বিষয়বস্তুতে চলুন

আজাইবুল মাখলুকাতি ওয়া গারাইয়িবুল মওজুদাত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আল-কাজউইনির "আজাইবুল মাখলুকাতি ওয়া গারাইয়িবুল মওজুদাত" গ্রন্থে চন্দ্রের একটি চিত্রণ
জাকারিয়া আল-কাজউইনি

ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তার লেখা বই 'আজাইবুল মাখলুকাতি ওয়া গারাইয়িবুল মওজুদাত' প্রকাশ করেন। এই বইয়ে আল-কাজউইনি বিশ্বতত্ত্ব বিষয়ে তার মত প্রকাশ করেন। তার মতে আল্লাহ্‌ আকাশকে ধরে রেখেছেন যাতে তা পৃথিবীর উপর না পড়ে যায়। আল-কুর'আনে লেখা আছে আল্লাহ্‌ বলেন, "আমি কি পৃথিবীকে বিছানা বানিয়ে দেইনি? ও পাহাড়সমূহকে পেরেক রূপে গেঁড়ে দেইনি?" [আল-কুর'আন ৭৮:৬-৭] আল-কাজউইনি তার বইয়ে পৃথিবীকে একটি সমতল গোল গ্রহ বলে প্রদর্শন করেন যার চারপাশে আল্লাহ্‌ অনেকগুলো পাহাড় পেরেকের মত গেঁড়ে দিয়েছেন। আর এই পৃথিবীকে বহন করছে এক বিশাল ষাঁড়। এই ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে বাহামূত নামক এক বিশাল মাছের উপর যা এক পাত্র ভরা পানিতে ভাসমান। এই পানির পাত্র বহন করছেন একজন ফেরেশতা বা জ্বীন

আজাইবুল মাখলুকাতি ওয়া গারাইয়িবুল মওজুদাত (আরবি ভাষায়: عجائب المخلوقات و غرائب الموجودات‎‎, meaning বিদ্যমান প্রাণী এবং অদ্ভুত জিনিসসমূহর বিস্ময়) ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আরবি ভাষায় লিখা এক বিশ্বতত্ত্ব বিষয়ক গ্রন্থ। এর লেখক হচ্ছেন ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন ফারসী জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জাকারিয়া আল-কাজউইনি যিনি ৬০০ হিজরি/১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।

কৃতির পটভূমি

[সম্পাদনা]

আল-কাজউইনি তার গবেষণার সূত্র হিসেবে পঞ্চাশজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন যাদের মধ্যে অধিক ব্যক্তিই ছিলেন প্রাচীনকালের ইতিহাসবিদ এবং ভূগোলবিদগণ। এদের মধ্যে উল্লেখিত ছিলেন আল-ইস্তাখরি, ইবনে ফাদলান,আল-মাসুদি, ইবনে হাওকাল, আল বিরুনি, ইবনে আসির, মোহাম্মদ ইবনে আহমদ শামসুদ্দিন আল-মাকদিসি এবং আল রাযী। যদিও আল-কাজউইনির এই কৃতি জানা-অজানা সূত্র দ্বারা লেখা হয়েছে তবুও তার এই গ্রন্থের শৈলী এবং ভাষা ইসলামি স্বর্ণযুগের পরবর্তী জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভূগোল গবেষণায় প্রভাবিত করে থাকে। আল-কাজউইনির মহাবিশ্ব-বিবরণ পরিপূর্ণভাবে বৈজ্ঞানিক ছিল না কিন্তু এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন গল্প ও কবিতা দ্বারা পাঠকদের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া ও চিত্তবিনোদন করা।

মহাবিশ্ব-বিবরণ

[সম্পাদনা]
চতুর্দশ শতাব্দীতে অনুলিপি করা মূল গ্রন্থটির অনুকরণে একটি পান্ডুলিপি
চতুর্দশ শতাব্দীর পান্ডুলিপিতে ফেরেশতা জিবরাঈলের প্রতিকৃতি

উনবিংশ শতাব্দীর জার্মানির সেমিটিক ভাষাবিদ কার্ল ব্রোকেলমান এই গ্রন্থকে বলেছেন "ইসলামী সংস্কৃতির সবচেয়ে মূল্যবান মহাবিশ্ব-বিবরণ"। যেহেতু এই আরবি গ্রন্থের তুর্কি, ফারসি ও অন্যান্য ইসলামি ভাষায় অনুবাদ পাওয়া গিয়েছে সেহেতু বলা যায় যে আল-কাজউইনির মহাবিশ্ব-বিবরণ ইসলামি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পড়া হত। অনেক পণ্ডিতগণ এই গ্রন্থের উদ্ধৃত অংশ পশ্চিমা বিশ্বের পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করেন। ইসলামি চিন্তার এক পণ্য হিসেবে আল-কাজউইনির আজাইবুল মাখলুকাত - যাকে বলা যায় নাসিরুদ্দিন আল-তুসির মহাবিশ্ব-বিবরণের সমরূপ - এর বৈশিষ্ট্য হল খোদার একত্ব এবং সৃষ্টির একত্বর ধারণা। মহাবিশ্ব হল পরম সত্য বা খোদার প্রকাশ। যখন খোদা আদেশ করেন "হও" তখন মহাবিশ্বের সবকিছুর একটি স্থান এবং তাদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। ইসলামি প্রথায় মানুষের করণীয় হল খোদার সৃষ্টিকে যত সম্ভব তত বোঝা। খোদা হল মহাজাগতিক গঠনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই আধ্যাত্মিক ধারণাগুলো তাদের ভিত্তি খুজে পায় কুর'আন, হাদিস এবং সে সব বিজ্ঞানে যে সব প্রাক-ইসলামী যুগে গড়ে উঠেছিল এবং যে সব ইসলামি বিশ্বে গৃহীত হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]