রুচি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রুচি বলতে মনে সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর হিসেবে অনুভূত হয়, এমন খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের জন্য সাময়িক মানসিক উদ্দীপনা, অভিলাষ বা আকাংক্ষাকে বোঝায়।[১] এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যার সাথে ক্ষুধার পার্থক্য আছে। ক্ষুধা হল শরীরে শক্তির অভাবের কারণে খাদ্য গ্রহণের জৈবিক চাহিদা। দেহে শক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব ক্ষুধার জন্ম দেয়। ক্ষুধাগ্রস্ত অবস্থায় খাদ্য লভ্য হলে খাবার খাওয়ার অভিলাষ তথা রুচির জন্ম হতে পারে, বা রুচি বেড়ে যেতে পারে; আবার ক্ষুধানিবৃত্তি হলে রুচি কমে যেতে পারে।[২] তবে ক্ষুধা ছাড়াও অতীতে কোনও সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করলে ঐসব পছন্দনীয় খাদ্য ও পানীয়ের জন্য একটি শেখা প্রতিক্রিয়া হিসেবে মনে রুচির জন্ম হতে পারে। অনেক সময় খাদ্যের দৃষ্টি, ঘ্রাণ, শব্দ, ইত্যাদি ব্যাপারগুলিও রুচিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া আচরণগত, ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, ইত্যাদি কারণেও রুচির কমবেশি হতে পারে। যেমন কোনও খাবার দেখতে সুদৃশ্য হলে ক্ষুধা না থাকলেও সেটি খেতে রুচি হতে পারে। আবার ক্ষুধা না থাকলেও ও পেট ভরা থাকলেও দলের বাকি সবাই কোনও কিছু খেলে সেটি খাওয়ার রুচি জাগতে পারে।[৩]

রুচি একটি প্রীতিকর অনুভূতি, যা মুখে লালারসপৌষ্টিকনালীতে অন্যান্য পরিপাক রসের ক্ষরণকে উদ্দীপ্ত করে। এছাড়া রুচির সুবাদে কোনও ব্যক্তি যথেষ্ট পরিমাণে খাবার খেয়ে বিপাকীয় চাহিদা পূরণ করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রণ করে ও এভাবে দেহ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে। পরিপাকনালী, মেদকলা ও মস্তিষ্কের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ আন্তঃক্রিয়া রুচিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

রুচির সাথে পুষ্টির কোনও সম্পর্ক নেই। পূর্ববর্তী কোনও সময়ে কোনও খাদ্য খাওয়ার প্রীতিকর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি মনস্তাত্বিক শেখা প্রতিক্রিয়া হিসেবে সেই খাদ্যের প্রতি রুচি গড়ে ওঠে। এ কারণে খাদ্য প্রস্তুতকারক বিশেষ উপায়ে খাদ্যের মুখরোচকতা বা রুচিকর বৈশিষ্ট্য বাড়িয়ে পুষ্টিহীন বা স্বল্পপুষ্টিযুক্ত খাদ্য ক্রেতার কাছে বারংবার বিক্রি করে লাভবান হতে পারে।[৪]

রুচি সব ধরনের উন্নত জীবে বিদ্যমান। প্রতিটি ব্যক্তির আচরণের সাথেও রুচির সম্পর্ক আছে। কেবলমাত্র রুচিমূলক আচরণ (বা নৈকট্যমূলক আচরণ) ও ভোগমূলক আচরণ --- এই দুই প্রক্রিয়াই দেহে শক্তির গ্রহণের সাথে জড়িত, অন্য সব আচরণ শক্তি নিঃসরণের সাথে সংশ্লিষ্ট।

তবে রুচির বিকারও ঘটতে পারে। রুচি কমে যাওয়াকে অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য (অ্যানোরেক্সিয়া) বলে। দীর্ঘদিন ধরে রুচি কম থাকলে সেটি বিভিন্ন ধরনের জটিল বা গুরুতর অসুখ বা রোগের নিদর্শন বা লক্ষণ-উপসর্গ হতে পারে কিংবা মানসিক চাপের নিদর্শন হতে পারে।[১] অন্যদিকে রুচি বেড়ে খাওয়ার পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে তাকে ভোজনাধিক্য, অত্যাহার বা অতিভোজন (পলিফেজিয়া polyphagia বা হাইপারফেজিয়া hyperphagia) বলে। অতিরিক্ত রুচি থাকলে অতিরিক্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ফলে অতিস্থূলতা রোগ হতে পারে। মানসিক চাপের কারণে বিশেষ বিশেষ তথাকথিত আরামদায়ক খাদ্য খাওয়ার রুচি বেড়েও যেতে পারে। এছাড়া রুচি নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অপক্ষুধা বা উদ্ভট বুভুক্ষা (Bullimia Nervosa বুলিমিয়া নার্ভোসা), অগ্নিমান্দ্য (Anorexia Nervosa অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা), দেহশীর্ণতা বা অতিকৃশতা (Cachexia ক্যাকেক্সিয়া), অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ রোগ (binge eating disorder), ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা বা রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Michael Kent (২০০৭), The Oxford Dictionary of Sports Science & Medicine (৩য় সংস্করণ), Oxford University Press 
  2. Egecioglu E, Skibicka KP, Hansson C, Alvarez-Crespo M, Friberg PA, Jerlhag E, ও অন্যান্য (সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Hedonic and incentive signals for body weight control"Reviews in Endocrine & Metabolic Disorders12 (3): 141–51। ডিওআই:10.1007/s11154-011-9166-4পিএমআইডি 21340584পিএমসি 3145094অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. Jacqueline B. Marcus (২০১৪), "Nutrition Basics: What Is Inside Food, How It Functions and Healthy Guidelines", Culinary Nutrition: The Science and Practice of Healthy Cooking Book  line feed character in |title= at position 64 (সাহায্য)
  4. R.J. Stubbs; J.E. Blundell (২০১৩), "Appetite: Psychobiological and Behavioral Aspects", Encyclopedia of Human Nutrition (৩য় সংস্করণ), Academic Press