অপকার নীতি
অপকার নীতি (Harm principle) বলে যে, কোন ব্যক্তির কার্যকে কেবলমাত্র অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতি বা অপকার প্রতিরোধ করতেই কোন ব্যক্তির স্বাধীনতা দ্বারা হস্তক্ষেপ করা হবে। জন স্টুয়ার্ট মিল তার অন লিবার্টি গ্রন্থে এই নীতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "একটি সভ্য সমাজে কোন ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তার উপর তখনই ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করা যায়, যখন তা অন্য কোন ব্যক্তির উপর সংঘটিত অপকারকে বাঁধা দেয়ার জন্য করা হয়।"[১] এর পূর্বে ফরাসী বিপ্লবের সময় ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে প্রকাশিত ডেক্লারেশন অফ দ্য রাইটস অফ ম্যান এন্ড অফ দ্য সিটিজেন - এ বলা হয়, "অন্য কারও ক্ষতি করে না এরকম সব কাজ করার স্বাধীনতাতেই প্রকৃত স্বাধীনতা নিহিত থাকে; তাই প্রত্যেক ব্যক্তিরই প্রাকৃতিক অধিকারের চর্চার কোন সীমাবদ্ধতা নেই যদি না তার দ্বারা সমাজের অন্য কোন ব্যক্তির একই রকম অধিকার অর্জনকে ব্যাহত হয়। এই সীমাবদ্ধতাসমূহ কেবল মাত্র আইন দ্বারাই নির্ধারিত করা যাবে।"
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]স্বাতন্ত্রবাদী রাজনীতিতে এই বিশ্বাসটিই একটি অন্যতম মৌলিক নীতি হয়ে উঠেছে যে, "কোন ব্যক্তিকেই তার ইচ্ছানুযায়ী কোন কার্যে কোন রকম বাঁধা প্রদান করা যাবে না, যদি না তার কোন কাজ অন্য কোন ব্যক্তির স্বাধীন কার্যের প্রতি বাঁধাদানকারী হয়।"[২]
"অপকার নীতি" শব্দটি ১৯৬৯ সালের পূর্বে ব্যবহৃত হয় নি, এই শব্দটি প্রথম পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহৃত হয় ইংরেজ চিন্তাবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল (১৮০৬-১৮৭৩) এর গ্রন্থ অন লিবার্টি (১৮৫৯)-তে[১] যেখানে তিনি লেখেন:
The object of this Essay is to assert one very simple principle, as entitled to govern absolutely the dealings of society with the individual in the way of compulsion and control, whether the means used be physical force in the form of legal penalties, or the moral coercion of public opinion. That principle is, that the sole end for which mankind are warranted, individually or collectively, in interfering with the liberty of action of any of their number, is self-protection. That the only purpose for which power can be rightfully exercised over any member of a civilized community, against his will, is to prevent harm to others. His own good, either physical or moral, is not a sufficient warrant. He cannot rightfully be compelled to do or forbear because it will be better for him to do so, because it will make him happier, because, in the opinion of others, to do so would be wise, or even right... The only part of the conduct of anyone, for which he is amenable to society, is that which concerns others. In the part which merely concerns himself, his independence is, of right, absolute. Over himself, over his own body and mind, the individual is sovereign.
এমনকি কোন ব্যক্তির নিজের করা কাজও যদি তার ক্ষতি করে, তবুও তা রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগের ক্ষমতার ঊর্ধ্বে হবে। অপকার করা নিজে একটি অনৈতিক কার্য নয়। অন্য কোন ব্যক্তির উপর অপকার করা হলেই কেবল সেই কার্য ভুল হয়।[৪] কোন বাধ্যতামূলক কাজের ব্যর্থতার মধ্য দিয়েও অপকার হতে পারে। নৈতিকতার ফলে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। কোব ব্যক্তির উপর ঋণ যেমন বর্তায় ঠিক তেমনি তার উপর দায়িত্বও বর্তাতে পারে, আর এটি দায়িত্বের ধারণার একটি অংশ যা কোন ব্যক্তি পূর্ণ বৈধভাবে বাধ্য থাকে।[৩][৪]
অবমাননা নীতি
[সম্পাদনা]মিলের অপকার নীতি অবমাননা নীতি (offense principle) থেকে আলাদা। এদের পার্থক্যের ভিত্তি হচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে মানসিক ও সামাজিক অপকার শারীরিক অপকারের সাথে তুলনাযোগ্য হতে পারে। পার্থক্যটি এই অনুসিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে যে, অবমাননা আবশ্যিকভাবে অপকার সাধন না করলেও অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। অবমাননা তখনই অপকার নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, কেবল যখন এর ফলে অপকারও সাধিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
