বিষয়বস্তুতে চলুন

অংশুমান রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অংশুমান রায়
জন্ম(১৯৩৬-০৮-১৯)১৯ আগস্ট ১৯৩৬
বাছুরডোবা গ্রাম মেদিনীপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিমবঙ্গ ভারত)
মৃত্যু২২ এপ্রিল ১৯৯০(1990-04-22) (বয়স ৫৩)
ধরনলোকসঙ্গীত,
পেশাকণ্ঠশিল্পী, সংগীতজ্ঞ
বাদ্যযন্ত্রমাদল
কার্যকাল১৯৫৬ – ১৯৯০
লেবেলহিন্দুস্তান রেকর্ড
এইচএমভি
ইনরেকো
টি-সিরিজ

অংশুমান রায় (১৯ আগস্ট ১৯৩৬ - ২২ এপ্রিল, ১৯৯০) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী, যিনি অসামান্য প্রতিভায় প্রায় তিন দশক ধরে বাংলা গানের জগতকে লোকসঙ্গীতে মাতিয়ে রেখেছিলেন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার দেশের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রীয় সম্মানমুক্তিযোদ্ধা সম্মান (মরণোত্তর) প্রদান করে। []

জন্ম ও সঙ্গীতশিক্ষা জীবন

[সম্পাদনা]

অংশুমান রায়ের জন্ম ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমার বাছুরডোবা গ্রামে। পিতা রামপদ রায় ও মাতা বিভাবতী রায়। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। তার প্রথম সঙ্গীত শিক্ষা বড়দা শঙ্কর রায়ের কাছে। মূলত রবীন্দ্র সঙ্গীত চর্চা করেন তার কাছে। রাগ প্রধান সঙ্গীত ও ঠুমরীর তালিম নেন সম্পর্কিত এক কাকার (পিতার এক বন্ধু) কছে। গানের পাশাপাশি তবলা,বেহালা বাঁশি ও মাদল বাজানো শেখেন।[] অংশুমান ঝাড়গ্রামের কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশন থেকে বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে পড়াশোনা করেন। এর পরে পাঁচের দশকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঝুমুর, ভাদু, টুসু – রাঢ় বাংলার তথা দক্ষিণ পশ্চিম বাংলার লোকসঙ্গীত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং গবেষণার জন্য দীর্ঘদিন পুরুলিয়ার অযোধ্যা, বাঘমুন্ডি, পঞ্চকুটের পাহাড়ি অঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে বসবাস করেন। তাই তাঁর গানে রাঢ় বাংলার লোকগীতির কথা, সুর ও বাদ্যযন্ত্রের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কলকাতায় এসে আধুনিক গানের চর্চা করেন প্রবীর মজুমদারের কাছে এবং বাংলা লঘু সঙ্গীতের শিক্ষা নেন পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে। [][]


তার কণ্ঠ গীত জনপ্রিয় গানের কয়েকটি হল-

  • ভাদর আশিন মাসে ভ্রমর বসে কাঁচা বাঁশে
  • সাঁঝে ফোটে ঝিঙা ফুল সকালে মলিন গো
  • দাদা পায়ে পড়ি রে মেলা থেকে বৌ এনে দে
  • আমার বঁধু মান করেছে
  • আর না থাকিয়ো বাপের ঘরেতে
  • বলি ও খোকার মা
  • আমার বেটার বিয়া দিব সময় হয়েছে
  • হায় হায় সাত পাকে বাঁধা পড়ো না

নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসাবে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য কণ্ঠদান করেছেন তিনি। কয়েকটি ছায়াছবি হল-

  • বাবা তারকনাথ (১৯৭৭)
  • চারমূর্তি (১৯৭৮)
  • করুণাময়ী (১৯৭৮)
  • দক্ষযক্ষ (১৯৮০)
  • বাতাসী (১৯৮০) ইত্যাদি[]

সম্মাননা

[সম্পাদনা]
  • ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে চারমূর্তি ছায়াছবিতে নেপথ্যে "ঘোচাং ফু, খাবো তোকে" গানটি গেয়ে সেরা পুরুষ গায়কের পুরস্কার লাভ করেন।
  • ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার রচিত শোন একটি মুজিবের থেকে লক্ষ মুজিবের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি.... বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ গানটি নিজের সুরে গেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ তাকে দেশের শ্রেষ্ঠ সম্মান মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মান, মরণোত্তর মুক্তিযোদ্ধা সম্মান বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক প্রদান করে।

পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান

[সম্পাদনা]

অংশুমান রায় কমলা ব্যানার্জীকে বিবাহ করেন। তাদের দুই পুত্র- সঙ্গীতশিল্পী ভাস্কর রায়, গিটার বাদক অন্তর রায় ও এক কন্যা মিতা গুহ রায়। স্ত্রী কমলা রায়ের মৃত্যুর দেড় মাস পর অংশুমান ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ২২ এপ্রিল প্রয়াত হন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "শিল্প-সাধক অংশুমান রায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১৯ 
  2. "আজও তাঁর সুরের ভ্রমর বসে কাঁচা বাঁশে, তবু রিমেকের ভিড়ে ব্রাত্য সঙ্গীতসাধক অংশুমান"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৭-১৯ 
  3. "অংশুমান রায়"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১৯