আলেকজান্ডার কিথ জনস্টন (১৮০৪-১৮৭১)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আলেকজান্ডার কিথ জনস্টনের কবর, গ্রেঞ্জ কবরস্থান

আলেকজান্ডার কিথ জনস্টন এফ.আর.এস.ই এফআরজিএস এফজিএস এফইজিএস এলএলডি (২৮ ডিসেম্বর ১৮০৪ – ৯ জুলাই ১৮৭১) একজন স্কটিশ ভূগোলবিদ এবং কার্টোগ্রাফার বা মানচিত্রবিদ ছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

তিনি এডিনবার্গ-এর দক্ষিণে পেনিকুইক-এর কাছে কিরখিলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন অ্যান্ড্রু জনস্টন এবং ইসাবেল কিথের ছেলে। তাঁর ভাই ছিলেন টমাস ব্রম্বি জনস্টন এফআরএসই।[১]

হাই স্কুল এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়-এ পড়াশোনা করার পরে তিনি এডিনবার্গে খোদাইকারী ও মানচিত্র প্রস্তুতকারী, জেমস কার্কউড[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং উইলিয়াম হোম লিজার্স-এর কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন। [২] ১৮২৬ সালে তিনি তাঁর ভাই উইলিয়ামের সাথে (যিনি পরে স্যার উইলিয়াম জনস্টন, লর্ড প্রোভোস্ট অফ এডিনবার্গ হয়ে ছিলেন) একটি মুদ্রণ ও খোদাই ব্যবসায় যোগ দেন, গঠন করেন ডব্লিউ এন্ড এ. কে. জনস্টন[৩] নামে সুপরিচিত কার্টোগ্রাফিক্যাল ফার্ম। [৪] তাঁদের অফিস ছিল এডিনবার্গের নিউ টাউন-এর ৪ সেন্ট অ্যান্ড্রু স্কোয়ারে (২০১৬ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত)[৫] এবং ইস্টার রোডের অদূরে এডিনা ওয়ার্কসে ছিল তাঁদের মুদ্রণ কার্যালয়। পশ্চিম পার্বত্য অঞ্চলে গোড়ার দিকের আরোহণ, জনস্টনকে যথার্থ মানচিত্র তৈরির ব্যাপারে হতাশ করে দেয় এবং পুনরায় উৎসাহিত হয়ে এটি সংশোধন করার সংকল্প গ্রহণ করেন। [৬]

জনস্টন বাকি জীবন ভূগোলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি বিশেষ করে এর শিক্ষাগত বিষয়গুলির প্রতি ঝোঁকেন। তাঁর অবদান ইউরোপ এবং আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় বৈজ্ঞানিক সমিতিগুলোর দ্বারা স্বীকৃত হয়েছিল।

১৮৪৯ সালের অক্টোবরে, তিনি রয়্যাল সোসাইটি অফ এডিনবার্গ-এর ফেলো নির্বাচিত হন। তাঁর প্রস্তাবদাতা ছিলেন রবার্ট চেম্বারস।[৭] ১৮৬২ সালে তিনি স্কটল্যান্ড আবহাওয়াবিদ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। ১৮৬৫ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট (এলএলডি) দেওয়া হয়।

পরবর্তী বছরগুলিতে এডিনবার্গের সমৃদ্ধ ওয়েস্ট এন্ডের ১৬ গ্রসভেনর ক্রেসেন্ট ছিল তাঁর ঠিকানা।[৫]

১৮৭১ সালে তিনি ইয়র্কশায়ার-এর বেন রাইডিংয়-এ মারা যান [৩] এবং তাঁকে এডিনবার্গের গ্রেঞ্জ কবরস্থান-এর উত্তর-পশ্চিম অংশে সমাহিত করা হয়।

কর্ম[সম্পাদনা]

উদ্ভিদের ভৌগোলিক বিস্তার এবং উষ্ণ, নাতিশীতোষ্ণ ও অনমনীয় অঞ্চলে খাড়া অভিমুখে উদ্ভিদের বিস্তার, দ্যা ফিজিকাল এ্যাটলস-এ ১৮৮৪ সালে জনস্টন কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত হয়।
জনস্টন, আলেকজান্ডার কিথ: এশিয়ার তুরস্ক, ট্রান্সকাকাশিয়া (১৮৬১)

