জিনাতুন নেসা তালুকদার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অধ্যাপিকা
জিনাতুন নেসা তালুকদার
প্রতিমন্ত্রী মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
কাজের মেয়াদ
২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ – ১৫ জুলাই ২০০১
সংরক্ষিত মহিলা ৬ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৫ জুলাই ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১
সংরক্ষিত মহিলা ১১ আসনের সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
২৫ জানুয়ারী ২০০৯ – ২৪ জানুয়ারী ২০১৪
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯৪৭-০৭-০৯)৯ জুলাই ১৯৪৭
রাজশাহী
মৃত্যু২৯ অক্টোবর ২০২৩(2023-10-29) (বয়স ৭৬)
এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
দাম্পত্য সঙ্গীবীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহিল বাকী তালুকদার
পিতামাতাপারভেজ আলী মিয়া ও জহুরা খাতুন
শিক্ষাবি.এ (সম্মান)(ইতিহাস) এম.এ (ইতিহাস) এল.এল.বি (এ্যাডভোকেট)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীসরকারি পি এন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়
পুরস্কারবেগম রোকেয়া পদক ২০১৮

জিনাতুন নেসা তালুকদার (৯ জুলাই ১৯৪৭ — ২৯ অক্টোবর ২০২৩) বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার রাজনীতিবিদ ও বীরমুক্তিযোদ্ধা। যিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী।[১][২]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

জিনাতুন নেসা তালুকদার ৯ জুলাই ১৯৪৭ সালে রাজশাহী জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পারভেজ আলী মিয়া ও মাতা জহুরা খাতুন৷

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৬৩ সালে রাজশাহীর সরকারি পি এন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হন৷[১] ·১৯৭২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক ও ১৯৭৪ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং ১৯৮৫ সালে এল এল বি এডভোকেটশীপ সম্পন্ন করেন।

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

তার স্বামী বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহিল বাকী তালুকদার রাজশাহী জজ কোর্ট এর আইনজীবি এবং রাজশাহী আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা কালীন সদস্য ছিলেন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগ এর সহ-সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ২০১১ সালের ১২ জানুয়ারী পরলোক গমন করেন। তিনি দুই সন্তানের জননী। বড় ছেলে মাহমুদ হাসান ফয়সল ও ছোট ছেলে ফুয়াদ আদনান।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জিনাতুন নেসা তালুকদার কলেজ জীবন থেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷ তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। তিনি ৬ দফা আন্দোলনবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৭ সালে তিনি নওহাটা ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।[১]

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১[সম্পাদনা]

২৫শে মার্চ রাত্রে ঢাকাসহ সকল জেলায় পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর আক্রমন শুরু হলে ২৬শে মার্চ ভোর বেলায় রাজশাহীর রানীবাজার এর বাড়ি থেকে পবা থানায় শ্বশুড়বাড়ি পারিলায় অবস্থান গ্রহন এবং সেখান থেকে পার্শবর্তী থানাসমুহে নিয়োজিত ইপিআর সদস্যদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দান। ১৫ এপ্রিল রাজশাহী জেলার শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান কুখ্যাত আইনুদ্দিন ও রাজাকার মোসলেম চেয়ারম্যান স্বামী বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহিল বাকী তালুকদারের মাথার দাম ১০ হাজার টাকা ঘোষনা করলে সে ১৭ এপ্রিল দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এরপর দেশে থাকা বিপদজনক হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মামার সাথে ৩০ মে ভারতে গমন। সেখানে বহরমপুর হাসপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত ও বহরমপুর গোরাবাজার থেকে ৭নং সেক্টরে ৪নং সাব-সেক্টরের প্রশিক্ষনরত মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় সহযোগিতা। ১৯৭১ আগস্ট মাসে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে নারী মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প কোলকাতার ৮নং মহেন্দ্র রায় লেন "গোবরা ক্যাম্পে" প্রশিক্ষন গ্রহন। পরবর্তিতে শিয়ালদাহ্ রেলওয়ে হসপিটালে নার্সিং ট্রেনিং গ্রহন ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় নির্যাতিতা নারী পূর্নবাসন বোর্ডে দায়িত্বশীল সক্রিয় সদস্য হিসাবে কর্মকান্ডে অংশগ্রহন।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

