আকলুল বিল ফাআল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আকলুল বিল ফাআল (আরবি: عقل بالفعل) হলো ইসলামি দর্শনে এক ধরনের বুদ্ধিমত্তা। এই স্তরটি দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ব্যতীত নতুন জ্ঞান আহরণে আত্মার উন্মুখতা নিয়ে কাজ করে।[১]

ঐতিহাসিক পটভূমি[সম্পাদনা]

আল-কিন্দি এমন এক ধরনের বুদ্ধিমত্তার কথা বলেছেন যেটি সম্ভাব্য বুদ্ধিমত্তার অবস্থা হতে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার স্তরে আরোহণ করতে পারে।[২] আল ফারাবী বলেছেন প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার স্তরে উন্নিত হওয়ার প্রথম স্তর হলো সম্ভাব্য বুদ্ধিমত্তা। দ্বিতীয় স্তর হলো আকলুল বিল ফাআল। প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা নিজের ভাল মন্দ নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারে, অর্থাৎ যখন বুদ্ধিমত্তা এমন এক অবস্থায় পৌঁছায় যখন সে নিজের ভাল মন্দ পর্যালোচনা করতে পারে তখন সেই বুদ্ধিমত্তাকে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা বলে।[৩] গ্রফ অবশ্য প্রকৃত বুদ্ধিমত্তাকে তৃতীয় স্তরের বুদ্ধিমত্তা বলে চিহ্নিত করেছেন।[৪] অন্যদিকে আল ফারাবী আকলুল বিল ফাআলকে সর্বোচ্চ শক্তিতে সক্রিয় বুদ্ধিমত্তার একটি স্তর হিসেবে অভিহিত করেছেন।[৫] পাশাপাশি একজন বিখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ ইজি, প্রকৃত বুদ্ধিমত্তাকেই সম্ভাব্য বুদ্ধিমত্তা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।[৫] এসব দেখে মনে হয় ইবনে সিনার আকলুল বিল ফাআল আবু হামিদ আল-গাজ্জালির আরুহ আল-আকলের অনুরূপ।[৬]

ধারণা[সম্পাদনা]

যদি বুদ্ধিমত্তা এমন উদ্দেশ্যে জ্ঞান আহরন করে যাতে পরবর্তীতে এটি নিজের প্রয়োজনে সে জ্ঞানকে ব্যবহার করতে পারে তাহলে এ ধরনের বুদ্ধিমত্তাকে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা বলে।[৭] এই সংজ্ঞায় আকল হলো জ্ঞানের প্রথম স্তর যেটি আকলের সর্বোৎকৃষ্ট অবস্থা নির্দেশ করে।[৮] ফারাবীর মতে যা সম্ভাব্য বুদ্ধিমত্তা হতে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তায় রুপান্তরিত হয়।[৯] প্রকৃতপক্ষে প্রকৃত বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো প্রাথমিক বোধগম্যতা থেকে মাধ্যমিক বোধগম্যতা অর্জন করা এবং সেই বোধগম্যতাকে যেকোন সময় ব্যবহার করতে পারা। এই পর্বের বুদ্ধিমত্তার সাথে আকলুল বিল মালাকার মিল আছে। কিন্তু এর কাজ অনেক।[৪] প্রকৃত বুদ্ধিমত্তাকে জ্ঞানীয় ও তাত্ত্বিক বলা হয়। এই ধরনের বুদ্ধিমত্তাকে সাধারণ জ্ঞান হতে বিশেষ জ্ঞানের যাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বুদ্ধিমত্তা বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতার দ্বিতীয় স্তর।[১০] এই ধরনের যৌক্তিকতা মানুষকে ভুল ও ভ্রান্তি থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "مراتب عقل نظري - مدرسه فقاهت"www.eshia.ir। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৭ 
  2. Schwartz, Dov (২০০৫)। Central problems of medieval Jewish philosophy। Leiden: Brill। আইএসবিএন 90-04-14805-1ওসিএলসি 62127789 
  3. "'AQL"www.muslimphilosophy.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-০৭ 
  4. Groff, Peter S. (২০০৭)। Islamic philosophy A-Z। Oliver Leaman। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা ১৭০। আইএসবিএন 978-0-7486-2927-5ওসিএলসি 163587110 
  5. Sweetman, James (২০০২)। Islam and Christian theology : a study of the interpretation of theological ideas in the two religions। Cambridge, England: James Clarke Co। পৃষ্ঠা ৩৪৮। আইএসবিএন 0-227-17197-7ওসিএলসি 156909000 
  6. Whittingham, Martin (২০০৭-০৪-১১)। Al-Ghazali and the Qur'an: One Book, Many Meanings (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ১০৯। আইএসবিএন 978-1-134-18673-0 
  7. Morrison, Robert (২০০৭-০৯-১০)। Islam and Science: The Intellectual Career of Nizam Al-Din Al-Nisaburi (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ১৪৪। আইএসবিএন 978-1-135-98114-3 
  8. Taylor, Richard C.; López-Farjeat, Luis Xavier (২০১৫-০৮-২০)। The Routledge Companion to Islamic Philosophy (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ২৯৪। আইএসবিএন 978-1-317-48433-2 
  9. Craig, Edward (১৯৯৮)। Routledge Encyclopedia of Philosophy (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ৫৫৬। আইএসবিএন 978-0-415-16917-2 
  10. Words, texts, and concepts cruising the Mediterranean Sea : studies on the sources, contents and influences of Islamic civilization and Arabic philosophy and science : dedicated to Gerhard Endress on his sixty-fifth birthday। Gerhard Endress, Rüdiger Arnzen, J. Thielmann। Leuven: Peeters। ২০০৪। পৃষ্ঠা ৩১৯। আইএসবিএন 90-429-1489-0ওসিএলসি 55220013 
  11. Azadpur, Mohammad (২০১১)। Reason unbound : on spiritual practice in Islamic peripatetic philosophy। Albany: State University of New York Press। পৃষ্ঠা ৫২। আইএসবিএন 978-1-4619-0633-9ওসিএলসি 756496427