চ'-ক্লঙ
চকলং বা চ'-ক্লঙ হল টাই আহোমদের ফ্রা-লুং ধর্ম নিয়ম অনুসারে প্রাচীন পুথি লাই লিত নাঙ হুন ফাত উল্লেখায় নিয়ম অনুসারে পালন করা এক প্রকারের ক্লঙ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান যে আহোম বিবাহ পরম্পরা তিনদিনের কার্যসূচীর তৃতীয় সময়ের অনেক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মুখ্য অনুষ্ঠান। টাই আহোম ভাষায় এর অর্থ হল চ=জোড়া লগুবা, ক্লঙ=পুজা।[১]
আরম্ভ[সম্পাদনা]
চকলং[২] বিবাহ পদ্ধতিতে প্রথমে আহোমদের দেবতা লেংদন অক কাই মহুং দেবতা রাজার জোষ্ঠা কন্যা নাং হুন ফাকে বিয়ে করতেই আরম্ভ হল এবং তার পর থেকেই অ-টাই মানুষের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আসছে।[১] টাই আহোমদের লাই-লিত নাং হুন ফা নামের পুথিটিতে এর বিষয়ে লেখা আছে। লংদন অক-কাই মহুঙের কন্যাকে বিয়ে করাম বলে সুন্দর রাঙা ফুলাম গামোছায় “চকলি ভার” বা “ সোধনি ভার” দেন। লেংদন ম-লাও খ্রির নেতৃত্বে কনের মা-বাবা এবং জ্যেষ্ঠজনকে পাঠানো এই ভারটি অক কাই ম হুং রাজা সাদরে গ্রহণ করেন। এবং তখনই মলাও খ্রি লেংদনের হয়ে এইমত টাই ভাষায়ে বলে-
“লেংদনে মৌং ফি নাং রুখাম লিত তি ব-ই
ফা নু রু লেংদনে মাউ ছেং রেং খাম
মুং ফি মুং বাণ নাং ফুং মি হান লোন য়াং
মাই জিয়ু নাং হুন ফা কা আও জাম য়ু
লেংদনে কাই কু রাই এন না ছেং ইন চিম লি মেক
মো ক’প বাউ প্লু চোং মাউ কা ঐ”
এবং পাণ তামোলের শরাইটি কনের মা-বাবার সম্মুখে রেখে মেয়ে চাইতে আসছে বলে। তাঁরাও শরাইটি হাতে ছুয়ে সম্মতি প্রদান করেন। এবং সাথে সাথে চকলং করতে সাজু হয়। তখন থেকেই আহোম সমাজে চকলং প্রথা চলে। আহোমদের চকলং প্রথাটি লেংদনে আরম্ভ করা প্রায় খ্রিঃ পূঃ ৫৫৮ থেকে হয় বলে অনুমান করেন। আহোম ভাষায় থাকা লাঈ-লিত-নাং-হুন-ফা নামের পুথিতে চকলং উল্লেখ আছে।
বিবরণ[সম্পাদনা]
আহোম বিবাহ পরম্পরা তিনদিন করা হয়। প্রথম দিন রিক খ্বন,দ্বিতীয় দিন চাও বান এবং তৃতীয় দিন চকলং অনুষ্ঠিত হয়। আহোমদের বিবাহ পদ্ধতিটিতে ২০টা নিয়ম আছে। ১. জোরণ এবং টেকেলি দেয়া. ২. নোবনী, ৩. প্রীতিভোজ, ৪. রিক্ খ্বান উৎসব, ৫. চাওবান উৎসব, ৬. আপলঙ করা বা গা ধোওয়া, ৭. গাঁঠিয়ন খুন্দা, ৮. দৈয়ন দিয়া, ৯. বিবাহ যাত্রা, ১০. সোবাগুড়ি তোলা, ১১. বর রভা নিচে মণ্ডপের সম্মুখে বসা, ১২.মধ্য থেকে তুলে এনে বরের বামদিকে কনেকে বসানো, ১৩. বর এবং কনেকে সাত পুরুষের ইতিহাস বলা, ১৪. চকলং আয়োজন, ১৫. কনের বরের হাতে হেংদান[২] প্রদান, ১৬. ম-লুঙে বর কনের যুগ্ম জীবনের জন্য দেওয়া উপদেশ, ১৭. সোনার আংটি এবং রুপার টেমি কাটারি চালানোর নিয়ম, ১৮. পঞ্চামৃত ভোজন, ১৯. কড়ি খেলার নিয়ম, ২০. কনের বরের শয়নকক্ষে প্রবেশ করার পর পাঁচ জন দেবতাকেে করা প্রর্থনা। চকল বিবাহ এক অহিন্দু টাই বিবাহ প্রথা। নিয়ম অনুসারে চকলংয়ে সিন্দুর, ওরণি, উরুলী প্রয়োগ করতে হয় না।[২] চকলংয়ের নীতি নিয়ম সম্পূর্ণ বানফি ফুরালুঙ ধর্মের অন্তর্গত।
