কেন ব্যাঙ
কেন ব্যাঙ (Rhinella marina) যা দানবীয় নিওট্রপিকালটোড বা মেরিন ব্যাঙ নামে পরিচিত। এটি একটি বৃহৎ ,স্থলচর কুনোব্যাঙ যা দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার মুল ভূখণ্ডে পাওয়া যায়। তবে ওশেনিয়া,ক্যারিবীয় দ্বীপ এমনকি উত্তর অস্ট্রেলিয়াতেও এটির খোজ পাওয়া গেছে। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম কুনোব্যাঙ। এটি Rhinella গণের একটি সদস্য কিন্তু পূর্বে এটি Bufo গণের অধীনে বিন্যস্ত ছিল যেখানে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেকগুলো প্রকৃত কুনোব্যাঙ প্রজাতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কেন ব্যাঙ একটি উর্বর ব্রিডার। স্ত্রী ব্যাঙ হাজার হাজার ডিমযুক্ত একটি ক্লাম্প প্রসব করে। এর প্রজনন সাফল্য অনেকটা আংশিক যার কারণ হিসেবে বলা যায় এর সুযোগসন্ধানী খাদ্যাভ্যাস। এর এমন এক খাদ্যাভ্যাস রয়েছে যা কিনা অন্যান্য কুনোব্যাঙ প্রজাতির মধ্যে সচরাচর লক্ষ্য করা যায়না। এটি জীব ও জড়বস্তু সবকিছুই খেয়ে ফেলতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙের গড় দৈর্ঘ্য ১০-১৫ সেন্টিমিটার (৩.৯-৫.৯ইঞ্চি)। বৃহত্তম রেকর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একটি নমুনার নাসারন্ধ্র থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ সেন্টিমিটার (৯.৪ ইঞ্চি)।[১]
কেন ব্যাঙ | |
---|---|
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ব্যাঙ | |
পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ব্যাঙ | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Chordata |
শ্রেণী: | Amphibia |
বর্গ: | Anura |
পরিবার: | Bufonidae |
গণ: | Rhinella |
প্রজাতি: | R.marina |
দ্বিপদী নাম | |
Rhinella marina |
কেন ব্যাঙ একটি প্রাচীন প্রজাতি।সাবেক কলম্বিয়ার মায়োসিনের লা ভেন্টা ফউনা হতে প্রাপ্ত একটি কুনোব্যাঙের জীবাশ্মের সাথে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশে প্রাপ্ত আধুনিক কেন ব্যাঙের কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়না।[২] এটি একটি প্লাবনভূমির তলানিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল যা নির্দেশ করে যে দীর্ঘসময় ধরে খোলা স্থানসমূহ R.marina এর পছন্দসই আবাসস্থল ছিল।[৩]
কেনব্যাঙের বিষগ্রন্থি রয়েছে এবং ব্যাঙ্গাচিগুলো অধিকাংশ প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত বিষাক্ত যদি তা পাকস্থলীতে যায়। এর বিষাক্ত ত্বক বন্য ও গৃহপালিত সহ অনেক প্রাণী মারতে সক্ষম বিশেষকরে কুকুরের জন্য এটি বেশ বিপদজনক।[৪] এর মাত্রাতিরিক্ত খিদের জন্য একসময় এটিকে প্রশান্ত ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের অনেক অঞ্চলের কৃষিজমিতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হত। বেতের কীট (Dermolepida albohirtum) দমনে ব্যবহৃত হত বলে এ বিশেষ প্রজাতির নাম রাখা হয় কেন ব্যাঙ। তবে বর্তমানে এসব এলাকার অনেক অঞ্চলেই এখন কেন ব্যাঙকে আপদ ও আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১৯৮৮ সালে "কেন টোডসঃ অ্যান আন ন্যাচারাল হিস্ট্রি" ফিল্মে অস্ট্রেলিয়ায় কেন ব্যাঙকে জমিতে ব্যবহার করায় অস্ট্রেলীয়াবাসীদের যে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা তুলে ধরা হয় । ফিল্মটি আজও অস্ট্রেলিয়ার সেরা দশ বেস্ট সেলারের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিকভাবেই কেন ব্যাঙ আখ হতে কীটপতঙ্গ নির্মূলে ব্যবহৃত হত যার কারণে তারা এই নামে পরিচিত। কেন ব্যাঙের আরও অনেক সাধারণ নাম রয়েছে যেমন দানবীয় কুনোব্যাঙ, মেরিন কুনোব্যাঙ। পূর্বের নামটি তার আকারকে ইঙ্গিত করে আর পরের নামটি এসেছে তার দ্বিপদী নামকরণ R.marina হতে। এটি লিনিয়াস কর্তৃক রচিত সিস্টেমা ন্যাচুরা(১৭৫৮ সাল)[৫] বর্ণিত বহু প্রজাতির মধ্যে অন্যতম ছিল। লিনিয়াস ডাচ বিজ্ঞানী আলবার্টস সেবার একটি বিবরণের ওপর ভিত্তি করে একটি উপাধি দাঁড় করিয়েছিলেন, যিনি ভুলবশত বিশ্বাস করতেন যে কেন ব্যাঙ সমুদ্রে ও স্থলে উভয় জায়গাতেই বিচরণ করত।[৬] অন্যান্য সাধারণ নামগুলোর মধ্যে রয়েছে দানবীয় কুনোব্যাঙ [৭],দানবীয় নিওট্রপিকাল কুনোব্যাঙ[৮], ডমিনিকান কুনোব্যাঙ, দানবীয় সামুদ্রিক কুনোব্যাঙ[৯] এবং দক্ষিণ আমেরিকান কেন ব্যাঙ।[১০] ত্রিনিদাদীয় ইংরেজিতে এগুলোকে বলা হয় "ক্রাপড" যা কুনোব্যাঙের ফরাসি নাম।[১১]
Rhinella গণটিকে এটির নিজস্ব স্বতন্ত্র গণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে এটি তার বৈজ্ঞানিক নামকে পরিবর্তন করে। এক্ষেত্রে আইসিজিএন ঘোষিত লৈঙ্গিক শর্তের সঙ্গে একমত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট মেরিনাস (পুং) নামটি মেরিনা(স্ত্রী) তে রূপান্তরিত করা হয়। এতে দ্বিপদী নামটি Bufo marinus থেকে Rhinella marina তে পরিবর্তন করা হয়। দ্বিপদী নাম Rhinella marinus পরবর্তীকালে প্রমুক,রবার্টসন, সাইটস এবং নুনান(২০০৮ সাল) কর্তৃক ভুল বানান দ্বারা পরিচিতি পায়। বিতর্কিত থাকা সত্বেও (যদিও অনেক বুনিয়াদি সরীসৃপবিদ এখনো Bufo marinus নামটি ব্যবহার করেন) দ্বিপদী নামটি আইইউসিএন[১২], এনসাইক্লোপিডিয়া অব লাইফ[১৩], অ্যাম্ফিবিয়ান স্পিসিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড এবং ক্রমবর্ধমান বৈজ্ঞানিক প্রকাশনীর মত প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে আসছে।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত পূর্ণবয়স্ক কেনব্যাঙগুলো Limnodynastes,Cyclorana, এবং Mixophyes গণের ব্যাঙসমূহের সাথে অনেকটা মিলে যাওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তবে উক্ত প্রজাতিগুলোর কোনটিতেই চোখের পাশে বড় আকৃতির প্যারোটিড গ্রন্থি এবং নাসারন্ধ্র ও চোখের মধ্যবর্তী একটু উঁচু হাড় অনুপস্থিত থাকায় কেন ব্যাঙকে এসব প্রজাতি থেকে আলাদা করা যায়।[১৪]
কেন ব্যাঙকে অনেকসময় জায়ান্ট বুরোয়িং ব্যাঙ মনে করেও বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। কেননা তাদের উভয়ই দৈত্যাকৃতির এবং আঁচিলযুক্ত। যাইহোক জায়ান্ট বুরোয়িং ব্যাঙকে পরবর্তীতে এর খাঁড়া চোখের পাতা ও রুপালি ধূসর বর্ণের আইরিশ (কেন ব্যাঙের আইরিশ সোনালী বর্ণের) দেখে আলাদা করা হয়েছে।[১৫]