কার্টোগ্রাফিতে জনস্টন মানচিত্র প্রস্তুত করার জন্য শ্রমসাধ্য এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। প্রস্তুতকৃত মানচিত্রের স্থানিক পরিসর এবং নির্ভুলতার জন্য তিনি সুখ্যাতি লাভ করেন। থিম্যাটিক মানচিত্রগুলি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে এবং ডাব্লিউ এন্ড এ কে জনস্টন ১৮৩৪ সালে কিং উইলিয়াম চতুর্থ-এর জন্য খোদাইকারী হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৮৩৫ সালে তিনি বিশ্বের ভূতত্ত্ব, হাইড্রোগ্রাফি এবং আবহাওয়াবিদ্যাকে সমন্বিত করে বিশ্বের প্রথম ইংরেজি ভাষার ভূগোলক তৈরি করেছিলেন।[৮]

১৮৪৩ সালে জনস্টন দ্য ন্যাশনাল অ্যাটলাস অফ হিস্টোরিক্যাল, কমার্শিয়াল এন্ড পলিটিক্যাল জিওগ্রাফি প্রকাশ করেন। [৯] জনস্টনই প্রথম ইংল্যান্ডে প্রাকৃতিক ভূগোল-এর অধ্যয়নকে যথাযোগ্য নজরে আনেন। আলেকজান্ডার ভন হামবোল্ট এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ১৮৪৮ সালে জনস্টন দ্য ফিজিকাল অ্যাটলাস প্রকাশ করেন এবং পরে ১৮৫৬ সালে তার দ্বিতীয় এবং বড় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। [১০] মানচিত্রগুলোতে পৃথিবীর ভূতত্ত্ব, হাইড্রোগ্রাফি, আবহাওয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, এবং নৃতাত্ত্বিকতার চিত্র তুলে ধরার জন্য মানচিত্র এবং লেটারপ্রেস-এ লেখা বর্ণনামূলক অংশ ছিল। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দ্য ফিজিকাল অ্যাটলাস আংশিকভাবে হেনরিখ বার্গাউস-এর জার্মান ভাষায় ফিজিক্যালিশার আটলাস-এর উপর ভিত্তি করে ছিল এবং প্রাণিবিদ্যা ও জীববিদ্যায় বর্ণিত বিস্তার বিষয়ে মানচিত্রের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে প্রতিফলিত করেছিল। মন্টেস্কিউ-এর মতো ১৮ শতকের চিন্তাবিদেরা, ভূগোল এবং জলবায়ুর গুরুত্বকে ইতিহাসের উপাদান নির্ধারণের জন্য এবং প্রাকৃতিক সীমান্ত-এর ধারণার উপর জোর দিয়েছিলেন। [২] ১৯ শতকের জনপ্রিয় হামবোল্ডটিয়ান বিজ্ঞান-এর দৃশ্য-উপস্থাপনা ছিল মানচিত্রাবলি (আটলাস), যা বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত পরামিতিগুলির পরিমাপের সাথে জড়িত। [১১] হামবোল্টের পাঠ্যবই কসমোস-এ কার্যকরভাবে চিত্রিত করেছিলেন বার্গাউস এবং জনস্টন। উভয় মানচিত্রাবলিই পরবর্তীকালে চুরি করা হয়েছিল এবং স্কুল সংস্করণের জন্য সংক্ষিপ্ত করা হয়েছিল।[১০]

জনস্টন ১৮৫০ সালে প্রকাশ করেছিলেন একটি ডিকশনারি অব জিওগ্রাফি (ভূগোলের অভিধান), যার পরবর্তীকালে একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। দি রয়্যাল অ্যাটলাস অফ মডার্ন জিওগ্রাফি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৫৫ সালে এবং তা ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত অ্যালিসন-এর হিস্ট্রি অফ ইউরোপ-এর সামরিক ভূগোল-এর অনুষঙ্গী পুস্তক হিসাবে ব্যবহৃত হত। শিক্ষামূলক বা বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্যে আরও বিভিন্ন ধরনের মানচিত্রাবলি এবং মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছিল।[৩] ১৮৫৬ সালে জনস্টন "স্কুল অ্যাটলাস অফ অ্যাস্ট্রোনমি" নামক মানচিত্রাবলি প্রকাশ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৮৬১ সালে জনস্টন ৪৮ টি মানচিত্র নিয়ে রয়্যাল অ্যাটলাস অফ মডার্ন জিওগ্রাফি-র প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেছিলেন। ১৯১৪ সালের মধ্যে মানচিত্রাবলিগুলির ১২ টি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং ৮৪ পৃষ্ঠার একটি পরিশিষ্ট সহ রঙে রূপান্তরিত ৬১ টি লিথোগ্রাফযুক্ত মানচিত্রের সংকলন জনস্টনস হ্যান্ডি রয়্যাল অ্যাটলাস অফ মডার্ন জিওগ্রাফি প্রকাশিত হয়। যদিও বার্থোলোমেউ-এর সিটিজেনেস অ্যাটলাস অর্ধেক দাম হওয়ায়, অনেক বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল, তবুও রয়্যাল অ্যাটলাস, সারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্য জুড়ে প্রামাণ্য লাইব্রেরি মানচিত্রাবলিতে পরিণত হয়েছিল।[৪]