রীতি-নীতি[সম্পাদনা]
সুবা গুড়ি তোলা[সম্পাদনা]
এই উৎসবটি কনের ঘরের নঙলা মুখে করা হয়। বর এসে কনের ঘর নঙলা মুখে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে কনের মা এবং সাথে বহুজন পুরুষ মহিলা স্বাগত জানাতে প্রথমে যায়। সাথে কনের কাছ থেকে দুলনী ও জ্বলতে থাকা বান-ফাইতে আসে। ভরি থুবার পীড়া এবং জল এলোটা আনে। এই প্রথমে আসা তিরোতাগুলিকে মা আঁর কাপড় দিয়ে ধরে আনেন। বর কাছে পাওয়া মাত্রই আঁর কাপড়টি এরিয়ে দেন। কনের সম্পর্কিত ছোট মেয়ে একজন পীড়া এনে বরকে ভরি ধোওয়ায়। বর মেয়েকে ভরি ধোওবার বাবদ পাণ-তামোলের টোপোলার সাথে কিছু টাকাও দেন। এরপর আঁর কাপড় সরিয়ে মাও বরের দুটি গালে দুটি চুমা খেয়ে চাদর আচল ধরে রভা তলায় আনেন।
রভাতলিতে চকলংয়ের মণ্ডপের সম্মুখে বসা[সম্পাদনা]
চকলংর বেদিতেও সাটোটা রঙের রাজকীয় একপাশ পদ্ম ফুলের আকৃতিতে সাজে। এবং এই পদ্ম ফুলের আকৃতি সাতটা রঙের মরলে জ্যামিতিক আকারে ভাগ করে ১০১ গাছি তেলের বান-ফাই জ্বালায়। সম্মুখে বরকে করে নিয়ে বসানো হয়। বরের বামদিকে কনেকে মধ্য থেকে এনে বসানোঃ- কনেকে মধ্যে কৌঠায় লগরীয়ার সাথে বসিয়ে রাখা হয়। এবং এখানে কনের লগরীয়া বরকে এবং তাঁর সম্পর্কিত থেকে জোরা নাম গেয়ে শরাই চায়। এরপরে কনেকে অলংকৃত করে এবং সুন্দর কাপড় পরিয়ে চকলং গুড়িতে আনতে সাজ করেন। অবশ্য কনেকে তুলে আনতে বরপরিবারের মানুষরা পাণ-তামোলের শরাই আগে বাড়িয়ে কনের সঙ্গে কনেকে চকলং গুড়িতে নিয়ে যায়। কনেকে আনার সময়ও আঁর কাপড় দিয়ে আনে। চকলংর গুড়ির করেতে বসানোর সময় আঁর কাপড় সরিয়ে বরের বামদিকে বসায়। রভাতলিতে কনের মা বাপকে এবং বয়স্কদের শরাইতে কাপড় কানে দিয়ে পাণ-তামোলের মান ধরে। কনে বামদিকে কনের বাবা বসেন এবং তিনি সম্মুখে ম-লুং জন বসেন। বর এবং কনেকে আগে সাতপুরুষের ইতিহাস বর্ণনা করাঃ- বিশেষকরে টাই আহোম চকলং বিবাহ পদ্ধতিতে বর কনেকে সাত পুরুষ কার্যাবলীর বর্ণনা করেন। এবং একটি পিনিচের কাঁহীতে সিংকরা ফুল তংলতী পাতা, তিল এবং একটি ঘিউ বান-ফাই বর-কনের সম্মুখে রাখে।
চকলং উৎসব[সম্পাদনা]
চকলং উৎসবে বর এবং কনের আগে চাউল ফুল ইত্যাদি রেখে প্রার্থনা করে। ওফ্রা বান চকলং চি চিম হিউ তিম। এরপরে কনের বাবাও বরকে সোনার আংটি নাইবা কাপড় উপহার দেন। এরপরে বড় বুঢ়া আঙুলি এবং কনের বুঢ়া আঙুলিতে জনমিং দেন। ম-লুঙ বর এবং কনে দুইজনকে মন্ত্র পাঠ করে কর্ম সম্পাদনা করেন। সিংকরা এবং অন্যান্য ফুলের একশ এপাহ ফুলের মালা বর কন্যাকে আকু কন্যা বরকে পড়ায়।