অপ্রাপ্তবয়স্ক কেন ব্যাঙগুলোর সাথে Uperoleia গণের ব্যাঙের মিল থাকায় কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তবে তাদের পূর্ণবয়স্ক জাতভাইদের উরু ও কুঁচকিতে উজ্জ্বল বর্ণের অনুপস্থিতি থাকায় সহজেই কেন ব্যাঙ থেকে পৃথক করা সম্ভব।[১৬]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন ব্যাঙ অনেকগুলো বুফোনিড প্রজাতির ব্যাঙের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বিশেষত এটিকে দক্ষিণাঞ্চলের কুনোব্যাঙ(Bufo terrestris) মনে করে বিভ্রান্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের কুনোব্যাঙগুলোর প্যারোটিড গ্রন্থিজোড়ার সামনে একজোড়া স্ফীত অংশ (বাল্ব) রয়েছে যা থেকে সহজেই একে কেন ব্যাঙ থেকে আলাদা করা যায়।[১৭]
প্রজননশাস্ত্র
[সম্পাদনা]কেন ব্যাঙের জিনোম বিন্যস্ত করা হয়েছে।[১৮]
বর্ণনা
[সম্পাদনা]কেন ব্যাঙ অনেক বড় আকৃতির হয়ে থাকে[১৯]। পুরুষদের চেয়ে স্ত্রী আবার বেশ দীর্ঘ হয়ে থাকে [১৯] এবং সাধারণত ১০-১৫ সেন্টিমিটার (৩.৯-৫.৯ইঞ্চি)[১৯] হতে সর্বোচ্চ ২৪ সেন্টিমিটার(৯.৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত দীর্ঘ হয়[১]। কম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত বড় ব্যাঙগুলোর দেখা মেলে[২০]। বুনো পরিবেশে তাদের আয়ু ১০-১৫ বছর হতে পারে এবং সংরক্ষিত অবস্থায় এরা আরও বেশ কয়েক বছর বাঁচতে সক্ষম[২১]। একটি নমুনায় প্ররমাণ মেলে যে একটি ব্যাঙ প্রায় ৩৫ বছর বেঁচে ছিল।[২২]
কেন ব্যাঙের ত্বক শুষ্ক এবং আঁচিলযুক্ত হয়ে থাকে[১৯]। এর চোখের উপর বিশেষধরনের খাঁজ রয়েছে যা নাসারন্ধ্র পর্যন্ত বিস্তৃত। কেন ব্যাঙ বিভিন্ন বরনের হয়ে থাকে যেমন ধূসর,হলুদাভ,বাদামী-লাল অথবা বাদামী-জলপাই বর্ণের ইত্যাদি[২৩]। প্রত্যেক চোখের পেছনে একটি করে বড় প্যারোটিড গ্রন্থি রয়েছে । উদরীয় পৃষ্ঠটি ক্রিম বর্ণের এবং এতে কালো-বাদামী ফুস্কুড়িও থাকতে পারে[১৯]। এদের চোখের তারাগুলো আনুভূমিক এবং আইরিজের বর্ণ সোনালী[১৫]। পায়ের আঙ্গুলগুলোর গোড়ায় মাংসল সংযোগ রয়েছে,তবে আঙ্গুলগুলো সংযোগমুক্ত।[২৩]
সাধারণত তরুণ কেন ব্যাঙের মসৃণ ও কালো চামড়া দেখা যায় যদিও কিছু নমুনায় লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। তরুণ ব্যাঙগুলোতে বড়দের মত বৃহৎ প্যারোটিড গ্রন্থি থাকেনা যে কারণে এরা অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত হয়ে থাকে[২০]। ব্যাঙ্গাচিগুলো ছোট ও সুষম কালো বর্ণের হয়ে থাকে এবং এরা জলাশয়ের তলানিতে ঝাঁক বেঁধে বাস করে[২৪]। ব্যাঙ্গাচিগুলো দৈর্ঘ্যে ১০-১৫ মিমি(০.৩৯-০.৯৮ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে।[২৫]
বাস্তুসংস্থান ,আচরণ ও জৈবিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]ব্যাঙটির সাধারণ নাম 'মেরিন টোড' এবং বৈজ্ঞানিক নাম Rhinella marina থেকে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে কেন ব্যাঙ সমুদ্র নিবাসী[২৬]। কিন্তু কেন ব্যাঙ সমুদ্রে বাস করেনা। তবে পরীক্ষাগারে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে যে ব্যাঙ্গাচিগুলো সমুদ্রের জলের ১৫%(৫.৪‰) পর্যন্ত লোনা জল সহ্য করতে সক্ষম[২৭] এবং সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে প্রমাণিত হয় পানামার কোইবা দ্বীপে ব্যাঙ্গাচি ও শিশু ব্যাঙগুলো ২৭.৫% লবণাক্ততাও সহ্য করতে পারে [২৮]। কেন ব্যাঙ খোলা তৃণভূমি ও বনভূমিতে বসবাস করে এবং মানুষের তৈরি বাগান ও নর্দমার গর্তকেও এরা আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে[২৯]। আদি বাসস্থানগুলোতে কেন ব্যাঙ সাবট্রপিক্যাল বনগুলোতে পাওয়া যেত যদিও ঘন লতাপাতা তাদের ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করত।[২৫][৩০]
কেন ব্যাঙের জীবনের শুরু হয় একটি ডিম থেকে যেগুলো জেলিসদৃশ পদার্থের দ্বারা ফিতার মত পানিতে ছড়িয়ে থাকে। স্ত্রী ব্যাঙ একবারে ৮০০০-২৫০০০ ডিম পাড়ে এবং এই ডিমযুক্ত ফিতার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ মিটার(৬৬ ফুট) পর্যন্ত সম্প্রসারিত করতে পারে। কালো ডিমগুলো একটি ঝিল্লি দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে এবং এগুলোর ব্যাস প্রায় ১.৭-২.০ মিমি(০.০৬৭-০.০৭৯ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিমগুলো ব্যাঙ্গাচিতে রূপান্তরিত হবার হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ব্যাঙ্গাচিগুলো সাধারণত ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই ডিম থেকে বের হয় তবে এ সময়টি ১৪ ঘণ্টা থেকে এক সপ্তাহ সময় পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার ব্যাঙ্গাচি উৎপন্ন হয় যেগুলো ছোট ছোট কালোবর্ণের ও ক্ষুদ্র লেজযুক্ত হয়ে থাকে এবং ঝাঁক গঠন করে অবস্থান করে। ব্যাঙ্গাচি থেকে তরুণ অবস্থায় পৌঁছাতে এদের সময় লাগে ১২ থেকে ৬০ দিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা চার সপ্তাহ হয়ে থাকে। তাদের পূর্ণবয়স্ক প্রতিরূপের মতই ডিম,ব্যাঙ্গাচি অনেক প্রাণীদের জন্য বিষাক্ত।
যখন ব্যাঙের বাচ্চাগুলো পানির উপরে উঠে আসে তখন এগুলো দৈর্ঘ্যে সাধারণত ১০-১১ মিমি(০.৩৯-০.৪৩ ইঞ্চি) হয়ে থাকে এবং দ্রুত বর্ধনশীল হয়। অঞ্চল, বছরের সময় ও লিঙ্গ অনুসারে বৃদ্ধির হার পরিবর্তিত হয়। তবে প্রতিদিন গড়ে বৃদ্ধির হার ০.৬৪৭ মিমি(০.০২৫৫ ইঞ্চি) পরিলক্ষিত হয়। পরিপূর্ণ যৌন জননে সক্ষম হওয়ার আগ পর্যন্ত এ দৈহিক বৃদ্ধি চলমান থাকে[৩১]। এই দ্রুত বৃদ্ধি তাদের টিকে থাকার জন্য আবশ্যক। রূপান্তর ও পরিণত অবস্থার পূর্ববর্তী পর্যায়ে অল্প বয়স্ক ব্যাঙগুলো তাদের বিষাক্ততা হারাতে থাকে যা তাদের ডিম ও ব্যাঙ্গাচি অবস্থায় রক্ষা করত এবং এখন তাদের প্যারোটিড গ্রন্থি তৈরি হওয়া বাকি যা বুফোটক্সিন বিষ উৎপন্ন করে[৩২]। প্রতিরক্ষার মূল উপকরণের অভাববশত কেবলমাত্র ০.৫% কেন ব্যাঙ পরিণত অবস্থায় যেতে পারে।[২০][৩৩]
বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে যে পর্যায়ে ব্যাঙগুলো যৌন পরিপক্বতা অর্জন করে তাতে অঞ্চলভেদে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। নিউগিনিতে স্ত্রী ব্যাঙের যৌন পরিপক্বতা অর্জিত হয় যখন এর নাসারন্ধ্র থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৭০ এবং ১০০ মিমি (৩.৫ এবঙ্গি ৩.৯ ইঞ্চি) হয়[৩৪]। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলসমূহে তাদের যেমন আদি বাসস্থানগুলোতে সারাবছরই প্রজনন ঘটে। তবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে শুধুমাত্র গরমকালে প্রজনন সংঘটিত হয় যা বর্ষাকালের শুরুতে হয়ে থাকে।[৩৫]
কেন ব্যাঙ সর্বোচ্চ ৪০০-৪২০ সেন্টিগ্রেড(১০৪০-১০৮০ ফারেনহাইট) এবং সর্বনিম্ন ১০০-১৫০ সেন্টিগ্রেড (৫০০-৫৯০ ফারেনহাইট) তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে[৩৬]। এই সীমাটি এলাকাভিত্তিক পরিবেশের সাথে অভিযোজনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে[৩৭]। কেন ব্যাঙের পানি বিয়োজনের ক্ষেত্রে উচ্চ সহনশীলতা রয়েছে। কোন কোন ব্যাঙ দেহের ৫২।৬% পানি হারালেও তা সহ্য করতে পারে যা তাদেরকে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবেশের বাইরেও টিকে থাকতে সহায়তা করে।
খাদ্য
[সম্পাদনা]বেশিরভাগ ব্যাঙ শিকারকে চলাফেরার দ্বারা চিহ্নিত করে এবঙ্গি এটিই কেন ব্যাঙের শিকার চিহ্নিতকরণের প্রাথমিক পদ্ধতি। তবে এতই এর ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমেও শিকার চিহ্নিত করতে সক্ষম[৩৮]। এর বৃহৎ পরিসরে খাদ্যবস্তু গ্রহণ করে থাকে। অধিকন্তু তারা তাদের স্বাভাবিক শিকার যেমন ছোট ইঁদুর, সরীসৃপ, অন্যান্য উভচর প্রাণী, পাখি এমনকি বাদুড় এবঙ্গি বিভিন্ন কীটপতঙ্গের পাশাপাশি উদ্ভিদ, কুকুরের খাবার এবং গৃহস্থালির উচ্ছিষ্ট সামগ্রীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।[৩৯][৪০]
প্রতিরক্ষা
[সম্পাদনা]প্রাপ্তবয়স্ক কেন ব্যাঙের চামড়া বিষাক্ত হয়ে থাকে। এদের চোখের পেছনে বর্ধিত প্যারোটিড গ্রন্থি ও পৃষ্ঠে বিদ্যমান অন্যান্য গ্রন্থিগুলোও বিষাক্ত হয়ে থাকে। বিপদে পরলে আত্মরক্ষার তাগিদে এটি তার গ্রন্থি থেকে দুধের মত সাদা তরল নিঃসরণ করে যা বুফোটক্সিন নামে পরিচিত[৪১]। বুফোটক্সিনের কিছু উপাদান অনেক প্রানীদের জন্যই বিষাক্ত[৪২]। এমনটাও জানা গেছে কেন ব্যাঙকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় অনেক মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে।[২৫] সাধারণত কুকুরেরা এ বিষক্রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয় ব্যাঙটির শরীরে কামড় দেয়া কিংবা লেহন করার মাধ্যমে। আপনি কেন ব্যাঙের এলাকার আশেপাশে অবস্থানকালে যদি লক্ষ করেন যে আপনার পোষা প্রাণীটি অতিরিক্ত রকমের কাঁপছে,মাড়ি মাত্রাতিরিক্ত লালবর্ণ ধারণ করেছে,প্রাণীটি মাথা ঝাঁকুনি দিচ্ছে, চিৎকার করছে,দিক চিনতে ভুল করছে কিংবা শরীরে খিঁচুনি দেখা দিয়েছে তবে দেরি না করে দ্রুত পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
কেন ব্যাঙ নিঃসরিত বুফোটক্সিন বিষটিকে অস্ট্রেলীয় আইনে গাঁজা ও হেরোইনের সাথে ক্লাস-১ মাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বুফোটক্সিনের প্রভাবগুলোকে মৃদু বিষের প্রভাব বলেই মনে করা হয়। এ বিষক্রিয়ার ফলে দৃষ্টিভ্রম ও ঘোরের উদ্রেক হয় যা এক ঘণ্টারও কম সময় জুড়ে স্থায়ী হয়। তবে যেহেতু কেন ব্যাঙ কম পরিমাণে বুফোটক্সিন নির্গত করে এবং অন্যান্য বিষ বেশি মাত্রায় নিঃসরণ করে সেকারণে ব্যাঙটিকে লেহন করলে মারাত্মক অসুস্থ হওয়া কিংবা মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে।
বিষ নির্গত করা ছাড়াও কেন ব্যাঙ তার ফুসফুস ফুলিয়ে শরীর স্ফীত করে এবং মাটি থেকে নিজেকে আলগা করে তুলে ধরে থাকে যাতে শিকারিদের কাছে নিজেকে আরও বড় আকারে প্রদর্শন করা যায়।
২০১১ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কিম্বারলে অঞ্চলে কিছু পরীক্ষকরা তাদের পোষা প্রাণীদের কেন ব্যাঙের মারাত্মক প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য এদের মাংসযুক্ত বিষাক্ত সসেজ ব্যবহার করেছিলেন। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়সহ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ সংরক্ষণ অধিদফতর দেশীয় পোষা প্রাণীগুলোকে কেন ব্যাঙকে ভক্ষণ না করার প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যে টোপগুলো তৈরি করেছিল। ব্যাঙের মাংসের কিমার সাথে বমি ভাব উদ্রেককারী রাসায়নিক মিশ্রিত করে টোপগুলো বানানো হত যার মাধ্যমে পোষা প্রাণীদের এসব ক্ষতিকর উভচর থেকে দূরে থাকতে প্রশিক্ষণ দেয়া হত।
শিকারি
[সম্পাদনা]বহু প্রজাতির প্রাণী এই কেন ব্যাঙ ও এর ব্যাঙ্গাচিকে শিকার করে খায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বড় নাকযুক্ত কেইমান (Caiman latirostris), ব্যান্ডযুক্ত ক্যাটআই সাপ(Leptodeira annulata), বাইম মাছ (Anguillidae পরিবারের ) , বিভিন্ন প্রজাতির কিলিফিশ , রক ফ্লাগটেইল মাছ (Kuhlia rupestris), কিছু মাগুর মাছের প্রজাতি ( Siluriformes বর্গের), কিছু দোচরার প্রজাতি (Threskiornithinae উপপরিবারের) এবং Paraponera clavata (বুলেট পিঁপড়া) ইত্যাদি।
কেন ব্যাঙের স্থানীয় এলাকা বহির্ভূত শিকারিদের মধ্যে রয়েছে হুইসেলিং চিল(Haliastur sphenurus), রাকালি ইঁদুর (Hydromys chrysogaster), কালো ইঁদুর (Rattus rattus) এবং জলজ গুইসাপ (Varanus salvator)। তামাটে ফ্রগমাউথ পাখিকেও কেন ব্যাঙ খেতে দেখা গিয়েছে এক সমীক্ষায়। কিছু অস্ট্রেলীয় কাক (Corvus spp) কেন ব্যাঙকে খাবার বিশেষ কৌশল শিখে নিয়েছে। এরা চঞ্চু দিয়ে ব্যাঙটিকে প্রথমে এর পৃষ্ঠে উল্টিয়ে নেয় ,এতে করে ব্যাঙটির বিষাক্ত পৃষ্ঠটি নিচে অবস্থান করে আর তখন এরা উদরীয় অংশ হতে ব্যাঙটিকে খাওয়া শুরু করে। ডিডেলফিস গোত্রের অপোসামরা সম্ভবত বাধাহীনভাবেই কেন ব্যাঙ খেতে পারে। মিট অ্যান্টরা কেন ব্যাঙের বিষ দ্বারা আক্রান্ত হয়না যার ফলে তারা ব্যাঙটিকে মারতে সক্ষম। আক্রমণের বিরুদ্ধে কেন ব্যাঙের সহজাত প্রতিক্রিয়া হল স্থির হয়ে বশে থাকা যাতে আক্রমণকারীরা বিষ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। আর পিঁপড়েরা ঠিক এ সুযোগটিই কাজে লাগায়।
ব্যাপ্তি