অপকার নীতি বলে, কেবল সেইসব কার্যেরই বিরোধ করা যাবে যেগুলোর দ্বারা কেবলমাত্র অপরাধ সংঘটিত হয়, একজন ব্যক্তি যা খুশি তাই করতে পারেন যতক্ষণ না পর্যন্ত তার ফলে অন্য কোন ব্যক্তির কোনরকম অপকার হয়। যদি কোন ব্যক্তির কোন কার্য কেবল তাকেই প্রভাবিত করে, তাহলে সমাজের (যার মধ্যে সরকারও অন্তর্ভুক্ত) সেই ব্যক্তির চাহিদার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে থামানো উচিত নয়। আর এই কার্যসমূহের মধ্যে সেই সব কার্যও অন্তর্ভুক্ত হবে যেগুলোর দ্বারা ব্যক্তির নিজেরই অপকার ঘটে।
যাই হোক, অপকার নীতির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিতর্কের জন্ম হয়। যেমন এই অপকার নীতি মেনে চললে, কোন ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করতে চান, তাহলে তাকে সেটা করতে দিতে বাঁধা প্রদান করাও অপরাধ হয়।
অপকার নীতি ও অবমাননা নীতির মধ্যকার পার্থক্যকে ভালভাবে বোঝার জন্য আরও কিছু ধারণা সম্পর্কে অবগত হওয়া প্রয়োজন। প্রথম ধারণাটি হচ্ছে, এই অপকার নীতি আসে আরেকটি নীতির থেকে, যার নাম হল "উপযোগিতার নীতি" (principle of utility)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] উপযোগিতার নীতি বলে যে, মানুষের কেবল সেই সব কাজই করা উচিত যা সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণ সুখ তৈরি করে। সুতরাং, যদি কোন ব্যক্তি দুটো বিষয়ের মধ্যে তুলনা করেন, তাহলে তাকে সেই অপশনগুলোর মধ্যে একটা নির্ণয় করতে হবে যা বেশিরভাগ ব্যক্তিকে সুখী করবে।
দ্বিতীয় ধারণাটি হল, মিল বলেন অপকার ও অবমাননার মধ্যে একটি পার্থক্য আছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অপকার হচ্ছে তাই যা অন্য কোন ব্যক্তির অধিকারের বিঘ্ন ঘটাবে বা অন্যদের উপকার করে এরকম কোন গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাবে। অপকারের একটি উদাহরণ হতে পারে কোন ব্যক্তিকে আক্রমণ করা, তাদেরকে আহত করা। মিলের মতে, অবমাননা হচ্ছে, সেই কাজ যা "আমাদের অনুভূতিকে আঘাত করে"।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এই বিষয়টি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিরোধ করা উচিত নয়, কারণ যা একজনের অনুভূতিকে আহত করে, তা আরেকজনের অনুভূতিকে আহত নাও করতে পারে। আর তাই অবমাননা সার্বজনীন নয়।
তৃতীয় ধারণাটি হল, একটি কার্য কেবল কার্যনির্বাহী ব্যক্তিকেই প্রভাবিত করবে, এর সম্ভাবনা খুবই কম। মিল যুক্তি দেখান, কোন ব্যক্তিই অন্যান্য ব্যক্তিদের থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন নন, এবং বেশিরভাগ কার্যই গুরুত্বপূর্ণভাবেই অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে প্রভাবিত করে।
মানুষের বাকস্বাধীনতায় ঠিক কতটা সীমাবদ্ধতা আরোপ করা উচিত- এই নৈতিক প্রশ্নটি অপকার নীতি ও অবমাননা নীতি উভয়ের মধ্যেই প্রোথিত থাকে। যদি কোন ব্যক্তির স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার হিংস্রতা বা অনিষ্টকর্ম বা অনুরূপ ক্ষতির উৎপত্তি ঘটায়, তবে এটাকে অপকার নীতির আওতায় সীমাবদ্ধ করা হয়। যদি এই বাকস্বাধীনতা - মত প্রকাশের অধিকার দ্বারা জাতীয় পতাকা পোড়ানো, বিতর্কিত মিছিলের উদ্ভব ঘটে, তাহলে তাকে সাধারণত অবমাননা নীতির আওতায় সীমাবদ্ধ করা হয়।[৫]
অন্যদিকে যেসব ভুল কার্য ক্ষতি বা অপকার সৃষ্টি করে তাদের প্রত্যেককে অপরাধায়িত করা হলে অপকার নীতি অনেকটাই অবমাননা নীতির অনুরূপ হয়ে যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] যাই হোক, এক্ষেত্রে কোন বিষয়টি ভুল তার সংজ্ঞা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন হতে পারে। এমনও হতে পারে এমন একটি কার্যের দ্বারা অপকার ঘটল যাকে কার্যটি ঘটবার সময়ে ভুল ভাবা হত না।[৪][৬]
অপকারের বৃহত্তর সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]একই রচনায় মিল তার নীতিকে দুটো কথার দ্বারা ব্যাখ্যা করেছিলেন:
