব্যাগ
- প্রিন্টার অ্যাক্সেসরিজ
এ পর্যন্ত এখানে উৎপাদিত প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।[১৩] নিচে সালভিত্তিক রপ্তানির পরিমাণ দেওয়া হলো।
| অর্থবছর | রপ্তানির পরিমাণ (মিলিয়ন ডলারে) |
|---|---|
| ২০০৬-০৭ | ০.০৮ |
| ২০০৭-০৮ | ০.১৭৫ |
| ২০০৮-০৯ | ০.৪১ |
| ২০০৯-১০ | ২.৩১ |
| ২০১০-১১ | ৯.০৮ |
| ২০১১-১২ | ২৫.১০ |
| ২০১২-১৩ | ৪৫.৪৮ |
| ২০১৩-১৪ | ৭৮.৭১ |
| ২০১৪-১৫ | ১৬৬.৭০ |
| ২০১৫-১৬ | ৩৫৫.৫০ |
| ২০১৬-১৭ | ৫৮২.৫৮ |
| ২০১৭-১৮ | ৮০৭.৫৫ |
| ২০১৮-১৯ | ১১০১.২৭ |
| ২০১৯-২০ | ১৩৩২.২১ |
| ২০২০-২১ | ১৫৬৯.৪২ |
| ২০২১-২২ | ১৯৪৬.০৭ |
| ২০২২-২৩ | ২৩০২.৩৯ |
কর্মসংস্থান
[সম্পাদনা]এই ইপিজেডটি ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এবং দূর করেছে বেকারত্বের অভিশাপ।[১৪][১৫] বর্ত্মানে এখানে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমজীবী নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছেন, যার মধ্যে ৯৫ শতাংশই স্থানীয় বাসিন্দা।[৯][১৬][১৭][১৮] বেপজার তথ্যমতে, ইপিজেড স্থাপনের আগে এই এলাকার জনগণের দৈনিক গড় উপার্জন ছিল ৪০ টাকা বা তারও কম কিন্তু, ইপিজেডটির কল্যাণে তাদের বর্তমান দৈনিক উপার্জন ২৮০-৩২০ টাকায় পৌঁছেছে।[১৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "উত্তরা ইপিজেডের সাফল্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস"। দৈনিক ইনকিলাব। ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "উত্তরা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল"। ২৩ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫।
- ↑ "'মঙ্গার মাটিতে' শিল্পের হাতছানি"। দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ "কৃষিনির্ভর নীলফামারীতে শিল্পায়নের ছোঁয়া"। জাগো নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ ক খ নীলফামারী, মাহমুদ আল হাসান রাফিন (২০২১-০৬-০৫)। "উত্তরা ইপিজেড বদলে দিয়েছে উত্তরের জনপদ"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ "উত্তরা ইপিজেড"। www.rangpurdiv.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ ক খ "BEPZA | Bangladesh Export Processing Zones Authority"। www.bepza.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ হাসান, মীর মাহমুদুল (২০২১-১২-০১)। "বদলে দিয়েছে জীবন"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ ক খ "উত্তরা ইপিজেডের সাফল্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এগিয়ে দেশবন্ধু টেক্সটাইল মিলস"। দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "Deshbandhu Textile Mills Ltd"। Deshbandhu Group (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ "BEPZA | Bangladesh Export Processing Zones Authority"। www.bepza.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ ক খ রায়হান, জহির (নভেম্বর ১, ২০২১)। "উত্তরাঞ্চলের 'গেমচেঞ্জার' উত্তরা ইপিজেড, কর্মসংস্থান ৩০ হাজারের"। The Business Standard। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪।
- ↑ "ইপিজেডের রপ্তানি আয়ে রেকর্ড"। ঢাকা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ সরকার, তৈয়ব আলী (এপ্রিল ৯, ২০১৯)। "উত্তরা ইপিজেড থেকে ৯৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি"। শেয়ার বিজ। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪।
- ↑ "Uttara EPZ leads in export; local employment thrives"। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
- ↑ আলী, আবু (ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪)। "অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে উত্তরা ইপিজেড"। দৈনিক আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪।
- ↑ "উত্তরবঙ্গের আশার আলো 'উত্তরা ইপিজেড'"। এনটিভি (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৩-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১২-১৯।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- বেপজা - বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।