আলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আলাম প্রকৃতপক্ষে কাপড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ফুলের নকশাসম্পন্ন এক বস্ত্রখণ্ডবিশেষ। রাঙামাটিতে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকেরা বয়ন কর্মে এটি ব্যবহার করে। রাঙ্গামাটির প্রায় সব চাকমা পরিবারেই বস্ত্র বয়ন পারিবারিক ও জাতিগত ঐতিহ্য। প্রথমে জুমে চাষ করা কার্পাস তুলার সুতা বিভিন্ন গাছগাছড়ার প্রাকৃতিক রঙে রাঙানো হয়। তারপর সেই সুতো দিয়ে তাঁতে বোনা হয় বিভিন্ন নকশার বাহারি বস্ত্র। সেসব বস্ত্রে নানা রকম ফুলের নকশা থাকে। এসব ফুলের নকশার ভিত্তি হলো "আলাম"। আলাম প্রকৃতপক্ষে কাপড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ফুলের ডিজাইনসম্পন্ন একখণ্ড বা টেমপ্লেট। আলামের নকশায় আছে বিভিন্ন ফুল নকশা ও তার রঙের বিন্যাস। চাকমা মেয়েরা সেসব নকশা দেখে দেখে কাপড়ে ফুলের নকশা তোলে। আলামে ফুলেরও বিভিন্ন নাম আছে, যেমন- বেগুনবিচি ফুল, চড়কা আদা ফুল, সামুলেশ ফুল, বিলেইখুজ ফুল, উলুফুল ইত্যাদি। প্রাচীন চাকমা লোকসাহিত্য রাধামন ধনপতির পালাগানেও আলামের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে আলামের নকশা প্রথম কে কবে তৈরি করেছিল তা আজও অজানা। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আলাম নকশা প্রদর্শন করে চাকমা রাণী দয়াময়ী রায় পুরস্কৃত হয়েছিলেন। সমগ্র পাক-ভারতে তখন উল্লেখ করার মতো কাপড় তৈরির কোনো কল ছিল না। একসময় বাংলায় মসলিন রেশম বস্ত্রের পাশাপাশি চাকমাদের আলাম বস্ত্র শিল্পের বিভিন্ন ডিজাইনের নকশার জন্য শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত হতো। এখনো এ দেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বস্ত্রমেলায় আলাম নকশায় তৈরি চাকমা উপজাতীয় পোশাক যথেষ্ট আকর্ষণ সৃষ্টি করে। আলাম থেকে নকশা তুলে পিনন, ধুতি, খাদি, পাগড়ি ইত্যাদি পোশাক বোনা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • ইফ্‌ফাত আরা, জানার আছে অনেক কিছু, ১৯৯৯, দেশ প্রকাশন, ঢাকা (পৃষ্ঠাঃ ১৩৩)।