কথাগুলো হচ্ছে, প্রথমত, কোন ব্যক্তি তার কোন কার্যের জন্য সমাজের কাছে দায়বদ্ধ নন যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই কার্য তার নিজের ছাড়া অন্য কোন স্বার্থে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে। যদি কোন ব্যক্তি তার বা কার্যনির্বাহী ব্যক্তির স্বার্থে উক্ত কার্যকে সমর্থন না করেন, তবে উপদেশ, নির্দেশনা, প্ররোচনা এবং পরিহারকরণই হবে উক্ত কার্যের প্রতি অপছন্দ বা অননুমোদন প্রকাশের সঠিক ও বৈধ উপায়। দ্বিতীয়ত, যেসব কাজ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের স্বার্থের ক্ষেত্রে অনিষ্টকর, সেগুলোর জন্য কার্যনির্বাহী ব্যক্তি দায়বদ্ধ হবে, এবং তাকে সামাজিক বা আইনগত শাস্তি প্রদান করা যায়, যদি সমাজ মনে করে যে তার জন্য শাস্তি প্রয়োগ দরকার (LV2)
মিলের দ্বিতীয় কথাটি সামাজিক কর্তৃত্ব নীতি (social authority principle) নামে পরিচিত।[৪]
যাই হোক, দ্বিতীয় প্রশ্নটি অপকারের বৃহত্তর সংজ্ঞার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে আসে, কারণ এখানে সমাজের অপকারের ধারণাটি কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর দ্বারা সমষ্টির অপকারকেও বোঝানো হচ্ছে, যেখানে সেই সমষ্টিকে কোনরকম নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে না।
যেসব অপকার কেবল সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথেই ধীরে ধীরে সামনে আসে, সেসব অপকারকে নির্ধারণ করার জন্যও এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি - যেক্ষেত্রে ফলস্বরূপ ঘটা অপকারটিকে পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়, কিন্তু কার্যটির সংঘটনের সময় সেই অপকারটির অস্তিত্ব নেই। অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রেও এই নীতিকে ব্যবহার করা যায়, যেমন ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বর্জপদার্থ ফেলার মাধ্যমে দূষিত করার ক্ষেত্রে, লাইসেন্সিং এর ক্ষেত্রে, রাজদ্রোহের ক্ষেত্রে সঠিক নৈতিক পথ বের করার জন্য এই নীতির প্রয়োজন হয়।
আধুনিক উদাহরণ
[সম্পাদনা]যুক্তরাষ্ট্রের স্বাতন্ত্র্যবাদে অপকার নীতি
[সম্পাদনা]ইউনাইটেড স্টেটস লিবারটারিয়ান পার্টি তাদের আনুষ্ঠানিক দলীয় নীতিমালায় অপকার নীতির একটি ধরনকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখানে বলা হয়:
Criminal laws should be limited in their application to violations of the rights of others through force or fraud, or to deliberate actions that place others involuntarily at significant risk of harm. Therefore, we favor the repeal of all laws creating “crimes” without victims . . .[৭]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Freedom of Speech"। Stanford Encyclopedia of Philosophy। ১৭ এপ্রিল ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৩।
- ↑ Ronald Hamowy, The encyclopaedia of libertarianism, Sage, 2008, p. xxi, ISBN
- ↑ ক খ John Stuart Mill (১৮৫৯)। On Liberty। Oxford University। পৃষ্ঠা 21–22। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০২-২৭।
- ↑ ক খ গ ঘ Menezes Oliveira, Jorge। "Harm and Offence in Mill's Conception of Liberty" (পিডিএফ)। University of Oxford। ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১২।
- ↑ Cohen-Almagor, Raphael (১৯৯৩)। "Harm Principle, Offense Principle, and the Skokie Affair"। 41 (3)। Political Studies। ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১২।
- ↑ Simester, A.P.; von Hirsch, Andrew (২০০২)। "Rethinking the Offense Principle"। 8। Legal Theory। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১২।
- ↑ "2016 Platform"। Libertarian National Committee। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- THE MORAL LIMITS OF THE CRIMINAL LAW. By Joel Feinberg. New York: Oxford University Press. VOLUME ONE: HARM TO OTHERS. 1984. VOLUME TWO: OFFENSE TO OTHERS. 1985. VOLUME THREE: HARM TO SELF. 1986. VOLUME FOUR: HARMLESS WRONGDOING. 1988.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- Baselines, at Legal Theory Blog.