আজারবাইজানে ধর্মহীনতা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আজারবাইজানের ধর্মহীনতা ভিন্ন ভিন্ন জনশুমারি এবং জরিপ অনুযায়ী ব্যাখ্যার জন্য উন্মুক্ত।[১] যদিও ইসলাম আজারবাইজানের প্রধান ধর্মীয় বিশ্বাস, তবে আজারবাইজানে ধর্মীয় সম্পৃক্ততা নামমাত্র এবং প্রকৃত অর্থে বাস্তব জীবনে ধর্মচর্চা করেন এমন অনুসারীদের শতকরা হার তুলনামূলক অনেক কম। আজারবাইজানে নাস্তিক বা অজ্ঞেয়বাদীদের সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন কারণ তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের জনশুমারিতে গণনা করা হয় না।[২] আজারবাইজান মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।[৩]

গবেষণা ও পরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

ককেশাস রিসার্চ রিসোর্স সেন্টার দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা অনুসারে, ২০১০ সালে প্রায় ২,০০০ লোকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে ২৮% উত্তর দিয়েছিল যে ধর্ম তাদের জীবনের "একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ" অংশ। দুই বছর পর, জরিপটি আবার পরিচালিত হয়, কিন্তু মাত্র ১৮০০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৩% উত্তর দেয় যে ধর্ম তাদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উপরন্তু, আরও ৪৪% দাবি করেছেন যে ধর্ম তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি "মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ" অংশ। বাকি ২৩% দাবি করেছেন যে ধর্ম তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ বা সম্পূর্ণ তুচ্ছ অংশ। যদিও ৭৭% উত্তরদাতা উল্লেখ করেছেন যে ধর্ম তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের মধ্যে মাত্র ২% ব্যক্তি প্রতিদিন ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশ নেয়, ৩% ব্যক্তি সপ্তাহে এক বা একাধিক বার, ২০% ব্যক্তি মাঝে মাঝে এবং প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ±৫০% ব্যক্তি কখনই ধর্মীয় প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে না।[৪]

মির্জা ফাতালি আখন্দভ, ঊনবিংশ শতাব্দীর আজেরি আধুনিকতাবাদী এবং আজারবাইজানের নাস্তিক আন্দোলনের জনক।[৫]

সাম্প্রতিক গ্যালপ জরিপ অনুসারে, আজারবাইজান মুসলিম বিশ্বের অন্যতম নিধার্মিক রাষ্ট্র, যেখানে প্রায় ৫৩% উত্তরদাতা তাদের জীবনে ধর্মের গুরুত্ব কে কম বা কোনোকিছুই না বলে মনে করেন।[৬][৭] একই জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে মাত্র ২০% উত্তরদাতা ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন।[৮] গ্যালপ ইন্টারন্যাশনাল ইঙ্গিত দিয়েছে যে আজারবাইজানের মাত্র ৩৪% ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলেন এবং তারা ২০০৫, ২০০৮ ও ২০১৫ সালে সংকলিত তথ্য থেকে আজারবাইজানকে ১৩তম সর্বনিম্ন ধর্মীয় দেশ হিসাবে স্থান দিয়েছে।[৯]

২০১২ সালে, ওয়ার্ল্ড ভ্যালু জরিপের অংশ হিসাবে, মানুষের জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। এই জরিপ টি শূন্য থেকে এক স্কেলের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে ০ চিহ্নের অর্থ ছিল ধর্ম "মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়", এবং ১ চিহ্নের অর্থ "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ"। এই জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, আজারবাইজানের সূচক ছিল ০.৫২ এবং অংশগ্রহণকারী ৮০টি দেশের মধ্যে ৩৩তম স্থান দখল করেছিল।[১০][১১]

"ককেশাস অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশন" নামের জার্নাল অনুসারে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ধার্মিক মানুষের সংখ্যা ছিল ৬২.৭% এবং অত্যন্ত ধার্মিক ৬.৪%। ১০.৬% উত্তরদাতাদের কাছে উত্তর দেওয়া কঠিন বলে মনে হয়েছে। জনমত জরিপে দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের গুরুত্ব সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যাতে উত্তরদাতারা নিম্নরূপ উত্তর দিয়েছেন: ১১% লোকের জন্য ধর্ম তাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ২৫.৭% এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, ৪১% এর জন্য মধ্যপন্থী, অন্যদের জন্য এটি খুবই তুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ অথবা একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ নয়।[১২]

২০০৫ সালে আরেকটি জরিপ চালানো হয়, যাতে উঠে আসে যে আজারবাইজানের ১২টি অঞ্চলের জনসংখ্যার ৮৭% নিজেদের ধার্মিক বলে মনে করে, অন্যদিকে প্রায় ১০% বিশ্বাস করে যে তারা নাস্তিকদের তুলনায় ধার্মিক এবং মাত্র ১% বলছে যে তারা নাস্তিক।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী আজারবাইজানের মোট জনসংখ্যার ৯৯.৪% মুসলিম। একই গবেষণা কেন্দ্র ২০১০ সালে রিপোর্ট করে যে জনসংখ্যার ৯৬.৯% মুসলিম এবং ১% এরও কম মানুষ নিজেদের কোন ধর্মের সাথে যুক্ত বলে মনে করে না।[১৩][১৪][১৫]

ক্র্যাবট্রি, পেলহাম (২০০৯) অনুসারে, আজারবাইজান বিশ্বের ১১টি সর্বনিম্ন ধর্মীয় দেশের তালিকায় রয়েছে যেখানে মাত্র ২১% মানুষ বলছে যে ধর্ম তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।[১৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Agadjanian, Alexander; Jödicke, Ansgar; Zweerde, Evert van der (১০ অক্টোবর ২০১৪)। Religion, Nation and Democracy in the South Caucasus। Routledge। আইএসবিএন 9781317691570। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  2. "Azerbaijan: Islam Comes with a Secular Face"Eurasianet। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬ 
  3. "Islam and Secularism: the Azerbaijani experience and its reflection in France"। PR Web। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৬ 
  4. "Azerbaijan: Islam Comes with a Secular Face"। আগস্ট ১৫, ২০১৩। 
  5. M. Iovchuk (ed.) et el. [The Philosophical and Sociological Thought of the Peoples of the USSR in the 19th Century http://www.biografia.ru/about/filosofia46.html]. Moscow: Mysl, 1971.
  6. "What Alabamians and Iranians Have in Common"Gallup। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৭ 
  7. GALLUP WorldView - data accessed on 16 August 2013
  8. "Gallup: "Azerbaijan is ranking 5th in the list of most atheistic countries of the world""। Today। ২০১৪-১০-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-১৭ 
  9. https://www.telegraph.co.uk/travel/maps-and-graphics/most-religious-countries-in-the-world/
  10. "WVS Wave 6 (2010-2014)" 
  11. "Религиозность в странах современного мира: сравнительный анализ" 
  12. "Возрождение Иислама в Азербайджане: Процесс и политические импликации"। ৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল |url= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২১ 
  13. "Mapped: The world's most (and least) religious countries"The Telegraph 
  14. "Map: These are the world's least religious countries"The Washington Post 
  15. "Religious Beliefs In Azerbaijan" 
  16. "Measuring Muslims: The problems of religiosity and intra-religious diversity" (পিডিএফ)Annual Review of the Sociology of Religion। ১৭ মে ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০২১