জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন
স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন | |
---|---|
জন্ম | গ্লেনাগারি ডাবলিন আয়ারল্যান্ড | ৭ জানুয়ারি ১৮৫১
মৃত্যু | ৭ মার্চ ১৯৪১ ক্যাম্বার্লে, সারে, ইংল্যান্ড | (বয়স ৯০)
পেশা | ভাষাবিজ্ঞানী ভারততত্ত্ববিদ |
পরিচিতির কারণ | লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া |
দাম্পত্য সঙ্গী | লুসি এলিজাবেথ জিন (বি.১৮৮০) |
আত্মীয় | জর্জ গ্রিয়ার্সন (পিতা) ইসাবেলা (মাতা) |
স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন ওএম KCIE FBA (৭ জানুয়ারি, ১৮৫১ - ৭ মার্চ, ১৯৪১) ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের আইরিশ প্রশাসক এবং একজন ইউরোপীয় ভারততত্ত্ববিদ। [১]
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ার্সনের জন্ম ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের শহরতলি গ্লেনাগারিতে। পিতা জর্জ গ্রিয়ার্সন ছিলেন মুদ্রক ও প্রকাশক এবং মাতা ইসাবেলা। তার প্রাথমিক পড়াশোনা সেন্ট বীস স্কুলে এবং পরে শ্রেউসবারিতে। এরপর ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ২৩ বৎসর বয়সে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেন এবং ২৮তম স্থান অর্জন করেন। ট্রিনিটি কলেজে দুবছরের প্রবেশনার হিসাবে থাকার সময় প্রাচ্য ভাষার অধ্যাপক রবার্ট অ্যাটকিনসনের প্রভাবে তার সংস্কৃত ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষা শেখার আগ্রহ জন্মে। [২] এমনকি আইসিএস হয়ে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে যোগ দেওয়ার আগে সংস্কৃত ও হিন্দি ভাষায় পারদর্শিতা অর্জনে পুরস্কার লাভও করেছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথমে বর্তমানে বিহার রাজ্যের বাঁকিপুরে সরকারী পদাধিকারী হিসাবে যোগ দেন। পরবর্তীতে পাটনার জেলাশাসক ও কালেক্টর হন।। [৩] পরে স্কুল ইন্সপেক্টর, অহিফেন এজেন্টসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। কর্মজীবনের প্রথম অধ্যায়ে তিনি সংস্কৃত, বিভিন্ন প্রাকৃত, পুরাতন হিন্দি, মৈথিলি, মগধি, ভোজপুরি, ছত্রিশগড়ি, কাশ্মীরি এবং বাংলা প্রভৃতি কথ্যভাষার অনুশীলন করেন। রংপুরে অবস্থানকালে সেখানকার উপভাষা, আঞ্চলিক ভাষার গতি-প্রকৃতিবিষয়ক আলোচনা করেন। এই আলোচনার বিষয়বস্তু উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক লোককথার সংগ্রহের উপর আলোচনার সঙ্গে ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে উত্তরবঙ্গের জনপ্রিয লোককাব্য "মাণিকচন্দ্রের গান" সংগ্রহ করে তার ইংরাজী অনুবাদসহ নাগরি লিপিতে ও পরে "গোপীচাঁদের গীত" অনুবাদসহ ওই পত্রিকা করেন। আব্রাহামের ভাষা বিষয়ে আলোচনা ও প্রাচ্যের সাহিত্যসংগ্রহের নিদর্শন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ব্রিটিশ ভারতে আব্রাহাম গ্রিয়ার্সনকে কর্ণধার করে 'লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া' নামে যে সংস্থা গঠিত হয়, ভারতে ভাষা-সমীক্ষার প্রয়োজন উপাদান সংগ্রহে তিনি লিপ্ত থাকেন।
সম্মাননা
[সম্পাদনা]গ্রিয়ারসন ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জুন মাসে ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অফ লেটারস লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রিয়ার্সন অর্ডার অফ মেরিটে (ওএম) নিযুক্ত হন এবং ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে স্যার উইলিয়াম জোন্স গোল্ড পদক লাভ করেন। (এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত) ছিলেন। তিনি ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে সিআইই নিযুক্ত হন এবং ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে নাইট কমান্ডার অফ দি অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার (কেসিআইই) হিসাবে নাইট উপাধিতে সম্মানিত হন। বিশ শতকের শেষের দিকে ভারতে 'ডক্টর জর্জ গ্রিয়ারসন পুরস্কার' নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। তিনি হ্যালে, কেমব্রিজ, অক্সফোর্ড এবং বিহারের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও বেশ কিছু সম্মানসূচক 'ডিলিট' ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৭ খ্রি থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ব্রিটিশ একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন এবং ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে জিপসি লর সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বেনারসে নাগরী প্রচারিণী সভার একজন সম্মানিত সদস্যও ছিলেন। [৪]
রচিত গ্রন্থসমূহ
[সম্পাদনা]- গ্রিয়ার্সন, জর্জ আব্রাহাম (১৮৯৮–১৯২৮)। লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। কলকাতা সরকারি প্রেস।
- গ্রিয়ার্সন, জর্জ আব্রাহাম। সেভেন গ্রামারস্ অফ দ্য ডায়াল্কেটস্ অ্যান্ড সাবডায়ালেক্টস্ অফ বিহারি ল্যাঙ্গুয়েজ (১৮৮৩-৮৭)। আইএসবিএন 81-7835-451-9।
- গ্রিয়ার্সন, জর্জ আব্রাহাম (১৮৮৫)। =বিহার পেজান্ট লাইফ। লণ্ডন টুবনার অ্যান্ড কোম্পানি।
- গ্রিয়ার্সন, জর্জ আব্রাহাম (১৯২০)। =এ ডিকশনারি অফ দ্য কাশ্মীরি ল্যাঙ্গুয়েজ। এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল, কলকাতা।
- গ্রিয়ার্সন, জর্জ আব্রাহাম। লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ১১ খণ্ডে,১৯ টি অংশ।
- গ্রিয়ার্সন, জর্জ আব্রাহাম। অ্যান ইনট্রোডাকশন অফ দ্য মৈথিলি ল্যাঙ্গুয়েজ অফ নর্থ ইন্ডিয়া।
শেষ জীবন ও জীবনাবসান
[সম্পাদনা]১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে আব্রাহাম ইংল্যান্ডে ফিরে যান। লন্ডনের নিকটস্থ ক্যাম্বার্লে পল্লীতে জীবনের শেষ আট ত্রিশ বৎসর ভারততত্ত্বের সাধনায় কাটান। যার ফলে কুড়ি খণ্ডের লিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া প্রকাশ সম্ভব হয়েছিল।
স্যার জন আব্রাহাম গ্রিয়ার্সন ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ডাবলিনের এক সার্জন মরিস হেনরি ফিটজেরাল্ড কলিসের কন্যা লুসি এলিজাবেথ জিনকে বিবাহ করেন, কিন্তু তাদের কোন সন্তান ছিল না। তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ প্রয়াত হন।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২০৭,২০৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ McGuire, James; Quinn, James (২০০৯)। Dictionary of Irish Biography। Royal Irish Academy-Cambridge University Press। আইএসবিএন 9780521633314।
- ↑ [J. L. M.] (১৯৪১)। "Obituary: Sir George Abraham Grierson, O.M.; 7 January, 1851-7 March, 1941.": 62–63। জেস্টোর 2793347।
- ↑ Anonymous (১৯৩৬)। Grierson Commemoration Volume.। The Linguistic Society of India। পৃষ্ঠা 2।