উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদ (ইংরেজি: Academic imperialism) বলতে এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদকে বোঝানো হয় যেখানে উচ্চশিক্ষায়তনিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অসম সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে এবং যেখানে এক দল উচ্চশিক্ষায়তনিক ব্যক্তি আরেকটি দলের উপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং দ্বিতীয় দলটিকে উপেক্ষা করা হয়। উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদের প্রাথমিক তত্ত্বগুলি ১৯৬০-এর দশকে প্রদান করা হয়।[১]

সংজ্ঞাসমূহ[সম্পাদনা]

উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদকে কোনও নির্দিষ্ট শাস্ত্র বা উপশাস্ত্র কীভাবে অন্যান্য শাস্ত্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করে, সেই প্রেক্ষাপটে সংজ্ঞায়িত করা হতে পারে।[২] তবে প্রায়শই এটিকে রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তথাকথিত প্রথম বিশ্ব (পাশ্চাত্য) ও তৃতীয় বিশ্বভুক্ত দেশগুলির উচ্চশিক্ষায়তনগুলির মধ্যকার বৈষম্যের উপর দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত করা হয়।[১][২][৩][৪][৫]

শাস্ত্রের অভ্যন্তরে[সম্পাদনা]

অন্তঃশাস্ত্রীয় পরিপ্রেক্ষিতে, অর্থাৎ একই শাস্ত্রের অভ্যন্তরে উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদের একটি উদাহরণ হিসেবে ১৯২০-১৯৩০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আচরণগত মনোবিজ্ঞান শাস্ত্রের প্রবক্তাদের অ-আচরণবাদী মনোবিজ্ঞানীদের প্রতি তাচ্ছিল্যসূচক মনোভাবের কথা উল্লেখ করা যায়।[২]

আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গণে[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ঔপনিবেশিক পর্বে উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদের আবির্ভাব ঘটে, যখন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি তাদের অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে উচ্চশিক্ষায়তনিক ব্যবস্থাগুলি নকশা ও বাস্তবায়ন করে।[৬][৩][৪] সি. কে. রাজু-র দাবী অনুযায়ী স্থানীয় ঔপনিবেশিক অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে বর্ণবাদী চিন্তাধারা গ্রহণের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদের উদয় হয়।[৭] উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদকে "অভিভাবকত্ব, প্রথানুসারিতা, পদানত বুদ্ধিজীবী ও পণ্ডিতদের গৌণ ভূমিকা, সভ্যকরণ অভিযানের যুক্তিসঙ্গতকরণ এবং উপনিবেশকে অধ্যয়ন করার জন্য ঔপনিবেশিক দেশ থেকে আগত নিম্নশ্রেণীর মেধার" জন্য দায়ী করা হয়।[৬][৩] আধুনিক উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগে উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদ রূপান্তরলাভ করে নিয়ন্ত্রণের একটি অধিকতর পরোক্ষ রূপ গ্রহণ করেছে, যার ভিত্তি উচ্চশিক্ষায়তনিক বিশ্বে তথ্যের প্রবাহের উপরে পাশ্চাত্যের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ।[৮] সৈয়দ ফরিদ আলাতাস (Syed Farid Alatas) এই ব্যাপারটিকে "উচ্চশিক্ষায়তনিক নব্য-উপনিবেশবাদ" নাম দিয়েছেন।[৮]

উচ্চশিক্ষায়তনিক নির্ভরশীলতার সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষায়তনিক সাম্রাজ্যবাদ উচ্চশিক্ষায়তনিক নির্ভরশীলতার জন্ম দেয়, যা হল পশ্চিমা উচ্চশিক্ষায়তনের উপরে অ-পশ্চিমা পণ্ডিতদের নির্ভরশীলতা।[৯] অ-পশ্চিমা দেশগুলিতে বিজ্ঞান এখনও পশ্চিমা বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠান ও ধ্যানধারণার উপর নির্ভরশীল, যেগুলি প্রায়শই পশ্চিমা দেশ থেকে ঐসব দেশে অবিকল গ্রহণ করা হয়।[৯]

সৈয়দ ফরিদ আলাতাস উচ্চশিক্ষায়তনিক নির্ভরশীলতার নিচের ছয়টি দিক তালিকাবদ্ধ করেছেন:[১০]

  • ধারণাসমূহের উপর নির্ভরশীলতা;
  • ধারণাসমূহের মাধ্যমের উপর নির্ভরশীলতা;
  • শিক্ষা প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা;
  • শিক্ষণ ও গবেষণার জন্য আর্থিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা;
  • শিক্ষায় বিনিয়োগের উপর নির্ভরশীলতা;
  • দক্ষতার জন্য পাশ্চাত্যে তৃতীয় বিশ্বের সামাহিক বিজ্ঞানীদের চাহিদাভিত্তিক নির্ভরশীলতা।

উচ্চশিক্ষায়তনিক নির্ভরশীলতার বিশেষ উদাহরণগুলির মধ্যে একটি হল যে বেশিরভাগ প্রধান গবেষণা সাময়িকীগুলি পশ্চিমা দেশগুলিতে অবস্থিত এবং এগুলিতে পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পণ্ডিতদের কর্ম প্রকাশিত হয়। এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলির পণ্ডিতেরা সারা বিশ্ব নিয়ে গবেষণা করেন, অন্যদিকে অ-পশ্চিমা দেশগুলির পণ্ডিতেরা তাদের নিজের সমাজের উপরে বেশি দৃষ্টিপাত করেন। [১১] আরেকটি উদাহরণ হল আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষায়তনিক জগতে ইংরেজি ভাষার আধিপত্য।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Balihar Sanghera; Sarah Amsler; Tatiana Yarkova (২০০৭)। Theorising Social Change in Post-Soviet Countries: Critical Approaches। Peter Lang। পৃষ্ঠা 178–179। আইএসবিএন 978-3-03910-329-4 
  2. Bagele Chilisa (১২ জুলাই ২০১১)। Indigenous Research Methodologies। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 54। আইএসবিএন 978-1-4129-5882-0 
  3. Alatas (2003), p.601
  4. Ulrich Ammon (১ জানুয়ারি ১৯৮৯)। Status and Function of Languages and Language Varieties। Walter de Gruyter। পৃষ্ঠা 459। আইএসবিএন 978-3-11-086025-2 
  5. Srilata Ravi; Mario Rutten; Beng-Lan Goh (২০০৪)। Asia in Europe, Europe in Asia। Institute of Southeast Asian Studies। পৃষ্ঠা 61। আইএসবিএন 978-981-230-208-3 
  6. Sabrin, Mohammed (২০১৩)। "EXPLORING THE INTELLECTUAL FOUNDATIONS OF EGYPTIAN NATIONAL EDUCATION" (পিডিএফ) 
  7. Raju, C. K. (২০১০), "Ending Academic Imperialism: a Beginning", International Conference on Academic Imperialism (PDF) 
  8. Alatas (2003), pp. 601–602
  9. Alatas (2003), pp. 602–603
  10. Alatas (2003), p. 604
  11. Alatas (2003), p. 607

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি[সম্পাদনা]