আবু মাহদি আল-মুহান্দিস
আবু মাহদি আল-মুহান্দিস | |
---|---|
أبو مهدي المهندس | |
পপুলার মবিলাইজেশন কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | জামাল জাফর মোহামেদ আলী এব্রাহিমি ১ জুলাই ১৯৫৪ আবু আল-খাসিব, বসরা, ইরাক |
মৃত্যু | ৩ জানুয়ারি ২০২০ বাগদান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটে, বাগদাদ, ইরাক | (বয়স ৬৫)
মৃত্যুর কারণ | বিমান হামলা |
জাতীয়তা | ইরাকি, ইরানি |
রাজনৈতিক দল | ইসলামিক দাওয়া পার্টি |
সামরিক পরিষেবা | |
শাখা | পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সেস |
জামাল জাফর মোহামেদ আলী আল এব্রাহিম (আরবি: جمال جعفر محمد علي آل إبراهيم, ১ জুলাই ১৯৫৪ – ৩ জানুয়ারি ২০২০), যিনি আবু মাহদি আল-মুহান্দিস (আরবি: أبو مهدي المهندس – আক্ষরিক অর্থ প্রকৌশলী)উপনামে পরিচিত ছিলেন, একজন ইরাকি-ইরানি রাজনীতিবিদ ও সামরিক কমান্ডার ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি পপুলার মবিলাইজেশন কমিটির উপপ্রধান ছিলেন যেটি আইএসের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করত। এর সাথে ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর আওতাধীন কুদস বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
তিনি কাতিব হিজবুল্লাহ নামক এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর কমান্ডার ছিলেন। এর পূর্বে সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে তিনি ইসলামিক রেভোলুশনারি গার্ড কর্পসের সাথে কাজ করেছেন।[১]
১৯৮০ এর দশকে কুয়েতে তার কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আখ্যা দেওয়া হয়েছিল।[২][৩] তার অনুপস্থিতিতে তাকে ১৯৮৩ সালের কুয়েত বোমা হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছিল কুয়েতের একটি আদালত।[৪] মুহান্দিসকে মার্কিন সন্ত্রাসী তালিকায় রাখা হয়েছিল।[৫]
২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান হামলায় কাসেম সোলেইমানির সাথে নিহত হয়েছিলেন তিনি।[৬]
জীবনী
[সম্পাদনা]জামাল জাফত আল-ইব্রাজিমি ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই ইরাকের বসরা প্রদেশের আবু আল-খাসিব জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[৭] তার বাবা ছিলেম একজন ইরাকি ও তার মা ছিলেন একজন ইরানি।[৩] ১৯৭৭ সাথে তিনি প্রকৌশলবিদ্যায় অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন। ও ঐ বছরেই তিনি শিয়াভিত্তিক দল দাওয়া পার্টিতে যোগদান করেন যা ক্ষমতাসীন বাথ সরকারের বিরোধিতা করত। দলটি নিষিদ্ধ হলে তিনি সীমান্ত দিয়ে ইরানের আহভাজে পালিয়ে যান। সেখানে ইরানিরা সাদ্দাম সরকারকে উৎখাত করার জন্য ইরাকিদের প্রশিক্ষণ দিত।[৪] তিনি ১৯৮৩ সালে ইরানের রেভোলুশনারি গার্ডের হয়ে কুয়েতে কাজ করেছেন। তিনি ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থনকারী দেশগুলোর দূতাবাসে হামলা পরিচালনা করতেন।[১] ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে কুয়েতে অবস্থিত মার্কিন ও ফরাসি দূতাবাসে বোমা হামলার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি ইরানে পালিয়ে যান।[৩] হামলা পরিকল্পনা করার অভিযোগে তাকে তার অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছিল কুয়েতের একটি আদালত।[৪] তিনি এক ইরানি নারীকে বিয়ে করে ইরানে বসবাস শুরু করেন ও ইরানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, তিনি কুদস বাহিনীর সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হন ও নিজ শহর বসারায় ইরাকি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার জন্য পরামর্শ প্রদান করতেন।[৩]
তিনি ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আক্রমণের পর নিজ দেশে ফিরে আসেন ও এর অবসানের পর তিনি প্রথম ইরাকি প্রধানমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-জাফরির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।[৪] ২০০৫ সালে তিনি বাবিল প্রদেশ থেকে ইরাকি আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।[৩] ১৯৮৩ সালের হামলার সাথে তার যোগসাজশের বিষয়টা মার্কিন কর্মকর্তরা ২০০৬ বা ২০০৭ সালে তৎকালীন ইরানি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকিকে অবহিত করেন।[৪] এরপর, তিনি ইরানে পালিয়ে যান।
২০১১ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন ও কাতিব হিজবুল্লাহ নামক এক সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।[১] তিনি তখন পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সেসের উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।[৮]
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আল-মুহান্দিসকে কাইস খাজালি, হাদি আল-আমিরি ও ফালিহ আলফায়্যাধকে মার্কিন দূতাবাসে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত করেছিলেন।[৯]
২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি কাসেম সোলেইমানির সাথে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান হামলায় নিহত হন আল-মুহান্দিস।[১০] এই হামলার আদেশ দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তিনি ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিহত করার জন্য এই আদেশ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।[১১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Dehghanpisheh, Babak (১২ নভেম্বর ২০১৪)। "Special Report: The fighters of Iraq who answer to Iran"। Reuters। ৩ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "Iraqi Army still ineffective despite U.S. training"। Newsweek। Reuters। ৪ জুন ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Othman al-Mukhtar (৪ জানুয়ারি ২০১৫)। "Fugitive from international justice now militia leader in Iraq"। al-Araby al-Jadeed English।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Glanz, James; Santora, Marc (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। "Iraqi lawmaker was convicted in 1983 bombings in Kuwait that killed 5"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৫।
- ↑ Lawrence, John (২৬ মে ২০১৫)। "Iraq Situation Report: May 23–25, 2015"। understandingwar.org। Institute for the Study of War। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৫। See paragraph 5 of the report.
- ↑ Hassan, Falih; Rubin, Alissa J.; Crowley, Michael (২০২০-০১-০২)। "Iraqi TV Reports Strike Kills Powerful Iranian Revolutionary Guard Commander"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৩।
- ↑ "شاهد: "شهادة وفاة" أبو مهدي المهندس الرجل الثاني في الحشد الشعبي"। jesrpress.com (আরবি ভাষায়)। ৩ জানুয়ারি ২০২০। ২২ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ "ساختار حشد شعبی عراق؛ تشکل نظامی مردمی" (ফার্সি ভাষায়)। Tasnim News Agency। ১২ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "US embassy siege leader was guest at White House during Obama presidency"। Al Arabiya English। ২০২০-০১-০৩। ২০২০-০১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৪।
- ↑ "Iran's Soleimani and Iraq's Muhandis killed in air strike: militia spokesman"। Reuters। ৩ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ Burns, Robert; Baldor, Lolita C.; Miller, Zeke (২০২০-০১-০৩)। "Trump: Aim of Killing Iranian General Was to 'Stop a War'"। NBC 5। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-০৩।