অ-হস্তক্ষেপবাদ
অ-হস্তক্ষেপবাদ বা অ-হস্তক্ষেপণ হলো একটি রাজনৈতিক দর্শন বা জাতীয় পররাষ্ট্র নীতির মতবাদ যা অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বিষয়গুলিতে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে । ১৯১৫ সালের একটি সংজ্ঞা অনুযায়ী অ-হস্তক্ষেপবাদ হলো একটি নীতি যা "এক বা একাধিক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের বাহ্যিক বিষয়ে তাদের সম্মতি ব্যতীত, বা তাদের সম্মতিতে বা তার সম্মতি ছাড়াই তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ" এর অনুপস্থিতি দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। [১]
এর সমর্থনে বলা হয় যে একটি রাষ্ট্রের অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এর অনুরূপ পরিভাষা হল "কৌশলগত স্বাধীনতা"। [২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]অ-হস্তক্ষেপের আদর্শ বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক নিরপেক্ষতা এবং স্পেনের গৃহযুদ্ধে জার্মানি এবং ইতালির সরাসরি হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও উদারপন্থী শক্তিগুলির নিষ্ক্রিয়তার জন্য এটি অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিল বলে মনে করা হয়। পরে আদর্শটি দৃঢ়ভাবে আন্তর্জাতিক আইনে জাতিসংঘের সনদের একটি কেন্দ্রীয় নীতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা অ-হস্তক্ষেপকে একটি মূল নীতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শান্তির উপর ভিত্তি করে।[১][৩]
কিন্তু স্নায়ু যুদ্ধের আবির্ভাবের ফলে এর পরিবর্তন হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানোর অজুহাতে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বিভিন্ন দেশে তা রোধ করার জন্য পাল্টা হস্তক্ষেপ করে। এই ধরনের অজুহাত গ্রহণ এবং এই ধারণা যে এই ধরনের হস্তক্ষেপগুলি "আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার" হুমকি রোধ করার জন্য ছিল জাতিসংঘ সনদের অধ্যায় VII এর অধীনে হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয়। অতিরিক্তভাবে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউএসএসআর উভয়েরই ভেটো ক্ষমতা থাকার কারণে শীতল যুদ্ধের সময় এই ধরনের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণে জাতিসংঘের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।
স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী
[সম্পাদনা]ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে মানবিক হস্তক্ষেপের একটি নতুন নীতির ধারণা উত্থিত হয়েছে, যা অ-হস্তক্ষেপের নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে। এই ধারণা অনুযায়ী, রাষ্ট্রগুলোর তাদের নাগরিকদের রক্ষা করার দায়িত্ব রয়েছে, এবং যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অন্য রাষ্ট্রগুলোর হস্তক্ষেপ করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে।[৪] এই ধারণা ইরাকে ১৯৯১ সালে অপারেশন প্রোভাইড কমফোর্ট এবং ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সোমালিয়ায় হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে, সোমালিয়ায় "ব্ল্যাক হক ডাউন" ঘটনার পর, যুক্তরাষ্ট্র রুয়ান্ডা ও হাইতির মতো সংঘাতে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়। কিছু বিরোধিতা থাকলেও, এই ধারণাটি ১৯৯৯ সালে কসোভো এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় হস্তক্ষেপের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে এই নতুন নীতি সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।[৪]
বিভিন্ন দেশ
[সম্পাদনা]চীন
[সম্পাদনা]চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে পারস্পরিক অ-হস্তক্ষেপবাদ একটি প্রধান নীতি হিসেবে ১৯৫৪ সাল থেকে রয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের পর, চীন শিল্প উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে শুরু করে এবং পরবর্তী কয়েক দশক ধরে সামরিক সংঘাত এড়িয়ে চলে।[৫] ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত, চীন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১১ বার ভেটো ব্যবহার করেছে।[৬] চীন প্রথম ভেটো দেয় ১৯৭২ সালের ২৫ আগস্ট, বাংলাদেশকে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব ব্লক করতে। ১৯৭১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে, চীন ভেটো ব্যবহার করেছিল খুবই কম, তারা সাধারণত চীনের স্বার্থের সাথে পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত প্রস্তাবের ক্ষেত্রে ভেটো না দিয়ে বিরত থাকতেই পছন্দ করত।[৭] ১৯৭১ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব গুলিতে ৩০% ক্ষেত্রে চীন বিরত ছিল।[৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Hodges, Henry G. (১৯১৫)। The Doctrine of Intervention। Princeton, The Banner press। পৃষ্ঠা 1।
- ↑ Carpenter, Ted Galen (১৯৯৭)। The Libertarian Reader। Free Press। পৃষ্ঠা 336–344। আইএসবিএন 978-0-684-83200-5।
- ↑ "Purposes and Principles of the UN (Chapter I of UN Charter) | Security Council"। main.un.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৯।
- ↑ ক খ Evans, Gareth (2004-09)। "When is it Right to Fight?"। Survival (ইংরেজি ভাষায়)। 46 (3): 59–81। আইএসএসএন 0039-6338। ডিওআই:10.1080/00396330412331343733। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Is China's non-interference policy sustainable?"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৯-১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ Library, Dag Hammarskjöld। "Research Guides: UN Security Council Meetings & Outcomes Tables: Vetoes"। research.un.org (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ Pei, Minxin (২০১২-০২-০৭)। "Opinion | Why Beijing Votes With Moscow"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-৩০।
- ↑ Bosco, David L. (২০০৯)। Five to rule them all : the UN Security Council and the making of the modern world। Internet Archive। Oxford ; New York : Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-532876-9।