আগেরা (উৎসব)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আগেরা (ইস্ট ইণ্ডিয়ান:आगेरा) হল মুম্বাইয়ের রোমান ক্যাথলিক সম্প্রদায়, যারা মূলত ইস্ট ইণ্ডিয়ান, তাদের দ্বারা পালিত একটি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উৎসব। বাইবেলের যুগ থেকে ঐতিহ্য ছিল যে, উৎপাদিত পণ্যের প্রথম ফসল নিয়ে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করা। ভারতের পশ্চিম উপকূলের মুম্বাইয়ের উত্তান, ভাঈন্দর, ভাসাই কল্যাণ, থানে এবং উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্রের উপকূলীয় গ্রামে বসবাসকারী ইস্ট ইণ্ডিয়ান খৃষ্টান সম্প্রদায় আগেরা উদযাপন করে। এটা তাদের ফসল কাটা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উৎসব। অক্টোবরের প্রথম রবিবার এটি পালিত হয়। 'আগেরা' নামটি ল্যাটিন শব্দ 'আগের' থেকে এসেছে, যার অর্থ ক্ষেত্র।[১] ইস্ট ইণ্ডিয়ানরা কৃষিকাজে নিযুক্ত ছিল।[২]

এই ঐতিহ্যবাহী ফসল কাটা উৎসবটি অক্টোবরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়, সেইসময় ক্ষেত্রের শস্য কেটে নেবার মত তৈরি হয়ে যায়। এটি পাঁচ দিন ধরে চলে। এই উৎসবটি প্রতিটি সম্প্রদায়ের পুরোহিতেরা শুরু করেন, তাঁরা সদ্য কাটা ফসলকে আশীর্বাদ করতে কৃষক ও গ্রামবাসীদের সাথে মাঠে নামেন এবং ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান।

সদ্য কাটা ধান গির্জায় নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। কয়েক দশক আগে, যখন ভালনাইয়ের গির্জাটি ধানের ক্ষেতে ঘেরা ছিল, তখন এই অনুষ্ঠানটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হত। পুরোহিত মাঠকে আশীর্বাদ করতেন এবং প্রতীকীভাবে কয়েকটি ফসল কেটে নিতেন। গ্রাম্য ব্যান্ডের ধ্বনিতে কাটা শস্য সাজানো পালকিতে করে গির্জায় নিয়ে যাওয়া হত।[৩] গির্জায় পুরোহিত ভাল ফসলের জন্য প্রার্থনা করেন যাতে বছরে কেউ ক্ষুধার্ত না থাকে। প্রার্থনায় একত্রিত হওয়ার পরে, সম্প্রদায় সুস্বাদু খাবার, গান এবং নাচের মাধ্যমে উৎসব উদযাপন করেন।[৪]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

আগেরা শব্দটি ল্যাটিন শব্দ আগের থেকে এসেছে যার অর্থ ক্ষেত্র বা খামার[৫] এবং আগ্রিকোলার অর্থ কৃষক।[৬]

উদযাপন[সম্পাদনা]

আগেরার সকালে, গির্জার পুরোহিত কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে গির্জার কাছাকাছি একটি মাঠে যান। তিনি তখন ধানকে আশীর্বাদ করে কিছু ফসল কাটেন। কৃষকদের একটি দল তখন আরও ধান কাটে এবং তারপর সেগুলি নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে গির্জায় যায়। ধান বহন করার জন্য় ‘রেকলা’ (ষাঁড়ের গাড়ি) অথবা ‘টোঙ্গা’ (ঘোড়ার গাড়ি) ব্যবহার করা হয়। পুরুষরা ঐতিহ্যগতভাবে 'সুরখা' এবং মহিলারা 'লুগ্রা' (নয় গজ লম্বা সুতির শাড়ি) পরিধান করে সঙ্গে হাঁটেন। তাদের সঙ্গে থাকে স্থানীয় গ্রাম্য 'ভানজুটার' — এটি ইস্ট ইণ্ডিয়ান ব্রাস ব্যান্ড। এই ব্যান্ডে ঐতিহ্যগত স্তব বাজতে থাকে। গির্জায় পৌঁছানোর পর কৃষকরা কাটা ধান বেদিতে রাখে। পবিত্র প্রার্থনার সময়, পুরোহিত আবার ধানকে আশীর্বাদ করেন, এর ওপর পবিত্র জল দিয়ে ছিটিয়ে দেন। প্রচুর ফসলের জন্য সর্বশক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞতার প্রার্থনা করা হয়। আগামী বছরের বন্যা ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষার জন্যও আবেদন করা হয়। প্রার্থনার পর প্রতিটি পরিবারকে এই আশীর্বাদযুক্ত ধান বিতরণ করা হয়, তাদের বাড়ির প্রবেশপথে বা তাদের বাড়ির বেদিতে লাগানোর জন্য। আশা এবং বিশ্বাস করা হয় যে খাদ্য এবং সুখ সর্বদা তাদের বাড়িতে এবং সম্প্রদায়ে প্রচুরভাবে সরবরাহ হবে।[১]

তারিখ[সম্পাদনা]

আগেরা অক্টোবরের প্রথম রবিবার পড়ে। এটিকে সাধারণত ফসল উৎসব বলা হয় যেখানে কৃষকরা শস্য কাটে এবং প্রথম ফসল ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে।[৭] এটি সাধারণত ভারত জুড়ে দেখা যায় যেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব উপায়ে এই উৎসব উদযাপন করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "AGERA 2019 — The East Indian Harvest Festival"। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. "East Indians celebrate traditional harvest festival - Times of India"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  3. "Agera fest sees a revival in city's churches"। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  4. "Archdiocese of Bombay"archdioceseofbombay.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  5. "Latin Word Study Tool"www.perseus.tufts.edu। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  6. "Latin Word Study Tool"www.perseus.tufts.edu। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮ 
  7. "The East Indian Community"The East Indian Community। ৭ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