১৮৬৭ সালে জনস্টন তাঁর স্কুল আটলাস অফ ক্লাসিকাল জিওগ্রাফির একটি নতুন সংস্করণ প্রস্তুত করেন। এটিতে একগুচ্ছ ধারাবাহিক নতুন মানচিত্র ছিল যাতে চিরায়ত যুগ সম্পর্কে একেবারে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল প্রতিফলিত করা হয়েছিল। ম্যাপ অফ দি আউটার জিওগ্রাফি অফ ওডেসি এবং উইলিয়াম ইওয়ার্ট গ্ল্যাডস্টোন এর পাণ্ডিত্যপূর্ণ কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি প্রাচীন গ্রিসের দুটি মানচিত্র সন্নিবেশিত ছিল, যে মানচিত্রের প্লেট এবং তার পাঠ্যও গ্ল্যাডস্টোন সংশোধন করে দিয়ে ছিলেন।[১২]

১৮৭১ সালে জনস্টন মূল্য সচেতন ক্রেতাদের জন্য (শিক্ষামূলক) হাফ-ক্রাউন অ্যাটলাস অফ ব্রিটিশ হিস্ট্রি প্রকাশ করেছিলেন। এটি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপযোগী ধারাবাহিক মানচিত্রের সাথে ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলির চিত্রসজ্জাও ছিল।[১৩]

পরিবার[সম্পাদনা]

তিনি ১৮৩৭ সালে মার্গারেট গ্রেকে বিয়ে করেছিলেন। এরপর থেকে মার্গারেট পরিচিত ছিলেন মার্গারেট কিথ জনস্টন নামে।

তাঁর বড় ছেলের নামও ছিল আলেকজান্ডার কিথ জনস্টন (১৮৪৪-১৮৭৯)। তাঁরও বিভিন্ন ভৌগোলিক রচনা ও লেখাপত্র রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Former Fellows of The Royal Society of Edinburgh 1783 – 2002" (পিডিএফ)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-২১ 
  2. Jeremy Black (২০০০)। Maps and History: Constructing Images of the Past। Yale University Press। পৃষ্ঠা 78। আইএসবিএন 9780300086935 
  3. Chisholm 1911
  4. David Finkelstein (২০০৭)। Edinburgh History of the Book in Scotland, Volume 4: Professionalism and Diversity 1880-2000। Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 340। আইএসবিএন 9780748628841 
  5. Edinburgh and Leith Post Office Directory 1870-71
  6. http://libweb5.princeton.edu/visual_materials/maps/websites/thematic-maps/landmark-thematic-atlases/landmark-thematic-atlases.html
  7. Biographical Index of Former Fellows of the Royal Society of Edinburgh 1783–2002 (পিডিএফ)। The Royal Society of Edinburgh। জুলাই ২০০৬। আইএসবিএন 0 902 198 84 X। ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  8. Charles W. J. Withers, Hayden Lorimer (২০১৫)। Geographers: Biobibliographical Studies, Volume 26। Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 99। আইএসবিএন 9781474227049 
  9. Johnston, Alexander Keith; Berghaus, Heinrich Karl Wilhelm; Kombst, Gustaf। The national atlas of historical, commercial, and political geography। Edinburgh: W. & A.K. Johnston Limited। 
  10. David N. Livingstone & Charles W. J. Withers (২০১১)। Geographies of Nineteenth-Century Science। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 442আইএসবিএন 9780226487267 
  11. David N. Livingstone & Charles W. J. Withers (২০১১)। Geographies of Nineteenth-Century Science। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 441আইএসবিএন 9780226487267 
  12. Jeremy Black (২০০০)। Maps and History: Constructing Images of the Past। Yale University Press। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 9780300086935 
  13. Jeremy Black (২০০০)। Maps and History: Constructing Images of the Past। Yale University Press। পৃষ্ঠা 53। আইএসবিএন 9780300086935