[সম্পাদনা]কেন ব্যাঙ আমেরিকার স্থানীয় এবং এর পরিসর দক্ষিণ টেক্সাসের রিও গ্র্যান্ড উপত্যকা থেকে শুরু হয়ে মধ্য আমাজন এবং দক্ষিণ-পূর্ব পেরু এবং ভেনেজুয়েলার নিকটবর্তী কয়েকটি মহাদেশীয় দ্বীপ (যেমন ত্রিনিদাদ ও টোবাগো) পর্যন্ত বিস্তৃত। এ অঞ্চলটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং আধাশুষ্ক উভয় পরিবেশ ঘিরে অবস্থান করছে। পূর্বে যে অঞ্চলগুলোতে কেন ব্যাঙের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল তার তুলনায় বর্তমানে এর আবাসগুলোতে কেন ব্যাঙের ঘনত্ব অনেক কম। দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে প্রতি ১০০ মিটার(১০৯ ইয়ার্ড) দূরত্ব জুড়ে প্রায় ২০ টির মত প্রাপ্তবয়স্ক কেন ব্যাঙ পাওয়া গিয়েছিল যা অস্ট্রেলীয়ায় প্রাপ্ত ব্যাঙের ঘনত্বের প্রায় ১ থেকে ২%।
পরিচিতি
[সম্পাদনা]কৃষিজমির কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে কেন ব্যাঙকে বিশ্বের নানা অঞ্চলের সাথে বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাথে পরিচয় করানো হয়েছিল। অঞ্চলগুলোর সাথে কেন ব্যাঙের প্রবর্তনের কথা বেশ ভালভাবেই নথিভুক্ত করা হয়ে আসছিল এবং এর মধ্যে কেন ব্যাঙ হতে পারে সবচেয়ে অধ্যয়ন করা প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
১৮৪০ দশকের শুরুতে ফরাসি গায়ানা এবং গিয়ানা থেকে মার্টিনিক এবং বার্বাডোসে কেন ব্যাঙকে পরিচয় করানো হয়েছিল। ইঁদুরের বংশবিস্তার রোধে ১৮৪৪ সালে জ্যামাইকাতে কেন ব্যাঙকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে ব্যার্থ হওয়া সত্বেও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পুয়ের্তোরিকোতে আখের আবাদে বিটল পোকার আক্রমণের বিপর্যয় ঠেকাতে কেন ব্যাঙ নিয়ে আশা হয়। পুয়ের্তোরিকান প্রকল্পটি সফল হয়েছিল এবং বিটল পোকা সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধ করেছিল। আর এ ঘটনাই পরে ১৯৩০ এর দশকে বিজ্ঞানীদের কৃষি জমির কীট দমনে আদর্শ সমাধান হিসেবে ব্যবহার করতে উৎসাহ যুগিয়েছিল। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পুয়ের্তোরিকোতে ব্যবহৃত পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল এবং ১৯৩০ এর দশকে এই কুনোব্যাঙটি আরও অনেক দেশের সাথে পরিচিতি অর্জন করেছিল। যে সব অঞ্চলে ব্যাঙটিকে পরিচয় করানো হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অস্ট্রেলিয়া, ফ্লোরিডা, পাপুয়া নিউগিনি,ফিলিপাইন,জাপানের ওগাসাওয়ারা, ইশিগাকি দ্বীপ এবং ডাইসে দ্বীপপুঞ্জ ,ক্যারিবীয় দ্বিপের অধিকাংশ, ফিজি ও হাওয়াই সহ অন্যান্য অনেক প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ। আর তখন থেকেই কেন ব্যাঙ এর অনেক আশ্রয়দাতা দেশগুলোতে বালাই হিসেবে পরিগণিত হয় এবং তা এলাকার স্থানীয় প্রাণীদের জন্য এক মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
অস্ট্রেলিয়া
[সম্পাদনা]পুয়ের্তোরিকোতে আখে জমিতে ক্ষতিকারক কীট খেয়ে ফেলার আপাত সাফল্য এবং হাওয়াই ও ফিলিপাইনে ফলপ্রসূ পরিচিতির পর কেন ব্যাঙকে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে বিটল পোকা আক্রান্ত আখের জমিতে অবমুক্ত করার জন্য জোর প্রয়াস চালান হয়েছিলো। এ কারণে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ থেকে ১০২ টি ব্যাঙ সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসা হয়। ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসে কুইন্সল্যান্ডের আখ বিজ্ঞানীগণ আখের জমিতে কেন ব্যাঙগুলোকে অবমুক্ত করেন। প্রথমিক অবমুক্তকরনের পরপরেই কমনওয়েলথের স্বাস্থ্য অধিদফতর সিদ্ধান্ত নেয় যে ব্যাঙটির খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত না হওয়া পর্যন্ত ভবিষ্যতে ব্যাঙটির অবমুক্তকরনের অপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। অধ্যয়নটি ১৯৩৬ সাল নাগাদ সমাপ্ত হয়েছিল পাশাপাশি বৃহৎ পরিসরে ব্যাঙ অবমুক্তকরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। ১৯৩৭ সালের মার্চ মাসে ৬২,০০০ টি ব্যাঙের বাচ্চা বন্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়েছিল। ব্যাঙগুলো কুইন্সল্যান্ডের ভূমিতে দৃঢ়ভাবে স্থায়ী হয় ও সংখ্যায় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং সেখান থেকে তারা তাদের পরিসরকে উত্তরাঞ্চল ও নিউ সাউথ ওয়েলসের দিকে সম্প্রসারিত করে[২৩]। ২০১০ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার সুদূর উপকূল অঞ্চল ব্রুমেতেও একটি ব্যাঙ পাওয়া যায়।
যাইহোক ব্যাঙগুলো ধূসর-কালো বর্ণের আখের বিটল পোকা(Dermolepida albohirtum) নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিল। যার কারণ হিসেবে আন্দাজ করা যায় দিনের বেলা আখের ক্ষেত শিকারিদের পর্যাপ্ত আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হত এবং আরেকটা কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে বিটল পোকাগুলো আখের উদ্ভিদের শীর্ষে অবস্থান করত আর কেন ব্যাঙ সেখানে আরোহণ করতে পারত না। এটির মূল পরিচিতির সূত্র ধরেই কেন ব্যাঙ অস্ট্রেলীয় জীববৈচিত্র্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে আসছে। স্থানীয় শিকারি সরীসৃপের একটি বড় অংশের হ্রাস ঘটেছে কেন ব্যাঙের আগমনের ফলে। যেমন ভারানিড পরিবারের গুইসাপ(Varanus mertensi),( V. mitchelli) এবং (V. panoptes) ,জমির সাপ( Pseudechis australis) ও Acanthophis antarcticus এবং কুমিরের প্রজাতি (Acanthophis antarcticus) ইত্যাদি প্রাণীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছিল। অপরদিকে অ্যাগামিড লিজার্ডের( Amphibolurus gilberti) সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল যা V. panoptes গুইসাপের অন্যতম শিকার বস্তু ছিল।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ
[সম্পাদনা]স্থানীয় ফসলের জমিতে বেশ কয়েক ধরনের কীটের মোকাবেলায় বিভিন্ন ক্যারিবীয় দ্বীপসমূহে কেন ব্যাঙ নিয়ে আসা হয়। তখন এটি কিছু দ্বীপপুঞ্জে যেমন বার্বাডোস, পুয়ের্তোরিকো ও জ্যামাইকাতে নিজেকে স্থায়ী করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে অন্যান্য জায়গায় যেমন ১৯০০ সালের পূর্বে কিউবায়, ১৯৪৬ সালে ডোমিনিকায় এবং গ্র্যান্ড কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে এর পরিচিতি ততটা সাফল্য পায়নি।