হেংদান প্রদান[সম্পাদনা]
কনে বরকে ফুল ঠুরীয়া তামোল ইত্যাদির সাথে হেংদানো অর্পণ করেন। বর এই হেংদান দেশ, ধর্ম জাতির রক্ষার্থে এবং দুষ্টকে দমনের জন্য গ্রহণ করেন।
মলুঙে বর কনেকে দেওয়া জনমিং[সম্পাদনা]
এই জনমিং টাই ভাষায় ম’লুং বা খাদাম লাও বলা হয়। বর এবং কনের যুগ্ম জীবনের উপলক্ষে এই জনমিং দেওয়া হয়। এর অর্থ একজনের অবিহনে অন্য জন কখনো কোনো কাজে সিদ্ধি লাভ করতে না পারে। এবং এর কারণে উভয়ে পরস্পর বোঝাবুঝি থাকা প্রয়োজন। এইমত মুলুঙ বর কনেকে নানা উপদেশ দেয়ার পর মলুঙয়ের কর্ম সমাপ্ত করেন।
আংটি এবং কাটারি চালানো নিয়ম[সম্পাদনা]
চকলং কর্ম সমাপ্ত হওয়ার পর বর কনেকে রভাতলি থেকে ভিতরে নেওয়া হয়। মধ্যে দুইজনকে কড়ি পড়া দুলনী চাউলে আংটি লুকিয়ে খুঁজতে দেওয়া হয়। এই কার্যে নানা ধামালির কথা বলে বর কনেকে নিয়ে লগরীয়া মেয়েরা রংগ ধামালি করে।
পঞ্চামৃত ভোজন[সম্পাদনা]
তারপর কনে নিজেদের সম্মুখে থাকা মাইহাঙ থেকে আখৈ পিঠা পরমান্ন পঞ্চামৃত অল্প অল্পকরে হাতে বরের মুখে তিনবার দেন। প্রতেক বারেই বরকে লোটার জলে মুখ ধোওয়ায় এবং দাঁত খরকিয়ায় দেয় এবং একটি বলে ঠুরীয়া তামোল খাওয়ায়। বরয়ো কনেকে সেইমতো পঞ্চামৃত খাওয়ায় এবং মুখ ধোওয়ায়, খরিকা দেয় এবং ঠুরীয়া তামোল খাওয়ায়।
নৈবদ্য[সম্পাদনা]
এরপর বর কনে বর কনের মা বাবাকে আঠু নিয়ে খ্রুপ-তাং করে বরের ঘরে যাত্রা করে। বরের বাড়ি যাওয়া মাত্রই বর-কনেকে বরের শোবার কোঠায় নিয়ে যায়। লাংকুরি, লারেং জান দেখে হুং, লেংদনে এবং জাসিংফা, এই পঞ্চ দেবতাকেে একটি শরাইতে পাণ তামোল এবং একগাছি বান-ফাইরে শান্তির জীবন যাপনের জন্য প্রার্থনা করে।
সাথে দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ (গগৈ ১৯৯৬)
- ↑ ক খ গ দীপালী গগৈ (08/2017), তাই আহোমদের বিবাহ পদ্ধতিতে এবং চকলঙ (অসমীয়া ভাষায়) অজানা প্যারামিটার
|accessmonth=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|accessyear=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|access-date=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|accessday=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য)
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- Diller, Anthony; Edmondson, Jerry; Luo, Yongxian (৩০ নভেম্বর ২০০৪)। The Tai-Kadai Languages। Routledge। আইএসবিএন 9781135791162 – Google Books-এর মাধ্যমে।
- Journal of the Indian Anthropological Society। The Society। ১৯৮১।
- Pushpa, Gogoi (১৯৯৬)। Tai of North East India। Chumphra Printers and Publishers।