১৯৬৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় নির্বাহি সদস্য হিসাবে রাজনীতির পথচলা। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, রাজশাহী জেলার সাংগঠনিক সম্পাদিকা নির্বাচিত। ১৯৯১ থেকে ২০১৭ বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় সদস্য ও রাজশাহী মহানগর এর সভানেত্রী হিসাবে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ থেকে ২০১১ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি এবং ২০১১ থেকে ২০২০ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ এর সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের দুর্দিনে রাজশাহী জেলায় আওয়ামী আর্দশের পতাকা বহনকারী হাতেগোনা যেকজন মুজিব ভক্ত ছিলো তাদের ভিতরে বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহিল বাকী তালুকদারমুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার অন্যতম। ১৯৯০ এর গনআন্দোলন পুর্ববর্তী সময়ে রাজশাহী মহানগরীর প্রতিটি ওর্য়াড মহিলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলা। ১৯৯৬ নির্বাচনের পূর্বে জনতার মঞ্চের শিল্পী জয় বাংলা শিল্পী গোষ্ঠির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন জিনাতুন নেসা তালুকদার এবং মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সাস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহন ও সহযোগিতা।

১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদদের মহিলা আসন ৬ থেকে তিনি মনোনীত সংসদ সদস্যপ্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন[৩] ১৪ জানুয়ারী ১৯৯৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ পর্যন্ত। প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর প্রতিমন্ত্রী হিসাবে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৯৮ থেকে ১৫ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিলো বাংলাদেশের মানুষ প্রথম জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়ন তথা সুশাষন উপলব্ধি করেছে। সেই সরকারের একজন উপমন্ত্রীপ্রতিমন্ত্রী হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বপালন করেছেন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সমগ্র বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজশাহী জেলার প্রতিটি উপজেলায় মহিলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মহিলা সমিতি অনুমোদন ও কার্যক্রমের ফলে নারীসমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় রাজশাহী জেলায় স্কুল, কলেজ ও মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভুমকিা পালন করেন। বিশেষ করে রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় ব্রীজ, কালর্ভাট, স্কুল, কলেজ ব্যাপক পরিমানে নির্মিত হয়েছে । ২০০১ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন রাজশাহী-৩ (বাগমারা-মোহনপুর) থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ ও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী হিসাবে ৭৭,৮০০ ভোট প্রাপ্তি কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে পরাজিত। ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে সারাদেশ তথা রাজশাহীতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী যে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো সেই সময় অব্যহত তাদের পাশে থেকে কর্তব্যপালন। ২০০৭ সালের ১/১১ ক্রান্তিকাল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে সম্পুর্ন আস্থাশীল থেকে বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভেনিউয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার কারান্তরীনের প্রতিবাদে মহিলা আওয়ামীলীগের সমাবেশ থেকে অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরীর নেত্রীত্বে কারাবরন করেন। ঢাকার শেরে বাংলা নগরে অস্থায়ী জেলখানার সামনে নেত্রীবৃন্দের সাথে প্রতিবাদী অবস্থান গ্রহণ ও আওয়ামীলীগ নেতা জিল্লুর রহমানের গুলশানের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলো আর্দশের প্রতি অবিচল আস্থার প্রকাশ।

"Women 2000: gender equality, development and peace for the twenty-first century" বিষয়ক Beijing Plus অধিবেশনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর প্রতিমন্ত্রী হিসাবে তিনি বাংলাদেশের দলনেতা এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৩ তম বিশেষ অধিবেশনে ভাষন দেন।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদদের মহিলা আসন ১১ থেকে মনোনীত সংসদ সদস্য ছিলেন।[২] মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

জিনাতুন নেসা তালুকদার নারী অধিকার বাস্তবায়নে ভুমিকা রাখায় বেগম রোকেয়া পদক ২০১৮ প্রাপ্ত হোন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় জাতীয় মহিলা সংস্থা সম্মাননা ২০১৩ প্রাপ্ত হোন। শিক্ষা সম্প্রসারনে অবদান রাখায় ১৯৯৮ সালে মীর মোশাররফ হোসনে পদক পান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন, প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই (২ এপ্রিল ২০১১)। "দেশ গড়ার কাজে রত মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা"ডয়চে ভেলে বাংলা। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "৯ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা"জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২০১৬-১১-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৭ 
  3. "৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।