সর্বপ্রথম রেকর্ডকৃত পরিচয় করানো হয় বার্বাডোস ও মার্টিনিকেতে। বার্বাডোসে কেন ব্যাঙের পরিচিতির মাধ্যমে আখের ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীট পতঙ্গের জৈবিক নিয়ন্ত্রণের ওপর দৃষ্টি আরোপ করা হয়েছিল। আর যখন কেন ব্যাঙের সংখ্যা বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি পেল তখন তারা বরং কীট পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে তেমন কোন ভূমিকাই পালন করছিলনা। ১৯৪৪ সালের পূর্বে ফরাসি গায়ানা থেকে ব্যাঙগুলোকে মার্টিনিকেতে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে তারা স্থায়ী হয়।
বর্তমানে এগুলো সেখানে মশা ও ঝিঁঝিঁপোকার বংশবিস্তার রোধে ভূমিকা রাখছে। এই অঞ্চলে তৃতীয়বারের মত ব্যাঙটিকে পরিচয় করানো হয়েছিল ১৮৮৪ সাল নাগাদ,যখন জ্যামাইকাতে ব্যাঙগুলো আনা হয়, সে সময়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ইঁদুরের বংশবিস্তার রোধে বার্বাডোস থেকে ব্যাঙগুলোকে আমদানি করা হয়। যেহেতু ইঁদুর নিয়ন্ত্রণে ব্যাঙগুলোর তেমন উল্লেখযোগ্য প্রভাব ছিলনা তবুও সেখানে এগুলো ভালভাবেই স্থায়ী হয়ে যায়। অন্যান্য পরিচিতিগুলোর মধ্যে অ্যান্টিগায় ব্যাঙ অবমুক্তকরন উল্লেখযোগ্য যা খুব সম্ভবত ১৯১৬ সালের দিকে ঘটেছিল। যদিও ১৯৩৪ সালে প্রথমদিকে ব্যাঙগুলো মারা গিয়েছিল , পরবর্তিতে সেখানে পুনরায় ব্যাঙ নিয়ে আসা হয়। আর মন্টসেরাটায় এগুলো ১৮৭৯ সালের পূর্বেই পরিচয় করানো হয় যেখানে ব্যাঙগুলো বেশ স্থায়ীভাবেই বসবাস শুরু করেছিল এমনকি ১৯৯৫ সালে সংঘটিত সাউফ্রিয়া হিলসের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকেও বাঁচার পক্ষে যথেষ্ট ছিল।
১৯২০ সাল নাগাদ কেন ব্যাঙ পুয়ের্তোরিকোয় আনা হয় আখের এক ধরনের সাদা কীট দমনের উদ্দেশ্যে । ব্যাঙগুলোকে আনার পূর্বে মানুষ দ্বারা এই কীটগুলোকে সংগ্রহ করা হত। কাজেই ব্যাঙ নিয়ে আসায় মানুষের শ্রমিক খরচ কমে যায়। ১৯২৩ সালে কেন ব্যাঙের দ্বিতীয় দল আমদানি করা হয় এবং ১৯৩২ সালের দিকে কেন ব্যাঙ বেশ ভাল ভাবেই স্থায়ী হয় সেখানে। সাদা কীটগুলোর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পায় এবং এর জন্য কেন ব্যাঙের ভূমিকাকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখা হয় পুয়ের্তোরিকোতে অনুষ্ঠিত আখ বিশারদদের বার্ষিক আলোচনাসভায়। তবুও অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। ১৯৩১ সালের পরের ছয় বছরের সময়কাল জুড়ে যখন কেন ব্যাঙের জন্য সবচেয়ে উর্বর সময়কাল ছিল এবং সাদা কীটের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গিয়েছিল তখন পুয়ের্তোরিকোতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছিল। যদিও কেন ব্যাঙ সাদা কীটের বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। একটি প্রবন্ধ দ্বারা এ দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী হয় যার শিরোনাম ছিল "ব্যাঙ আখের ফসল রক্ষা করে" এই নামে। আর এর ফলেই পরবর্তীতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনেক অঞ্চলসমূহে ব্যাঙটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
কেন ব্যাঙ ক্যারিবীয় ও ডোমিনিকাতেও পাওয়া গিয়েছিল যেখানে পূর্বের ভূমিকা ব্যর্থ হওয়া সত্বেও পরবর্তীতে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাহামার নিউ প্রভিডেন্স দ্বীপেও কেন ব্যাঙের উপস্থিতির সন্ধান পাওয়া যায়।
ফিলিপাইন
[সম্পাদনা]পুয়ের্তোরিকোতে পরীক্ষামূলকভাবে কেন ব্যাঙ ব্যবহারে সাফল্য অর্জিত হওয়ায় ১৯৩০ সাল নাগাদ ফিলিপাইনে আখের ক্ষেতে কীটপতঙ্গের জৈবিক নিয়ন্ত্রণে কেন ব্যাঙ ব্যবহৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি দ্বীপপুঞ্জের সর্বব্যাপী বিরাজমান উভচর হয়ে উঠে। ভিসায়ান ভাষায় এটি এখনও এর সাধারণ নাম 'বাকি' অথবা 'কামপ্রাগ' ধরে রেখছে যা 'আমেরিকান ব্যাঙ' এর বিকৃত নাম এবং যার মাধ্যমে ব্যাঙটির আদি উৎসকেও নির্দেশ করা হয়। এটি ফিলিপিনো ইংরেজিতে সাধারণত 'বুলফ্রগ' নামে পরিচিত।
ফিজি
[সম্পাদনা]আখের আবাদি জমিতে আক্রমণকারী পোকামাকড় দমনের উদ্দেশ্যেই মূলত কেন ব্যাঙকে ফিজিতে আনা হয়। পুয়ের্তোরিকো এবং হাওয়াইয়ের সাফল্যের পর ১৯৩৩ সালে এ অঞ্চলে কেন ব্যাঙ আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিবেচনা করার পর ফিজির সরকার ১৯৫৩ সালে কেন ব্যাঙ জমিতে অবমুক্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে হাওয়াই থেকে ৬৭ টি ব্যাঙকে নমুনা হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল। ব্যাঙগুলো সেই স্থানগুলোতে স্থায়ী হবার পর ১৯৬৩ সালে একটি সমীক্ষার উপসংহারে উল্লেখ হয় যে "কেন ব্যাঙের খাদ্যতালিকায় উপকারী ও ক্ষতিকারক উভয় ধরনেরই অমেরুদণ্ডী প্রাণী রয়েছে" । তাই এই ব্যাঙটিকে তখন "অর্থনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ" প্রজাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। বর্তমানে ফিজির সকল প্রধান দ্বীপগুলোতে কেন ব্যাঙ পাওয়া যায়, যদিও এগুলো অন্যান্য অঞ্চলে প্রাপ্ত ব্যাঙ থেকে কিছুটা ছোট।
নিউ গিনি
