আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ হলো ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ (১৩৪৫ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ) মাসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত প্রেম পর্যায়ের গান এবং ওই বছরের বসন্তেই গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়।[১] রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই গানের মধ্য দিয়ে প্রকৃতই একজন যথার্থ শিল্পীকে সম্মান জানিয়েছেন।
গানের কথা
[সম্পাদনা]আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে,
তুমি জানো না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে,
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে।
সে সাধনায় মিশিয়া যায় বকুলগন্ধ
সে সাধনায় মিলিয়া যায় কবির ছন্দ,
তুমি জানো না,
ঢেকে রেখেছি তোমার নাম
রঙ্গীন ছায়ার আচ্ছাদনে,
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ
সুরের বাঁধনে।
তোমার অরূপ মূর্তিখানি
ফাল্গুনের আলোতে বসাই আনি,
অরূপ মূর্তিখানি
বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে
বাঁশরি বাজাই ললিত-বসন্তে, সুদূর দিগন্তে,
সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী
সোনার আভায় কাঁপে তব উত্তরী
গানের তানের সে উন্মাদনে,
তুমি জানো না, আমি তোমারে পেয়েছি অজানা সাধনে,
আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]- রচনা ও সুরারোপ-
কবি সাতাত্তর বৎসর বয়সে তার কন্যাসম স্নেহধন্যা খুকু-অমিতা সেনকে উদ্দেশ করেই লিখেছিলেন। কবির খাস মুন্সি ও শেষের দিনগুলির লিপিকার সুধীরচন্দ্র কর তার কবি-কথা গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, গানটি ১৩৪৫ বঙ্গাব্দের ২৩-২৮ ফাল্গুন (১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ৭-১২ মার্চ) মধ্যে অমিতা সেন (খুকু)কে উদ্দেশ করে রচনা করেছেন।[৩] গানটির স্বর লিপিকার শৈলজারঞ্জন মজুমদার। (স্বরবিতান- ৫৩) গানটি বাহার-সোহিনী রাগে, দাদরা তালে গীত হয়। মধ্য রাত্রির সুর বাহারের সঙ্গে শেষ বা প্রথম রাত্রির সুর পঞ্চমের মিশ্রণ গীত গানটিতে লক্ষিত হয়। গানটির ইতিবৃত্তে অমিতার বান্ধবী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মা আশ্রমকন্যা নামে পরিচিতা অমিতা সেন লেখেন-
‘‘মৃত্যুর আগে অমিতা শান্তিনিকেতনে ফিরে এসে কিছুকাল বাস করে। সেই সময় সকাল সন্ধ্যায় গুরুদেবকে সে গান শোনাতে যেত। ... তিনি একদিন ‘আমি তোমার সঙ্গে’ গানটি শুনতে চান। খুকু তাঁকে গেয়ে শোনালে তিনি হেসে তাকে বললেন, কী রে, গানটা শুনে তোর কি কিছু মনে পড়ছে? উচ্চস্বরে হেসে উঠল খুকু। রবীন্দ্রনাথ সেদিন বলেছিলেন, ওকে উদ্দেশ করেই আমি গানটা বেঁধেছিলাম।’’
সে সময়ে সেখানে অন্যান্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারা অমিতাকে প্রশ্ন করেন, "পরম সৌভাগ্যের এমন দামি কথাটা তুমি মনের মধ্যেই চেপে রাখলে? আমরা হলে উচ্চকণ্ঠে এই কথাটা গেয়ে বেড়াতাম।" উত্তরে অমিতা বলেছিল,
"ও কথা গুরুদেব মুখে বললেও আমি কি বুঝি না এই গানের কী গভীর অর্থ? এই গভীর অনুভূতি কি কোনো ছোট আধার ধারণ করতে পারে? ওঁর এই ভাব কোন গভীরে, কোন পরমার দিকে বয়ে যাচ্ছে, আমি তো উপলক্ষ মাত্র। "
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি..."। ২০২৩-০৫-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-১৫।
- ↑ গীতবিতান,বিশ্বভারতী, প্রেম-প্রেমবৈচিত্র্য; পৃষ্ঠা সংখ্যা-২২২/৩৫৯
- ↑ পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার, সম্পাদক (২০১৯)। গীতবিতান তথ্যভাণ্ডার। সিগনেট প্রেস, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১২৪/১২৫ আইএসবিএন = 978-93-5040-053-1।
- ↑ "Lyric and background history of song Ami Tomar Sange Bedhechhi"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-২২।