[সম্পাদনা]নিউগিনিতে কেন ব্যাঙের প্রচলন শুরু হয়েছিল মূলত মিষ্টি আলুর ক্ষেতের জন্য ক্ষতিকারক হক মথের লার্ভা ধ্বংস করার জন্য। সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে হাওয়াই থেকে আমদানিকৃত ব্যাঙগুলোকে সেখানে অবমুক্ত করা হয়েছিল। অই একই বছর দ্বিতীয়বারের মত অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে নিয়ে আসা কিছু ব্যাঙের নমুনাও অবমুক্ত করা হয়েছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো ১৯৩৮ সালে তৃতীয় অবমুক্তকরণের দিকে নির্দেশ করে যেখানে মানুষের গর্ভাবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য ব্যাঙগুলো ব্যবহৃত হত। অনেক প্রজাতির ব্যাঙই এ কাজের জন্য কার্যকর বলে প্রমাণিত হয় এবং ১৯৪৮ সালে আবিষ্কারটির কথা ঘোষণার পর প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যাঙগুলোকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনে যুক্তি দেয়া হয়েছিল যে ব্যাঙগুলো লেদা পোকার সংখ্যা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছিল এবং এর ফলে মিষ্টি আলুর ফলনও অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ফলস্বরূপ প্রথম অবমুক্তির পথ অনুসরণ করেই পরবর্তীতে আরও অনেক অঞ্চলে ব্যাঙগুলো ব্যাপক বিস্তৃতি পায়। যদিও সে সময় অন্যান্য ফসল যেমন বাঁধাকপির ফলন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল যখন ব্যাঙগুলোকে ওয়াউতে অবমুক্ত করা হয়। সেখানে যখন ব্যাঙগুলোকে ছাড়া হয় তখন বাঁধাকপির ক্ষেত সেগুলোকে আশ্রয় দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলনা। যার ফলে ব্যাঙগুলো আরও ভাল মানের আশ্রয় পাবার জন্য তাৎক্ষনিকভাবে বাঁধাকপির ক্ষেত ত্যাগ করে এবং বনের ভেতরে আশ্রয় অনুসন্ধান শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার আখের ক্ষেতগুলোতেও পূর্বে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে নিউগিনিতে এ ধরনের কোন অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জানা যায়নি অথবা জানা গেলেও সেটিকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। আর তখন থেকেই গ্রাম্য ও শহরাঞ্চলগুলতে কেন ব্যাঙের ব্যাপক সংখ্যাধিক্য রয়ে গেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
[সম্পাদনা]প্রাকৃতিকভাবেই কেন ব্যাঙ দক্ষিণ টেক্সাসে পাওয়া যায়। তবে এ প্রজাতিগুলো (ইচ্ছাকৃত কিংবা দুর্ঘটনাবশত) দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিলো। এর মধ্যে ফ্লোরিডা এবং হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ব্যাঙগুলো প্রচলনের পাশাপাশি লুইসিয়ানাতে এর প্রচলনের সম্পূর্ণ ব্যর্থ প্রয়াসের ঘটনাও উল্লেখযোগ্য। ফ্লোরিডায় প্রাথমিক অবমুক্তকরণ প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হয়েছিল। ১৯৩৬ এবং ১৯৪৪ সালের পূর্বে আখের জমিতে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ রোধের পরিকল্পণা ব্যর্থ হয় কারণ ব্যাঙগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যায় বংশবৃদ্ধি করতে সমর্থ ছিল না। পরবর্তী পদক্ষেপগুলোও এভাবেই ব্যাহত হয়েছিল। তবে ১৯৫৭ সালে মিয়ামি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আগত এক আমদানিকারক দ্বারা দুর্ঘটনাবশত অবমুক্তির পর ব্যাঙগুলোর এ রাজ্যে প্রবেশ ঘটে এবং ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে পশুব্যাপারীদের দ্বারা যথেচ্ছ অবমুক্তকরণের পরপরই ব্যাঙগুলো ফ্লোরিডার অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে প্রবেশ করতে সমর্থ হয়। বর্তমানে কেন ব্যাঙ এ রাজ্যে বেশ স্থায়িভাবেই বসবাস করছে যেখানে এরা কীজ থেকে উত্তরের টেম্পা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে এবং এগুলো ধীরে ধীরে আরও উত্তর দিকে প্রসার লাভ করছে। ফ্লোরিডায় ব্যাঙটিকে স্থানীয় প্রজাতি ও পোষা প্রাণীদের জন্য এতটাই হুমকিস্বরূপ বিবেচনা করা হয় যে ফ্লোরিডা মৎস্য ও বন্যজীবন সংরক্ষণ কমিশন সেখানকার বাসিন্দাদের এগুলোকে হত্যা করার পরামর্শ দেয়।
১৯৩২ সালে হাওয়াইয়ের ওয়াহুতে ১৫০ টি কেন ব্যাঙ নিয়ে আসা হয় এবং ১৭ মাস পরই এদের সংখ্যা ১০৫৫১৭ টি তে উন্নীত হয়। ব্যাঙগুলো অন্যান্য দ্বীপসমূহেও প্রেরণ করা হয়েছিল এবং ১৯৩৪ সালের জুলাই নাগাদ আরও এক লক্ষেরও বেশি ব্যাঙ বিতরণ করা হয়েছিল। অবশেষে ৬০০০০০ ব্যাঙ স্থানান্তর করা হয়েছিল।
ব্যবহার
[সম্পাদনা]পোকামাকড়ের জৈবিক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার ছাড়াও কেন ব্যাঙ বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাঙগুলোর প্রাকৃতিক আবাসস্থলসমূহের পরিসীমার মধ্যে এম্বেরা-ওউনান উপজাতিরা ব্যাঙগুলোর বিষ আহরণের জন্য তাদের দুধ খেতে দিত। এ বিষ তারা তীরের ফলায় লাগাত। বিষগুলো ওলমেক আদিবাসীরা এন্থিওজেন হিসেবে ব্যবহার করে থাকত। পেরুর কিছু অঞ্চলে ব্যাঙটিকে খাদদের উৎস হিসেবে শিকার করা হত এবং সাবধানে চামড়া ও প্যারোটিড গ্রন্থি অপসারণের পর তা ভক্ষণ করা হত। ভালভাবে প্রস্তুত করার পর ব্যাঙের মাংস উপাদেয় খাদ্য এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খুব সম্প্রতি ব্যাঙটির বিষ বেশ কয়েকটি নতুন উপায়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জাপানে বুফোটক্সিনকে যৌন উত্তেজক এবং চুল পুনরুদ্ধারকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। চীনে এটি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের হৃদযন্ত্রের অপারেশনের সময় হৃদকম্পন স্তিমিত করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে[২৫]। নতুন গবেষণা বলে কেন ব্যাঙের বিষ প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে। হাইতিতে স্থানীয় এ ব্যাঙের বিষটি ধুতুরা ও পাফারফিশ এর বিষের সংমিশ্রণে "জম্বি বিষ" তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল যার উল্লেখ পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে ওয়েড ডেভিস রচিত "দ্য সার্পেন্ট অ্যান্ড দ্য রেইনবো" নামক বইটিতে।
কেন ব্যাঙের অন্যান্য আধুনিক ব্যবহারগুলোর মধ্যে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা, পোষা প্রাণী হিসেবে ব্যবহার এবং চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা উল্লেখযোগ্য। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মহিলার প্রস্রাব কেন ব্যাঙের লসিকা থলিতে ইঞ্জেকশানের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হত এবং ব্যাঙের প্রস্রাবে শুক্রাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলে মহিলাটিকে গর্ভবতী বলে মনে করা হত। অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের তুলনায় ব্যাঙ ব্যবহার করে এ পরীক্ষাটির ফলাফল বেশ দ্রুত পাওয়া গিয়েছিল। আবার ব্যাঙগুলোকে লালনপালন করাও অনেক সহজ ছিল। সেগুলো সংখ্যায়ও প্রচুর ছিল। তাছাড়া ব্যাঙগুলোর দেখভাল,যত্ন করতেও খরচ হতনা বললেই চলে। এসব পরীক্ষায় কেন ব্যাঙের ব্যবহার ১৯৫০ এর দশকে শুরু হয়েছিল এবং ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকে বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রফতানির উদ্দেশ্যে বিপুল সংখ্যক ব্যাঙ সংগ্রহ করা হয়েছিল। তখন থেকেই অনেক অস্ট্রেলীয় রাজ্য আমদানি বিধি প্রবর্তন করেছিল কিংবা কোন ক্ষেত্রে তা কঠোরও করেছিল।
এমনকি মৃত ব্যাঙেরও মূল্য রয়েছে। কেন ব্যাঙের চামড়া হতে অভিনব চামড়াজাত দ্রব্যাদি তৈরি হয়ে আসছে। স্টাফকৃত কেন ব্যাঙগুলো বিভিন্ন ভঙ্গিমায় রেখে আনুষঙ্গিক উপকরণ দ্বারা সাজিয়ে রাখা হয়। যার ফলে এটি পর্যটন বাজারে বেশ কদর পেয়েছে। তাছাড়া এর দেহ থেকে সার উৎপাদনের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
আক্রমণাত্মক প্রজাতি
[সম্পাদনা]নতুন বাস্তুতন্ত্রের সাথে পরিচিত হবার পর কেন ব্যাঙগুলো স্থানীয় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে এর বেশ কদর ছিল বিধায় বহু সংখ্যক রিপোর্ট পাওয়া গেছে যেখানে কেন ব্যাঙ কোন নতুন অঞ্চলে চলে আসলে সেখানকার জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটে। কেন ব্যাঙের আক্রমণ ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যে এর ক্ষতিকারক প্রভাব দ্বারা আক্রান্ত সর্বাধিক নথিভুক্ত অঞ্চলটি হল অস্ট্রেলিয়া। সেখানে কেন ব্যাঙের এলাকা দখলের একাধিক সমীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রভাবটি ব্যাখ্যা করার সর্বোত্তম উপায় হল নর্দান কুওল এবংমার্টেন্সের ওয়াটার মনিটর (একটি বৃহদাকার গুই সাপ যা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়) এর দুর্দশা।
নর্দান কুওলের অপর কেন ব্যাঙের প্রভাবসমুহ অধ্যয়নের জন্য দুটি সাইট বেছে নেয়া হয়েছিল। যার মধ্যে একটি ছিল মেরি রিভার রেঞ্জার স্টেশন , যেটি কাকাডু ন্যাশনাল পার্ক এর দক্ষিণে অবস্থিত এবং অন্য স্থানটি পার্কটির উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। এ দুটি স্থান ছাড়াও তৃতীয় স্থানটি পূর্ব এলিগেটর রেঞ্জার স্টেশনে অবস্থিত ছিল আর এ সাইটটি একটি নিয়ন্ত্রণ সাইট হিসেবে ব্যবহৃত হত। আর সেখানে কেন ব্যাঙগুলো নর্দান কুওলগুলোর সাথে কোন মিথস্ক্রিয়ায় যেত না। প্রথম ২০০২ সালে কেন ব্যাঙের আগমনের পূর্বে মেরি রিভার স্টেশনে রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে কুওলদের ওপর নজর রাখা হত। কেন ব্যাঙের আবির্ভাবের পর নর্দান কুওল সংখ্যা ২০০২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে হ্রাস পেয়েছে এবং ২০০৩ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই পার্কের এ অংশ হতে নর্দান কুওল সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটি সত্য যে ফাঁদ ব্যবহার করে তখন কোন কুওল ধরা হয়নি। অপরদিকে পূর্ব এলিগেটর রেঞ্জার স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ সাইটে নর্দান কুওলদের সংখ্যা একরকম স্থির ছিল এবং তা হ্রাস পাবার কোন লক্ষণও চোখে পরেনি। কাকাডু ন্যাশনাল পার্ক হতে প্রাপ্ত প্রমাণগুলো দেখিয়েছিল যে শুধু কেন ব্যাঙের সংখ্যাবৃদ্ধিই একমাত্র কারণ নয় যা নর্দান কুওলদের সংখ্যা হ্রাস করেছিল , বরং মেরি রিভার অঞ্চলের কুওলদের ৩১% ভাগের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিল কেন ব্যাঙ ভক্ষণ করতে গিয়ে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া। কারণ তখন সেখানে কুওলদের মধ্যে রোগবালাইয়ের কোন লক্ষণ ,পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হওয়া কিংবা অন্যান্য এমন কোন পরিবর্তন সাইটগুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি যা কুওল সংখ্যা কে আকস্মিকভাবে এত দ্রুত হ্রাস করতে পারে। সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ যা এই অনুমানগুলোকে সমর্থন করে তা হল নিয়ন্ত্রক দলের নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যেসব অঞ্চলে কেন ব্যাঙ অনুপস্থিত ছিল সেসব অঞ্চলগুলোতে কুওলদের সংখ্যা হ্রাস পাবার কোন লক্ষণই ছিলনা।
মার্টেন্সের ওয়াটার মনিটরের ক্ষেত্রে ১৮ মাস ধরে কেবলমাত্র একটি অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। এ অঞ্চলটি ডারউইন এর ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে ম্যান্টন বাঁধ বিনোদন এলাকায় অবস্থিত। ম্যান্টন বাধ বিনোদন এলাকায় ওয়াটার মনিটরের সংখ্যা জরিপ করার জন্য ১৪ টি সাইট স্থাপন করা হয়েছিল, যার প্রতিটিতে এদের প্রাচুর্য এবং সাইটের দখলকৃত স্থান পরিমাপ করা হয়েছিল। এখানে সাতটি সমীক্ষা চালান হয়েছিল , যেগুলোর প্রত্যেকটি ৪ সপ্তাহ ধরে চলছিল এবং এতে ১৬ টি সাইট ভিজিট অন্তর্ভুক্ত ছিল। যেখানে প্রতিটি সাইটে ৪ সপ্তাহ জুড়ে একটানা ২ দিনের জন্য দু'বার নমুনা সরবরাহ করা হত। প্রতিটি সাইট পরিদর্শনের সময় ছিল সকাল ৭.৩০-১০.৩০ টা পর্যন্ত। এ সময় Varanus mertensi সমুদ্রের তীরে কিংবা তীরের নিকটবর্তী গাছের শাখায় জড়িয়ে রোদ পোহানরত অবস্থায় দেখা যেত। পুরো প্রকল্পটি ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৬ সালের মে মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল এবং ১৫৬৮ টি সাইট ভিজিটের মধ্যে Varanus mertensi এর ১৯৪ টি সাইটিং ছিল। সাতটি জরিপের মধ্যে দ্বিতীয় জরিপকালে এদের প্রাচুর্য সর্বাধিক ছিল। এ পরিমাপের পর যখন ২০০৬ সালে দ্বিতীয় থেকে শেষ জরিপের সময় যখন এদের সংখ্যা খুব দ্রুত হ্রাস পেয়েছিল তার পূর্বে শেষ চারটি সমীক্ষায় এদের প্রাচুর্য ক্রমশ হ্রাস পেয়ে আসছিল ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত দ্বিতীয় হতে শেষ জরিপ চলাকালে এদের সংখ্যা খুব দ্রুতই হ্রাস পেয়েছিল। ২০০৬ সালের মে মাসে গৃহীত সর্বশেষ জরিপে মাত্র দুটি V. mertensi গুইসাপ দেখতে পাওয়া যায়। কেন ব্যাঙ এই অধ্যয়নকৃত এলাকায় সর্বপ্রথম দেখা যায় ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যখন দ্বিতীয় জরিপ চলমান ছিল। সেসময় অধ্যয়ন চলাকালে ওয়াটার মনিটরের প্রাচুর্য ছিল সর্বোচ্চ। কেন ব্যাঙের সংখ্যা পরবর্তী বছরের শুরুর আগ পর্যন্ত বেশ কমই ছিল এবং এরপরই তা ২০০৬ সালে সম্পাদিত শেষ জরিপে আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে। যখন দুটি প্রাণির সংখ্যার পাশাপাশি তুলনা করা হয় তখন পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করা যায় যে শুরু থেকেই ওয়াটার মনিটরগুলোর ওপর কেন ব্যাঙের একটি তাৎক্ষণিক খারাপ প্রতিক্রিয়া ছিল। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই যখন গুইসাপগুলোর সংখ্যা কমতে শুরু করে ঠিক তখনই যখন কেন ব্যাঙ ম্যান্টন বাঁধ এলাকায় আবির্ভূত হয়। এ সমীক্ষার শেষ দিকে ম্যান্টন বাঁধের উপরের সাইটগুলোতে কিছু ওয়াটার মনিটরকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকতে দেখা যায় যা নির্দেশ করে ম্যান্টন বাঁধের তীরে অবস্থিত কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থানীয় বিলুপ্তি ঘটলেও সমগ্র ওয়াটার মনিটর সংখ্যার বিলুপ্তি ঘটেনি।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "কেন ব্যাঙ"।
- ↑ Estes, Richard and Richard Wassersurg (1963)। A Miocene toad from Colombia, South America (পিডিএফ)। Breviora। ২০১৫-০৩-১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-১৯।
- ↑ Zug, George R., and Patricia B. Zug (1979).। The Marine Toad, Bufo marinus: A Natural History Resume of Native Populations (পিডিএফ)। Smithsonian Contributions to Zoology, number 284, 58 pages.। ৭ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Toad Venom Toxicosis in Dogs"।
- ↑ Linnaeus 1758। পৃষ্ঠা 824।
- ↑ "Beltz 2007"।
- ↑ Easteal et al. 1985। পৃষ্ঠা 185।
- ↑ National Invasive Species Information Center., June 15, 2009. Retrieved June 17, 2009.। ""Cane Toad (Bufo marinus)"."।
- ↑ "Caughley & Gunn 1996": পৃষ্ঠা 140।
- ↑ "Australian State of the Environment Committee 2002": p. 107।
- ↑ Kenny 2008। পৃষ্ঠা 35।
- ↑ "Rhinella marina"। IUCN 2011. IUCN Red List of Threatened Species. Version 2011.2. Solís, F., Ibáñez, R., Hammerson, G., Hedges, B., Diesmos, A., Matsui, M., Hero, J.-M., Richards, S., Coloma, L., Ron, S., La Marca, E., Hardy, J., Powell, R., Bolaños, F., Chaves, G. & Ponce, P. 2009. Retrieved June 4, 2012।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Rhinella marina"। Encyclopaedia of Life. Retrieved June 4, 2012.।
- ↑ Vanderduys & Wilson 2000। পৃষ্ঠা ১।
- ↑ ক খ "Giant Burrowing Frog".। Wildlife of Sydney. Australian Museum. April 15, 2009. Retrieved June 17, 2009.।
- ↑ Barker, Grigg & Tyler 1995। পৃষ্ঠা 381।
- ↑ Brandt & Mazzotti 2005। পৃষ্ঠা ৩।
- ↑ Russo, Alice; White, Peter; Shine, Rick। "We've cracked the cane toad genome, and that could help put the brakes on its invasion"। The Conversation. Retrieved 26 December 2018.।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Robinson 1998"।
- ↑ ক খ গ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১১৭।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১১৭-১১৮।
- ↑ Grenard 2007। পৃষ্ঠা ৫৫।
- ↑ ক খ গ "Cameron 2009"।
- ↑ "Tyler 1976": ৮৬।
- ↑ ক খ গ ঘ "Invasive Species Specialist Group 2006"।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১১৬।
- ↑ Ely 1944,। পৃষ্ঠা ২৫৬।
- ↑ "De León, L.F. & Castillo, A. 2015. RHINELLA MARINA (Cane Toad). SALINITY TOLERANCE. Herpetological Review 46(2):237-238."।
- ↑ Lever 2001। পৃষ্ঠা ৩।
- ↑ Barker, Grigg & Tyler 1995। পৃষ্ঠা ৩৮০।
- ↑ Zug & Zug 1979। পৃষ্ঠা ১৪-১৫।
- ↑ Zug & Zug 1979। পৃষ্ঠা ১৫।
- ↑ Anstis 2002,। পৃষ্ঠা ২৭৪।
- ↑ Zug & Zug 1979। পৃষ্ঠা ৮।
- ↑ Lever 2001। পৃষ্ঠা ৬।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১১৮।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১১৯।
- ↑ Lever 2001। পৃষ্ঠা ১০।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১৩০-১৩২।
- ↑ "Mikula, P. 2015: Fish and amphibians as bat predators. European Journal of Ecology 1 (1): 71-80. doi: 10.1515/eje-2015-0010"।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১৩৪।
- ↑ Tyler 1989। পৃষ্ঠা ১৩৪-১৩৬।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Griffiths, Anthony (2007). "Cane toads reduce the abundance and site occupancy of Merten's water monitor (Varanus Mertensi)". Wildlife Research. 34 (8): 609
- Australian Government, Department of the Environment (April 12, 2005)."The biological effects, including lethal toxic ingestion, caused by cane toads (Bufo marinus)" Australian Government. Retrieved October 29, 2015.
- Alcala, A. C. (1957). "Philippine notes on the ecology of the giant marine toad". Silliman Journal. 4 (2).*
- Angus, R. (1994). "Observation of a Papuan Frogmouth at Cape York [Queensland]". Australian Birds. 28.
- Anstis, M. (2002). Tadpoles of South-Eastern Australia: A Guide with Keys. Reed New Holland.আন্তর্জাতিক মান পুস্তক সংখ্যা 978-1-876334-63-5
- Australian Associated Press (January 25, 2006)."Toads to be juiced" Sydney Morning Herald Retrieved July 7, 2009.
- Australian State of the Environment Committee (2002). Biodiversity. Australia: CSIRO Publishingআন্তর্জাতিক মান পুস্তক সংখ্যা 978-0-643-06749-3.
- Barker, John; Grigg, Gordon; Tyler, Michael (1995). A Field Guide to Australian Frogs. Surrey Beatty & Sonsআন্তর্জাতিক মান পুস্তক সংখ্যা 978-0-949324-61-0.
- Bateman, Daniel (May 10, 2008). "Toad business the stuff of dreams"Townsville Bulletin.
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]Species Profile - Cane Toad (Rhinella marina),National Invasive Species Information Center,United States National Agricultural Library. Lists general information and resources for cane toad.